ঢাকা , সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::

অপরিকল্পিত অবকাঠামো ঢাকার দুশ্চিন্তা

  • সূর্যোদয় ডেস্ক:
  • আপডেট সময় ১১:০৩:৪৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৩
  • ১১২৬ বার পড়া হয়েছে

ভৌগোলিক অবস্থানের হিসেবে ‘মাঝারি’ ঝুঁকিতে রয়েছে ঢাকা। তবে অনিয়ন্ত্রিত উন্নয়নের ফলে বড় ধরনের ভূমিকম্প হলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। এ ছাড়া মাটির গঠন ও অপরিকল্পিত অবকাঠামো যে কোনো অঞ্চলের জন্য ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঢাকা শহরে যেভাবে গা-ঘেষে ভবন গড়ে উঠেছে, তাতে বড় ভূমিকম্প হলে উদ্ধার তৎপরতায় চরম বেগ পেতে হবে। বিশেষ করে পুরান ঢাকার মতো এলাকায় ভবন ধসে পড়লে উদ্ধার কার্যক্রম চালানোই বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের জরিপ অনুযায়ী, ঢাকা সিটি অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠেছে। ঢাকার অধিকাংশ পুরাতন ভবন এবং নতুন ভবনের একটা বড় অংশ

‘সেসমিক’ নকশা অনুযায়ী নির্মাণ করা হয়নি। জরিপে আরও উঠে এসেছে, ঢাকা সিটির জরুরি উদ্ধার ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত নাজুক। ৫০ কিলোমিটার দূরে যদি সাড়ে ৭ মাত্রার ভূমিকম্প হয়, তাহলে রাজধানীর প্রায় ২ লাখ ৭০ হাজার ভবন (৮৩ শতাংশ) ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

ঢাকা বিশ্বিবিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষক ড. মো. জিল্লুর রহমান আমাদের সময়কে বলেন, “ভূমিকম্পের উৎসগত দিক দিয়ে ঢাকা ‘মধ্য’ ঝুঁকিতে রয়েছে। তবে ঝুঁকিটা বাড়িয়েছে এখানকার অবকাঠামোগত উন্নয়ন। ঢাকার ভবনগুলো ভূমিকম্প ঝুঁকি বিবেচনায় গড়ে ওঠেনি। এখানে ৭ মাত্রার ভূমিকম্প হলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’

ঢাকার কোন এলাকায় ভূমিকম্প ঝুঁকি বেশি- এমন প্রশ্নে ড. জিল্লুর রহমান বলেন, ঢাকার মোহাম্মদপুরের বেড়িবাঁধ থেকে বুড়িগঙ্গা নদী পর্যন্ত, প্রগতী স্মরণী থেকে বালু নদী, কেরানীগঞ্জ ও সাভার এলাকা সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ।

রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) নগর পরিকল্পনাবিদ মো. আশরাফুল ইসলাম আমাদের সময়কে জানান, ঝুঁকিপূর্ণ ভবন নিয়ে তাদের কাছে সঠিক পরিসংখান নেই। তবে রাজউকের আরবান রেজিলেন্স প্রকল্পের তথ্যানুযায়ী, ঢাকা শহরের স্কুল-কলেজ ও হাসপাতালের ২২৯টি ভবনকে ‘রেকট্রোফিটিং’ (সংস্কার) করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

এ নগর পরিকল্পনাবিদ বলেন, ঢাকায় ভূমিকম্প হলে সবচেয়ে কঠিন হবে উদ্ধার অভিযান চালানো। ঢাকার অবকাঠামোগুলো এমনভাবে হয়েছে, উদ্ধারকারী সরঞ্জাম পৌঁছানোই দুরূহ হয়ে যাবে। ফায়ার সার্ভিসের আইনে বলা আছে, সড়কের প্রশস্ততা ৬০ ফুটের নিচে হলে আশপাশে ছয়তলার বেশি ভবন করা যাবে না। ঝুঁকি কমাতে এ আইন বাস্তবায়ন করা জরুরি।

ঢাকায় ভূমিকম্পের পর ‘লিকুইফ্যাকশন’ হওয়ার আশঙ্কা বেশি। লিকুইফ্যাকশন হলে বাড়িঘর, স্কুল-কলেজ, রাস্তাঘাট, সেতু সব ভেসে যেতে পারে। ‘লিকুইফ্যাকশনের’ ঝুঁকি তখনই তৈরি হয়, যখন পলিমাটি বা বালুমাটির গভীরতা কম থাকে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের বেশিরভাগটাই গড়ে উঠেছে নদীবিধৌত পলিমাটিতে, তাই এ রকম লিকুইফেকশনের ঝুঁকি কম-বেশি অনেক জায়গাতে আছে। কেবল উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রংপুর, দিনাজপুর, বগুড়া রাজশাহীর মতো কিছু জেলায় অগভীর মাটিতে শক্ত শিলা বা ‘সলিড ক্রাস্ট’ আছে। সেখানে ঝুঁকি নেই। ঢাকা শহরের অন্তত ৬০ শতাংশ এলাকা এ রকম ‘লিকুইফেকশন’ অঞ্চলে পড়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল হচ্ছে নারায়ণগঞ্জ থেকে ডেমরা, পুরান ঢাকা ও মতিঝিল হয়ে শ্যামলী পর্যন্ত।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

আজকের সূর্যোদয়

আজকের সূর্যোদয় প্রত্রিকায় আপনাদের স্বাগতম। ‍আমাদের নিউজ পড়ুন এবং বিজ্ঞাপন দিয়ে আমাদের পাশে থাকুন।

বরিশালে মুজিবিয়ানের ৮৭ নেতাকে খুঁজছে গোয়েন্দা সংস্থা

অপরিকল্পিত অবকাঠামো ঢাকার দুশ্চিন্তা

আপডেট সময় ১১:০৩:৪৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৩

ভৌগোলিক অবস্থানের হিসেবে ‘মাঝারি’ ঝুঁকিতে রয়েছে ঢাকা। তবে অনিয়ন্ত্রিত উন্নয়নের ফলে বড় ধরনের ভূমিকম্প হলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। এ ছাড়া মাটির গঠন ও অপরিকল্পিত অবকাঠামো যে কোনো অঞ্চলের জন্য ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঢাকা শহরে যেভাবে গা-ঘেষে ভবন গড়ে উঠেছে, তাতে বড় ভূমিকম্প হলে উদ্ধার তৎপরতায় চরম বেগ পেতে হবে। বিশেষ করে পুরান ঢাকার মতো এলাকায় ভবন ধসে পড়লে উদ্ধার কার্যক্রম চালানোই বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের জরিপ অনুযায়ী, ঢাকা সিটি অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠেছে। ঢাকার অধিকাংশ পুরাতন ভবন এবং নতুন ভবনের একটা বড় অংশ

‘সেসমিক’ নকশা অনুযায়ী নির্মাণ করা হয়নি। জরিপে আরও উঠে এসেছে, ঢাকা সিটির জরুরি উদ্ধার ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত নাজুক। ৫০ কিলোমিটার দূরে যদি সাড়ে ৭ মাত্রার ভূমিকম্প হয়, তাহলে রাজধানীর প্রায় ২ লাখ ৭০ হাজার ভবন (৮৩ শতাংশ) ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

ঢাকা বিশ্বিবিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষক ড. মো. জিল্লুর রহমান আমাদের সময়কে বলেন, “ভূমিকম্পের উৎসগত দিক দিয়ে ঢাকা ‘মধ্য’ ঝুঁকিতে রয়েছে। তবে ঝুঁকিটা বাড়িয়েছে এখানকার অবকাঠামোগত উন্নয়ন। ঢাকার ভবনগুলো ভূমিকম্প ঝুঁকি বিবেচনায় গড়ে ওঠেনি। এখানে ৭ মাত্রার ভূমিকম্প হলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’

ঢাকার কোন এলাকায় ভূমিকম্প ঝুঁকি বেশি- এমন প্রশ্নে ড. জিল্লুর রহমান বলেন, ঢাকার মোহাম্মদপুরের বেড়িবাঁধ থেকে বুড়িগঙ্গা নদী পর্যন্ত, প্রগতী স্মরণী থেকে বালু নদী, কেরানীগঞ্জ ও সাভার এলাকা সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ।

রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) নগর পরিকল্পনাবিদ মো. আশরাফুল ইসলাম আমাদের সময়কে জানান, ঝুঁকিপূর্ণ ভবন নিয়ে তাদের কাছে সঠিক পরিসংখান নেই। তবে রাজউকের আরবান রেজিলেন্স প্রকল্পের তথ্যানুযায়ী, ঢাকা শহরের স্কুল-কলেজ ও হাসপাতালের ২২৯টি ভবনকে ‘রেকট্রোফিটিং’ (সংস্কার) করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

এ নগর পরিকল্পনাবিদ বলেন, ঢাকায় ভূমিকম্প হলে সবচেয়ে কঠিন হবে উদ্ধার অভিযান চালানো। ঢাকার অবকাঠামোগুলো এমনভাবে হয়েছে, উদ্ধারকারী সরঞ্জাম পৌঁছানোই দুরূহ হয়ে যাবে। ফায়ার সার্ভিসের আইনে বলা আছে, সড়কের প্রশস্ততা ৬০ ফুটের নিচে হলে আশপাশে ছয়তলার বেশি ভবন করা যাবে না। ঝুঁকি কমাতে এ আইন বাস্তবায়ন করা জরুরি।

ঢাকায় ভূমিকম্পের পর ‘লিকুইফ্যাকশন’ হওয়ার আশঙ্কা বেশি। লিকুইফ্যাকশন হলে বাড়িঘর, স্কুল-কলেজ, রাস্তাঘাট, সেতু সব ভেসে যেতে পারে। ‘লিকুইফ্যাকশনের’ ঝুঁকি তখনই তৈরি হয়, যখন পলিমাটি বা বালুমাটির গভীরতা কম থাকে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের বেশিরভাগটাই গড়ে উঠেছে নদীবিধৌত পলিমাটিতে, তাই এ রকম লিকুইফেকশনের ঝুঁকি কম-বেশি অনেক জায়গাতে আছে। কেবল উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রংপুর, দিনাজপুর, বগুড়া রাজশাহীর মতো কিছু জেলায় অগভীর মাটিতে শক্ত শিলা বা ‘সলিড ক্রাস্ট’ আছে। সেখানে ঝুঁকি নেই। ঢাকা শহরের অন্তত ৬০ শতাংশ এলাকা এ রকম ‘লিকুইফেকশন’ অঞ্চলে পড়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল হচ্ছে নারায়ণগঞ্জ থেকে ডেমরা, পুরান ঢাকা ও মতিঝিল হয়ে শ্যামলী পর্যন্ত।