একের পর এক গ্যাসের সন্ধান পাওয়ার খবর মিলছে দ্বীপ জেলা ভোলায়। এতে নতুন করে সম্ভাবনার দ্বার খুলছে এ জেলায়।
এ খনিজ সম্পদকে সঠিকভাবে ব্যবহারের পাশাপাশি গৃহস্থালির কাজে ব্যবহারের নিশ্চয়তা চান ভোলার মানুষ। একই সঙ্গে গ্যাসভিত্তিক শিল্প কারখানা গড়ে উঠলে কর্মসংস্থান হবে জেলার বেকার যুবকদের।
তাই ভোলার গ্যাস ভোলায় রাখতে চান এ জেলার মানুষ। এদিকে ভোলা নর্থ-২ নামে নতুন একটি কূপে ৬২০ বিসিএফ ঘনফুট গ্যাস রয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে বাপেক্সের ভূ-তাত্ত্বিক বিভাগ।
এ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক মো. আলমগীর হোসেন গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ভোলা নর্থ-২ এর কূপে প্রাপ্ত গ্যাস মাটির ৩ হাজার ৪০০ মিটার নিচে রয়েছে, যা প্রায় ৫-৬ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত।
এখানে ভবিষ্যতে আরও কূপ খনন হতে পারে। এরই মধ্যে ৮টি কূপ খননের পর ৮ টিতেই গ্যাসের সন্ধান মিলেছে। এছাড়া ইলিশা-১ নামে আরও একটি কূপ খননের অপেক্ষায় রয়েছে।
বাপেক্স জানায়, জেলার শাহবাজপুর ও ভোলা নর্থ গ্যাস ক্ষেত্রের সর্বমোট ৮টি কূপে গ্যাসের সন্ধান মিলেছে, যার পরিমাণ ১ দশমিক ৫ টিসিএফ ঘনফুট।
৮ম কূপ থেকে প্রতিদিন উত্তোলনযোগ্য গ্যাসের পরিমাণ ২০ মিলিয়ন ঘনফুট। একের পর এক গ্যাসের সন্ধান মেলায় সম্ভাবনার দ্বার খুলছে দক্ষিণাঞ্চলের এ জেলাটিতে।
গ্যাস নির্ভর কল-কারখানা প্রতিষ্ঠার কথা ভাবছেন বিনিয়োগকারীরা। ভোলার গ্যাসকে কাজে লাগিয়ে শিল্প কারখানা এবং আবাসিক লাইনে ব্যবহারের দাবি ভোলাবাসীর।
তরুণ সংগঠক আদিল হোসেন তপু বলেন, এ গ্যাস ব্যবহার হলে এখানে গ্যাসভিত্তিক শিল্প-প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠবে। যার মাধ্যমে জেলার অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি বেকার শিক্ষিত যুবকদের কর্মসংস্থান হবে। তাই এর সঠিক ব্যবহারের দাবি জানাই।
স্থানীয় বাসিন্দা লোকমান, মিজান ও মাইনুদ্দিন বলেন, আমরা চাই, গৃহস্থালির কাজে গ্যাস ব্যবহারের সুযোগ করে দেওয়া হোক। ভোলার গ্যাসের মাধ্যমে ভোলার উন্নয়ন সম্ভব।
সচেতন মহল মনে করছে, ভোলার গ্যাসের সম্ভাবনাকে কাজে লাগালে জেলার অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি বেকার যুবকদেরও কর্মসংস্থান হবে। একটি উন্নত সমৃদ্ধ জেলায় পরিণত হবে ভোলা।
বাপেক্স জানিয়েছে, ২০১৮ সালের দিকে ভূ-কম্পন জরিপের মাধ্যমে ভোলা সদরের ভেদুরিয়া ইউনিয়নের মাঝিরহাট এলাকায় এ জেলার মধ্যে গ্যাসের ২য় খনির সন্ধান পায় বাপেক্স।
সেখানে রাশিয়ান কোম্পানি গ্যাজপ্রমের মাধ্যমে একটি কূপ খননের পর গত বছরের ৫ ডিসেম্বর নতুন করে ভেদুরিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ চর পাতাগ্রামে আরেকেটি কূপ খনন করে বাপেক্স।
এটি জেলার ৮ নম্বর কূপ। গত ২৩ জানুয়ারি ওই কূপে প্রাথমিক পরীক্ষামূলক উত্তোলনে প্রতিদিন ২০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন সম্ভব বলে নিশ্চিত করে বাপেক্সের প্রতিনিধি দল। বর্তমানে এ কূপে ৬২০ বিসিএফ গ্যাস মজুদ রয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
সূত্র জানিয়েছে, ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার শাহবাজপুরের গ্যাস ক্ষেত্রের পর এটি জেলার ২য় খনি। এ কূপ মাটির সাড়ে ৩ হাজার ফুট তলদেশে ৫ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তুত।
এটি পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর সেখানে আরও কূপ খননের পরিকল্পনার কথা জানান ভূ-তাত্ত্বিক বিভাগের (বাপেক্স) মহাব্যবস্থাপক মো. আলমগীর হোসেন।
এর আগে বাপেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলী বলেন, আগামী বছরের অক্টোবর মাসে ভোলাসহ দক্ষিণের ১০ জেলায় তেল-গ্যাস অনুসন্ধান করবে বাপেক্স। আশা করা হচ্ছে, এ জরিপে আরও গ্যাস পাওয়া যাবে।
১৯৯৪-৯৫ সালের দিকে বোরহানউদ্দিনে প্রথম শাহবাজপুর গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার হয়। পর্যায়ক্রমে সেখানে ৫টিসহ জেলার আরও ৪টি স্পটে মোট ৮টি কূপ খনন করে বাপেক্স। এখন পর্যন্ত জেলায় মোট গ্যাস মজুদের পরিমাণ ১.৫ টিসিএফ ঘটফুট।