ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর পৌর এলাকার আলীয়াবাদ গ্রামের ফরহাদ আহমেদের স্ত্রী লিজা বেগমের গর্ভে যমজ দুই শিশু রয়েছে, সিজারিয়ান অপারেশন করার আগে আলট্রাসনোগ্রাফির এমন রিপোর্ট দিয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার খ্রিস্ট্রিয়ান মেমোরিয়াল হাসপাতালের চিকিৎসক নওরিন পারভেজ। একই রিপোর্ট দিয়েছেন নবীনগর উপজেলার একটি প্রাইভেট হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. মেহেরুন্নেছা।
সিজারিয়ান অপারেশন করার আগে আলট্রাসনোগ্রাফির রিপোর্টে বলা হয়েছে, লিজার গর্ভে যমজ সন্তান। সিজারিয়ান অপারেশন করার পর লিজার গর্ভ থেকে মিলেছে এক কন্যা সন্তান। লিজার সিজারিয়ান অপারেশন করেছেন খ্রিস্ট্রিয়ান মেমোরিয়াল হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. ইসরাত আহমেদ ও ডা. নওরিন পারভেজ।
অপারেশনের পর খ্রিস্ট্রিয়ান মেমোরিয়াল হাসপাতালের চিকিৎসকেরা বলছেন, সেই রিপোর্ট ভুল ছিল। এ ঘটনায় সন্তান ফিরে পেতে লিজার স্বামী ডা. ইসরাত আহমেদসহ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানায় অভিযোগ দিয়েছেন। শুক্রবার (২১ এপ্রিল) দুপুরে জেলা শহরের মুন্সেফপাড়া খ্রিস্ট্রিয়ান মেমোরিয়াল হাসপাতালে এ ঘটনা ঘটে। সন্তান ফিরে পেতে আহাজারি করছেন লিজা বেগমসহ তার পরিবার।
ফরহাদ আহমেদ বলেন, আমার স্ত্রী প্রথমবারের মতো গর্ভবতী হলে নবীনগর উপজেলার স্থানীয় একটি বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক মেহেরুন্নেছার তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন ছিলেন। সে সময় আলট্রাসনোগ্রাফিতে আমার স্ত্রীর গর্ভে দুটি সন্তান দেখা যায় বলে জানান চিকিৎসকেরা। সর্বশেষ গত ১৮ এপ্রিল করা আলট্রাসনোগ্রাফি রিপোর্টেও গর্ভে দুটি সন্তানের তথ্য আসে। শুক্রবার আমার স্ত্রী লিজার প্রসবব্যথা ওঠে। যমজ শিশু গর্ভে থাকায় স্থানীয় চিকিৎসকেরা ঝুঁকি না নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে হাসপাতালে এনে সিজার করার পরামর্শ দেন। সেই মোতাবেক ২১ এপ্রিল শুক্রবার ‘দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে লিজাকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহরের খ্রিস্ট্রিয়ান মেমোরিয়াল হাসপাতালে ভর্তি করা হলে ডা. নওরিন পারভেজ আলট্রাসনোগ্রাফি করেন। তার করা রিপোর্টেও দুটি সন্তান দেখা যায়। পরে তিনি নিজেই লিজাকে অপারেশন থিয়েটারে সিজারিয়ান অপারেশন করেন। কিছুক্ষণ পর হাসপাতালের লোকজন এসে জানান, আমার স্ত্রী একটি কন্যাসন্তান জন্ম দিয়েছে। আর কোনো সন্তানের কথা তারা জানাতে পারেননি।
ফরহাদ আহমেদ আরো বলেন, নবীনগরের ডাক্তার ও খ্রিস্ট্রিয়ান মেমোরিয়াল হাসপাতালের ডাক্তার আলট্রাসনোগ্রাফি রিপোর্টে দুটি সন্তানের কথা এমনকি দুইজনের ওজনের কথাও জানিয়েছেন রির্পোটে, তাহলে আমার আরেক সন্তান গেল কোথায়?
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে খ্রিস্ট্রিয়ান মেমোরিয়াল হাসপাতালের আলট্রাসনোগ্রাফি ও সিজারিয়ান অপারেশন করা চিকিৎসক নওরিন পারভেজ বলেন, আমি দুই জায়গায় হার্টবিট পেয়েছি। অনেক সময় আমাদের দেখা এবং অনুমানে ভুল হতে পারে। সেই অনুযায়ী আমি রিপোর্ট দিয়েছি। তবে সিজারিয়ানের সময় গর্ভে একটি সন্তান পাওয়া গেছে।
এদিকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে অভিযুক্ত করে পুলিশের কাছে অভিযোগ দিয়েছেন ওই প্রসূতির স্বামী ফরহাদ আহমেদ।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া ১ নম্বর শহর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ শেহাবুর রহমান বলেন, শিশুর বাবা অভিযোগ করেছেন, আলট্রাসনোগ্রাফি রিপোর্টে দুই শিশু ছিল। হাসপাতালের চিকিৎসকও আলট্রাসনোগ্রাফি রিপোর্টে দুই শিশু দেখেছেন। কিন্তু সিজারে এক শিশু পাওয়া গেছে। বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি।