ঢাকা , শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৩ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::

আল্লাহর ক্ষমতার চাক্ষুষ প্রমাণ

  • সূর্যোদয় ডেস্ক:
  • আপডেট সময় ১১:৩৫:৩২ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৭ অগাস্ট ২০২৩
  • ১১১৬ বার পড়া হয়েছে

আল্লাহ তায়ালা মহাক্ষমতার মালিক। তিনি বিশাল আসমান ও জমিনে এবং উভয়ের মধ্যে যা কিছু রয়েছে, সব কিছুর একক ও একমাত্র স্রষ্টা। তাঁর কর্তৃত্ব, শ্রেষ্ঠত্ব ও অস্তিত্বের নিদর্শন সৃষ্টিতে বিদ্যমান। তিনি অসংখ্য ও অগণিত আয়াতে তার ক্ষমতা ও একত্ববাদের বর্ণনা দিয়েছেন। তিনি হজরত আদম আ: ও হাওয়া আ:-কে পিতামাতা ছাড়া সৃষ্টি করেছেন। হজরত ঈসা আ:-কে পিতা ছাড়া সৃষ্টি করেছেন। হজরত ইবরাহিম ও হজরত যাকারিয়া আ:-কে বৃদ্ধ বয়সে পুত্রসন্তান দান করেছেন। তার পরও আল্লাহ তায়ালা সূরা আল বাকারার ২৫৮, ২৫৯, ২৬০ এ ক্ষমতার চাক্ষুষ প্রমাণ পেশ করেছেন।

পূর্ব দিক থেকে সূর্য উত্তোলন : নমরুদ একদা হজরত ইবরাহিম আ:-এর সাথে বিতর্কে লিপ্ত হয়। বিতর্কের একপর্যায়ে নমরুদ আল্লাহর পরিচয় ও ক্ষমতার বিষয়ে জানতে চায়। সে হজরত ইবরাহিম আ:-কে প্রশ্ন করে তোমার রব কী করার ক্ষমতা রাখে? হজরত ইবরাহিম আ: বলেন, আমার রব তো জীবন ও মৃত্যুর মালিক। তিনি জীবন ও মৃত্যু দান করেন। ফিরাউন বলল, জীবন ও মৃত্যু তো আমার হাতে। আমিই জীবন ও মৃত্যু দিয়ে থাকি। এ কথা বলে সে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দু’জন আসামিকে ডেকে এনে একজনকে হত্যা করে এবং অপরজনকে মুক্তি দিয়ে বলে দেখো, জীবন ও মৃত্যু আমার কর্তৃত্বে। হজরত ইবরাহিম আ: তার অজ্ঞতার কথা বুঝতে পারলেন। ফলে ভিন্নভাবে বিতর্কে লিপ্ত হলেন এবং বিষয় পরিবর্তন করে বলেন- আমার রব তো পূর্ব দিক দিয়ে সূর্য উঠান, তুমি রব হলে এবং তোমার শক্তি থাকলে পশ্চিম দিক দিয়ে সূর্য উঠাও। নমরুদ তখন হতবুদ্ধি ও নিরুত্তর হয়ে গেল।

ধ্বংসপ্রাপ্ত জনপদকে পুনর্জীবন দান : হজরত ইবন আব্বাস রা: থেকে বর্ণিত, হজরত উযাইর আ: একদা বায়তুল মুকাদ্দাসের পার্শ্ববর্তী একটি জনপদ দিয়ে গমন করছেন, যা কিছু বনি ইসরাইলের জনপদ। তাদের অবাধ্যতা ও দুর্বলতার সুযোগে বখতনসর বায়তুল মুকাদ্দাস দখল করে ধ্বংসলীলা চালায় এবং আশপাশের বাড়িঘর ধ্বংস করে। হজরত উযাইর আ: বাড়িঘরগুলো ভেঙে ছাদের ওপর পড়ে থাকতে দেখে মনে মনে বলেন, এ মৃত ও ধ্বংসপ্রাপ্ত জনপদকে আল্লাহ কিভাবে জীবিত করবেন? এটি আল্লাহর ক্ষমতায় নবী উযাইর আ: দোয়াও কামনা, আল্লাহ তায়ালার ক্ষমতাকে অস্বীকার করা নয়, এটাকে শিক্ষণীয় ঘটনা বানাবার জন্য আল্লাহ তায়ালা হজরত উযাইর আ:-কে মৃত্যু দেন এবং এক শ’ বছর মৃত অবস্থায় রাখেন। এর মধ্যে বখতনসরের মৃত্যু হয় এবং বায়তুল মুকাদ্দাস বনি ইসরাইলের দখলে আসে। তখন আল্লাহ তায়ালা উযাইর আ:-কে পুনজ্জীবিত করেন। তাঁর ধারণা ছিল, তিনি এক দিন এ অবস্থায় ছিলেন। কিন্তু তাকে বলা হলো, তিনি এক শ’ বছর মৃত অবস্থায় ছিলেন, তবু তাঁর খাদ্য ও পানীয় নষ্ট হয়নি কিন্তু তার বাহন গাধা মরে গিয়ে তার হাড়গুলোও পচে গলে নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে। এ অবস্থায় আল্লাহ তাঁর গাধাকে তার সামনে জীবিত করেন। হজরত উযাইর আ: এ ঘটনা দেখে বললেন, আমি অবশ্যই বিশ^াস করি আল্লাহ তায়ালা সব কিছু করতে সক্ষম, তিনি সর্ব শক্তিমান।

আল্লাহর নবী-রাসূলদের মধ্যে হজরত ইবরাহিম আ: অন্যতম মর্যাদার অধিকারী। আল্লাহর কুদরত ও ক্ষমতার ওপর তাঁর পূর্ণ আস্থা রয়েছে। তার পরও তাঁর মনে আল্লাহর পুনর্জ্জীবিতকরণের নমুনা দেখার কৌতূহল জাগে। তাই তিনি আরজ করেন, হে আমার রব! আপনি মৃতকে কিভাবে জীবিত করেন তা আমাকে দেখান। আল্লাহ তায়ালা বললেন, তুমি কি তা বিশ^াস করো না? হজরত ইবরাহিম আ: বললেন, অবশ্যই বিশ্বাস করি, তবে চাক্ষুষ দেখে মনের প্রশান্তির জন্য এ আবেদন করেছি। আল্লাহ তায়ালা বলেন, তা হলে চারটি পাখি ধরে নিয়ে পোষ মানাও। তার পর এগুলোকে জবেহ করে টুকরো টুকরো করে এক এক টুকরো এক এক পাহাড়ের ওপর রেখে আস। পরে তাদেরকে ডাক। দেখবে, সেগুলো যথার্থভাবে একত্রিত হয়ে তোমার দিকে উড়ে চলে আসবে। তাফসিরের বর্ণনা মতে, হজরত ইবরাহিম আ: একটি ময়ূর, একটি কবুতর, একটি মোরগ ও একটি কাক পালন করেন এবং এমন পোষ মানান যে, ছেড়ে দিয়ে ডাকলে তারা তার কাছে চলে আসে। অতঃপর তিনি নির্দেশমতো কাজ করলেন। সত্যি পাখিগুলো জীবিত হয়ে আগের মতো উড়ে তাঁর কাছে চলে আসে। এতে বিশ^বাসীর জন্য আল্লাহর পরিচয়, কুদরত ও পরকালে পুনর্জীবন দান চাক্ষুষভাবে প্রমাণিত হয়। হজরত ইবরাহিম আ:-এরও চাক্ষুষ জ্ঞান অর্জিত হয়। (সূরা আল বাকারা আয়াত ২৫৮, ২৫৯, ২৬০)।

লেখক :

  • মুফতি মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম

প্রধান ফকিহ্, আল-জামেয়াতুল ফালাহিয়া কামিল মাদরাসা ফেনী

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

আজকের সূর্যোদয়

আজকের সূর্যোদয় প্রত্রিকায় আপনাদের স্বাগতম। ‍আমাদের নিউজ পড়ুন এবং বিজ্ঞাপন দিয়ে আমাদের পাশে থাকুন।

বরিশালে মুজিবিয়ানের ৮৭ নেতাকে খুঁজছে গোয়েন্দা সংস্থা

আল্লাহর ক্ষমতার চাক্ষুষ প্রমাণ

আপডেট সময় ১১:৩৫:৩২ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৭ অগাস্ট ২০২৩

আল্লাহ তায়ালা মহাক্ষমতার মালিক। তিনি বিশাল আসমান ও জমিনে এবং উভয়ের মধ্যে যা কিছু রয়েছে, সব কিছুর একক ও একমাত্র স্রষ্টা। তাঁর কর্তৃত্ব, শ্রেষ্ঠত্ব ও অস্তিত্বের নিদর্শন সৃষ্টিতে বিদ্যমান। তিনি অসংখ্য ও অগণিত আয়াতে তার ক্ষমতা ও একত্ববাদের বর্ণনা দিয়েছেন। তিনি হজরত আদম আ: ও হাওয়া আ:-কে পিতামাতা ছাড়া সৃষ্টি করেছেন। হজরত ঈসা আ:-কে পিতা ছাড়া সৃষ্টি করেছেন। হজরত ইবরাহিম ও হজরত যাকারিয়া আ:-কে বৃদ্ধ বয়সে পুত্রসন্তান দান করেছেন। তার পরও আল্লাহ তায়ালা সূরা আল বাকারার ২৫৮, ২৫৯, ২৬০ এ ক্ষমতার চাক্ষুষ প্রমাণ পেশ করেছেন।

পূর্ব দিক থেকে সূর্য উত্তোলন : নমরুদ একদা হজরত ইবরাহিম আ:-এর সাথে বিতর্কে লিপ্ত হয়। বিতর্কের একপর্যায়ে নমরুদ আল্লাহর পরিচয় ও ক্ষমতার বিষয়ে জানতে চায়। সে হজরত ইবরাহিম আ:-কে প্রশ্ন করে তোমার রব কী করার ক্ষমতা রাখে? হজরত ইবরাহিম আ: বলেন, আমার রব তো জীবন ও মৃত্যুর মালিক। তিনি জীবন ও মৃত্যু দান করেন। ফিরাউন বলল, জীবন ও মৃত্যু তো আমার হাতে। আমিই জীবন ও মৃত্যু দিয়ে থাকি। এ কথা বলে সে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দু’জন আসামিকে ডেকে এনে একজনকে হত্যা করে এবং অপরজনকে মুক্তি দিয়ে বলে দেখো, জীবন ও মৃত্যু আমার কর্তৃত্বে। হজরত ইবরাহিম আ: তার অজ্ঞতার কথা বুঝতে পারলেন। ফলে ভিন্নভাবে বিতর্কে লিপ্ত হলেন এবং বিষয় পরিবর্তন করে বলেন- আমার রব তো পূর্ব দিক দিয়ে সূর্য উঠান, তুমি রব হলে এবং তোমার শক্তি থাকলে পশ্চিম দিক দিয়ে সূর্য উঠাও। নমরুদ তখন হতবুদ্ধি ও নিরুত্তর হয়ে গেল।

ধ্বংসপ্রাপ্ত জনপদকে পুনর্জীবন দান : হজরত ইবন আব্বাস রা: থেকে বর্ণিত, হজরত উযাইর আ: একদা বায়তুল মুকাদ্দাসের পার্শ্ববর্তী একটি জনপদ দিয়ে গমন করছেন, যা কিছু বনি ইসরাইলের জনপদ। তাদের অবাধ্যতা ও দুর্বলতার সুযোগে বখতনসর বায়তুল মুকাদ্দাস দখল করে ধ্বংসলীলা চালায় এবং আশপাশের বাড়িঘর ধ্বংস করে। হজরত উযাইর আ: বাড়িঘরগুলো ভেঙে ছাদের ওপর পড়ে থাকতে দেখে মনে মনে বলেন, এ মৃত ও ধ্বংসপ্রাপ্ত জনপদকে আল্লাহ কিভাবে জীবিত করবেন? এটি আল্লাহর ক্ষমতায় নবী উযাইর আ: দোয়াও কামনা, আল্লাহ তায়ালার ক্ষমতাকে অস্বীকার করা নয়, এটাকে শিক্ষণীয় ঘটনা বানাবার জন্য আল্লাহ তায়ালা হজরত উযাইর আ:-কে মৃত্যু দেন এবং এক শ’ বছর মৃত অবস্থায় রাখেন। এর মধ্যে বখতনসরের মৃত্যু হয় এবং বায়তুল মুকাদ্দাস বনি ইসরাইলের দখলে আসে। তখন আল্লাহ তায়ালা উযাইর আ:-কে পুনজ্জীবিত করেন। তাঁর ধারণা ছিল, তিনি এক দিন এ অবস্থায় ছিলেন। কিন্তু তাকে বলা হলো, তিনি এক শ’ বছর মৃত অবস্থায় ছিলেন, তবু তাঁর খাদ্য ও পানীয় নষ্ট হয়নি কিন্তু তার বাহন গাধা মরে গিয়ে তার হাড়গুলোও পচে গলে নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে। এ অবস্থায় আল্লাহ তাঁর গাধাকে তার সামনে জীবিত করেন। হজরত উযাইর আ: এ ঘটনা দেখে বললেন, আমি অবশ্যই বিশ^াস করি আল্লাহ তায়ালা সব কিছু করতে সক্ষম, তিনি সর্ব শক্তিমান।

আল্লাহর নবী-রাসূলদের মধ্যে হজরত ইবরাহিম আ: অন্যতম মর্যাদার অধিকারী। আল্লাহর কুদরত ও ক্ষমতার ওপর তাঁর পূর্ণ আস্থা রয়েছে। তার পরও তাঁর মনে আল্লাহর পুনর্জ্জীবিতকরণের নমুনা দেখার কৌতূহল জাগে। তাই তিনি আরজ করেন, হে আমার রব! আপনি মৃতকে কিভাবে জীবিত করেন তা আমাকে দেখান। আল্লাহ তায়ালা বললেন, তুমি কি তা বিশ^াস করো না? হজরত ইবরাহিম আ: বললেন, অবশ্যই বিশ্বাস করি, তবে চাক্ষুষ দেখে মনের প্রশান্তির জন্য এ আবেদন করেছি। আল্লাহ তায়ালা বলেন, তা হলে চারটি পাখি ধরে নিয়ে পোষ মানাও। তার পর এগুলোকে জবেহ করে টুকরো টুকরো করে এক এক টুকরো এক এক পাহাড়ের ওপর রেখে আস। পরে তাদেরকে ডাক। দেখবে, সেগুলো যথার্থভাবে একত্রিত হয়ে তোমার দিকে উড়ে চলে আসবে। তাফসিরের বর্ণনা মতে, হজরত ইবরাহিম আ: একটি ময়ূর, একটি কবুতর, একটি মোরগ ও একটি কাক পালন করেন এবং এমন পোষ মানান যে, ছেড়ে দিয়ে ডাকলে তারা তার কাছে চলে আসে। অতঃপর তিনি নির্দেশমতো কাজ করলেন। সত্যি পাখিগুলো জীবিত হয়ে আগের মতো উড়ে তাঁর কাছে চলে আসে। এতে বিশ^বাসীর জন্য আল্লাহর পরিচয়, কুদরত ও পরকালে পুনর্জীবন দান চাক্ষুষভাবে প্রমাণিত হয়। হজরত ইবরাহিম আ:-এরও চাক্ষুষ জ্ঞান অর্জিত হয়। (সূরা আল বাকারা আয়াত ২৫৮, ২৫৯, ২৬০)।

লেখক :

  • মুফতি মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম

প্রধান ফকিহ্, আল-জামেয়াতুল ফালাহিয়া কামিল মাদরাসা ফেনী