ঢাকা , মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::

ইবাদতের আদলে ইফতার

রমজান মুসলিম উম্মাহর দরবারে সংযম, আত্মত্যাগ, আত্মশুদ্ধির বার্তা বয়ে আনে। সারা দিনের সাওম পালন শেষে সূর্যাস্তের আগে ইফতার নিয়ে অপেক্ষমাণ মু’মিন বান্দা আল্লাহর প্রতি একনিষ্ঠ আনুগত্যের বলিষ্ঠ দৃষ্টান্ত স্থাপন করে। রমজানের পাঁচটি সুন্নতের দ্বিতীয়টি হলো ইফতার। ইফতারের মাধ্যমে সারা দিনের উপবাসের ক্লিষ্ট যাতনার অবসান হয়ে রোজাদার এক আধ্যাত্মিক তৃপ্তি লাভ করে।

রমজান পুরো মাসই যেহেতু সংযমের তাই ইফতারেও ‘উদরপূর্তি’ বর্জন আবশ্যক। সর্বপ্রথম আমাদের একটি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে, রোজা রাখা যেমন ইবাদত, ইফতারও তেমনি ইবাদতের অংশ। রোজা রাখা ফরজ আর ইফতার করা সুন্নাহ। অবশ্যই ইফতার করা এবং অন্যকে করানো উভয়টিই সওয়াবের কাজ। তবে কোনোভাবেই সওয়াব লাভ করতে গিয়ে সেটি সুন্নাহর সাথে সাংঘর্ষিক হওয়া যাবে না।

বর্তমানে ‘ইফতার পার্টি’ নামে যে ট্রেন্ড চালু হয়েছে, সেটি আরো ভয়াবহ। ইফতারের নামে ১৫-২০ আইটেমের খাবার দিয়ে উদরপূর্তির যে উৎসব করার হয়, সেটি রমজানের মূল শিক্ষার সাথে পুরোপুরি সাংঘর্ষিক। বিশেষ করে কলেজ-ভার্সিটি কিংবা করপোরেট অফিসের ইফতারের প্রোগ্রামগুলোতে নারী-পুরুষের যে ফ্রি-মিক্সিং ঘটে, তা মারাত্মক ফেতনাময় পরিবেশ সৃষ্টি করে। এ রকম ইফতার পার্টি খাদ্য অপচয়, উদরপূর্তির পাশাপাশি ইসলামের অন্যতম বিধান পর্দারও ব্যাঘাত ঘটায়।
ইফতারের সর্বোত্তম ‘মেন্যু’ সম্পর্কে হাদিসে বর্ণনা এসেছে- হজরত আনাস রা: বলেন, নবী করিম সা: সালাতের আগে তাজা পাকা খেজুর দিয়ে ইফতার করতেন। তাজা খেজুর না থাকলে যেকোনো খেজুর দিয়ে, আর তাও যদি না থাকত কয়েক ঢোঁক পানি পান করে নিতেন।’ (তিরমিজি-৬৯৬)

আরবের ওই রকম উত্তপ্ত আবহাওয়ায় সারা দিন সাওম পালনের পর যুগশ্রেষ্ঠ রাসূল ও তাঁর অনুগত সাহাবিরা যখন পানি ও খেজুর দিয়েই স্বাচ্ছন্দ্যে ইফতার সেরে নিতেন, তাহলে এই নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়ায় রোজা রেখে আপনার/আমার টেবিলে কেন শুধু শরবতই চার-পাঁচ প্রকারের থাকতে হবে? জাঙ্ক ফুড, স্ন্যাকস, ফল, ডেজার্ট- একসাথে এ রকম সব আইটেমের খাবার দিয়ে টেবিল কানায় কানায় পূর্ণ করতে হবে কেন?

বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বিষয়টি একরকম ছিল না যে, তারা আর্থিকভাবে অসচ্ছল ছিলেন। প্রথম সারির সাহাবিদের মধ্যে এরকম বেশ কয়েকজন ছিলেন, যাদের মোট সম্পদের পরিমাণ বর্তমান বাজারদর অনুযায়ী মিলিয়নের ঘর ছাড়িয়ে যাবে।

তবে ইসলাম সহজ ধর্ম। সে হিসেবে শরিয়তের নির্দেশনাগুলোও মানুষের জন্য সহজ করে দেয়া হয়েছে। উপরি উক্ত হাদিসে মূলত চাকচিক্য বর্জন করে ইফতারে পরিমিত খাবার গ্রহণের দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। খেজুর-পানির পাশাপাশি অন্যান্য দু-এক আইটেমের খাবার দিয়ে ইফতার করাটা অবশ্যই দোষণীয় কিছু হবে না। কিংবা একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর জন্য সাওয়াবের নিয়তে দু-চারজন মেহমান দাওয়াত দিয়ে চাকচিক্যমুক্ত সাদাসিধে ইফতার করালে, তা কখনোই সুন্নাহবিরোধী হবে না।
ইফতারের অন্যতম আরেকটি সুন্নাহ পদ্ধতি হচ্ছে- সময় হওয়ার সাথে সাথে ইফতার করা। এ প্রসঙ্গে হাদিসে এসেছে, সাহল বিন সাদ রা: থেকে বর্ণিত- রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, মানুষ ততদিন কল্যাণে থাকবে যতদিন তারা অবিলম্বে ইফতার করবে।’ (সহিহ বুখারি-১৮৫৬ ও সহিহ মুসলিম-১০৯৮)
সর্বোপরি, ইফতার রমজানের একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। এর সুষ্ঠুতার মধ্যে রমজানের পূর্ণতা নির্ভর করে। সংযমের মাস রমজানে রাব্বুল আলামিন আমাদেরকে আত্মত্যাগী ও তাকওয়াবান হওয়ার তাওফিক দিন।

লেখক : শিক্ষার্থী, আবেদা-নূর ফাজিল মাদরাসা

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

আজকের সূর্যোদয়

আজকের সূর্যোদয় প্রত্রিকায় আপনাদের স্বাগতম। ‍আমাদের নিউজ পড়ুন এবং বিজ্ঞাপন দিয়ে আমাদের পাশে থাকুন।

বরিশালে মুজিবিয়ানের ৮৭ নেতাকে খুঁজছে গোয়েন্দা সংস্থা

ইবাদতের আদলে ইফতার

আপডেট সময় ১০:১৮:০০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২ এপ্রিল ২০২৩

রমজান মুসলিম উম্মাহর দরবারে সংযম, আত্মত্যাগ, আত্মশুদ্ধির বার্তা বয়ে আনে। সারা দিনের সাওম পালন শেষে সূর্যাস্তের আগে ইফতার নিয়ে অপেক্ষমাণ মু’মিন বান্দা আল্লাহর প্রতি একনিষ্ঠ আনুগত্যের বলিষ্ঠ দৃষ্টান্ত স্থাপন করে। রমজানের পাঁচটি সুন্নতের দ্বিতীয়টি হলো ইফতার। ইফতারের মাধ্যমে সারা দিনের উপবাসের ক্লিষ্ট যাতনার অবসান হয়ে রোজাদার এক আধ্যাত্মিক তৃপ্তি লাভ করে।

রমজান পুরো মাসই যেহেতু সংযমের তাই ইফতারেও ‘উদরপূর্তি’ বর্জন আবশ্যক। সর্বপ্রথম আমাদের একটি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে, রোজা রাখা যেমন ইবাদত, ইফতারও তেমনি ইবাদতের অংশ। রোজা রাখা ফরজ আর ইফতার করা সুন্নাহ। অবশ্যই ইফতার করা এবং অন্যকে করানো উভয়টিই সওয়াবের কাজ। তবে কোনোভাবেই সওয়াব লাভ করতে গিয়ে সেটি সুন্নাহর সাথে সাংঘর্ষিক হওয়া যাবে না।

বর্তমানে ‘ইফতার পার্টি’ নামে যে ট্রেন্ড চালু হয়েছে, সেটি আরো ভয়াবহ। ইফতারের নামে ১৫-২০ আইটেমের খাবার দিয়ে উদরপূর্তির যে উৎসব করার হয়, সেটি রমজানের মূল শিক্ষার সাথে পুরোপুরি সাংঘর্ষিক। বিশেষ করে কলেজ-ভার্সিটি কিংবা করপোরেট অফিসের ইফতারের প্রোগ্রামগুলোতে নারী-পুরুষের যে ফ্রি-মিক্সিং ঘটে, তা মারাত্মক ফেতনাময় পরিবেশ সৃষ্টি করে। এ রকম ইফতার পার্টি খাদ্য অপচয়, উদরপূর্তির পাশাপাশি ইসলামের অন্যতম বিধান পর্দারও ব্যাঘাত ঘটায়।
ইফতারের সর্বোত্তম ‘মেন্যু’ সম্পর্কে হাদিসে বর্ণনা এসেছে- হজরত আনাস রা: বলেন, নবী করিম সা: সালাতের আগে তাজা পাকা খেজুর দিয়ে ইফতার করতেন। তাজা খেজুর না থাকলে যেকোনো খেজুর দিয়ে, আর তাও যদি না থাকত কয়েক ঢোঁক পানি পান করে নিতেন।’ (তিরমিজি-৬৯৬)

আরবের ওই রকম উত্তপ্ত আবহাওয়ায় সারা দিন সাওম পালনের পর যুগশ্রেষ্ঠ রাসূল ও তাঁর অনুগত সাহাবিরা যখন পানি ও খেজুর দিয়েই স্বাচ্ছন্দ্যে ইফতার সেরে নিতেন, তাহলে এই নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়ায় রোজা রেখে আপনার/আমার টেবিলে কেন শুধু শরবতই চার-পাঁচ প্রকারের থাকতে হবে? জাঙ্ক ফুড, স্ন্যাকস, ফল, ডেজার্ট- একসাথে এ রকম সব আইটেমের খাবার দিয়ে টেবিল কানায় কানায় পূর্ণ করতে হবে কেন?

বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বিষয়টি একরকম ছিল না যে, তারা আর্থিকভাবে অসচ্ছল ছিলেন। প্রথম সারির সাহাবিদের মধ্যে এরকম বেশ কয়েকজন ছিলেন, যাদের মোট সম্পদের পরিমাণ বর্তমান বাজারদর অনুযায়ী মিলিয়নের ঘর ছাড়িয়ে যাবে।

তবে ইসলাম সহজ ধর্ম। সে হিসেবে শরিয়তের নির্দেশনাগুলোও মানুষের জন্য সহজ করে দেয়া হয়েছে। উপরি উক্ত হাদিসে মূলত চাকচিক্য বর্জন করে ইফতারে পরিমিত খাবার গ্রহণের দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। খেজুর-পানির পাশাপাশি অন্যান্য দু-এক আইটেমের খাবার দিয়ে ইফতার করাটা অবশ্যই দোষণীয় কিছু হবে না। কিংবা একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর জন্য সাওয়াবের নিয়তে দু-চারজন মেহমান দাওয়াত দিয়ে চাকচিক্যমুক্ত সাদাসিধে ইফতার করালে, তা কখনোই সুন্নাহবিরোধী হবে না।
ইফতারের অন্যতম আরেকটি সুন্নাহ পদ্ধতি হচ্ছে- সময় হওয়ার সাথে সাথে ইফতার করা। এ প্রসঙ্গে হাদিসে এসেছে, সাহল বিন সাদ রা: থেকে বর্ণিত- রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, মানুষ ততদিন কল্যাণে থাকবে যতদিন তারা অবিলম্বে ইফতার করবে।’ (সহিহ বুখারি-১৮৫৬ ও সহিহ মুসলিম-১০৯৮)
সর্বোপরি, ইফতার রমজানের একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। এর সুষ্ঠুতার মধ্যে রমজানের পূর্ণতা নির্ভর করে। সংযমের মাস রমজানে রাব্বুল আলামিন আমাদেরকে আত্মত্যাগী ও তাকওয়াবান হওয়ার তাওফিক দিন।

লেখক : শিক্ষার্থী, আবেদা-নূর ফাজিল মাদরাসা