ঢাকা , মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::

ঈদযাত্রায় যানজটপ্রবণ ৩৮ স্পট চিহ্নিত

  • সূর্যোদয় ডেস্ক:
  • আপডেট সময় ১১:২২:৩৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৩১ মার্চ ২০২৩
  • ১১৩৮ বার পড়া হয়েছে

ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে সড়ক, রেল ও নৌপথে প্রস্তুতি চলছে। রেলপথ মন্ত্রণালয় এরই মধ্যে ট্রেনের আগাম টিকিট বিক্রির তারিখ ঘোষণা করেছে। ঈদযাত্রী পরিবহনের জন্য লোকোমোটিভ ও কোচ উপযোগী করে তোলা হচ্ছে। আর সড়ক পথ নির্বিঘ্ন করতে সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর তাদের আওতাধীন সড়কগুলো যান চলাচলের উপযোগী করছে। যানজট নিরসনে আগাম প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। ৩৮টি স্পট চিহ্নিত করে সেসব স্থানের যানজট দূর করতে নির্দেশ দিয়েছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ। এবার ঈদের আগে তিন দিন এবং ঈদের পর তিন দিনসহ সাত দিন ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান ফেরিতে পারাপার বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়।

সড়কপথের প্রস্তুতি : গতকাল সকালে বিআরটিএ অফিসে অংশীজন সভা হয়। সেখানে আসন্ন ঈদযাত্রার দুর্ভোগ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বিআরটিএ দাবি করেছে, তারা সড়কের ৩৮টি যানজটপ্রবণ স্পট চিহ্নিত করেছে। সেসব স্থানে যানজট নিরসনে পদক্ষেপ নেওয়ার কথা তুলে ধরা হয়েছে বৈঠকে।

অন্যদিকে সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরও তৎপর রয়েছে। সওজের পক্ষ থেকে আমাদের সময়কে জানানো হয়েছে, চলমান সড়ক মেরামত ও উন্নয়ন কাজের গুণগত মান পর্যবেক্ষণ এবং সড়কপথে জনসাধারণের নির্বিঘ্ন চলাচল নিশ্চিত করতে ৫টি পরিদর্শন টিম গঠন করেছে সংস্থাটি। সওজের রক্ষণাবেক্ষণ সার্কেল ও মনিটরিং সার্কেল নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কগুলো। মানুষের ভোগান্তির কারণ যেন রাস্তা না হয়, সেদিকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। এর অংশ হিসেবে পরিদর্শন টিমের সদস্যরা দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক ঘুরে মেরামতের কাজ চলমান। ঈদযাত্রার আগে সব সড়ক গাড়ি চলাচলের উপযোগী হবে বলে আশাবাদী সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর।

এ বিষয়ে সংস্থাটির প্রধান প্রকৌশলী মো. ইসহাক গতকাল দুপুরে মোবাইল ফোনে আমাদের সময়কে বলেন, ‘মানুষের যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে সওজ সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছে। শুধু পরিদর্শন টিম নয়, সওজের সব শ্রেণির কর্মীরা বেশ আন্তরিকতার সঙ্গে কাজটি করে যাচ্ছে। আমি নিজে আজকে (গতকাল) বঙ্গবন্ধু সেতুর ওপারে সড়ক দেখতে চলে এসেছি। এখান থেকে সাসেক সংযোগ প্রকল্প-২, রংপুর, দিনাজপুর, নীলফামারির বিভিন্ন সড়ক পরিদর্শন করব। এর আগে ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবসেও সড়ক পরিদর্শনে ছিলাম। বন্ধের দিনেও আমরা কাজ করছি। আশা করছি, এবারের ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন হবে।’

সওজের কর্মকর্তারা জানান, মানুষের বাড়ি ফেরা এবং ঈদ উদযাপন শেষে রাজধানীতে নির্বিঘ্নে ফেরার ব্যবস্থা করতে সবাইকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পরিদর্শন টিমের মধ্যে কুমিল্লা ও সিলেট জোনের দায়িত্বে আছেন সওজের রক্ষাণাবেক্ষণ সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী। কুমিল্লা জোনের সড়ক দেখবে রুটিন মেইনটেন্যান্স বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী, তদন্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী, তদন্ত উপবিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী এবং রোড সেফটি বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী। সিলেট জোনের দায়িত্বে আছেন এইচডিএম অপারেশন বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী, প্রোগ্রামিং উপবিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী এবং রোড সেফটি বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী। এরকম খুলনা ও গোপালগঞ্জ জোনের সার্বিক সমন্বয়ক হিসেবে আছেন সড়ক গবেষণাগারের পরিচালক।

রাজশাহী ও রংপুর জোনের তত্ত্বাবধান করছেন সওজের প্ল্যানিং অ্যান্ড মনিটরিং অ্যান্ড ইভালুয়েশন সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী, বরিশাল ও চট্টগ্রাম জোন তত্ত্বাবধান করছেন মনিটরিং সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী। এছাড়া ময়মনসিংহ ও ঢাকা জোনের সার্বিক সমন্বয় করছেন সংস্থার প্ল্যানিং অ্যান্ড প্রোগ্রামিং সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী। তাদের অধীনে চারজন করে সদস্য রয়েছেন পরিদর্শন টিমে। চলমান সড়ক মেরামত ও পর্যবেক্ষণ করে বিদ্যমান সমস্যা চিহ্নিত করে সমাধানের জন্য সুপারিশ করছেন তারা। এছাড়া আরও ছয়টি সুনির্দিষ্ট ইস্যু উল্লেখ করে সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে টিমের সদস্যদের।

নৌপথের প্রস্তুতি : ঈদে যাত্রী ও পণ্য পরিবহন নিরাপদ রাখতে নিত্যপ্রয়োজনীয় ও দ্রুত পচনশীল পণ্যবাহী ট্রাক ব্যতীত সাধারণ ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান ফেরিতে পারাপার বন্ধ থাকবে। রাতের বেলায় স্পিডবোট এবং বালুবাহী বাল্কহেড চলাচল বন্ধ থাকবে। ঈদের আগে ৫ দিন এবং ঈদের পরের ৫ দিন অর্থাৎ ১৭ থেকে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত সার্বক্ষণিক (দিন এবং রাত) সব বালুবাহী বাল্কহেড চলাচল বন্ধ থাকবে।

গতকাল নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে নৌপথে স্টিমার, লঞ্চসহ জলযান সুষ্ঠুভাবে চলাচল, যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে যথাযথ কর্মপন্থা গ্রহণের লক্ষ্যে ঈদ ব্যবস্থাপনা বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন।

সভায় সিদ্ধান্ত হয়, পদ্মাসেতুতে যেহেতু মোটরসাইকেল চলাচল নিষিদ্ধ রয়েছে, তাই শিমুলিয়া মাঝিরকান্দি রুটে মোটরসাইকেল পারাপারে বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণের চেষ্টা করা হচ্ছে। এপ্রিল মাসে আবহাওয়া খারাপ থাকে; তাই সবাইকে আবহাওয়া বার্তা মেনে চলতে হবে। ঢাকা সদরঘাট এলাকায় যাত্রীদের চলাচলের সুবিধার জন্য ঢাকা সিটি করপোরেশন ও নৌপুলিশ আরও সতর্ক ও কঠোরতার সঙ্গে কার্যক্রম পরিচালনা করবে। নদী বন্দরগুলোতে ওয়াশরুমের সুবিধা বৃদ্ধি ও সেবার মান বাড়াতে হবে। পাটুরিয়া, দৌলতদিয়া, আরিচা, কাজিরহাট, হরিনা, আলুবাজার ফেরিরুটে ফেরির সংখ্যা বাড়ানো হবে। সন্দ্বীপ ও হাতিয়ার মতো উপকূলীয় অঞ্চলে যাত্রী পারাপারে সি-ট্রাক চালু থাকবে। ফিটনেসবিহীন নৌযান চলাচল বন্ধ রাখতে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পোশাক কারখানার কর্মীদের এলাকাভিত্তিক পর্যায়ক্রমে ছুটি প্রদানের জন্য বিজিএমইএ ও বিকেএমইএকে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বলা হয়েছে।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, পবিত্র ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে সাধারণ মানুষ যাতে নির্বিঘ্নে নৌসেবাটা নিতে পারে সে বিষয়ে আমরা আন্তরিক। পদ্মা সেতু আমাদের অনুভূতির জায়গাটা দখল করে নিয়েছে। অনেকে মনে করেছিল পদ্মা সেতু হয়ে গেলে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ আর লঞ্চ ব্যবহার করবে না। এটা ভুল প্রমাণিত হয়েছে। নৌপথে আগ্রহ কমে যায়নি বরং আগ্রহ বেড়েছে। সাধারণ মানুষ যাতে নির্বিঘ্নে নৌ সেবা নিতে পারে সে লক্ষ্যে কাজ করা হচ্ছে। সেবা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।

রেলওয়ের প্রস্তুতি : ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে বাংলাদেশ রেলওয়ে ৭ এপ্রিল থেকে ট্রেনে ঈদযাত্রার অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু করছে। এ বছর ঈদযাত্রার ৫ দিনের অগ্রিম টিকিটের শতভাগ বিক্রি হবে অনলাইনে। এ যাত্রার কোনো টিকিট মিলবে না রেলওয়ে স্টেশনগুলোর কাউন্টারে। মানুষের দুর্ভোগ কমাতে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানালেন রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন।

মন্ত্রী বলেন, প্রতি বছর ঈদের টিকিটের জন্য দুই থেকে তিন দিন মানুষ টানা স্টেশনে অপেক্ষা করেন। এরপর দেখেন টিকিট পাননি। এটি অনেক কষ্টের।

তিনি জানান, আগামী ৭ এপ্রিল দেওয়া হবে ১৭ এপ্রিলের অগ্রিম টিকিট। ৮ এপ্রিল দেওয়া হবে ১৮ এপ্রিলের টিকিট। ৯ এপ্রিল দেওয়া হবে ১৯ এপ্রিলের টিকিট। ১০ এপ্রিল দেওয়া হবে ২০ এপ্রিলের টিকিট। ১১ এপ্রিল দেওয়া হবে ২১ এপ্রিলের অগ্রিম টিকিট।

ঈদের আগে বাড়তি ছুটি প্রয়োজন : ঈদযাত্রা প্রসঙ্গে যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী আমাদের সময়কে বলেন, এবার ঈদের আগে তেমন কোনো ছুটি নেই। ঈদযাত্রায় বিপুল পরিমাণ মানুষ পরিবহনের মতো বাহন নেই। সড়ক, রেল ও নৌপথ মিলে যাত্রী পরিবহনের চাহিদার তুলনায় আসন কম। হঠাৎ করে চাইলেও এত বিপুল মানুষের জন্য যাতায়াত উপযোগী বাহন তৈরি করা বাস্তবসম্মত নয়। আবার মোটরসাইকেল চলাচল নিষিদ্ধ। তাই আমার প্রস্তাব, ঈদের আগে আরও একদিন বাড়তি ছুটি দেওয়া হোক।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

আজকের সূর্যোদয়

আজকের সূর্যোদয় প্রত্রিকায় আপনাদের স্বাগতম। ‍আমাদের নিউজ পড়ুন এবং বিজ্ঞাপন দিয়ে আমাদের পাশে থাকুন।

বরিশালে মুজিবিয়ানের ৮৭ নেতাকে খুঁজছে গোয়েন্দা সংস্থা

ঈদযাত্রায় যানজটপ্রবণ ৩৮ স্পট চিহ্নিত

আপডেট সময় ১১:২২:৩৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৩১ মার্চ ২০২৩

ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে সড়ক, রেল ও নৌপথে প্রস্তুতি চলছে। রেলপথ মন্ত্রণালয় এরই মধ্যে ট্রেনের আগাম টিকিট বিক্রির তারিখ ঘোষণা করেছে। ঈদযাত্রী পরিবহনের জন্য লোকোমোটিভ ও কোচ উপযোগী করে তোলা হচ্ছে। আর সড়ক পথ নির্বিঘ্ন করতে সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর তাদের আওতাধীন সড়কগুলো যান চলাচলের উপযোগী করছে। যানজট নিরসনে আগাম প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। ৩৮টি স্পট চিহ্নিত করে সেসব স্থানের যানজট দূর করতে নির্দেশ দিয়েছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ। এবার ঈদের আগে তিন দিন এবং ঈদের পর তিন দিনসহ সাত দিন ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান ফেরিতে পারাপার বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়।

সড়কপথের প্রস্তুতি : গতকাল সকালে বিআরটিএ অফিসে অংশীজন সভা হয়। সেখানে আসন্ন ঈদযাত্রার দুর্ভোগ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বিআরটিএ দাবি করেছে, তারা সড়কের ৩৮টি যানজটপ্রবণ স্পট চিহ্নিত করেছে। সেসব স্থানে যানজট নিরসনে পদক্ষেপ নেওয়ার কথা তুলে ধরা হয়েছে বৈঠকে।

অন্যদিকে সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরও তৎপর রয়েছে। সওজের পক্ষ থেকে আমাদের সময়কে জানানো হয়েছে, চলমান সড়ক মেরামত ও উন্নয়ন কাজের গুণগত মান পর্যবেক্ষণ এবং সড়কপথে জনসাধারণের নির্বিঘ্ন চলাচল নিশ্চিত করতে ৫টি পরিদর্শন টিম গঠন করেছে সংস্থাটি। সওজের রক্ষণাবেক্ষণ সার্কেল ও মনিটরিং সার্কেল নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কগুলো। মানুষের ভোগান্তির কারণ যেন রাস্তা না হয়, সেদিকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। এর অংশ হিসেবে পরিদর্শন টিমের সদস্যরা দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক ঘুরে মেরামতের কাজ চলমান। ঈদযাত্রার আগে সব সড়ক গাড়ি চলাচলের উপযোগী হবে বলে আশাবাদী সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর।

এ বিষয়ে সংস্থাটির প্রধান প্রকৌশলী মো. ইসহাক গতকাল দুপুরে মোবাইল ফোনে আমাদের সময়কে বলেন, ‘মানুষের যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে সওজ সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছে। শুধু পরিদর্শন টিম নয়, সওজের সব শ্রেণির কর্মীরা বেশ আন্তরিকতার সঙ্গে কাজটি করে যাচ্ছে। আমি নিজে আজকে (গতকাল) বঙ্গবন্ধু সেতুর ওপারে সড়ক দেখতে চলে এসেছি। এখান থেকে সাসেক সংযোগ প্রকল্প-২, রংপুর, দিনাজপুর, নীলফামারির বিভিন্ন সড়ক পরিদর্শন করব। এর আগে ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবসেও সড়ক পরিদর্শনে ছিলাম। বন্ধের দিনেও আমরা কাজ করছি। আশা করছি, এবারের ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন হবে।’

সওজের কর্মকর্তারা জানান, মানুষের বাড়ি ফেরা এবং ঈদ উদযাপন শেষে রাজধানীতে নির্বিঘ্নে ফেরার ব্যবস্থা করতে সবাইকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পরিদর্শন টিমের মধ্যে কুমিল্লা ও সিলেট জোনের দায়িত্বে আছেন সওজের রক্ষাণাবেক্ষণ সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী। কুমিল্লা জোনের সড়ক দেখবে রুটিন মেইনটেন্যান্স বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী, তদন্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী, তদন্ত উপবিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী এবং রোড সেফটি বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী। সিলেট জোনের দায়িত্বে আছেন এইচডিএম অপারেশন বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী, প্রোগ্রামিং উপবিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী এবং রোড সেফটি বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী। এরকম খুলনা ও গোপালগঞ্জ জোনের সার্বিক সমন্বয়ক হিসেবে আছেন সড়ক গবেষণাগারের পরিচালক।

রাজশাহী ও রংপুর জোনের তত্ত্বাবধান করছেন সওজের প্ল্যানিং অ্যান্ড মনিটরিং অ্যান্ড ইভালুয়েশন সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী, বরিশাল ও চট্টগ্রাম জোন তত্ত্বাবধান করছেন মনিটরিং সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী। এছাড়া ময়মনসিংহ ও ঢাকা জোনের সার্বিক সমন্বয় করছেন সংস্থার প্ল্যানিং অ্যান্ড প্রোগ্রামিং সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী। তাদের অধীনে চারজন করে সদস্য রয়েছেন পরিদর্শন টিমে। চলমান সড়ক মেরামত ও পর্যবেক্ষণ করে বিদ্যমান সমস্যা চিহ্নিত করে সমাধানের জন্য সুপারিশ করছেন তারা। এছাড়া আরও ছয়টি সুনির্দিষ্ট ইস্যু উল্লেখ করে সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে টিমের সদস্যদের।

নৌপথের প্রস্তুতি : ঈদে যাত্রী ও পণ্য পরিবহন নিরাপদ রাখতে নিত্যপ্রয়োজনীয় ও দ্রুত পচনশীল পণ্যবাহী ট্রাক ব্যতীত সাধারণ ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান ফেরিতে পারাপার বন্ধ থাকবে। রাতের বেলায় স্পিডবোট এবং বালুবাহী বাল্কহেড চলাচল বন্ধ থাকবে। ঈদের আগে ৫ দিন এবং ঈদের পরের ৫ দিন অর্থাৎ ১৭ থেকে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত সার্বক্ষণিক (দিন এবং রাত) সব বালুবাহী বাল্কহেড চলাচল বন্ধ থাকবে।

গতকাল নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে নৌপথে স্টিমার, লঞ্চসহ জলযান সুষ্ঠুভাবে চলাচল, যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে যথাযথ কর্মপন্থা গ্রহণের লক্ষ্যে ঈদ ব্যবস্থাপনা বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন।

সভায় সিদ্ধান্ত হয়, পদ্মাসেতুতে যেহেতু মোটরসাইকেল চলাচল নিষিদ্ধ রয়েছে, তাই শিমুলিয়া মাঝিরকান্দি রুটে মোটরসাইকেল পারাপারে বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণের চেষ্টা করা হচ্ছে। এপ্রিল মাসে আবহাওয়া খারাপ থাকে; তাই সবাইকে আবহাওয়া বার্তা মেনে চলতে হবে। ঢাকা সদরঘাট এলাকায় যাত্রীদের চলাচলের সুবিধার জন্য ঢাকা সিটি করপোরেশন ও নৌপুলিশ আরও সতর্ক ও কঠোরতার সঙ্গে কার্যক্রম পরিচালনা করবে। নদী বন্দরগুলোতে ওয়াশরুমের সুবিধা বৃদ্ধি ও সেবার মান বাড়াতে হবে। পাটুরিয়া, দৌলতদিয়া, আরিচা, কাজিরহাট, হরিনা, আলুবাজার ফেরিরুটে ফেরির সংখ্যা বাড়ানো হবে। সন্দ্বীপ ও হাতিয়ার মতো উপকূলীয় অঞ্চলে যাত্রী পারাপারে সি-ট্রাক চালু থাকবে। ফিটনেসবিহীন নৌযান চলাচল বন্ধ রাখতে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পোশাক কারখানার কর্মীদের এলাকাভিত্তিক পর্যায়ক্রমে ছুটি প্রদানের জন্য বিজিএমইএ ও বিকেএমইএকে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বলা হয়েছে।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, পবিত্র ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে সাধারণ মানুষ যাতে নির্বিঘ্নে নৌসেবাটা নিতে পারে সে বিষয়ে আমরা আন্তরিক। পদ্মা সেতু আমাদের অনুভূতির জায়গাটা দখল করে নিয়েছে। অনেকে মনে করেছিল পদ্মা সেতু হয়ে গেলে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ আর লঞ্চ ব্যবহার করবে না। এটা ভুল প্রমাণিত হয়েছে। নৌপথে আগ্রহ কমে যায়নি বরং আগ্রহ বেড়েছে। সাধারণ মানুষ যাতে নির্বিঘ্নে নৌ সেবা নিতে পারে সে লক্ষ্যে কাজ করা হচ্ছে। সেবা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।

রেলওয়ের প্রস্তুতি : ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে বাংলাদেশ রেলওয়ে ৭ এপ্রিল থেকে ট্রেনে ঈদযাত্রার অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু করছে। এ বছর ঈদযাত্রার ৫ দিনের অগ্রিম টিকিটের শতভাগ বিক্রি হবে অনলাইনে। এ যাত্রার কোনো টিকিট মিলবে না রেলওয়ে স্টেশনগুলোর কাউন্টারে। মানুষের দুর্ভোগ কমাতে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানালেন রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন।

মন্ত্রী বলেন, প্রতি বছর ঈদের টিকিটের জন্য দুই থেকে তিন দিন মানুষ টানা স্টেশনে অপেক্ষা করেন। এরপর দেখেন টিকিট পাননি। এটি অনেক কষ্টের।

তিনি জানান, আগামী ৭ এপ্রিল দেওয়া হবে ১৭ এপ্রিলের অগ্রিম টিকিট। ৮ এপ্রিল দেওয়া হবে ১৮ এপ্রিলের টিকিট। ৯ এপ্রিল দেওয়া হবে ১৯ এপ্রিলের টিকিট। ১০ এপ্রিল দেওয়া হবে ২০ এপ্রিলের টিকিট। ১১ এপ্রিল দেওয়া হবে ২১ এপ্রিলের অগ্রিম টিকিট।

ঈদের আগে বাড়তি ছুটি প্রয়োজন : ঈদযাত্রা প্রসঙ্গে যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী আমাদের সময়কে বলেন, এবার ঈদের আগে তেমন কোনো ছুটি নেই। ঈদযাত্রায় বিপুল পরিমাণ মানুষ পরিবহনের মতো বাহন নেই। সড়ক, রেল ও নৌপথ মিলে যাত্রী পরিবহনের চাহিদার তুলনায় আসন কম। হঠাৎ করে চাইলেও এত বিপুল মানুষের জন্য যাতায়াত উপযোগী বাহন তৈরি করা বাস্তবসম্মত নয়। আবার মোটরসাইকেল চলাচল নিষিদ্ধ। তাই আমার প্রস্তাব, ঈদের আগে আরও একদিন বাড়তি ছুটি দেওয়া হোক।