ঢাকা , সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::

ঈদের ছুটিতে অনেক মানুষ নিহত, নিরাপদ সড়ক দূরপরাহত

দেশে সড়ক-যোগাযোগে অরাজক অবস্থা বিরাজ করায় দিন দিন দুর্ঘটনা যেমন বাড়ছে তেমনই হতাহতের সংখ্যা বাড়ছে জ্যামিতিক হারে। তবু সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার কার্যকর কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। ফলে সড়ক দুর্ঘটনায় বেঘোরে প্রাণ হারাচ্ছেন যাত্রীসাধারণ। বিশেষ করে ঈদ উৎসবের মতো উপলক্ষে দীর্ঘ ছুটিতে সড়কপথে যান চলাচল বেড়ে গেলে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যাও বেড়ে যায়। অথচ সড়ক-ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা ফেরানোর দায়িত্ব যাদের, তাদের কোনো হেলদোল নেই। কর্তাব্যক্তিদের হাবভাব দেখে মনে হয়, তারা মনে করেন-এটিই জনগণের নিয়তি।
এবার পবিত্র ঈদুল ফিতর ও বাংলা নববর্ষ মিলিয়ে দীর্ঘ ছুটি পেয়েছিলেন সরকারি-বেসরকারি খাতের কর্মজীবীরা। ফলে পরিবার-পরিজন নিয়ে বাড়ি ফেরার প্রবণতা আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে এই ঈদে বেশি লক্ষ করা গেছে। ছুটির আগে সরকারের তরফ থেকে নাগরিকদের আশ্বস্ত করা হয়েছিল, এবার পথে যাতায়াত আগের চেয়ে নিরাপদ হবে। এ জন্য কয়েকটি সড়ক আগেভাগে খুলে দেয়া হয়; যাতে যাত্রীরা নিরাপদে বাড়ি ফিরতে পারেন। স্বজনের সাথে মিলিত হতে পারেন অতি সহজে।

কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল, দীর্ঘ ছুটিতে ঈদের সময় ও ঈদ-উত্তর সড়ক ও নৌপথে চলাচল করতে গিয়ে শতাধিক মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। তাদের পরিবারের সদস্যদের ঈদের আনন্দ পরিণত হয় বিষাদে। কেউ মারা গেছেন বাসের চাপায়। কেউ এলাকায় মোটরসাইকেল নিয়ে ঘুরতে বেরিয়েছিলেন। আর ঘরে ফিরতে পারেননি, দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন। বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, গত কয়েক দিনে ৬৭ জনের মতো মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। এর মধ্যে গত মঙ্গলবার ফরিদপুরে বাস ও ছোট ট্রাকের সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন ১৪ জন। ওই দুর্ঘটনায় নিহতদের মধ্যে পাঁচজনই একই পরিবারের সদস্য। শুধু সড়কে নয়, নৌপথেও ঘটেছে অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা। ঢাকার সদরঘাটে ঈদের দিন দুই লঞ্চের মাঝখানে চাপা পড়ে পাঁচজন নৌকারোহীর মৃত্যু হয়েছে।

এসব অনাকাক্সিক্ষত মৃত্যুকে দুর্ঘটনা বলা যায় কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। কারণ, কারো দায়িত্বহীনতায় মৃত্যুর ঘটনাকে দুর্ঘটনা বলে চালিয়ে দেয়ার অবকাশ কিংবা যৌক্তিকতা কোনোটিই নেই বলে আমরা মনে করি। এক্ষেত্রে যারা এসব দুর্ঘটনার জন্য দায়ী তাদের বিরুদ্ধে দায়িত্ব অবহেলার কারণে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়াই স্বাভাবিক নিয়ম। কিন্তু আমাদের দেশে আইনের শাসনের দুর্বলতায় দায়ী ব্যক্তিরা সহজে পার পেয়ে যান। সরকার-ঘনিষ্ঠ হলে তো কথাই নেই। এই যে বিচারহীনতার সংস্কৃতি দেশে গড়ে উঠেছে, এতে আমরা কোনো সেক্টরে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে পারছি না। এ ব্যর্থতার দায় এবং খেসারত দিতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক ক্ষতি স্বীকার করতে হচ্ছে জনগণকে। কখনো বেঘোরে প্রাণ হারাতে হচ্ছে কাউকে কাউকে। এত কিছুর পরও সরকার নির্বিকার।
আসলে দেশে সব ক্ষেত্রে সুশাসনের অভাবে আজ এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তাই একথা বলা যায়, সহসাই সড়কে শৃঙ্খলা ফিরবে না; সড়কপথে শৃঙ্খলা দূরপরাহত। এর খেসারত দিতে হবে যাত্রীসাধারণকে বেঘোরে প্রাণ দিয়ে।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

আজকের সূর্যোদয়

আজকের সূর্যোদয় প্রত্রিকায় আপনাদের স্বাগতম। ‍আমাদের নিউজ পড়ুন এবং বিজ্ঞাপন দিয়ে আমাদের পাশে থাকুন।

বরিশালে মুজিবিয়ানের ৮৭ নেতাকে খুঁজছে গোয়েন্দা সংস্থা

ঈদের ছুটিতে অনেক মানুষ নিহত, নিরাপদ সড়ক দূরপরাহত

আপডেট সময় ১১:৪৫:৫২ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪

দেশে সড়ক-যোগাযোগে অরাজক অবস্থা বিরাজ করায় দিন দিন দুর্ঘটনা যেমন বাড়ছে তেমনই হতাহতের সংখ্যা বাড়ছে জ্যামিতিক হারে। তবু সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার কার্যকর কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। ফলে সড়ক দুর্ঘটনায় বেঘোরে প্রাণ হারাচ্ছেন যাত্রীসাধারণ। বিশেষ করে ঈদ উৎসবের মতো উপলক্ষে দীর্ঘ ছুটিতে সড়কপথে যান চলাচল বেড়ে গেলে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যাও বেড়ে যায়। অথচ সড়ক-ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা ফেরানোর দায়িত্ব যাদের, তাদের কোনো হেলদোল নেই। কর্তাব্যক্তিদের হাবভাব দেখে মনে হয়, তারা মনে করেন-এটিই জনগণের নিয়তি।
এবার পবিত্র ঈদুল ফিতর ও বাংলা নববর্ষ মিলিয়ে দীর্ঘ ছুটি পেয়েছিলেন সরকারি-বেসরকারি খাতের কর্মজীবীরা। ফলে পরিবার-পরিজন নিয়ে বাড়ি ফেরার প্রবণতা আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে এই ঈদে বেশি লক্ষ করা গেছে। ছুটির আগে সরকারের তরফ থেকে নাগরিকদের আশ্বস্ত করা হয়েছিল, এবার পথে যাতায়াত আগের চেয়ে নিরাপদ হবে। এ জন্য কয়েকটি সড়ক আগেভাগে খুলে দেয়া হয়; যাতে যাত্রীরা নিরাপদে বাড়ি ফিরতে পারেন। স্বজনের সাথে মিলিত হতে পারেন অতি সহজে।

কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল, দীর্ঘ ছুটিতে ঈদের সময় ও ঈদ-উত্তর সড়ক ও নৌপথে চলাচল করতে গিয়ে শতাধিক মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। তাদের পরিবারের সদস্যদের ঈদের আনন্দ পরিণত হয় বিষাদে। কেউ মারা গেছেন বাসের চাপায়। কেউ এলাকায় মোটরসাইকেল নিয়ে ঘুরতে বেরিয়েছিলেন। আর ঘরে ফিরতে পারেননি, দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন। বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, গত কয়েক দিনে ৬৭ জনের মতো মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। এর মধ্যে গত মঙ্গলবার ফরিদপুরে বাস ও ছোট ট্রাকের সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন ১৪ জন। ওই দুর্ঘটনায় নিহতদের মধ্যে পাঁচজনই একই পরিবারের সদস্য। শুধু সড়কে নয়, নৌপথেও ঘটেছে অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা। ঢাকার সদরঘাটে ঈদের দিন দুই লঞ্চের মাঝখানে চাপা পড়ে পাঁচজন নৌকারোহীর মৃত্যু হয়েছে।

এসব অনাকাক্সিক্ষত মৃত্যুকে দুর্ঘটনা বলা যায় কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। কারণ, কারো দায়িত্বহীনতায় মৃত্যুর ঘটনাকে দুর্ঘটনা বলে চালিয়ে দেয়ার অবকাশ কিংবা যৌক্তিকতা কোনোটিই নেই বলে আমরা মনে করি। এক্ষেত্রে যারা এসব দুর্ঘটনার জন্য দায়ী তাদের বিরুদ্ধে দায়িত্ব অবহেলার কারণে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়াই স্বাভাবিক নিয়ম। কিন্তু আমাদের দেশে আইনের শাসনের দুর্বলতায় দায়ী ব্যক্তিরা সহজে পার পেয়ে যান। সরকার-ঘনিষ্ঠ হলে তো কথাই নেই। এই যে বিচারহীনতার সংস্কৃতি দেশে গড়ে উঠেছে, এতে আমরা কোনো সেক্টরে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে পারছি না। এ ব্যর্থতার দায় এবং খেসারত দিতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক ক্ষতি স্বীকার করতে হচ্ছে জনগণকে। কখনো বেঘোরে প্রাণ হারাতে হচ্ছে কাউকে কাউকে। এত কিছুর পরও সরকার নির্বিকার।
আসলে দেশে সব ক্ষেত্রে সুশাসনের অভাবে আজ এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তাই একথা বলা যায়, সহসাই সড়কে শৃঙ্খলা ফিরবে না; সড়কপথে শৃঙ্খলা দূরপরাহত। এর খেসারত দিতে হবে যাত্রীসাধারণকে বেঘোরে প্রাণ দিয়ে।