ঢাকা , সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::

একটি ঘটনা : কুরআনের দু’টি রুকু

  • আবু সাঈদ
  • আপডেট সময় ০৯:০৪:১৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ জানুয়ারী ২০২৩
  • ১১৪১ বার পড়া হয়েছে

তু’মা ইবনে উবাইরিক মদিনার বনি জাফর গোত্রের মুসলিম পরিচয় প্রদানকারী এক মুনাফিক। সে ছিল অত্যন্ত কুটিল স্বভাবের। মুনাফিক হওয়ার পাশাপাশি চুরি করা, সত্য গোপন করা, অপবাদ দেয়া, খেয়ানত করা, মিথ্যা শপথ করা, মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া ইত্যাদি দোষে ছিল সে দুষ্ট। তার একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে আল্লাহ তায়ালা কুরআনুল কারিমে সূরায়ে নিসার ১০৫ থেকে ১১৫ নম্বর পর্যন্ত ১১টি আয়াত নাজিল করেছেন। আয়াতগুলোতে তার এসব স্বভাবের নিন্দা করা হয়েছে। এগুলোর মন্দ পরিণতির ব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছে। তাকে উপলক্ষ করে সমগ্র মানবতাকে গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

ঘটনার বিবরণ : ‘কাতাদাহ ইবনে নোমান রা: নামক এক সাহাবি ছিলেন। তিনি বর্মসহ কিছু সরঞ্জাম আটার বস্তায় ভরে একটি কামরায় সংরক্ষণ করেছিলেন। তু’মা ইবনে উবাইরিক ছিল সেই সাহাবির প্রতিবেশী। সে বস্তাসহ বর্মটি চুরি করে নিয়ে জায়েদ ইবনে সামিন নামক এক ইহুদির কাছে লুকিয়ে রাখে। দুর্ভাগ্যক্রমে বস্তার একপাশ ছিল ছিদ্র। সেই ছিদ্রপথে আটা ছড়িয়ে পড়ে ইহুদির বাড়ি পর্যন্ত। এ দিকে কাতাদাহ রা: বস্তা যথাস্থানে না পেয়ে খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। তু’মা ইবনে উবাইরিককে জিজ্ঞাসা করলে সে সাফ অস্বীকার করে। কসম খেয়ে বলে, ‘আমি নিইনি এবং এ ব্যাপারে আমি কিচ্ছু জানি না। তখন তাকে ছেড়ে দিয়ে আটার চিহ্ন অনুসরণ করে যেতে থাকেন। যেতে যেতে ইহুদির বাড়িতে গিয়ে সেখানে বর্মটি দেখতে পান। তিনি বর্মটি উদ্ধার করে নিয়ে আসেন।

ইহুদি লোকটিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে সে বলল, আমি চুরি করিনি। তু’মা আমার কাছে বর্মটি রেখে গেছে। ইহুদি লোকটির কথা সত্যায়ন করে বেশ কয়েকজন লোক সাক্ষ্য দিলো। এ দিকে তু’মা এ ঘটনা সম্পূর্ণরূপে অস্বীকার করল। ঘটনার সত্যতা আঁচ করতে পেরে জাফর গোত্রের লোকেরা চতুরতার আশ্রয় নিলো। তারা জোট বেঁধে রাসূলুল্লাহ সা:-এর কাছে গিয়ে আবেদন করল, হে আল্লাহর রাসূল, এ ঘটনার সাথে তু’মার কোনো সম্পর্ক নেই। বর্ম পাওয়া গেছে ইহুদির বাড়িতে, চুরিও করেছে সেই। অতএব আপনি তু’মার পক্ষ হয়ে উকালতি করুন এবং ইহুদিকে দোষী ঘোষণা করুন। অন্যথায় আমাদের গোত্রের কান কাটা যাবে। আল্লাহর রাসূল সা: বাহ্যিক প্রমাণাদি দেখে ইহুদিকে দোষী মনে করলেন এবং ইহুদির ওপর চুরির শাস্তি প্রয়োগ করার মনস্থির করলেন। এরই মাঝে আল্লাহ তায়ালা ইহুদির বক্তব্যের সত্যতা এবং চুরির সাথে তু’মার সম্পৃক্ততার কথা বিবৃত করে কুরআনে পূর্ণ দু’টি রুকু নাজিল করেন।

বর্ণিত আছে, চুরির ঘটনা ফাঁস হয়ে যাওয়ার পর তু’মা মদিনা থেকে পালিয়ে যায়। মক্কায় গিয়ে কাফেরদের সাথে মিশে যায় এবং প্রকাশ্যে কুফুরির ঘোষণা করে। কিন্তু পালিয়ে গিয়েও সে পাপের পরিণতি থেকে বাঁচতে পারেনি। মক্কায় যে মহিলার বাসায় আশ্রয় নিয়েছিল সে মহিলা তার মদিনার কুকীর্তির কথা জানতে পেরে তাকে ঘর থেকে বের করে দেয়। এভাবে সে আশ্রয়হীন অবস্থায় ঘুরতে ঘুরতে একদিন এক ঘরে সিঁধ কেটে চুরি করতে গিয়ে দেয়াল ধসে পড়ে। দেয়ালের নিচে চাপা পড়ে তার করুণ মৃত্যু হয়।

এ ঘটনায় তু’মা ইবনে উবাইরিক এবং তার সম্প্রদায়ের জঘন্য কয়েকটি অপরাধ এবং মন্দ স্বভাবের চিত্র ফুটে উঠেছে।

১. চুরি করা, বিশ্বাসঘাতকতা করা, অন্যের সম্পদ আত্মসাৎ করা; ২. নিজের কৃত অপরাধের দায় অন্যের ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়া; ৩. অন্যায়কারীর পক্ষাবলম্বন করা। তার পক্ষে উকালতি করা। তাকে বাঁচানোর জন্য কূটকৌশলের আশ্রয় নেয়া; ৪. মিথ্যা কসম খাওয়া। কারো পক্ষে মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া; ৫. সত্য গোপন করা। সজ্ঞানে মিথ্যাকে সত্যের মোড়কে উপস্থাপন করা। এসব অপরাধে লিপ্ত হওয়ার ভয়াবহতা।
উপরোল্লিখিত প্রতিটি কাজই কবিরা গোনাহ। যেগুলো দুনিয়া এবং আখিরাতে কঠিন শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এ ছাড়াও এ ব্যাপারে যেসব হুঁশিয়ারি উচ্চারণ হয়েছে সেগুলো হলো-

১. বিশ্বাসঘাতকদের আল্লাহ পছন্দ করেন না;

২. পক্ষাবলম্বনকারীদের বলা হয়েছে, দুনিয়াতে তো তোমরা তাকে সমর্থন করলে; কিন্তু ব্যাপার এখানেই শেষ নয়। কিয়ামতে যখন আল্লাহর আদালতে এ মুকাদ্দমার শুনানি হবে তখন কে তাকে সমর্থন করবে? কে তাকে রক্ষা করবে?

৩. এমন ঘৃণ্য অপরাধের পর যদি যথাযথ প্রক্রিয়ায় তাওবাহ না করে তাহলে আল্লাহ, রাসূল বা মু’মেনদের তেমন ক্ষতি হবে না; বরং এ পাপের বোঝা তাদেরই বহন করতে হবে।

৪. যে নিজে কোনো অপরাধ করে অন্য নিরপরাধ ব্যক্তির ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়- যেমনিভাবে তু’মা চুরি করে ইহুদির ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়েছিল, সে জঘন্য অপবাদ এবং প্রকাশ্য গোনাহর বোঝা বহন করল।

সব মু’মিনের প্রতি সাধারণ নির্দেশনা
আল্লাহ তায়ালা বনি জাফরের ঘৃণ্য এসব কর্মকাণ্ড উল্লেখ করার পর এমন প্রেক্ষাপটে সাধারণ মু’মিনদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কিছু করণীয় নির্ধারণ করে দিয়েছেন।

১। সাম্প্রদায়িকতা, স্বজনপ্রীতি, লোভ কিংবা ভয়ে প্রভাবিত না হয়ে শরিয়ত মোতাবেক ন্যায়সঙ্গত ফায়সালা করা।

২। অপরাধীর পক্ষাবলম্বন পরিহার করা। তার সঙ্গ এবং তার ওপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করা।

৩। যেকোনো মন্দ আচরণ প্রকাশিত হওয়ার ক্ষেত্রে লোকলজ্জার ভয়ের চেয়ে আল্লাহকে বেশি লজ্জা করা। তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা, অন্তর্যামী। প্রকাশ্য-গোপন সবকিছুই তিনি জানেন, দেখেন। তাঁর কাছে কোনো কিছুই গোপন নেই। তাই সব প্রকার মন্দ ও অন্যায় কাজ থেকে সর্বদাই বিরত থাকা।

৪। মন্দ কাজের জন্য কিংবা কারো ক্ষতি সাধনের উদ্দেশ্যে কানাকানি, সলাপরামর্শ না করা।

৫। দু’জন ব্যক্তির মাঝে পারস্পরিক দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হলে আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে তা মীমাংসার চেষ্টা করা।

৬। নিরপরাধ কোনো ব্যক্তির ওপর অপবাদ দেয়া থেকে বিরত থাকা।

৭। যেকোনো ধরনের গোনাহ হয়ে গেলে অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর কাছে যথাযথ প্রক্রিয়ায় তাওবা করা।
আল্লাহ তায়ালা সবাইকে এসব মন্দ স্বভাব থেকে বেঁচে থাকার তাওফিক দান করুন। (আল কুরআন, তাফসিরে জালালাইন, মাআরেফুল কুরআন, সফওয়াতুত তাফাসির)

লেখক : কিশোরগঞ্জ থেকে

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

আজকের সূর্যোদয়

আজকের সূর্যোদয় প্রত্রিকায় আপনাদের স্বাগতম। ‍আমাদের নিউজ পড়ুন এবং বিজ্ঞাপন দিয়ে আমাদের পাশে থাকুন।

বরিশালে মুজিবিয়ানের ৮৭ নেতাকে খুঁজছে গোয়েন্দা সংস্থা

একটি ঘটনা : কুরআনের দু’টি রুকু

আপডেট সময় ০৯:০৪:১৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ জানুয়ারী ২০২৩

তু’মা ইবনে উবাইরিক মদিনার বনি জাফর গোত্রের মুসলিম পরিচয় প্রদানকারী এক মুনাফিক। সে ছিল অত্যন্ত কুটিল স্বভাবের। মুনাফিক হওয়ার পাশাপাশি চুরি করা, সত্য গোপন করা, অপবাদ দেয়া, খেয়ানত করা, মিথ্যা শপথ করা, মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া ইত্যাদি দোষে ছিল সে দুষ্ট। তার একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে আল্লাহ তায়ালা কুরআনুল কারিমে সূরায়ে নিসার ১০৫ থেকে ১১৫ নম্বর পর্যন্ত ১১টি আয়াত নাজিল করেছেন। আয়াতগুলোতে তার এসব স্বভাবের নিন্দা করা হয়েছে। এগুলোর মন্দ পরিণতির ব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছে। তাকে উপলক্ষ করে সমগ্র মানবতাকে গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

ঘটনার বিবরণ : ‘কাতাদাহ ইবনে নোমান রা: নামক এক সাহাবি ছিলেন। তিনি বর্মসহ কিছু সরঞ্জাম আটার বস্তায় ভরে একটি কামরায় সংরক্ষণ করেছিলেন। তু’মা ইবনে উবাইরিক ছিল সেই সাহাবির প্রতিবেশী। সে বস্তাসহ বর্মটি চুরি করে নিয়ে জায়েদ ইবনে সামিন নামক এক ইহুদির কাছে লুকিয়ে রাখে। দুর্ভাগ্যক্রমে বস্তার একপাশ ছিল ছিদ্র। সেই ছিদ্রপথে আটা ছড়িয়ে পড়ে ইহুদির বাড়ি পর্যন্ত। এ দিকে কাতাদাহ রা: বস্তা যথাস্থানে না পেয়ে খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। তু’মা ইবনে উবাইরিককে জিজ্ঞাসা করলে সে সাফ অস্বীকার করে। কসম খেয়ে বলে, ‘আমি নিইনি এবং এ ব্যাপারে আমি কিচ্ছু জানি না। তখন তাকে ছেড়ে দিয়ে আটার চিহ্ন অনুসরণ করে যেতে থাকেন। যেতে যেতে ইহুদির বাড়িতে গিয়ে সেখানে বর্মটি দেখতে পান। তিনি বর্মটি উদ্ধার করে নিয়ে আসেন।

ইহুদি লোকটিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে সে বলল, আমি চুরি করিনি। তু’মা আমার কাছে বর্মটি রেখে গেছে। ইহুদি লোকটির কথা সত্যায়ন করে বেশ কয়েকজন লোক সাক্ষ্য দিলো। এ দিকে তু’মা এ ঘটনা সম্পূর্ণরূপে অস্বীকার করল। ঘটনার সত্যতা আঁচ করতে পেরে জাফর গোত্রের লোকেরা চতুরতার আশ্রয় নিলো। তারা জোট বেঁধে রাসূলুল্লাহ সা:-এর কাছে গিয়ে আবেদন করল, হে আল্লাহর রাসূল, এ ঘটনার সাথে তু’মার কোনো সম্পর্ক নেই। বর্ম পাওয়া গেছে ইহুদির বাড়িতে, চুরিও করেছে সেই। অতএব আপনি তু’মার পক্ষ হয়ে উকালতি করুন এবং ইহুদিকে দোষী ঘোষণা করুন। অন্যথায় আমাদের গোত্রের কান কাটা যাবে। আল্লাহর রাসূল সা: বাহ্যিক প্রমাণাদি দেখে ইহুদিকে দোষী মনে করলেন এবং ইহুদির ওপর চুরির শাস্তি প্রয়োগ করার মনস্থির করলেন। এরই মাঝে আল্লাহ তায়ালা ইহুদির বক্তব্যের সত্যতা এবং চুরির সাথে তু’মার সম্পৃক্ততার কথা বিবৃত করে কুরআনে পূর্ণ দু’টি রুকু নাজিল করেন।

বর্ণিত আছে, চুরির ঘটনা ফাঁস হয়ে যাওয়ার পর তু’মা মদিনা থেকে পালিয়ে যায়। মক্কায় গিয়ে কাফেরদের সাথে মিশে যায় এবং প্রকাশ্যে কুফুরির ঘোষণা করে। কিন্তু পালিয়ে গিয়েও সে পাপের পরিণতি থেকে বাঁচতে পারেনি। মক্কায় যে মহিলার বাসায় আশ্রয় নিয়েছিল সে মহিলা তার মদিনার কুকীর্তির কথা জানতে পেরে তাকে ঘর থেকে বের করে দেয়। এভাবে সে আশ্রয়হীন অবস্থায় ঘুরতে ঘুরতে একদিন এক ঘরে সিঁধ কেটে চুরি করতে গিয়ে দেয়াল ধসে পড়ে। দেয়ালের নিচে চাপা পড়ে তার করুণ মৃত্যু হয়।

এ ঘটনায় তু’মা ইবনে উবাইরিক এবং তার সম্প্রদায়ের জঘন্য কয়েকটি অপরাধ এবং মন্দ স্বভাবের চিত্র ফুটে উঠেছে।

১. চুরি করা, বিশ্বাসঘাতকতা করা, অন্যের সম্পদ আত্মসাৎ করা; ২. নিজের কৃত অপরাধের দায় অন্যের ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়া; ৩. অন্যায়কারীর পক্ষাবলম্বন করা। তার পক্ষে উকালতি করা। তাকে বাঁচানোর জন্য কূটকৌশলের আশ্রয় নেয়া; ৪. মিথ্যা কসম খাওয়া। কারো পক্ষে মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া; ৫. সত্য গোপন করা। সজ্ঞানে মিথ্যাকে সত্যের মোড়কে উপস্থাপন করা। এসব অপরাধে লিপ্ত হওয়ার ভয়াবহতা।
উপরোল্লিখিত প্রতিটি কাজই কবিরা গোনাহ। যেগুলো দুনিয়া এবং আখিরাতে কঠিন শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এ ছাড়াও এ ব্যাপারে যেসব হুঁশিয়ারি উচ্চারণ হয়েছে সেগুলো হলো-

১. বিশ্বাসঘাতকদের আল্লাহ পছন্দ করেন না;

২. পক্ষাবলম্বনকারীদের বলা হয়েছে, দুনিয়াতে তো তোমরা তাকে সমর্থন করলে; কিন্তু ব্যাপার এখানেই শেষ নয়। কিয়ামতে যখন আল্লাহর আদালতে এ মুকাদ্দমার শুনানি হবে তখন কে তাকে সমর্থন করবে? কে তাকে রক্ষা করবে?

৩. এমন ঘৃণ্য অপরাধের পর যদি যথাযথ প্রক্রিয়ায় তাওবাহ না করে তাহলে আল্লাহ, রাসূল বা মু’মেনদের তেমন ক্ষতি হবে না; বরং এ পাপের বোঝা তাদেরই বহন করতে হবে।

৪. যে নিজে কোনো অপরাধ করে অন্য নিরপরাধ ব্যক্তির ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়- যেমনিভাবে তু’মা চুরি করে ইহুদির ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়েছিল, সে জঘন্য অপবাদ এবং প্রকাশ্য গোনাহর বোঝা বহন করল।

সব মু’মিনের প্রতি সাধারণ নির্দেশনা
আল্লাহ তায়ালা বনি জাফরের ঘৃণ্য এসব কর্মকাণ্ড উল্লেখ করার পর এমন প্রেক্ষাপটে সাধারণ মু’মিনদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কিছু করণীয় নির্ধারণ করে দিয়েছেন।

১। সাম্প্রদায়িকতা, স্বজনপ্রীতি, লোভ কিংবা ভয়ে প্রভাবিত না হয়ে শরিয়ত মোতাবেক ন্যায়সঙ্গত ফায়সালা করা।

২। অপরাধীর পক্ষাবলম্বন পরিহার করা। তার সঙ্গ এবং তার ওপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করা।

৩। যেকোনো মন্দ আচরণ প্রকাশিত হওয়ার ক্ষেত্রে লোকলজ্জার ভয়ের চেয়ে আল্লাহকে বেশি লজ্জা করা। তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা, অন্তর্যামী। প্রকাশ্য-গোপন সবকিছুই তিনি জানেন, দেখেন। তাঁর কাছে কোনো কিছুই গোপন নেই। তাই সব প্রকার মন্দ ও অন্যায় কাজ থেকে সর্বদাই বিরত থাকা।

৪। মন্দ কাজের জন্য কিংবা কারো ক্ষতি সাধনের উদ্দেশ্যে কানাকানি, সলাপরামর্শ না করা।

৫। দু’জন ব্যক্তির মাঝে পারস্পরিক দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হলে আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে তা মীমাংসার চেষ্টা করা।

৬। নিরপরাধ কোনো ব্যক্তির ওপর অপবাদ দেয়া থেকে বিরত থাকা।

৭। যেকোনো ধরনের গোনাহ হয়ে গেলে অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর কাছে যথাযথ প্রক্রিয়ায় তাওবা করা।
আল্লাহ তায়ালা সবাইকে এসব মন্দ স্বভাব থেকে বেঁচে থাকার তাওফিক দান করুন। (আল কুরআন, তাফসিরে জালালাইন, মাআরেফুল কুরআন, সফওয়াতুত তাফাসির)

লেখক : কিশোরগঞ্জ থেকে