ঢাকা , সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::

এক যুগেও ফেলানী হত্যার বিচার পায়নি পরিবার

  • বাংলাদেশ ডেস্ক :
  • আপডেট সময় ০৭:০৪:৩১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৬ জানুয়ারী ২০২৩
  • ১৩৬৯ বার পড়া হয়েছে

বহুল আলোচিত ফেলানী হত্যার এক যুগ পূর্তি হতে চলল। এখনো সন্তান হত্যার বিচার পায়নি পরিবার। দীর্ঘসূত্রিতার মধ্য দিয়ে ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টে এখনো চলছে তার বিচারিক কার্যক্রম। প্রিয় সন্তান হত্যার বিচারে এখনো আশায় বুক বেঁধে আছে পরিবার।

জানা যায়, নুরুল ইসলাম ও জাহানারা বেগম দম্পতির বড় মেয়ে কিশোরী ফেলানী। তারা কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার বাসিন্দা। ভারতে ইটভাটায় কাজের সুবাদে এ দম্পতি স্বপরিবারে দেশটির বঙ্গাই গাঁও এলাকায় থাকত। পরে ফেলানীর বিয়ে ঠিক হলে তারা বাংলাদেশে ফিরতে চায়। তারা উপজেলার উত্তর অনন্তপুর সীমান্তের ৯৪৭/৩ নম্বর পিলারের পাশ দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা করে। বাবার সাথে বাঁশের মই বেয়ে কাঁটাতার পার হওয়ার সময় ভারতীয় চৌধুরীহাট ক্যাম্পের টহলরত বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষ তাকে গুলি করে হত্যা করে। এরপর প্রায় পাঁচ ঘণ্টা কাঁটাতারের বেড়ায় ঝুলে থাকে ফেলানীর লাশ।

২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি ওই নির্মম হত্যাকাণ্ড ঘটে। এ ঘটনায় গণমাধ্যমসহ বিশ্বের মানবাধিকার সংগঠনগুলোর তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে ভারত। শেষে বাধ্য হয়ে ২০১৩ সালের ১৩ আগস্ট ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার জেলায় বিএসএফের ১৮১ সদর দফতরের জেনারেল সিকিউরিটি ফোর্সেস আদালতে ফেলানী হত্যার বিচারকাজ শুরু হয়। তখন ফেলানীর বাবা নুরুল ইসলাম ও মামা আব্দুল হানিফ আদালতে সাক্ষ্য দেন। আদালত ওই বছরের ৫ সেপ্টেম্বর আসামি অমিয় ঘোষকে বেকসুর খালাস দিয়ে দেয়।

রায় প্রত্যাখ্যান করে ফেলানীর বাবা পুনরায় বিচারের জন্য ভারতীয় হাইকমিশনারের মাধ্যমে ভারত সরকারের নিকট আবেদন করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৪ সালের ২২ সেপ্টেম্বর পুনরায় বিচারকাজ শুরু হয়। ফেলানীর বাবা নুরুল ইসলাম ২০১৪ সালের ১৭ নভেম্বর আবারো আদালতে সাক্ষ্য দেন। ২০১৫ সালের ২ জুলাই আদালত আবারো অমিয় ঘোষকে বেকসুর খালাস দেন।

এ ঘটনায় ২০১৫ সালে আইন ও সালিশ কেন্দ্র এবং ভারতের মানবাধিকার সুরক্ষা মঞ্চ (মাসুম) আরো একটি ক্ষতিপূরণ মামলা করে। ওই বছরের ৩১ আগস্ট ভারতের জাতীয় মানবাধিকার কমিশন দেশটির সরকারকে ফেলানীর পরিবারের ক্ষতিপূরণ হিসেবে পাঁচ লাখ রুপি দেয়ার অনুরোধ করেন। এর জবাবে ওই দেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ফেলানীর বাবা নুরুল ইসলামকে দায়ী করে বক্তব্য দেয়।

এর পরিপ্রেক্ষিতে মানবাধিকার সংগঠন মাসুম ফেলানীর বাবার পক্ষে ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টে রিট দাখিল করে। পরে ২০১৫ সালের ৬ অক্টোবর রিটের শুনানি শুরু হয়। কিন্তু ২০১৬, ‘১৭ ও ’১৮ সালে কয়েক দফা পিছিয়ে যায় ওই শুনানি। শেষে ২০২০ সালের ১৮ মার্চ আবারো শুনানির দিন ধার্য করা হয়। কিন্তু ওই শুনানি আজ পর্যন্ত আর হয়নি।

এদিকে এক যুগ পেরিয়ে গেলেও মেয়ে হত্যার বিচার না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন বাবা নুরুল ইসলাম ও মা জাহানারা বেগম। তারা বলেন, আল্লাহ যেন কারো সন্তানের এমন মৃত্যু না দেন। চোখের সামনে আমাদের সন্তানকে পাখির মতো গুলি করে মেরে ফেলল বিএসএফ। অথচ ১২ বছর পেরিয়ে গেলেও আমরা এর কোনো বিচার পেলাম না।

নিহত ফেলানীর প্রতিবেশী ফজলুল হক ও মরিয়ম বেগম জানান, ফেলানী হত্যার পর কিছুদিন সরকারি ও বেসরকারিভাবে অনেকেই পরিবারটির খোঁজ-খবর নেয়। এখন আর কেউ তাদের খবর রাখে না।

এ ব্যাপারে কুড়িগ্রাম জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আব্রাহাম লিংকন বলেন, করোনার কারণে ফেলানী হত্যার বিচার ঝুলে ছিল। দু’রাষ্ট্রের বন্ধুত্ব সম্পর্ক অটুট রাখতে ভারতের উচ্চ আদালত বিচারটি দ্রুত নিষ্পত্তির প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে বলে আমি আশা করি।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

আজকের সূর্যোদয়

আজকের সূর্যোদয় প্রত্রিকায় আপনাদের স্বাগতম। ‍আমাদের নিউজ পড়ুন এবং বিজ্ঞাপন দিয়ে আমাদের পাশে থাকুন।

বরিশালে মুজিবিয়ানের ৮৭ নেতাকে খুঁজছে গোয়েন্দা সংস্থা

এক যুগেও ফেলানী হত্যার বিচার পায়নি পরিবার

আপডেট সময় ০৭:০৪:৩১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৬ জানুয়ারী ২০২৩

বহুল আলোচিত ফেলানী হত্যার এক যুগ পূর্তি হতে চলল। এখনো সন্তান হত্যার বিচার পায়নি পরিবার। দীর্ঘসূত্রিতার মধ্য দিয়ে ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টে এখনো চলছে তার বিচারিক কার্যক্রম। প্রিয় সন্তান হত্যার বিচারে এখনো আশায় বুক বেঁধে আছে পরিবার।

জানা যায়, নুরুল ইসলাম ও জাহানারা বেগম দম্পতির বড় মেয়ে কিশোরী ফেলানী। তারা কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার বাসিন্দা। ভারতে ইটভাটায় কাজের সুবাদে এ দম্পতি স্বপরিবারে দেশটির বঙ্গাই গাঁও এলাকায় থাকত। পরে ফেলানীর বিয়ে ঠিক হলে তারা বাংলাদেশে ফিরতে চায়। তারা উপজেলার উত্তর অনন্তপুর সীমান্তের ৯৪৭/৩ নম্বর পিলারের পাশ দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা করে। বাবার সাথে বাঁশের মই বেয়ে কাঁটাতার পার হওয়ার সময় ভারতীয় চৌধুরীহাট ক্যাম্পের টহলরত বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষ তাকে গুলি করে হত্যা করে। এরপর প্রায় পাঁচ ঘণ্টা কাঁটাতারের বেড়ায় ঝুলে থাকে ফেলানীর লাশ।

২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি ওই নির্মম হত্যাকাণ্ড ঘটে। এ ঘটনায় গণমাধ্যমসহ বিশ্বের মানবাধিকার সংগঠনগুলোর তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে ভারত। শেষে বাধ্য হয়ে ২০১৩ সালের ১৩ আগস্ট ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার জেলায় বিএসএফের ১৮১ সদর দফতরের জেনারেল সিকিউরিটি ফোর্সেস আদালতে ফেলানী হত্যার বিচারকাজ শুরু হয়। তখন ফেলানীর বাবা নুরুল ইসলাম ও মামা আব্দুল হানিফ আদালতে সাক্ষ্য দেন। আদালত ওই বছরের ৫ সেপ্টেম্বর আসামি অমিয় ঘোষকে বেকসুর খালাস দিয়ে দেয়।

রায় প্রত্যাখ্যান করে ফেলানীর বাবা পুনরায় বিচারের জন্য ভারতীয় হাইকমিশনারের মাধ্যমে ভারত সরকারের নিকট আবেদন করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৪ সালের ২২ সেপ্টেম্বর পুনরায় বিচারকাজ শুরু হয়। ফেলানীর বাবা নুরুল ইসলাম ২০১৪ সালের ১৭ নভেম্বর আবারো আদালতে সাক্ষ্য দেন। ২০১৫ সালের ২ জুলাই আদালত আবারো অমিয় ঘোষকে বেকসুর খালাস দেন।

এ ঘটনায় ২০১৫ সালে আইন ও সালিশ কেন্দ্র এবং ভারতের মানবাধিকার সুরক্ষা মঞ্চ (মাসুম) আরো একটি ক্ষতিপূরণ মামলা করে। ওই বছরের ৩১ আগস্ট ভারতের জাতীয় মানবাধিকার কমিশন দেশটির সরকারকে ফেলানীর পরিবারের ক্ষতিপূরণ হিসেবে পাঁচ লাখ রুপি দেয়ার অনুরোধ করেন। এর জবাবে ওই দেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ফেলানীর বাবা নুরুল ইসলামকে দায়ী করে বক্তব্য দেয়।

এর পরিপ্রেক্ষিতে মানবাধিকার সংগঠন মাসুম ফেলানীর বাবার পক্ষে ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টে রিট দাখিল করে। পরে ২০১৫ সালের ৬ অক্টোবর রিটের শুনানি শুরু হয়। কিন্তু ২০১৬, ‘১৭ ও ’১৮ সালে কয়েক দফা পিছিয়ে যায় ওই শুনানি। শেষে ২০২০ সালের ১৮ মার্চ আবারো শুনানির দিন ধার্য করা হয়। কিন্তু ওই শুনানি আজ পর্যন্ত আর হয়নি।

এদিকে এক যুগ পেরিয়ে গেলেও মেয়ে হত্যার বিচার না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন বাবা নুরুল ইসলাম ও মা জাহানারা বেগম। তারা বলেন, আল্লাহ যেন কারো সন্তানের এমন মৃত্যু না দেন। চোখের সামনে আমাদের সন্তানকে পাখির মতো গুলি করে মেরে ফেলল বিএসএফ। অথচ ১২ বছর পেরিয়ে গেলেও আমরা এর কোনো বিচার পেলাম না।

নিহত ফেলানীর প্রতিবেশী ফজলুল হক ও মরিয়ম বেগম জানান, ফেলানী হত্যার পর কিছুদিন সরকারি ও বেসরকারিভাবে অনেকেই পরিবারটির খোঁজ-খবর নেয়। এখন আর কেউ তাদের খবর রাখে না।

এ ব্যাপারে কুড়িগ্রাম জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আব্রাহাম লিংকন বলেন, করোনার কারণে ফেলানী হত্যার বিচার ঝুলে ছিল। দু’রাষ্ট্রের বন্ধুত্ব সম্পর্ক অটুট রাখতে ভারতের উচ্চ আদালত বিচারটি দ্রুত নিষ্পত্তির প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে বলে আমি আশা করি।