কলকাতার আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে ধর্ষণ ও হত্যার শিকার এক নারী চিকিৎসকের বিচারের দাবিতে ভারতজুড়ে বিক্ষোভ অব্যাহত রেখেছেন চিকিৎসক ও মেডিক্যাল শিক্ষার্থীরা।
শুক্রবার (১৬ আগস্ট) কলকাতার লেডি হার্ডিঞ্জ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল এবং আরএমএল হাসপাতালের জুনিয়র চিকিৎসকরা বিক্ষোভ দেখান। এ ঘটনার প্রতিবাদে ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ স্লোগান দেন।
আরএমএল হাসপাতালের ডা: আকাশ জনসাধারণ ও চিকিৎসকদের কাছে আবেদন জানিয়েছেন, তারা যেন বিপুল সংখ্যায় গিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে তাদের সমস্যাগুলো সরকারের সামনে তুলে ধরেন এবং ধর্ষণ ও হত্যা শিকার নারী চিকিৎসকের জন্য ন্যায়বিচার চান।
তিনি বলেন, ‘আমি সব চিকিৎসক ও সাধারণ মানুষের কাছে আবেদন করছি, আপনারা বিপুল সংখ্যায় আসুন, যাতে আমরা শান্তিপূর্ণভাবে সরকারের সামনে আমাদের সমস্যাগুলি তুলে ধরতে পারি এবং বাংলায় (পশ্চিমবঙ্গে) আমাদের সহকর্মীর জন্য ন্যায়বিচার চাইতে পারি, যিনি এই বর্বরোচিত ও বীভৎস ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন।’
‘বাংলায় আমাদের প্রতিবাদী বন্ধুদেরও বলতে চাই যে তারা এই লড়াইয়ে একা নন, সারা দেশের সমস্ত চিকিৎসকরা তাদের সাথে সংহতি প্রকাশ করেছেন। আমরা সরকারের কাছে কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা আইন দাবি করছি। সরকারের কাছ থেকে দৃঢ় পদক্ষেপ করা হবে বলে আশ্বাস না পাওয়া পর্যন্ত আমাদের প্রতিবাদ চলবে।’
এদিকে, পাঞ্জাবের অমৃতসরের সরকারি মেডিকেল কলেজের রেসিডেন্ট ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন শুক্রবার থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত বহির্বিভাগের চিকিৎসা বিভাগ, অপারেশন থিয়েটার ও ওয়ার্ডসহ সমস্ত অপ্রয়োজনীয় এবং বিকল্প হাসপাতাল পরিষেবা স্থগিত রাখার ঘোষণা দিয়েছে।
অমৃতসরের গুরু নানক দেব হাসপাতালের সামনে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন চিকিৎসকরা।
কেরালা মেডিক্যাল পোস্টগ্র্যাজুয়েটস অ্যাসোসিয়েশন (কেএমপিজিএ), শ্রী চিত্রা তিরুনাল ইনস্টিটিউট ফর মেডিকেল সায়েন্সেস অ্যান্ড টেকনোলজি (এসসিটিআইএমএসটি), আঞ্চলিক ক্যান্সার কেন্দ্র (আরসিসি), ডেন্টাল পিজি অ্যাসোসিয়েশন, হাউস সার্জনস অ্যাসোসিয়েশন এবং বিভিন্ন মেডিকেল কলেজের ছাত্র ইউনিয়নের আবাসিক চিকিৎসক সমিতি রাজ্যটিতে ২৪ ঘণ্টার ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে।
সরকারি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে নিরাপদ পরিবেশের দাবিতে নায়ার হাসপাতাল চত্বরে মৌন প্রতিবাদ চালিয়ে যাচ্ছেন স্নাতক ও স্নাতকোত্তর মেডিক্যাল, ডেন্টাল ও প্যারামেডিক্যাল শিক্ষার্থীরা। বন্ধ করে দেয়া হয়েছে সেখানকার বহির্বিভাগের পরিষেবা।
তামিলনাড়ুর ত্রিচির মহাত্মা গান্ধী মেমোরিয়াল সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকরা কালো ব্যাজ পরে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন।
ত্রিচি ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের ডা: অরুলেশ্বরন বলেন, ‘আরজি কর মেডিক্যাল হাসপাতাল ও কলেজের নারী চিকিৎসকের মৃত্যুর নিন্দা জানাতে এবং চিকিৎসাকর্মীদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে আমরা এই প্রতিবাদ করছি। যথাযথ তদন্ত করে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব অপরাধীদের শাস্তি দিতে আমরা কেন্দ্রীয় সরকারকে অনুরোধ করছি।’
তিনি বলেন, ‘চিকিৎসকদের দুই স্তরের নিরাপত্তা দিতে হবে। এতে আরো বেশি শিক্ষার্থী এই পেশায় আসতে উৎসাহিত হবে।’
এছাড়া সোশ্যালিস্ট ইউনিটি সেন্টার অব ইন্ডিয়ার (কমিউনিস্ট) পক্ষ থেকে শিলিগুড়িতে ১২ ঘণ্টার সাধারণ ধর্মঘটের ডাক দেয়া হয়েছে। ধর্মঘটের জেরে শিলিগুড়ির স্বাভাবিক জনজীবন বিঘ্নিত হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার (১৫ আগস্ট) সন্ধ্যা ৬টা থেকেই শহরের বেশির ভাগ দোকানপাট বন্ধ রয়েছে।
এসইউসিআই (কমিউনিস্ট) সদস্য ড. শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘আজকের এই হরতাল ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে আমাদের আহ্বানে সাড়া দিয়েছে এবং মেডিক্যাল কলেজ এলাকার মতো শিলিগুড়িজুড়ে মানুষ যানবাহন বের করেনি, তারা দোকানপাটও খোলেনি। আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের জঘন্য ঘটনার প্রতিবাদে আমরা এই ধর্মঘটের ডাক দিয়েছি।’
উল্লেখ্য, গত শুক্রবার কলকাতার আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের জরুরি বিভাগের চারতলায় রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার হয় এক নারী চিকিৎসকের দেহ। ওই চিকিৎসককে ধর্ষণের পর হত্যার অভিযোগ তুলে এ ঘটনার পর আন্দোলনে শামিল হন আরজি করের জুনিয়র চিকিৎসকরা।
পরে সেই আন্দোলনে যোগ দেন রাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতালের অন্য চিকিৎসকরা। তবে এই আন্দোলন এখন শুধু চিকিৎসকদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই, পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে শুরু করে গোটা ভারতজুড়ে এখন সাধারণ মানুষের মধ্যে তা ছড়িয়ে পড়েছে।
সূত্র : এএনআই/ইউএনবি