ঢাকা , সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::

কায়রো আন্তর্জাতিক বইমেলা : নেই বাংলাদেশী স্টল, ক্ষোভে ফুঁসছে বাঙালি দর্শনার্থীরা

  • সূর্যোদয় ডেস্ক:
  • আপডেট সময় ০৬:২০:৫৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ১ ফেব্রুয়ারী ২০২৩
  • ১১৩৯ বার পড়া হয়েছে

মিসরের কায়রো আন্তর্জাতিক বইমেলা পুরো মধ্যপ্রাচ্যে সবচেয়ে বড় মেলা এবং পৃথিবীর ২য় আন্তর্জাতিক বৃহত্তম বইমেলা। মিসরের কায়রোর আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী কেন্দ্রে শুরু হয়েছে পক্ষকালব্যাপী ‘৫৪তম কায়রো আন্তর্জাতিক বইমেলা-২০২৩’। এবারের মেলায় অংশ নিচ্ছেন ১ হাজার ৪৭ জন প্রকাশক। এর মধ্যে ৭০৮ জন মিসরীয় এবং ৩৪০ জন বিদেশী।

১৯৬৯ সালে এই বইমেলার যাত্রা শুরু হয়। কায়রো শহর প্রতিষ্ঠার ১০০০ বছর পূর্তি উপলক্ষে তৎকালীন সংস্কৃতিমন্ত্রী এই বইমেলার সূচনা করেন। কালক্রমে এই বইমেলার পরিধি ও সমৃদ্ধি এতটাই বৃদ্ধি পায় যে, বর্তমানে কোনো কোনো সমীক্ষায় একে ‘ফ্রাঙ্কফুট বইমেলা’র পর পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম বইমেলার স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। প্রতি বছর জানুয়ারিতে শিক্ষাবর্ষের প্রথম পরীক্ষার ছুটিতে এই বইমেলা অনুষ্ঠিত হয়।

মধ্যপ্রাচ্যের সব দেশসহ মেলায় ইরিত্রিয়া, ভারত, ঘানা, কুয়েত, মরক্কো, আফ্রিকান পাবলিশার্স নেটওয়ার্ক, কুয়েতি রিসার্চ অ্যান্ড স্টাডিজ সেন্টার এবং আমিরাত সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ অ্যান্ড রিসার্চের সাথে প্রথমবারের মতো অংশগ্রহণ করেছে হাঙ্গেরি ও ডোমিনিকান রিপাবলিক এই মেলায় অংশগ্রহণ করে।

এবারের বইমেলা প্রায় আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত ও পাকিস্তানের চার নাম্বার জেনাহ-তে স্টল থাকলেও সুযোগ হয়নি বাংলাদেশী কোনো স্টলের, তাই বইমেলায় ঘুরতে আবেগ এবং ক্ষোভে ফুঁসছে বাংলাদেশী দর্শনার্থীরা। এই বিষয়ে আমরা জানতে চেয়েছিলাম রাষ্ট্রদূত মুনিরুল ইসলামের কাছে কিন্তু তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

পরে দূতালয় প্রধান ইসমাইল হোসেন বলেন, এই বিষয়ে কিছু জানি না, তাই মন্তব্য করা সমাচীন নয়। যদিও দূতাবাস আমাদেরকে আশ্বাস দিয়েছিল- এবার তারা একটি স্টল দেবেন কিন্তু তা স্বপ্নই থেকে গেল প্রবাসী ছাত্রছাত্রীদের জন্য।

সহস্রাধিক নিয়মতান্ত্রিক প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের দূতাবাস ও কালচারাল সেন্টারও প্রদর্শনীতে অংশ নিয়ে থাকে সেখানে। মিসরের সাধারণ জনগণের বাইরে এই বইমেলার প্রতি সবচেয়ে বেশি আগ্রহী থাকে বিদেশী ছাত্রছাত্রীরা। শাস্ত্রীয় কিতাবাদি ছাড়াও নানা দুর্লভ বইয়ের সন্ধান মেলে সেখানে।

লেখক –পাঠক–প্রকাশকের সেতুবন্ধন ঘটে এই মিলনমেলায়। বর্তমানে বাংলাদেশে আরবি কিতাবের যে সহজলভ্যতা দেখা যাচ্ছে- এর অন্যতম উৎস হলো কায়রোর এই বইমেলা।

অর্ধ শতাব্দীকাল ধরে চলে আসা এই বইমেলা এখন আর নিছক বই বিক্রিতেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। বই বিক্রি ছাড়াও সাংস্কৃতিক বিভিন্ন কর্মসূচির কেন্দ্রবিন্দু এটি এখন। সেজন্য সরকারি–বেসরকারি উদ্যোগে বইমেলা মিলনায়তনে চলে সভা–সেমিনার, কবিতার আসর, নাট্যশিল্প, ডকুমেন্টারিসহ সাহিত্য–সাংস্কৃতিক নানা প্রোগ্রাম। মুসলমানদের পাশাপাশি খ্রিষ্টান ধর্মের অনুসারিদের জন্যও রয়েছে পৃথক ব্যবস্থা। দুঃখজনক হলেও সত্যি যে পৃথিবীর ইতিহাসে যা কখনো ঘটেনি তা ঘটেছে এবারের বইমেলায়; মিসরে সব কিছুর দাম আকাশছোঁয়া, তাই বই বিক্রি হচ্ছে কিস্তিতে।

মানুষ সাধারণত টেলিভিশন, রেফ্রিজারেটর, গাড়ি, বাড়ির মতো দামি জিনিস কিস্তিতে কিনতে অভ্যস্ত। কিন্তু মিসরে এখন বইও বিক্রি হচ্ছে কিস্তিতে। সব কিছুর দাম আকাশছোঁয়া হয়ে যাওয়ার কারণেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন প্রকাশকরা। খবর বিবিসির।

সেফসাফা প্রকাশনা হাউসের মোহাম্মদ এল-বালি বলেন, মিসরে বই এখন বিলাসবহুল পণ্যে পরিণত হয়েছে। এটি খাবারের মতো মৌলিক চাহিদার পণ্য নয় এবং মানুষ বিলাসী পণ্য কিনছে না।

কায়রো আন্তর্জাতিক বইমেলা থেকে কথাগুলো বলছিলেন তিনি। মেলাটি সবার জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। গত বছর প্রায় ২০ লাখ মানুষ এই মেলায় গিয়েছিলেন।

জানা গেছে, মিসরে বইয়ের দাম দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে। সে কারণে অনেক লেখক তাদের লেখায় চরিত্র ও বিবরণ কাটছাঁট করছেন।

এল-বালি জানান, দেশটিতে কাগজ ও কালির দাম ব্যাপকভাবে বেড়েছে। তাই তিনি বিদেশে বই ছাপানোর দিকে ঝুঁকেছেন এবং কম কপি তৈরি করছেন। কারণ তিনি মনে করেন, বইয়ের চাহিদাও ক্রমেই কমে যাবে।

কায়রোর এ বইমেলা আরব বিশ্বের সবচেয়ে পুরোনো ও বৃহত্তম। প্রকাশনা শিল্পের জন্য এটি একটি বড় সুযোগ। কিন্তু এ বছর মেলায় ক্রেতাদের আনাগোনা কম বলে মনে করা হচ্ছে। সে জন্যই ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে কিস্তিতে বই কেনার সুযোগ রাখা হয়েছে।

মিসরে বইমেলাকে কেন্দ্র করে ইসলামী সভ্যতা–সংস্কৃতির বিকাশে অন্যতম ভূমিকা পালন করে আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়। আল আজহারের সুবিশাল প্যাভিলিয়নে প্রকাশিত বই বিক্রির কর্নার ছাড়াও থাকে লেকচার কর্নার, ফতোয়া কর্নার, নারী ও শিশু কর্নার, মাখতুত ও ক্যালিওগ্রাফি প্রদর্শনী ও মিডিয়া ডেস্ক।

মেলায় প্রতিদিন আজহারের প্রবীন শিক্ষকগণ সমসাময়িক মতানৈক্যপূর্ণ বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা পেশ করেন। ফতোয়া কর্নারে অভিজ্ঞ মুফতিগণ সারাদিন জনসাধরণের জীবনমুখী নানা জিজ্ঞাসার জবাব দেন। নারী ও শিশু কর্নারে থাকে দাম্পত্যজীবন ঘনিষ্ট শিষ্টাচারমূলক অনুষ্ঠান এবং শিশুদের জন্য চিত্রাঙ্কন–ক্যালিওগ্রাফি প্রশিক্ষণ ও ইসলামী ইতিহাসের সচিত্র বর্ণনা।

সাম্প্রতিককালে আরবের অন্যান্য দেশেও বইমেলা জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। দেশগুলোতে বইমেলা একটি গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক এবং সামাজিক ভূমিকা পালন করে আসছে। জনগণের একটি বড় অংশ অধীর আগ্রহে বইমেলার জন্য প্রতীক্ষায় থাকে। কারণ এর মাধ্যমে নিত্যনতুন নানামুখী বইয়ের পাশাপাশি সংস্কৃতির বিকাশ ও অগ্রগতি সম্পর্কে জানা যায়। জ্ঞান চর্চা ও সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির সাথে সাথে প্রকাশনাশিল্পের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিরও গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম এই বইমেলাগুলো।

বাংলাদেশে একসময় বইমেলা বলতে বাংলা একাডেমির একুশে বইমেলাকেই বোঝানো হতো। সরকারি উদ্যোগে আয়োজিত এই বইমেলা সর্বসাধারণের জন্য সর্বজনীন হওয়ার কথা থাকলেও এক শ্রেণির তথাকথিত বুদ্ধিজীবী ও প্রশাসনিক কর্মকর্তার জন্য তা হয়ে উঠেনি। অনেকটা ইচ্ছাকৃতভাবেই ইসলামী প্রকাশনী ও ধর্মীয় বইপুস্তককে উপেক্ষা করা হয়েছে। কায়রো আন্তর্জাতিক বইমেলার সাথে বাংলাদেশের মেলাগুলোর মৌলিক পার্থক্যটা এই বিভাজনের ক্ষেত্রেই। সেখানে একই ছাদের নিচে সব ধরনের প্রকাশনীর অবস্থান সম্ভব হলেও বাংলাদেশে এটা হতে দেয়া হয়নি। এর ফলে বাংলাদেশের বইমেলাগুলো সব পেশা ও শ্রেণির মানুষের মাঝে সেতুবন্ধনের মাধ্যম হয়নি কখনো। বরং ক্ষেত্রবিশেষ নানাভাবে নিগ্রহের শিকারও হতে হয়েছে বিভিন্নজনকে। ফলশ্রুতিতে ব্যক্তিগত উদ্যোগে ইসলামী বইমেলা আয়োজন শুরু হয়েছে এবং গত এক দশকে এর জনপ্রিয়তা রাজধানীর বাইরে জেলাশহরগুলোতে ছড়িয়ে পড়েছে। সুস্থ সংস্কৃতির বিকাশ ও ঐশী জ্ঞানের প্রসারে এর ভূমিকা নিঃসন্দেহে ইতিবাচক এবং এর সাথে সংশ্লিষ্ট সকলেই ধন্যবাদের যোগ্য।

বৈশ্বিক মন্দা ও যুদ্ধের ডামাডোলে বর্তমানে বাংলাদেশের ইসলামী প্রকাশনা সেক্টর নিঃসন্দেহে মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতি ও স্থবিরতার শিকার। পাশাপাশি আধুনিক প্রযুক্তির উৎকর্ষের দরুণ মানুষ দিনদিন বইপাঠ থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। শিশু-কিশোররা পাঠ্যপুস্তকের পরিসীমায় তাদের পড়াশোনা সীমাবদ্ধ করে ব্যস্ত হয়ে উঠছে নানাবিধ প্রযুক্তির খেলায়। এভাবে গড়ে উঠছে বইবিমুখ সমাজ, আর এর সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়ছে শিক্ষা-শিল্প–সাহিত্য–সংস্কৃতি সর্বক্ষেত্রে। তাই ইসলামী বইমেলার আয়োজকদের উচিত যুবশ্রেণির জন্য বিনোদনমূলক আকর্ষণীয় কর্মসূচির পাশাপাশি ইলমি ও ফিকরি কর্মসূচি রাখা এবং শুধু প্রকাশনীনির্ভর মেলা না করে শিক্ষামূলক–সামাজিক-ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান–সংগঠন ও ব্যক্তিত্বদের এতে অংশগ্রহণ বৃদ্ধি করা। পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের বাংলাদেশ শাখার প্রদর্শনীরও ব্যবস্থা রাখা।

বলা হয় শিল্প-সাহিত্য সমাজ বদলের হাতিয়ার। প্রত্যক্ষভাবে না হলেও পরোক্ষভাবে কথাটি অবশ্যই সত্যি। তাই সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের মধ্যে বেশি বেশি সুশিক্ষা ও আদর্শের বই পড়া হলে আমরা আমাদের মানসিকতার উন্নয়ন ঘটাতে পারব। প্রবাসী বাঙ্গালী ছাত্রছাত্রীরা মনে করে দেশীয় সংস্কৃতিকে বিশ্বময় ছড়িয়ে দিতে হলে সরকার এবং কূটনৈতিক মিশনের উচিত আন্তর্জাতিক বৃহত্তম এই বইমেলায় একটি স্টল বরাদ্দ নিয়ে সেখানে দেশ বিখ্যাত লেখক-লেখিকাদের বই বিক্রির সুযোগ করে দেয়া, যাতে করে বাঙালি সংস্কৃতি ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বময়।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

আজকের সূর্যোদয়

আজকের সূর্যোদয় প্রত্রিকায় আপনাদের স্বাগতম। ‍আমাদের নিউজ পড়ুন এবং বিজ্ঞাপন দিয়ে আমাদের পাশে থাকুন।

বরিশালে মুজিবিয়ানের ৮৭ নেতাকে খুঁজছে গোয়েন্দা সংস্থা

কায়রো আন্তর্জাতিক বইমেলা : নেই বাংলাদেশী স্টল, ক্ষোভে ফুঁসছে বাঙালি দর্শনার্থীরা

আপডেট সময় ০৬:২০:৫৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ১ ফেব্রুয়ারী ২০২৩

মিসরের কায়রো আন্তর্জাতিক বইমেলা পুরো মধ্যপ্রাচ্যে সবচেয়ে বড় মেলা এবং পৃথিবীর ২য় আন্তর্জাতিক বৃহত্তম বইমেলা। মিসরের কায়রোর আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী কেন্দ্রে শুরু হয়েছে পক্ষকালব্যাপী ‘৫৪তম কায়রো আন্তর্জাতিক বইমেলা-২০২৩’। এবারের মেলায় অংশ নিচ্ছেন ১ হাজার ৪৭ জন প্রকাশক। এর মধ্যে ৭০৮ জন মিসরীয় এবং ৩৪০ জন বিদেশী।

১৯৬৯ সালে এই বইমেলার যাত্রা শুরু হয়। কায়রো শহর প্রতিষ্ঠার ১০০০ বছর পূর্তি উপলক্ষে তৎকালীন সংস্কৃতিমন্ত্রী এই বইমেলার সূচনা করেন। কালক্রমে এই বইমেলার পরিধি ও সমৃদ্ধি এতটাই বৃদ্ধি পায় যে, বর্তমানে কোনো কোনো সমীক্ষায় একে ‘ফ্রাঙ্কফুট বইমেলা’র পর পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম বইমেলার স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। প্রতি বছর জানুয়ারিতে শিক্ষাবর্ষের প্রথম পরীক্ষার ছুটিতে এই বইমেলা অনুষ্ঠিত হয়।

মধ্যপ্রাচ্যের সব দেশসহ মেলায় ইরিত্রিয়া, ভারত, ঘানা, কুয়েত, মরক্কো, আফ্রিকান পাবলিশার্স নেটওয়ার্ক, কুয়েতি রিসার্চ অ্যান্ড স্টাডিজ সেন্টার এবং আমিরাত সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ অ্যান্ড রিসার্চের সাথে প্রথমবারের মতো অংশগ্রহণ করেছে হাঙ্গেরি ও ডোমিনিকান রিপাবলিক এই মেলায় অংশগ্রহণ করে।

এবারের বইমেলা প্রায় আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত ও পাকিস্তানের চার নাম্বার জেনাহ-তে স্টল থাকলেও সুযোগ হয়নি বাংলাদেশী কোনো স্টলের, তাই বইমেলায় ঘুরতে আবেগ এবং ক্ষোভে ফুঁসছে বাংলাদেশী দর্শনার্থীরা। এই বিষয়ে আমরা জানতে চেয়েছিলাম রাষ্ট্রদূত মুনিরুল ইসলামের কাছে কিন্তু তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

পরে দূতালয় প্রধান ইসমাইল হোসেন বলেন, এই বিষয়ে কিছু জানি না, তাই মন্তব্য করা সমাচীন নয়। যদিও দূতাবাস আমাদেরকে আশ্বাস দিয়েছিল- এবার তারা একটি স্টল দেবেন কিন্তু তা স্বপ্নই থেকে গেল প্রবাসী ছাত্রছাত্রীদের জন্য।

সহস্রাধিক নিয়মতান্ত্রিক প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের দূতাবাস ও কালচারাল সেন্টারও প্রদর্শনীতে অংশ নিয়ে থাকে সেখানে। মিসরের সাধারণ জনগণের বাইরে এই বইমেলার প্রতি সবচেয়ে বেশি আগ্রহী থাকে বিদেশী ছাত্রছাত্রীরা। শাস্ত্রীয় কিতাবাদি ছাড়াও নানা দুর্লভ বইয়ের সন্ধান মেলে সেখানে।

লেখক –পাঠক–প্রকাশকের সেতুবন্ধন ঘটে এই মিলনমেলায়। বর্তমানে বাংলাদেশে আরবি কিতাবের যে সহজলভ্যতা দেখা যাচ্ছে- এর অন্যতম উৎস হলো কায়রোর এই বইমেলা।

অর্ধ শতাব্দীকাল ধরে চলে আসা এই বইমেলা এখন আর নিছক বই বিক্রিতেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। বই বিক্রি ছাড়াও সাংস্কৃতিক বিভিন্ন কর্মসূচির কেন্দ্রবিন্দু এটি এখন। সেজন্য সরকারি–বেসরকারি উদ্যোগে বইমেলা মিলনায়তনে চলে সভা–সেমিনার, কবিতার আসর, নাট্যশিল্প, ডকুমেন্টারিসহ সাহিত্য–সাংস্কৃতিক নানা প্রোগ্রাম। মুসলমানদের পাশাপাশি খ্রিষ্টান ধর্মের অনুসারিদের জন্যও রয়েছে পৃথক ব্যবস্থা। দুঃখজনক হলেও সত্যি যে পৃথিবীর ইতিহাসে যা কখনো ঘটেনি তা ঘটেছে এবারের বইমেলায়; মিসরে সব কিছুর দাম আকাশছোঁয়া, তাই বই বিক্রি হচ্ছে কিস্তিতে।

মানুষ সাধারণত টেলিভিশন, রেফ্রিজারেটর, গাড়ি, বাড়ির মতো দামি জিনিস কিস্তিতে কিনতে অভ্যস্ত। কিন্তু মিসরে এখন বইও বিক্রি হচ্ছে কিস্তিতে। সব কিছুর দাম আকাশছোঁয়া হয়ে যাওয়ার কারণেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন প্রকাশকরা। খবর বিবিসির।

সেফসাফা প্রকাশনা হাউসের মোহাম্মদ এল-বালি বলেন, মিসরে বই এখন বিলাসবহুল পণ্যে পরিণত হয়েছে। এটি খাবারের মতো মৌলিক চাহিদার পণ্য নয় এবং মানুষ বিলাসী পণ্য কিনছে না।

কায়রো আন্তর্জাতিক বইমেলা থেকে কথাগুলো বলছিলেন তিনি। মেলাটি সবার জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। গত বছর প্রায় ২০ লাখ মানুষ এই মেলায় গিয়েছিলেন।

জানা গেছে, মিসরে বইয়ের দাম দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে। সে কারণে অনেক লেখক তাদের লেখায় চরিত্র ও বিবরণ কাটছাঁট করছেন।

এল-বালি জানান, দেশটিতে কাগজ ও কালির দাম ব্যাপকভাবে বেড়েছে। তাই তিনি বিদেশে বই ছাপানোর দিকে ঝুঁকেছেন এবং কম কপি তৈরি করছেন। কারণ তিনি মনে করেন, বইয়ের চাহিদাও ক্রমেই কমে যাবে।

কায়রোর এ বইমেলা আরব বিশ্বের সবচেয়ে পুরোনো ও বৃহত্তম। প্রকাশনা শিল্পের জন্য এটি একটি বড় সুযোগ। কিন্তু এ বছর মেলায় ক্রেতাদের আনাগোনা কম বলে মনে করা হচ্ছে। সে জন্যই ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে কিস্তিতে বই কেনার সুযোগ রাখা হয়েছে।

মিসরে বইমেলাকে কেন্দ্র করে ইসলামী সভ্যতা–সংস্কৃতির বিকাশে অন্যতম ভূমিকা পালন করে আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়। আল আজহারের সুবিশাল প্যাভিলিয়নে প্রকাশিত বই বিক্রির কর্নার ছাড়াও থাকে লেকচার কর্নার, ফতোয়া কর্নার, নারী ও শিশু কর্নার, মাখতুত ও ক্যালিওগ্রাফি প্রদর্শনী ও মিডিয়া ডেস্ক।

মেলায় প্রতিদিন আজহারের প্রবীন শিক্ষকগণ সমসাময়িক মতানৈক্যপূর্ণ বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা পেশ করেন। ফতোয়া কর্নারে অভিজ্ঞ মুফতিগণ সারাদিন জনসাধরণের জীবনমুখী নানা জিজ্ঞাসার জবাব দেন। নারী ও শিশু কর্নারে থাকে দাম্পত্যজীবন ঘনিষ্ট শিষ্টাচারমূলক অনুষ্ঠান এবং শিশুদের জন্য চিত্রাঙ্কন–ক্যালিওগ্রাফি প্রশিক্ষণ ও ইসলামী ইতিহাসের সচিত্র বর্ণনা।

সাম্প্রতিককালে আরবের অন্যান্য দেশেও বইমেলা জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। দেশগুলোতে বইমেলা একটি গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক এবং সামাজিক ভূমিকা পালন করে আসছে। জনগণের একটি বড় অংশ অধীর আগ্রহে বইমেলার জন্য প্রতীক্ষায় থাকে। কারণ এর মাধ্যমে নিত্যনতুন নানামুখী বইয়ের পাশাপাশি সংস্কৃতির বিকাশ ও অগ্রগতি সম্পর্কে জানা যায়। জ্ঞান চর্চা ও সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির সাথে সাথে প্রকাশনাশিল্পের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিরও গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম এই বইমেলাগুলো।

বাংলাদেশে একসময় বইমেলা বলতে বাংলা একাডেমির একুশে বইমেলাকেই বোঝানো হতো। সরকারি উদ্যোগে আয়োজিত এই বইমেলা সর্বসাধারণের জন্য সর্বজনীন হওয়ার কথা থাকলেও এক শ্রেণির তথাকথিত বুদ্ধিজীবী ও প্রশাসনিক কর্মকর্তার জন্য তা হয়ে উঠেনি। অনেকটা ইচ্ছাকৃতভাবেই ইসলামী প্রকাশনী ও ধর্মীয় বইপুস্তককে উপেক্ষা করা হয়েছে। কায়রো আন্তর্জাতিক বইমেলার সাথে বাংলাদেশের মেলাগুলোর মৌলিক পার্থক্যটা এই বিভাজনের ক্ষেত্রেই। সেখানে একই ছাদের নিচে সব ধরনের প্রকাশনীর অবস্থান সম্ভব হলেও বাংলাদেশে এটা হতে দেয়া হয়নি। এর ফলে বাংলাদেশের বইমেলাগুলো সব পেশা ও শ্রেণির মানুষের মাঝে সেতুবন্ধনের মাধ্যম হয়নি কখনো। বরং ক্ষেত্রবিশেষ নানাভাবে নিগ্রহের শিকারও হতে হয়েছে বিভিন্নজনকে। ফলশ্রুতিতে ব্যক্তিগত উদ্যোগে ইসলামী বইমেলা আয়োজন শুরু হয়েছে এবং গত এক দশকে এর জনপ্রিয়তা রাজধানীর বাইরে জেলাশহরগুলোতে ছড়িয়ে পড়েছে। সুস্থ সংস্কৃতির বিকাশ ও ঐশী জ্ঞানের প্রসারে এর ভূমিকা নিঃসন্দেহে ইতিবাচক এবং এর সাথে সংশ্লিষ্ট সকলেই ধন্যবাদের যোগ্য।

বৈশ্বিক মন্দা ও যুদ্ধের ডামাডোলে বর্তমানে বাংলাদেশের ইসলামী প্রকাশনা সেক্টর নিঃসন্দেহে মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতি ও স্থবিরতার শিকার। পাশাপাশি আধুনিক প্রযুক্তির উৎকর্ষের দরুণ মানুষ দিনদিন বইপাঠ থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। শিশু-কিশোররা পাঠ্যপুস্তকের পরিসীমায় তাদের পড়াশোনা সীমাবদ্ধ করে ব্যস্ত হয়ে উঠছে নানাবিধ প্রযুক্তির খেলায়। এভাবে গড়ে উঠছে বইবিমুখ সমাজ, আর এর সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়ছে শিক্ষা-শিল্প–সাহিত্য–সংস্কৃতি সর্বক্ষেত্রে। তাই ইসলামী বইমেলার আয়োজকদের উচিত যুবশ্রেণির জন্য বিনোদনমূলক আকর্ষণীয় কর্মসূচির পাশাপাশি ইলমি ও ফিকরি কর্মসূচি রাখা এবং শুধু প্রকাশনীনির্ভর মেলা না করে শিক্ষামূলক–সামাজিক-ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান–সংগঠন ও ব্যক্তিত্বদের এতে অংশগ্রহণ বৃদ্ধি করা। পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের বাংলাদেশ শাখার প্রদর্শনীরও ব্যবস্থা রাখা।

বলা হয় শিল্প-সাহিত্য সমাজ বদলের হাতিয়ার। প্রত্যক্ষভাবে না হলেও পরোক্ষভাবে কথাটি অবশ্যই সত্যি। তাই সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের মধ্যে বেশি বেশি সুশিক্ষা ও আদর্শের বই পড়া হলে আমরা আমাদের মানসিকতার উন্নয়ন ঘটাতে পারব। প্রবাসী বাঙ্গালী ছাত্রছাত্রীরা মনে করে দেশীয় সংস্কৃতিকে বিশ্বময় ছড়িয়ে দিতে হলে সরকার এবং কূটনৈতিক মিশনের উচিত আন্তর্জাতিক বৃহত্তম এই বইমেলায় একটি স্টল বরাদ্দ নিয়ে সেখানে দেশ বিখ্যাত লেখক-লেখিকাদের বই বিক্রির সুযোগ করে দেয়া, যাতে করে বাঙালি সংস্কৃতি ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বময়।