ঢাকা , মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::

কুরআন অভ্রান্ত পথনির্দেশনা

আমরা যদি আত্মসমালোচনাপূর্বক নিজেদের প্রশ্ন করি, প্রকৃত অর্থেই আমাদের মূল্যবোধ, শিষ্টাচার- সৌজন্য, আচার-আচরণ, চিন্তাচেতনা ও আদর্শিক দিক দিয়ে সজাগ-সচেতনভাবে পবিত্র রমজান মাসকে রহমত, বরকত ও মাগফিরাত অর্জনের লক্ষ্যে আমরা কি স্বাগত জানিয়েছি? এ মাসকে আমরা কিভাবে স্বাগত জানাব? এ মাসকে স্বাগত জানাতে হবে আমাদের কর্ম ও জীবনাচরণের মাধ্যমে, শুধু মৌখিকভাবে নয়।

বছরের ১২টি মাসের মধ্যে রমজান মাসকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া হয়েছে এ জন্য যে, এ মাসেই মহান আল্লাহ স্থায়ীভাবে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার জন্য পরিপূর্ণ জীবনদর্শন ও জীবনবিধান আল কুরআন অবতীর্ণ করেছেন। এ কিতাব সম্মান-মর্যাদার দিক থেকে অতুলনীয়। এর প্রত্যেকটি শব্দ মহান আল্লাহর বাণী, যার মধ্যে কোনো প্রকার সন্দেহ ও বক্রতার সামান্যতম অবকাশ নেই। পৃথিবীর প্রলয় দিন পর্যন্ত সমগ্র মানবজাতি ও জিন সম্প্রদায় একতাবদ্ধ হয়ে চেষ্টা-সাধনা করলেও আল কুরআনের ক্ষুদ্রতম একটি আয়াতের অনুরূপ আয়াতও রচনায় সক্ষম হবে না।

আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আর আমি আমার বান্দার ওপর যা নাজিল করেছি, যদি তোমাদের সে সম্পর্কে কোনো সন্দেহ থাকে, তবে তোমরা তার মতো একটি সূরা (বানিয়ে) আনো’ (সূরা বাকারাহ : ২৩)।

আল্লাহ তায়ালা রমজান মাস সম্পর্কে এরশাদ করেন- ‘রমজান মাস, যাতে নাজিল করা হয়েছে আল কুরআন। মানুষের জন্য হেদায়াতস্বরূপ এবং হেদায়াতের সুস্পষ্ট দলিল ও সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারী হিসেবে’ (সূরা বাকারাহ : ১৮৫)।
কুরআন কেন নাজিল করা হয়েছে? যদি এ প্রশ্ন ওঠে তাহলে অধ্যয়নকারী দেখতে পাবে, ওই আয়াতের পরবর্তী অংশেই কুরআন নাজিলকারী স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা জানিয়ে দিয়েছেন, ‘কুরআন মানবজাতির জন্য এটি অভ্রান্ত পথনির্দেশনা এবং পথনির্দেশনার সুস্পষ্ট দলিল ও এমন একটি সংবিধান, যা সত্য-মিথ্যা এবং কল্যাণ-অকল্যাণের পার্থক্য নির্ণয়কারী’ (সূরা বাকারাহ : ১৮৫)।

এ কুরআন মানবজাতির জন্য পথপ্রদর্শক, পথনির্দেশনা তথা গাইডবুক। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব মানুষের জন্য এটি পথনির্দেশক। আল কুরআন যে পথনির্দেশনা দান করে, তা স্থান-কালের সীমারেখা দ্বারা আবদ্ধ নয়। শুধু মহাকালের বিশেষ কোনো অধ্যায়ের জন্য এটি প্রযোজ্য নয়; এটি জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সর্বকালের সর্বযুগের সব মানুষের জন্য প্রযোজ্য। কেননা এ কিতাবের আবেদন চিরন্তন, যা কখনোই পুরনো বা জীর্ণ হবে না, এর বিস্ময়কারিতার ইতি কখনোই ঘটবে না। কুরআন হচ্ছে অভ্রান্ত পথের দিকনির্দেশনার মশাল এবং এ কিতাব জ্ঞান-বিজ্ঞানের কূলকিনারাহীন অগাধ এক জলধি।

যদি প্রশ্ন ওঠে, কুরআন মানবজাতিকে কোন্ কোন্ বিষয়ে পথনির্দেশনা দেয়? এর জবাব হলো, এ কিতাব মানুষের ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক জীবনের যাবতীয় দিক-বিভাগ পর্যন্ত সব কর্ম সম্পাদনে অভ্রান্ত পথনির্দেশনা দান করে। মানুষের সর্বপ্রকার চিন্তাচেতনা, আকিদা-বিশ্বাস, ইবাদত, মূল্যবোধ, পারস্পরিক সম্পর্ক, শিক্ষা-সংস্কৃতি, রাজনীতি-অর্থনীতি, লেনদেন, ব্যবসাবাণিজ্য, যুদ্ধ-সন্ধি, বিয়ে-তালাক, সম্পদবণ্টন, উত্তরাধিকার নির্ধারণ, বন্ধুত্ব-শত্রুতা, গবেষণা, আবিষ্কার-উদ্ভাবন, বস্তুর ব্যবহার তথা মানবজীবনের জন্য যা কিছু প্রয়োজন, তার সব দিকেই কুরআন পথনির্দেশনা দান করে।

মানবজাতির প্রয়োজনীয় এমন কোনো বিষয় নেই, যা আল-কুরআনে বর্ণিত হয়নি। প্রত্যেক বিষয় ও বস্তুর বর্ণনা রয়েছে কুরআনে। আল্লাহ তায়ালা বলেন : ‘আর আমি তোমার ওপর কিতাব অবতীর্ণ করেছি প্রত্যেক বিষয়ের বর্ণনা সংবলিত’ (সূরা নাহল : ৮৯)। ‘আমি কিতাবে (সব কিছু বর্ণনায়) কোনো ত্রুটি করিনি’ (সূরা আনআম : ৩৮)।
‘এটা (কুরআন) কোনো কল্পিত কাহিনী নয়; বরং তাদের পূর্ববর্তী কিতাবের সত্যায়নকারী এবং প্রত্যেক বিষয়ের বিস্তারিত বিবরণ’ (সূরা ইউসুফ : ১১১)।
সুতরাং যে আল্লাহ তায়ালা মানবজাতিকে সৃষ্টি করেছেন, তাঁরই পক্ষ থেকে এ কুরআন মানবমণ্ডলীর জন্য অভ্রান্ত পথনির্দেশনা। এ জন্যই রমজান মাসের মূল পয়গাম হলো- ১. কুরআন শিক্ষা, ২. কুরআন তিলাওয়াত করা, ৩. কুরআন অর্থসহ বুঝে পড়া তথা অধ্যয়ন করা, ৪. কুরআন নিয়ে গবেষণা করা, ৫. কুরআনের দিকনির্দেশনা বাস্তবজীবনে অনুসরণ ও বাস্তবায়ন করা, ৬. কুরআনের শিক্ষা তথা দিকনির্দেশনা জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার মধ্যে বিস্তারের জন্য বাস্তবভিত্তিক কর্মপদ্ধতি প্রণয়ন করা।

প্রত্যেক মুসলিমকে চলমান কুরআনে পরিণত হতে হবে, তার সামগ্রিক আচার-আচরণ, ব্যবহার, কথা-কর্ম সবকিছুর মধ্য দিয়ে কুরআনের শিক্ষা
বাস্তবে পরিস্ফুটিত হবে। প্রথম দর্শনে তাকে দেখলেই দর্শকের কাছে যেন অনুভূত হয়, ‘মানুষটি আল কুরআনের বাস্তব প্রতিচ্ছবি।’ কিয়ামত পর্যন্ত সমগ্র মানবজাতির সম্মুখে আল কুরআন ওই আয়াতে মুসলিম উম্মাহকে ‘উম্মতে ওয়াসাতা’ বিশেষণে ভূষিত করেছে। ‘উম্মতে ওয়াসাতা’ শব্দদ্বয় দ্বারা প্রকৃত অর্থে ওই মুসলিম উম্মাহকে বুঝায়, আল্লাহর রাসূল সা: আল কুরআনের আলোকে যে মুসলিম উম্মাহ গড়েছিলেন। তারা পৃথিবীর যে ভূখণ্ডেই পদার্পণ করেছেন, সেই ভূখণ্ডের অধিবাসীরা অবাক বিস্ময়ে ‘সর্বাঙ্গীণ সুন্দর সর্বোত্তম স্বভাব-চরিত্রবিশিষ্ট ন্যায়পরায়ণতার জীবন্ত ছবি’ দেখেছে। উম্মতে ওয়াসাতা হচ্ছে সেই জনগোষ্ঠী, যাদের সার্বিক জীবনধারা প্রমাণ করবে যে, কেবল এই মানুষগুলোর মাধ্যমেই সমগ্র পৃথিবীতে কল্যাণকর সমীরণ প্রবাহিত হবে, শোষিত, নিপীড়িত ও নির্যাতিত মানবতা ইনসাফ পাবে এবং তাদের অধিকার নিশ্চিত হবে।

এরা কথা ও বাস্তব কর্মের দ্বারা কুরআন-সুন্নাহর বাস্তবতা মানবজাতির সম্মুখে তুলে ধরবে। মহান আল্লাহ মানবজাতির জন্য যে জীবনাদর্শ পছন্দ ও মনোনীত করেছেন, সে আদর্শের সার্বিক সৌন্দর্য প্রতিভাত হবে মুসলিমদের সামগ্রিক জীবনধারায়। এর অর্থ হলো, মুসলিমরা পৃথিবীর অন্যান্য জাতির কাছে বাস্তব সাক্ষী হবে, আল্লাহর মনোনীত জীবনাদর্শই মানবজাতির জন্য কল্যাণকর। মুসলিমরা যদি এ সাক্ষী দেয়, তাহলে নবী করিম সা:-ও আদালতে আখিরাতে সাক্ষ্য দেবেন, তিনি যে দায়িত্ব তাঁর উম্মতের ওপর অর্পণ করেছিলেন, তারা তা যথার্থই পালন করেছে।

উপরি উক্ত ছয়টি কাজ করতে পারলে রমজান মাস এবং এ মাসে অবতীর্ণ কুরআনের প্রতি প্রকৃত অর্থে সম্মান-মর্যাদা প্রদর্শন করা হবে। একই সাথে কুরআনের যে দাবি আমাদের প্রতি, তার হকও আদায়ে আমরা চেষ্টা করেছিলাম প্রমাণিত হবে। আর চেষ্টাও যদি না করি, তাহলে এ মাসকে স্বাগত জানানো কেবল লৌকিকতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে।

লেখক : শিক্ষাবিদ ও গবেষক

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

আজকের সূর্যোদয়

আজকের সূর্যোদয় প্রত্রিকায় আপনাদের স্বাগতম। ‍আমাদের নিউজ পড়ুন এবং বিজ্ঞাপন দিয়ে আমাদের পাশে থাকুন।

বরিশালে মুজিবিয়ানের ৮৭ নেতাকে খুঁজছে গোয়েন্দা সংস্থা

কুরআন অভ্রান্ত পথনির্দেশনা

আপডেট সময় ১০:৪২:১৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৭ মার্চ ২০২৩

আমরা যদি আত্মসমালোচনাপূর্বক নিজেদের প্রশ্ন করি, প্রকৃত অর্থেই আমাদের মূল্যবোধ, শিষ্টাচার- সৌজন্য, আচার-আচরণ, চিন্তাচেতনা ও আদর্শিক দিক দিয়ে সজাগ-সচেতনভাবে পবিত্র রমজান মাসকে রহমত, বরকত ও মাগফিরাত অর্জনের লক্ষ্যে আমরা কি স্বাগত জানিয়েছি? এ মাসকে আমরা কিভাবে স্বাগত জানাব? এ মাসকে স্বাগত জানাতে হবে আমাদের কর্ম ও জীবনাচরণের মাধ্যমে, শুধু মৌখিকভাবে নয়।

বছরের ১২টি মাসের মধ্যে রমজান মাসকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া হয়েছে এ জন্য যে, এ মাসেই মহান আল্লাহ স্থায়ীভাবে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার জন্য পরিপূর্ণ জীবনদর্শন ও জীবনবিধান আল কুরআন অবতীর্ণ করেছেন। এ কিতাব সম্মান-মর্যাদার দিক থেকে অতুলনীয়। এর প্রত্যেকটি শব্দ মহান আল্লাহর বাণী, যার মধ্যে কোনো প্রকার সন্দেহ ও বক্রতার সামান্যতম অবকাশ নেই। পৃথিবীর প্রলয় দিন পর্যন্ত সমগ্র মানবজাতি ও জিন সম্প্রদায় একতাবদ্ধ হয়ে চেষ্টা-সাধনা করলেও আল কুরআনের ক্ষুদ্রতম একটি আয়াতের অনুরূপ আয়াতও রচনায় সক্ষম হবে না।

আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আর আমি আমার বান্দার ওপর যা নাজিল করেছি, যদি তোমাদের সে সম্পর্কে কোনো সন্দেহ থাকে, তবে তোমরা তার মতো একটি সূরা (বানিয়ে) আনো’ (সূরা বাকারাহ : ২৩)।

আল্লাহ তায়ালা রমজান মাস সম্পর্কে এরশাদ করেন- ‘রমজান মাস, যাতে নাজিল করা হয়েছে আল কুরআন। মানুষের জন্য হেদায়াতস্বরূপ এবং হেদায়াতের সুস্পষ্ট দলিল ও সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারী হিসেবে’ (সূরা বাকারাহ : ১৮৫)।
কুরআন কেন নাজিল করা হয়েছে? যদি এ প্রশ্ন ওঠে তাহলে অধ্যয়নকারী দেখতে পাবে, ওই আয়াতের পরবর্তী অংশেই কুরআন নাজিলকারী স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা জানিয়ে দিয়েছেন, ‘কুরআন মানবজাতির জন্য এটি অভ্রান্ত পথনির্দেশনা এবং পথনির্দেশনার সুস্পষ্ট দলিল ও এমন একটি সংবিধান, যা সত্য-মিথ্যা এবং কল্যাণ-অকল্যাণের পার্থক্য নির্ণয়কারী’ (সূরা বাকারাহ : ১৮৫)।

এ কুরআন মানবজাতির জন্য পথপ্রদর্শক, পথনির্দেশনা তথা গাইডবুক। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব মানুষের জন্য এটি পথনির্দেশক। আল কুরআন যে পথনির্দেশনা দান করে, তা স্থান-কালের সীমারেখা দ্বারা আবদ্ধ নয়। শুধু মহাকালের বিশেষ কোনো অধ্যায়ের জন্য এটি প্রযোজ্য নয়; এটি জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সর্বকালের সর্বযুগের সব মানুষের জন্য প্রযোজ্য। কেননা এ কিতাবের আবেদন চিরন্তন, যা কখনোই পুরনো বা জীর্ণ হবে না, এর বিস্ময়কারিতার ইতি কখনোই ঘটবে না। কুরআন হচ্ছে অভ্রান্ত পথের দিকনির্দেশনার মশাল এবং এ কিতাব জ্ঞান-বিজ্ঞানের কূলকিনারাহীন অগাধ এক জলধি।

যদি প্রশ্ন ওঠে, কুরআন মানবজাতিকে কোন্ কোন্ বিষয়ে পথনির্দেশনা দেয়? এর জবাব হলো, এ কিতাব মানুষের ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক জীবনের যাবতীয় দিক-বিভাগ পর্যন্ত সব কর্ম সম্পাদনে অভ্রান্ত পথনির্দেশনা দান করে। মানুষের সর্বপ্রকার চিন্তাচেতনা, আকিদা-বিশ্বাস, ইবাদত, মূল্যবোধ, পারস্পরিক সম্পর্ক, শিক্ষা-সংস্কৃতি, রাজনীতি-অর্থনীতি, লেনদেন, ব্যবসাবাণিজ্য, যুদ্ধ-সন্ধি, বিয়ে-তালাক, সম্পদবণ্টন, উত্তরাধিকার নির্ধারণ, বন্ধুত্ব-শত্রুতা, গবেষণা, আবিষ্কার-উদ্ভাবন, বস্তুর ব্যবহার তথা মানবজীবনের জন্য যা কিছু প্রয়োজন, তার সব দিকেই কুরআন পথনির্দেশনা দান করে।

মানবজাতির প্রয়োজনীয় এমন কোনো বিষয় নেই, যা আল-কুরআনে বর্ণিত হয়নি। প্রত্যেক বিষয় ও বস্তুর বর্ণনা রয়েছে কুরআনে। আল্লাহ তায়ালা বলেন : ‘আর আমি তোমার ওপর কিতাব অবতীর্ণ করেছি প্রত্যেক বিষয়ের বর্ণনা সংবলিত’ (সূরা নাহল : ৮৯)। ‘আমি কিতাবে (সব কিছু বর্ণনায়) কোনো ত্রুটি করিনি’ (সূরা আনআম : ৩৮)।
‘এটা (কুরআন) কোনো কল্পিত কাহিনী নয়; বরং তাদের পূর্ববর্তী কিতাবের সত্যায়নকারী এবং প্রত্যেক বিষয়ের বিস্তারিত বিবরণ’ (সূরা ইউসুফ : ১১১)।
সুতরাং যে আল্লাহ তায়ালা মানবজাতিকে সৃষ্টি করেছেন, তাঁরই পক্ষ থেকে এ কুরআন মানবমণ্ডলীর জন্য অভ্রান্ত পথনির্দেশনা। এ জন্যই রমজান মাসের মূল পয়গাম হলো- ১. কুরআন শিক্ষা, ২. কুরআন তিলাওয়াত করা, ৩. কুরআন অর্থসহ বুঝে পড়া তথা অধ্যয়ন করা, ৪. কুরআন নিয়ে গবেষণা করা, ৫. কুরআনের দিকনির্দেশনা বাস্তবজীবনে অনুসরণ ও বাস্তবায়ন করা, ৬. কুরআনের শিক্ষা তথা দিকনির্দেশনা জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার মধ্যে বিস্তারের জন্য বাস্তবভিত্তিক কর্মপদ্ধতি প্রণয়ন করা।

প্রত্যেক মুসলিমকে চলমান কুরআনে পরিণত হতে হবে, তার সামগ্রিক আচার-আচরণ, ব্যবহার, কথা-কর্ম সবকিছুর মধ্য দিয়ে কুরআনের শিক্ষা
বাস্তবে পরিস্ফুটিত হবে। প্রথম দর্শনে তাকে দেখলেই দর্শকের কাছে যেন অনুভূত হয়, ‘মানুষটি আল কুরআনের বাস্তব প্রতিচ্ছবি।’ কিয়ামত পর্যন্ত সমগ্র মানবজাতির সম্মুখে আল কুরআন ওই আয়াতে মুসলিম উম্মাহকে ‘উম্মতে ওয়াসাতা’ বিশেষণে ভূষিত করেছে। ‘উম্মতে ওয়াসাতা’ শব্দদ্বয় দ্বারা প্রকৃত অর্থে ওই মুসলিম উম্মাহকে বুঝায়, আল্লাহর রাসূল সা: আল কুরআনের আলোকে যে মুসলিম উম্মাহ গড়েছিলেন। তারা পৃথিবীর যে ভূখণ্ডেই পদার্পণ করেছেন, সেই ভূখণ্ডের অধিবাসীরা অবাক বিস্ময়ে ‘সর্বাঙ্গীণ সুন্দর সর্বোত্তম স্বভাব-চরিত্রবিশিষ্ট ন্যায়পরায়ণতার জীবন্ত ছবি’ দেখেছে। উম্মতে ওয়াসাতা হচ্ছে সেই জনগোষ্ঠী, যাদের সার্বিক জীবনধারা প্রমাণ করবে যে, কেবল এই মানুষগুলোর মাধ্যমেই সমগ্র পৃথিবীতে কল্যাণকর সমীরণ প্রবাহিত হবে, শোষিত, নিপীড়িত ও নির্যাতিত মানবতা ইনসাফ পাবে এবং তাদের অধিকার নিশ্চিত হবে।

এরা কথা ও বাস্তব কর্মের দ্বারা কুরআন-সুন্নাহর বাস্তবতা মানবজাতির সম্মুখে তুলে ধরবে। মহান আল্লাহ মানবজাতির জন্য যে জীবনাদর্শ পছন্দ ও মনোনীত করেছেন, সে আদর্শের সার্বিক সৌন্দর্য প্রতিভাত হবে মুসলিমদের সামগ্রিক জীবনধারায়। এর অর্থ হলো, মুসলিমরা পৃথিবীর অন্যান্য জাতির কাছে বাস্তব সাক্ষী হবে, আল্লাহর মনোনীত জীবনাদর্শই মানবজাতির জন্য কল্যাণকর। মুসলিমরা যদি এ সাক্ষী দেয়, তাহলে নবী করিম সা:-ও আদালতে আখিরাতে সাক্ষ্য দেবেন, তিনি যে দায়িত্ব তাঁর উম্মতের ওপর অর্পণ করেছিলেন, তারা তা যথার্থই পালন করেছে।

উপরি উক্ত ছয়টি কাজ করতে পারলে রমজান মাস এবং এ মাসে অবতীর্ণ কুরআনের প্রতি প্রকৃত অর্থে সম্মান-মর্যাদা প্রদর্শন করা হবে। একই সাথে কুরআনের যে দাবি আমাদের প্রতি, তার হকও আদায়ে আমরা চেষ্টা করেছিলাম প্রমাণিত হবে। আর চেষ্টাও যদি না করি, তাহলে এ মাসকে স্বাগত জানানো কেবল লৌকিকতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে।

লেখক : শিক্ষাবিদ ও গবেষক