ঢাকা , সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::

ক্ষমতাসীন জোটের আসন বণ্টন নিয়ে অনিশ্চয়তা

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর ক্ষমতাসীন জোটের আসন ভাগাভাগি নিয়ে জোটের শীর্ষ নেতারা বসলেও চূড়ান্ত সমঝোতা হয়নি। এ নিয়ে দেনদরবার আরো কয়েকদিন গড়াতে পারে। যদিও দেনদরবারের বিষয়টি কৌশলে জোট প্রধান অন্য নেতাদের হাতে তুলে দিয়েছেন। এ বিষয়টি জোট নেতারা প্রকাশ্যে ইতিবাচক মনোভাব দেখালেও ভেতরে ভেতরে ক্ষোভ ও হতাশা কাজ করছে। এ দিকে মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টির সাথেও আসন বণ্টনের বিষয়টি সুরাহা হয়নি। তাদের সাথে চূড়ান্ত সমঝোতা না হওয়া পর্যন্ত জোটের শরিকদের আসন বণ্টন চূড়ান্ত করতে রাজি নয় দলটি। যার ফলে নির্বাচনী নানা সমীকরণে জোটের আসন বণ্টন নিয়ে একটা অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ কী করে, এটি জোটের শরিকরা এখন দেখার অপেক্ষায় রয়েছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

সূত্র বলছে, ইতোমধ্যে মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই সম্পন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন। আগামী ১৭ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন। এ দিকে সোমবার রাতে গণভবনে জোট প্রধানের সাথে শরিক দলগুলোর একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে সিদ্ধান্ত না হওয়ায় সমাধানের জন্য জোট সমন্বয়কের নেতৃত্বে একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটির সাথে আলাপ-আলোচনা করে জোটের আসন বণ্টন চূড়ান্ত হওয়ার কথা রয়েছে। গতকাল জাসদ ও ওয়ার্কার্স পার্টির সাথে জোট সমন্বয়কের বাসায় বৈঠক হলেও সেখানে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি বলে জোটের একাধিক নেতার সাথে আলাপকালে জানা গেছে।

বিগত তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আসন ভাগাভাগি করে ভোটে অংশ নিয়েছিল আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোট-মহাজোট। নৌকা প্রতীকে নির্বাচনের নিশ্চয়তা পাওয়ার পরই কেবল মনোনয়নপত্র জমা দেন জোট নেতারা। এবার জোটের শরিকদের আলাদা রেখেই মাত্র দু’টি আসন কুষ্টিয়া-২ ও নারায়ণগঞ্জ-৫ আসন ছেড়ে দিয়ে ২৯৮ আসনেই প্রার্থী দিয়েছে আওয়ামী লীগ। কুষ্টিয়া-২ আসনে ১৪ দলের শরিক জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনুর আসন মোটামুটি নিশ্চত হলেও বিপদে পড়েছেন দলটির সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার। তিনি ফেনী-১ আসন থেকে গত দুইবার এমপি নির্বাচিত হন। এবার ওই আসনে প্রধানমন্ত্রীর সাবেক এপিএস আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিমকে আওয়ামী লীগ মনোনয়ন দিয়েছে। ওই আসন আওয়ামী লীগ এবার ছাড়বে না বলে দলটির প্রধান শেখ হাসিনা জাসদকে এমন ইঙ্গিতও দিয়েছেন বলে জানা গেছে। জাসদের আরেক নেতা রেজাউল করিম তানসেনের বগুড়া-৪-সহ ৯১টি আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছে। জোটের আসন ভাগাভাগির বিষয়ে জাসদের দফতর সম্পাদক মো: সাজ্জাদ হোসেন গতকাল নয়া দিগন্তকে বলেন, আলাপ-আলোচনা চলছে, এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। আলোচনা আরো চলবে, ওই সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। অবশ্য জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু গতকাল জোট সমন্বয়ক আমির হোসেন আমুর ইস্কাটনের বাসায় বৈঠক শেষে বিকেলে সাংবাদিকদের বলেন, শেখ হাসিনার সাথে বৈঠক এবং রাতের খাবারের মধ্যদিয়ে এ বার্তা পরিষ্কার হয়েছে যে, জোট আছে। জোট একসাথে নির্বাচন করবে। আসন ভাগাভাগির বিষয়টা আমরা নিষ্পত্তি করতে সক্ষম হবো। তিনি বলেন, স্বতন্ত্র প্রার্থীর ক্ষেত্রে দলীয় কৌশল কী হবে তা বিবেচনা করার জন্য আমরা জোটনেত্রীকে বলেছি। আরো সময় আছে আলোচনা করে দেখব। প্রার্থীরা নৌকা মার্কায় নির্বাচন করবেন।

ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন ঢাকা-৮ আসন থেকে তিনবার এমপি হয়েছেন। তিনি এবারো ওই আসন থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করলেও জমা দেননি। অবশ্য এবার এ আসনে আওয়ামী লীগের অন্যতম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম দলীয় মনেনায়ন পেয়েছেন। তিনি পরে বরিশাল-২ (উজিরপুর-বানারীপাড়া) ও বরিশাল-৩ (বাবুগঞ্জ-মুলাদী) এ দু’টি আসনে মনোনয়নপত্র জমা দেন। ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশার আসন রাজশাহী-২। এ আসনে রাজশাহী মহানগর সভাপতি মোহাম্মদ আলীকে মনোনয়ন দিয়েছে আওয়ামী লীগ। দলটির আরেক নেতা মোস্তফা লুৎফুল্লাহর সাতক্ষীরা-১ আসনে আওয়ামী লীগের ফিরোজ আহমেদ স্বপন পেয়েছেন মনোনয়ন। এ ছাড়াও ওয়ার্কার্স পার্টি আরো ৩০টি আসনে প্রার্থী দিয়েছে। তবে এবার ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশার আসন নিশ্চিত হলেও সভাপতি রাশেদ খান মেননের আসন নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে বলে জানা গেছে।
ক্ষমতাসীন জোটের আরেক শরিক জাতীয় পার্টির (জেপি) একমাত্র এমপি দলটির সভাপতি আনোয়ার হোসেন মঞ্জু। তার পিরোজপুর-২ আসনে কানাই লাল বিশ্বাসকে প্রার্থী করেছে আওয়ামী লীগ। আরেক শরিক সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়–য়া নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-১ আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হন। মহাজোট সরকারের শিল্পমন্ত্রীও ছিলেন তিনি; কিন্তু দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদে তাকে মূল্যায়ন করায় এবার তিনি আশাবাদী। তবে ওই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন মাহাবুব উর রহমান। দিলীপ বড়–য়া গতকাল নয়া দিগন্তকে বলেন, আমরা একটি আসন চেয়েছি। চট্টগ্রাম-১ থেকে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছি। এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। জোটের সমন্বয়ককে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, চূড়ান্তভাবে মনোনয়ন না পাওয়া পর্যন্ত অনিশ্চয়তা তো থেকেই যায়। দেখা যাক এবার কী হয়।

তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারীর চট্টগ্রাম-২ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন খাদিজাতুল আনোয়ার। এ ছাড়াও জোটের শরিক গণতন্ত্রী পার্টি ১২টি আসনে, ন্যাপ ছয়টি আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছে।
আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা বলছেন, আগামী দুয়েকদিনের মধ্যে বিষয়টি স্পষ্ট হবে। তবে আওয়ামী লীগ চায়- জোটের শরিকরা যারা নির্বাচন করছে তারা নিজেদের শক্তি-সামর্থ্য নিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ভোটের মাঠে লড়াই করে জিতে আসুক। এ নিয়ে জোটের শরিক ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মো: ইসমাইল হোসেন নয়া দিগন্তকে বলেন, গত নির্বাচনগুলোতে যে হিসাব-নিকাশ ছিল এবার নির্বাচনে সেগুলো আর থাকছে না। তার কারণ এবার নির্বাচনে ‘বিএনএম ও তৃণমূল বিএনপি’র মতো দল তৈরি হয়ে গেছে। ফলে নির্বাচনে জোটের শরিকদের গুরুত্ব ও আবেদন আগের মতো নেই, অনেকখানি কমে গেছে। তিনি বলেন, নির্বাচন সামনে রেখে নানা সমীকরণ হয়, এবারো হচ্ছে। তবে বিএনপি নির্বাচনে না এলেও জাতীয় পার্টিসহ নতুন কয়েকটি দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করায় আওয়ামী লীগের কিছুটা হলেও নির্বাচনী চাপ কম আছে। আওয়ামী লীগ মনে করছে, এভাবেই নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক করা সম্ভব। এ জন্য জোটের শরিকদের বিষয়টা আগেভাগে মীমাংসা না করেই একক প্রার্থী দিয়েছে দলটি। দেখা যাক আলাপ-আলোচনা চলছে, চূড়ান্ত না হওয়া পর্যন্ত আরো অপেক্ষা করতে হবে।

গতকাল সন্ধ্যায় রাজধানীর ইস্কাটনের বাসায় জাসদ ও ওয়ার্কার্স পার্টির শীর্ষ নেতাদের সাথে বৈঠক শেষে জোটের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র আমির হোসেন আমু সাংবাদিকদের বলেন, সোমবার জোট নেতাদের সাথে আমাদের ১৪ দলের নেত্রীর একটি সভা হয়েছে। সভায় বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। বর্তমান প্রেক্ষাপট ও রাজনৈতিক বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। সভায় জোট-মহাজোটের আসন বণ্টনের বিষয়টিও উঠে এসেছে। তিনি বলেন, নির্বাচন জোটগতভাবে হবে। আগামীকাল (আজ বুধবার) জাতীয় পার্টির সাথে আলোচনা করবে আওয়ামী লীগ। জোটের আসন বিন্যাস ও প্রার্থী চূড়ান্ত করতে ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। ক্ষমতাসীন জোটের মুখপাত্র বলেন, অন্যান্য দলের মতো ১৪ দল আসন ভাগাভাগির জোট নয়। আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধেও আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট প্রার্থী আছে। ১৭ তারিখের আগে জোট শরিকদের আসন ছাড়ের বিষয়ে কিছু বলা যাচ্ছে না।

 

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

আজকের সূর্যোদয়

আজকের সূর্যোদয় প্রত্রিকায় আপনাদের স্বাগতম। ‍আমাদের নিউজ পড়ুন এবং বিজ্ঞাপন দিয়ে আমাদের পাশে থাকুন।

বরিশালে মুজিবিয়ানের ৮৭ নেতাকে খুঁজছে গোয়েন্দা সংস্থা

ক্ষমতাসীন জোটের আসন বণ্টন নিয়ে অনিশ্চয়তা

আপডেট সময় ১২:৪২:৫২ অপরাহ্ন, বুধবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২৩

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর ক্ষমতাসীন জোটের আসন ভাগাভাগি নিয়ে জোটের শীর্ষ নেতারা বসলেও চূড়ান্ত সমঝোতা হয়নি। এ নিয়ে দেনদরবার আরো কয়েকদিন গড়াতে পারে। যদিও দেনদরবারের বিষয়টি কৌশলে জোট প্রধান অন্য নেতাদের হাতে তুলে দিয়েছেন। এ বিষয়টি জোট নেতারা প্রকাশ্যে ইতিবাচক মনোভাব দেখালেও ভেতরে ভেতরে ক্ষোভ ও হতাশা কাজ করছে। এ দিকে মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টির সাথেও আসন বণ্টনের বিষয়টি সুরাহা হয়নি। তাদের সাথে চূড়ান্ত সমঝোতা না হওয়া পর্যন্ত জোটের শরিকদের আসন বণ্টন চূড়ান্ত করতে রাজি নয় দলটি। যার ফলে নির্বাচনী নানা সমীকরণে জোটের আসন বণ্টন নিয়ে একটা অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ কী করে, এটি জোটের শরিকরা এখন দেখার অপেক্ষায় রয়েছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

সূত্র বলছে, ইতোমধ্যে মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই সম্পন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন। আগামী ১৭ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন। এ দিকে সোমবার রাতে গণভবনে জোট প্রধানের সাথে শরিক দলগুলোর একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে সিদ্ধান্ত না হওয়ায় সমাধানের জন্য জোট সমন্বয়কের নেতৃত্বে একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটির সাথে আলাপ-আলোচনা করে জোটের আসন বণ্টন চূড়ান্ত হওয়ার কথা রয়েছে। গতকাল জাসদ ও ওয়ার্কার্স পার্টির সাথে জোট সমন্বয়কের বাসায় বৈঠক হলেও সেখানে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি বলে জোটের একাধিক নেতার সাথে আলাপকালে জানা গেছে।

বিগত তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আসন ভাগাভাগি করে ভোটে অংশ নিয়েছিল আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোট-মহাজোট। নৌকা প্রতীকে নির্বাচনের নিশ্চয়তা পাওয়ার পরই কেবল মনোনয়নপত্র জমা দেন জোট নেতারা। এবার জোটের শরিকদের আলাদা রেখেই মাত্র দু’টি আসন কুষ্টিয়া-২ ও নারায়ণগঞ্জ-৫ আসন ছেড়ে দিয়ে ২৯৮ আসনেই প্রার্থী দিয়েছে আওয়ামী লীগ। কুষ্টিয়া-২ আসনে ১৪ দলের শরিক জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনুর আসন মোটামুটি নিশ্চত হলেও বিপদে পড়েছেন দলটির সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার। তিনি ফেনী-১ আসন থেকে গত দুইবার এমপি নির্বাচিত হন। এবার ওই আসনে প্রধানমন্ত্রীর সাবেক এপিএস আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিমকে আওয়ামী লীগ মনোনয়ন দিয়েছে। ওই আসন আওয়ামী লীগ এবার ছাড়বে না বলে দলটির প্রধান শেখ হাসিনা জাসদকে এমন ইঙ্গিতও দিয়েছেন বলে জানা গেছে। জাসদের আরেক নেতা রেজাউল করিম তানসেনের বগুড়া-৪-সহ ৯১টি আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছে। জোটের আসন ভাগাভাগির বিষয়ে জাসদের দফতর সম্পাদক মো: সাজ্জাদ হোসেন গতকাল নয়া দিগন্তকে বলেন, আলাপ-আলোচনা চলছে, এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। আলোচনা আরো চলবে, ওই সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। অবশ্য জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু গতকাল জোট সমন্বয়ক আমির হোসেন আমুর ইস্কাটনের বাসায় বৈঠক শেষে বিকেলে সাংবাদিকদের বলেন, শেখ হাসিনার সাথে বৈঠক এবং রাতের খাবারের মধ্যদিয়ে এ বার্তা পরিষ্কার হয়েছে যে, জোট আছে। জোট একসাথে নির্বাচন করবে। আসন ভাগাভাগির বিষয়টা আমরা নিষ্পত্তি করতে সক্ষম হবো। তিনি বলেন, স্বতন্ত্র প্রার্থীর ক্ষেত্রে দলীয় কৌশল কী হবে তা বিবেচনা করার জন্য আমরা জোটনেত্রীকে বলেছি। আরো সময় আছে আলোচনা করে দেখব। প্রার্থীরা নৌকা মার্কায় নির্বাচন করবেন।

ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন ঢাকা-৮ আসন থেকে তিনবার এমপি হয়েছেন। তিনি এবারো ওই আসন থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করলেও জমা দেননি। অবশ্য এবার এ আসনে আওয়ামী লীগের অন্যতম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম দলীয় মনেনায়ন পেয়েছেন। তিনি পরে বরিশাল-২ (উজিরপুর-বানারীপাড়া) ও বরিশাল-৩ (বাবুগঞ্জ-মুলাদী) এ দু’টি আসনে মনোনয়নপত্র জমা দেন। ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশার আসন রাজশাহী-২। এ আসনে রাজশাহী মহানগর সভাপতি মোহাম্মদ আলীকে মনোনয়ন দিয়েছে আওয়ামী লীগ। দলটির আরেক নেতা মোস্তফা লুৎফুল্লাহর সাতক্ষীরা-১ আসনে আওয়ামী লীগের ফিরোজ আহমেদ স্বপন পেয়েছেন মনোনয়ন। এ ছাড়াও ওয়ার্কার্স পার্টি আরো ৩০টি আসনে প্রার্থী দিয়েছে। তবে এবার ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশার আসন নিশ্চিত হলেও সভাপতি রাশেদ খান মেননের আসন নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে বলে জানা গেছে।
ক্ষমতাসীন জোটের আরেক শরিক জাতীয় পার্টির (জেপি) একমাত্র এমপি দলটির সভাপতি আনোয়ার হোসেন মঞ্জু। তার পিরোজপুর-২ আসনে কানাই লাল বিশ্বাসকে প্রার্থী করেছে আওয়ামী লীগ। আরেক শরিক সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়–য়া নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-১ আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হন। মহাজোট সরকারের শিল্পমন্ত্রীও ছিলেন তিনি; কিন্তু দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদে তাকে মূল্যায়ন করায় এবার তিনি আশাবাদী। তবে ওই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন মাহাবুব উর রহমান। দিলীপ বড়–য়া গতকাল নয়া দিগন্তকে বলেন, আমরা একটি আসন চেয়েছি। চট্টগ্রাম-১ থেকে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছি। এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। জোটের সমন্বয়ককে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, চূড়ান্তভাবে মনোনয়ন না পাওয়া পর্যন্ত অনিশ্চয়তা তো থেকেই যায়। দেখা যাক এবার কী হয়।

তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারীর চট্টগ্রাম-২ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন খাদিজাতুল আনোয়ার। এ ছাড়াও জোটের শরিক গণতন্ত্রী পার্টি ১২টি আসনে, ন্যাপ ছয়টি আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছে।
আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা বলছেন, আগামী দুয়েকদিনের মধ্যে বিষয়টি স্পষ্ট হবে। তবে আওয়ামী লীগ চায়- জোটের শরিকরা যারা নির্বাচন করছে তারা নিজেদের শক্তি-সামর্থ্য নিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ভোটের মাঠে লড়াই করে জিতে আসুক। এ নিয়ে জোটের শরিক ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মো: ইসমাইল হোসেন নয়া দিগন্তকে বলেন, গত নির্বাচনগুলোতে যে হিসাব-নিকাশ ছিল এবার নির্বাচনে সেগুলো আর থাকছে না। তার কারণ এবার নির্বাচনে ‘বিএনএম ও তৃণমূল বিএনপি’র মতো দল তৈরি হয়ে গেছে। ফলে নির্বাচনে জোটের শরিকদের গুরুত্ব ও আবেদন আগের মতো নেই, অনেকখানি কমে গেছে। তিনি বলেন, নির্বাচন সামনে রেখে নানা সমীকরণ হয়, এবারো হচ্ছে। তবে বিএনপি নির্বাচনে না এলেও জাতীয় পার্টিসহ নতুন কয়েকটি দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করায় আওয়ামী লীগের কিছুটা হলেও নির্বাচনী চাপ কম আছে। আওয়ামী লীগ মনে করছে, এভাবেই নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক করা সম্ভব। এ জন্য জোটের শরিকদের বিষয়টা আগেভাগে মীমাংসা না করেই একক প্রার্থী দিয়েছে দলটি। দেখা যাক আলাপ-আলোচনা চলছে, চূড়ান্ত না হওয়া পর্যন্ত আরো অপেক্ষা করতে হবে।

গতকাল সন্ধ্যায় রাজধানীর ইস্কাটনের বাসায় জাসদ ও ওয়ার্কার্স পার্টির শীর্ষ নেতাদের সাথে বৈঠক শেষে জোটের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র আমির হোসেন আমু সাংবাদিকদের বলেন, সোমবার জোট নেতাদের সাথে আমাদের ১৪ দলের নেত্রীর একটি সভা হয়েছে। সভায় বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। বর্তমান প্রেক্ষাপট ও রাজনৈতিক বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। সভায় জোট-মহাজোটের আসন বণ্টনের বিষয়টিও উঠে এসেছে। তিনি বলেন, নির্বাচন জোটগতভাবে হবে। আগামীকাল (আজ বুধবার) জাতীয় পার্টির সাথে আলোচনা করবে আওয়ামী লীগ। জোটের আসন বিন্যাস ও প্রার্থী চূড়ান্ত করতে ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। ক্ষমতাসীন জোটের মুখপাত্র বলেন, অন্যান্য দলের মতো ১৪ দল আসন ভাগাভাগির জোট নয়। আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধেও আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট প্রার্থী আছে। ১৭ তারিখের আগে জোট শরিকদের আসন ছাড়ের বিষয়ে কিছু বলা যাচ্ছে না।