ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::

গাজীপুরে শ্রমিক অসন্তোষ ক্রমেই ছড়িয়ে পড়ছে

  • সূর্যোদয় ডেস্ক:
  • আপডেট সময় ১০:১০:২৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৩
  • ১১১৪ বার পড়া হয়েছে

গাজীপুরে বেতন ভাতা বৃদ্ধির দাবিতে শ্রমিক অসন্তোষ ক্রমেই ছড়িয়ে পড়েছে। বিক্ষোভকালে আন্দোলনরত দুই শ্রমিক নিহত হওয়ায় শ্রমিক অসন্তোষ আরো বেড়েছে। আন্দোলনে যোগ হয়েছে নতুন সহিংসতা।

মঙ্গলবারেও জেলার বিভিন্ন এলাকায় শিল্প কারখানার শ্রমিকরা বিক্ষোভ ও মহাসড়ক অবরোধ এবং ভাঙচুর করেছে। আন্দোলনরত শ্রমিকরা কয়েকটি পুলিশ বক্সে ও ফাঁড়িতে এবং হাসপাতালে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করেছে। এ সময় তারা কালিয়াকৈরের সফিপুর বাজার পুলিশ বক্সে ও ওয়ালটন কারখানার শোরুমে অগ্নি সংযোগ করে। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের সাথে পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ টিয়ারসেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে।

বেতন ভাতা বৃদ্ধির দাবিতে অষ্টম দিনের মতো মঙ্গলবার সকালে শ্রমিকরা লাঠিসোটা নিয়ে জেলার বিভিন্ন এলাকায় রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ শুরু করে। তাদের সাথে ছোট ছোট শিশুরাও অংশ নেয়। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা ঢাকা-ময়মনসিংহ এবং ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নিয়ে টায়ার জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ করে। তারা বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করেছে। এ সময় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা পুলিশের গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে পুড়িয়ে দিয়েছে। এতে যানবাহন চলাচল সাময়িক বন্ধ হয়ে পড়ে।

সকালে আন্দোলনরত শ্রমিকরা কালিয়াকৈরের সফিপুর বাজার এলাকার তানহা হাসপাতালসহ কয়েকটি দোকানপাটে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর করে। এ সময় তারা সফিপুর বাজারে পুলিশ বক্সে অগ্নিসংযোগ করে। এছাড়া মৌচাক পুলিশ ফাঁড়ি ও চন্দ্রা হাইওয়ে পুলিশ বক্স ভাঙচুর করে। বেলা ১১টার দিকে চন্দ্রায় ওয়ালটন হাইটেক কারখানার সামনের শো-রুমে (ওয়ালটন প্লাজা) হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে। একপর্যায়ে শোরুমের সামনে থাকা একটি পিক আপ মহাসড়কের উপর এনে তাতে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে ওই শো-রুমটিতেও আগুন জ্বালিয়ে দেয়। খবর পেয়ে কালিয়াকৈর ফায়ার সার্ভিসের দু’টি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রায় এক ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। ততক্ষনে শোরুমে থাকা সমস্ত মালামাল পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এ সময় পুলিশের সাথে শ্রমিকদের সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। এতে পথচারীসহ কয়েকজন আহত হন। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে টিয়ারসেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।

এদিকে সোমবার মহানগরীর কোনাবাড়িতে এবিএম ফ্যাশন লিমিটেড নামের এক পোশাক কারখানায় অগ্নিসংযোগ করে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা। রাতে ওই কারখানা থেকে ঈমান হোসেন (৩২) নামের এক শ্রমিকের লাশ উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। তিনি ওই কারখানার শ্রমিক। নিহত ঈমান হোসেন কুমিল্লা জেলার লাকসাম থানার দুমবাড়িয়া গ্রামের জহিরুল ইসলামের ছেলে।

জিএমপি’র উপ-পুলিশ কমিশনার (অপরাধ-উত্তর) মোহাম্মাদ ইব্রাহিম খান জানান, কারখানাটিতে বিকেল সোয়া ৫টার দিকে অগ্নিসংযোগ করে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা। ফায়ার সার্ভিসের বেশ কয়েকটি ইউনিট তাৎক্ষণিকভাবে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে কাজ করে। রাত ৯টার দিকে কারখানার আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। পরে ড্যাম্পিং করতে গিয়ে এক শ্রমিকের লাশ সেখান থেকে উদ্ধার করা হয়। আগুনের ধোঁয়ার কারণে অক্সিজেনের অভাবে তার মৃত্যু হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। তবে তিনি দগ্ধ হননি। তার কাছে একটি মোবাইল ফোন ছিল। ওই মোবাইল ফোনের মাধ্যমে তার পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়।

একইদিন (সোমবার) মহানগরীর ভোগড়া এলাকায় সংঘর্ষকালে গুলিবিদ্ধ হয়ে এনার্জিপ্যাক ডিজাইন গার্মেন্টসে ইলেকট্রিশিয়ান রাসেল হাওলাদার নামের একজন নিহত হয়েছেন। এ নিয়ে শ্রমিক আন্দোলনে দু’জন নিহত হয়।

এদিকে লাগাতার শ্রমিক অসন্তোষের কারণে জেলার অধিকাংশ মিল কারখানা বন্ধ রেখেছে কর্তৃপক্ষ। বিভিন্ন কারখানা ও গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। শ্রমিক আন্দোলনের কারণে শুধু কোনাবাড়ি এলাকার ডিবিএল গ্রুপের জিন্নাত কমপ্লেক্স, মিতালী ফ্যাশন, রিপন নীটওয়্যার, তুসুকা গ্রুপের পাঁচটি পোশাক কারখানা, মাল্টি ফ্যাবস, এম রম নিট ওয়্যার, আলিম নিট টেক্স, পিএন কম্পোজিট, জিএমএস কম্পোজিট, মুকুল কম্পোজিটসহ দেড় শতাধিক কারখানা মালিক কর্তৃপক্ষ বন্ধ রেখেছে বলে জানিয়েছেন শিল্প পুলিশের সদর দফতর থেকে গাজীপুরে দায়িত্বপ্রাপ্ত তদারকি কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক মীর রকিবুল হক।

গাজীপুর শিল্পাঞ্চল পুলিশ-২ এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো: মঈনুল হক জানান, গত ২৩ অক্টোবর থেকে বেতন বৃদ্ধির দাবি জানিয়ে আন্দোলন শুরু করে বিভিন্ন শিল্প কারখানার শ্রমিকেরা। সপ্তম দিনের মতো সোমবারও শ্রমিকরা আন্দোলন বিক্ষোভ ও মহাসড়ক অবরোধ করে। তারা উত্তেজিত হয়ে গাড়ি ভাঙচুর ও ইট-পাটকেল ছুঁড়ে। পরে টিয়ার সেল ও সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহার করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্র করা হয়।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

আজকের সূর্যোদয়

আজকের সূর্যোদয় প্রত্রিকায় আপনাদের স্বাগতম। ‍আমাদের নিউজ পড়ুন এবং বিজ্ঞাপন দিয়ে আমাদের পাশে থাকুন।

বরিশালে মুজিবিয়ানের ৮৭ নেতাকে খুঁজছে গোয়েন্দা সংস্থা

গাজীপুরে শ্রমিক অসন্তোষ ক্রমেই ছড়িয়ে পড়ছে

আপডেট সময় ১০:১০:২৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৩

গাজীপুরে বেতন ভাতা বৃদ্ধির দাবিতে শ্রমিক অসন্তোষ ক্রমেই ছড়িয়ে পড়েছে। বিক্ষোভকালে আন্দোলনরত দুই শ্রমিক নিহত হওয়ায় শ্রমিক অসন্তোষ আরো বেড়েছে। আন্দোলনে যোগ হয়েছে নতুন সহিংসতা।

মঙ্গলবারেও জেলার বিভিন্ন এলাকায় শিল্প কারখানার শ্রমিকরা বিক্ষোভ ও মহাসড়ক অবরোধ এবং ভাঙচুর করেছে। আন্দোলনরত শ্রমিকরা কয়েকটি পুলিশ বক্সে ও ফাঁড়িতে এবং হাসপাতালে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করেছে। এ সময় তারা কালিয়াকৈরের সফিপুর বাজার পুলিশ বক্সে ও ওয়ালটন কারখানার শোরুমে অগ্নি সংযোগ করে। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের সাথে পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ টিয়ারসেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে।

বেতন ভাতা বৃদ্ধির দাবিতে অষ্টম দিনের মতো মঙ্গলবার সকালে শ্রমিকরা লাঠিসোটা নিয়ে জেলার বিভিন্ন এলাকায় রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ শুরু করে। তাদের সাথে ছোট ছোট শিশুরাও অংশ নেয়। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা ঢাকা-ময়মনসিংহ এবং ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নিয়ে টায়ার জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ করে। তারা বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করেছে। এ সময় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা পুলিশের গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে পুড়িয়ে দিয়েছে। এতে যানবাহন চলাচল সাময়িক বন্ধ হয়ে পড়ে।

সকালে আন্দোলনরত শ্রমিকরা কালিয়াকৈরের সফিপুর বাজার এলাকার তানহা হাসপাতালসহ কয়েকটি দোকানপাটে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর করে। এ সময় তারা সফিপুর বাজারে পুলিশ বক্সে অগ্নিসংযোগ করে। এছাড়া মৌচাক পুলিশ ফাঁড়ি ও চন্দ্রা হাইওয়ে পুলিশ বক্স ভাঙচুর করে। বেলা ১১টার দিকে চন্দ্রায় ওয়ালটন হাইটেক কারখানার সামনের শো-রুমে (ওয়ালটন প্লাজা) হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে। একপর্যায়ে শোরুমের সামনে থাকা একটি পিক আপ মহাসড়কের উপর এনে তাতে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে ওই শো-রুমটিতেও আগুন জ্বালিয়ে দেয়। খবর পেয়ে কালিয়াকৈর ফায়ার সার্ভিসের দু’টি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রায় এক ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। ততক্ষনে শোরুমে থাকা সমস্ত মালামাল পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এ সময় পুলিশের সাথে শ্রমিকদের সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। এতে পথচারীসহ কয়েকজন আহত হন। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে টিয়ারসেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।

এদিকে সোমবার মহানগরীর কোনাবাড়িতে এবিএম ফ্যাশন লিমিটেড নামের এক পোশাক কারখানায় অগ্নিসংযোগ করে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা। রাতে ওই কারখানা থেকে ঈমান হোসেন (৩২) নামের এক শ্রমিকের লাশ উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। তিনি ওই কারখানার শ্রমিক। নিহত ঈমান হোসেন কুমিল্লা জেলার লাকসাম থানার দুমবাড়িয়া গ্রামের জহিরুল ইসলামের ছেলে।

জিএমপি’র উপ-পুলিশ কমিশনার (অপরাধ-উত্তর) মোহাম্মাদ ইব্রাহিম খান জানান, কারখানাটিতে বিকেল সোয়া ৫টার দিকে অগ্নিসংযোগ করে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা। ফায়ার সার্ভিসের বেশ কয়েকটি ইউনিট তাৎক্ষণিকভাবে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে কাজ করে। রাত ৯টার দিকে কারখানার আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। পরে ড্যাম্পিং করতে গিয়ে এক শ্রমিকের লাশ সেখান থেকে উদ্ধার করা হয়। আগুনের ধোঁয়ার কারণে অক্সিজেনের অভাবে তার মৃত্যু হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। তবে তিনি দগ্ধ হননি। তার কাছে একটি মোবাইল ফোন ছিল। ওই মোবাইল ফোনের মাধ্যমে তার পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়।

একইদিন (সোমবার) মহানগরীর ভোগড়া এলাকায় সংঘর্ষকালে গুলিবিদ্ধ হয়ে এনার্জিপ্যাক ডিজাইন গার্মেন্টসে ইলেকট্রিশিয়ান রাসেল হাওলাদার নামের একজন নিহত হয়েছেন। এ নিয়ে শ্রমিক আন্দোলনে দু’জন নিহত হয়।

এদিকে লাগাতার শ্রমিক অসন্তোষের কারণে জেলার অধিকাংশ মিল কারখানা বন্ধ রেখেছে কর্তৃপক্ষ। বিভিন্ন কারখানা ও গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। শ্রমিক আন্দোলনের কারণে শুধু কোনাবাড়ি এলাকার ডিবিএল গ্রুপের জিন্নাত কমপ্লেক্স, মিতালী ফ্যাশন, রিপন নীটওয়্যার, তুসুকা গ্রুপের পাঁচটি পোশাক কারখানা, মাল্টি ফ্যাবস, এম রম নিট ওয়্যার, আলিম নিট টেক্স, পিএন কম্পোজিট, জিএমএস কম্পোজিট, মুকুল কম্পোজিটসহ দেড় শতাধিক কারখানা মালিক কর্তৃপক্ষ বন্ধ রেখেছে বলে জানিয়েছেন শিল্প পুলিশের সদর দফতর থেকে গাজীপুরে দায়িত্বপ্রাপ্ত তদারকি কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক মীর রকিবুল হক।

গাজীপুর শিল্পাঞ্চল পুলিশ-২ এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো: মঈনুল হক জানান, গত ২৩ অক্টোবর থেকে বেতন বৃদ্ধির দাবি জানিয়ে আন্দোলন শুরু করে বিভিন্ন শিল্প কারখানার শ্রমিকেরা। সপ্তম দিনের মতো সোমবারও শ্রমিকরা আন্দোলন বিক্ষোভ ও মহাসড়ক অবরোধ করে। তারা উত্তেজিত হয়ে গাড়ি ভাঙচুর ও ইট-পাটকেল ছুঁড়ে। পরে টিয়ার সেল ও সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহার করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্র করা হয়।