পৌষের শেষ সময়, ঢাকাসহ সারাদেশে বয়ে যাচ্ছে প্রচন্ড শীত, পাশাপাশি রয়েছে ঘনকুয়াশাও। গত কয়েকদিনের শৈত্যপ্রবাহ ও কুয়াশায় বিঘ্নিত হচ্ছে দেশের নদীপথে যাত্রা। রাজধানীর সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল থেকে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে দৈনিক ২শ’র বেশি লঞ্চ চলাচল করে থাকে।
কিন্তু কুয়াশায় লঞ্চ নিয়ন্ত্রণ রাখতে নেই আধুনিক সরঞ্জাম, রাডার আছে মাত্র পঁচিশ থেকে ত্রিশটি যাত্রীবাহী নৌ-যানে। অধিকাংশ নদীতে নেই বয়াবাতি। চলমান বৈরি আবহাওয়ায় নদীপথে বেগ পেতে হচ্ছে লঞ্চ মাস্টারদের। আবার যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচলে বিঘ্ন ঘটাচ্ছে বালুবাহী নৌযান। সবমিলিয়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে লাগছে বহু সময়। ফলে ভোগান্তিতে পড়ছেন যাত্রীরা।
তাদের অভিযোগ, কুয়াশার কারণে নির্দিষ্ট সময়ে পৌঁছানো যাচ্ছে না। ফলে রোগী নিয়ে পোহাচ্ছে হচ্ছে চরম ভোগান্তি। এছাড়াও চাকরির পরীক্ষাসহ জরুরিকাজে ঘটছে বিঘ্নিতা। কুয়াশার কারণে লঞ্চ চালাতে চান না মাস্টাররা। কিন্তু মালিকপক্ষ ও যাত্রীদের চাহিদা থাকায় লঞ্চ চালাতে হচ্ছে বলে জানান তারা। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ বলছে (বিআইডব্লিউটিএ) বলছে, কুয়াশায় লঞ্চ চলাচলে বিভিন্ন দিক-নির্দেশনা দেওয়া থাকলেও লঞ্চ মালিকেরা তা মানছেন না।
কোন কোন নদীতে বয়াবাতি নেই তা লিখিত আকারে জানালে ব্যবস্থা নেয়া হবে। জানা যায়, পদ্মাসেতু চালুর পর কমেছে লঞ্চের যাত্রী কম দেখা যায়। তবে চিরায়ত নিয়মে যাত্রী নিয়ে সদরঘাট টার্মিনাল ছেড়ে যাচ্ছে দক্ষিণাঞ্চের লঞ্চগুলো। পাশাপাশি দিনের বেলায় ছেড়ে যাচ্ছে চাঁদপুর অঞ্চলের লঞ্চগুলো। তবে যাত্রী কম থাকায় নির্ধারিত ভাড়ার থেকেও কমে যাত্রী তুলতে দেখা যায়। গত রোববার রাতে বরিশাল থেকে ছেড়ে আসা লঞ্চগুলো সদরঘাট টার্মিনালে পৌঁছে ভোর ৫টা থেকে ৬টার ভিতর।
অন্যসময় থেকে আরও ২ বেশি সময় লাগছে। আবার সদরঘাট থেকে যেসব লঞ্চ ছেড়ে যাচ্ছে সেগুলোতেও একই সময় লাগছে। কুয়াশার কারণে এমন হচ্ছে বলে জানায় যাত্রী ও মাস্টাররা। এ বিষয়ে এমভি মানামী লঞ্চের মাস্টার মানিক শরীফ প্রতিবেদককে বলেন, ঘন কুয়াশায় চলাচলের উপযোগী না হলে আমরা নিজেরা লঞ্চ চালাতে চাই না। এছাড়াও নৌ কর্তৃপক্ষেরও নিষেধ আছে। তবে, আমাদের কিছু কিছু জাহাজের সুবিধা আছে যে রাডারের স্কিনে চ্যানেলটা দেখা যায়।
সামনে কোনো কিছু আছে কিনা। তবে অনেক লঞ্চে নেই। এতে পৌঁছাতে সময় বেশি লাগছে। অনেক সময় রাডারও কাজ করে না। সেসময় আমাদের ধীরগতিতে লঞ্চ চালাতে হচ্ছে। কখনো কখনো ঘনকুয়াশার কারণে নোঙ্গর ফেলে অপেক্ষাও করতে হয়।
নৌযানগুলো যথাযথ নিয়ম মেনে চলার বিষয়ে এ লঞ্চ মাস্টার অভিযোগ করে বলেন, অনেক ট্রলার আছে বাতি ব্যবহার করে না, এছাড়া মাছ ধরার নৌকাগুলোও এলোমেলো থাকে। এসবের জন্য কুয়াশায় বেশ বেগ পেতে হয়। অনেক সময় দেখা যায়, আমরা তাদেরকে দেখছি কিন্তু তারা আমাদের দেখছে না, সেক্ষেত্রে দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা থাকে।
এদিকে এডভেঞ্চার-৯ লঞ্চের মাস্টার আলমাছ হোসেন আমার সংবাদকে বলেন, ঘন কুয়াশায় লাইট দিয়েও সামনে কিছু দেখা যায় না। সেক্ষেত্রে আমরা নোঙর ফেলে সেখানে অবস্থান করি। তিনি আরও বলেন, কুয়াশায় নৌ-কর্তৃপক্ষের নিয়ম অনুযায়ী লঞ্চ চলাচলের নিয়ম নেই। কারণ এখানকার নদীপথে ঠিকমতো বয়া বাতি নেই, থাকলেও সেটা ফ্ল্যাশ করে না। কর্তৃপক্ষের পদক্ষেপ নেওয়া উচিৎ।
সদরঘাট লঞ্চঘাটে বরিশালগামী যাত্রী রোখসানা আক্তার, কবির হোসেন ও বিল্লাল হোসেন বলেন, লঞ্চগুলো আধুনিক সরঞ্চাম নেই বললেই চলে। কর্তৃপক্ষের তদারকির অভাব। ফলে আবহাওয়ার এমন বৈরিতায় চিকিৎসা, পরীক্ষাসহ গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলোতে সমস্যা হচ্ছে। অনেক সময় পরীক্ষার হলে সময়মতো উপস্থিত হতে পারছি না।
অসুস্থ রোগী আরও অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। পদ্মা সেতু দিয়ে রোগী নিয়ে আসার ব্যাপারে তারা বলেন, সেতু দিয়ে রোগী আনতে গেলে খরচও যেমন বেশি ও রোগী আরও অসুস্থ হয়ে যায়। লঞ্চে যাত্রাটা আরামদায়ক তাই এভাবে আনা হয়। এ বিষয়ে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহনের (বিআইডব্লিউটিএ) পরিচালক মুহাম্মাদ রফিকুল ইসলাম বলেন, ঘন কুয়াশার ভিতরে বিভিন্ন রুটে নিরাপত্তার জন্য আমাদের নির্দেশনা রয়েছে। যদিও লঞ্চ ছাড়ার সময় কুয়াশাটা তেমন থাকে না।
আর এ ব্যপারে কঠোর নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে। বিভিন্ন অভিযোগ সম্পর্কে নৌ কর্তৃপক্ষের পদক্ষেপের বিষয়ে তিনি বলেন, ঢালাওভাবে কোন অভিযোগ জানালে হবে না। যেকোন অভিযোগ লিখিত আকারে বিস্তারিত জানালে আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নিব। আর রাডারের বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।