বাকশক্তি আল্লাহর দেয়া অন্যতম বড় নিয়ামত। এ নিয়ামতের কদর করে কথা বলতে হবে জেনে-বুঝে ও হিসাব করে। মুখ আছে বলেই সব কথা বলা যাবে না। কারণ, মানুষের প্রতিটি কাজকর্ম ও কথা লিপিবদ্ধ করা হয়। দায়িত্বপ্রাপ্ত ফেরেশতা তা রেকর্ড করে নেয়। তাতে কোনো গুনাহ থাকুক বা না থাকুক। আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘মানুষ যে কথাই উচ্চারণ করে তা লিপিবদ্ধ করার জন্য তৎপর প্রহরী তার সাথেই রয়েছে।’ (সূরা কাফ, আয়াত-১৮)
চুপ থাকার ব্যাপারে হজরত সোলায়মান আ: বলেন, ‘কথা বলাটা যদি রুপা হয়, তাহলে চুপ থাকাটা স্বর্ণ।’ তা ছাড়া চুপ থাকার উপকারিতা সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সা:-এর অসংখ্য হাদিস রয়েছে।
আমাদের সমাজের হানাহানি-মারামারি ও হিংসা-বিদ্বেষের কারণগুলো খুঁজলে দেখা যাবে, অনর্থক কথাবার্তা ও কাজে জড়ানোর কারণে এসব হচ্ছে। অনিয়ন্ত্রিত ও লাগামহীন কথাবার্তা ঝগড়াঝাটির মূল কারণ। জীবনে যারা অনর্থক কথাবার্তা ও কাজ থেকে বিরত রয়েছে, তারা সবধরনের ফেতনা-ফাসাদ থেকে নিজেকে নিরাপদে রাখতে সক্ষম হয়েছে। ইমাম আহমাদ, দারেমি ও বায়হাকি সূত্রে বর্ণিত- রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, ‘যে চুপ থাকে সে নাজাত পায়।’ (তিরমিজি)
অন্য হাদিসে হজরত আনাস বিন মালিক রা: থেকে বর্ণিত- রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, ‘যে নিরাপদ থাকতে চায়, তার চুপ থাকাটা আবশ্যক।’ (মুসনাদে আবি ইয়ালা)
অন্য আরেক হাদিসে হজরত আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত হাদিসে আল্লাহর রাসূল সা: বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি বিশ্বাস রাখে, সে যেন ভালো কথা বলে; নচেৎ চুপ থাকে।’ (বুখারি-৬০১৮, মুসলিম-১৮২)
তা ছাড়া চুপ থাকাটা নফল ইবাদত। নফল ইবাদতের মাধ্যমে বান্দাহ আল্লাহর নৈকট্য লাভ করে। অহেতুক কথামালা ও অনর্থক কাজের চেয়ে চুপ থাকাটা অধিক উত্তম ও উপকারী। এ প্রসঙ্গে হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত- রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, ‘যে আল্লাহ ও আখিরাত দিবসের প্রতি ঈমান এনেছে, সে যেন উত্তম কথা বলে না হয় চুপ থাকে।’ (সহিহ বুখারি ও মুসলিম)
একবার একজন সাহাবি রাসূলুল্লাহ সা:-কে জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি আমার ব্যাপারে যে বিষয়ে আশঙ্কা করেন এর মধ্যে বেশি আশঙ্কা করেন কোনটি? রাসূলুল্লাহ সা: জিহ্বায় ধরে বললেন, ‘জবানের হিফাজত’। (তিরমিজি)
দুনিয়া ও আখিরাতের প্রভূত কল্যাণের কথা ভেবে ইসলাম মানুষকে চুপ থাকার প্রতি উৎসাহিত করেছে। তা ছাড়া সব মানুষ অহেতুক ও অনর্থক কথাবার্তা শুনতে পছন্দ করে না। এসবের মধ্যে মিথ্যাচার, গিবত, সন্দেহ ও অযাচিত পরনিন্দা থাকে। এর সবই কবিরা গুনাহ। ইসলামী স্কলাররা বলেছেন, ‘অহেতুক ও অনর্থক কথাবার্তার মাধ্যমে মানুষ শুধু নিজের ক্ষতি সাধন করে না; বরং অন্যের ক্ষতিও করে, অন্যকেও কষ্ট দেয়। এগুলো পাপের কারণ।’ এ ব্যাপারে মু’মিন-মুসলমানদের সচেতন থাকা উচিত।
লেখক :
- শামসুল আরেফীন
শিক্ষক, ছড়াকার, কলামিস্ট