ঢাকা , সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::

ছোটদের ঋণ দিতে অনীহা ব্যাংকের

  • সূর্যোদয় ডেস্ক:
  • আপডেট সময় ১০:২১:১৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২২ জানুয়ারী ২০২৩
  • ১১৩৮ বার পড়া হয়েছে

দেশের অতি ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র, কুটির ও মাঝারি (সিএমএসএমই) শিল্পের বিকাশে প্রয়োজনীয় ঋণের জোগান দিতে ব্যাংকগুলোর যেন আর্থিক সংকট না হয়, সে জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বেশ কয়েকটি পুনঃঅর্থায়ন তহবিল গঠন করা হয়েছে। নিয়মিত ঋণের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বল্প সুদের পুনঃঅর্থায়ন তহবিলও রয়েছে এ খাতে ঋণ বিতরণের জন্য। কিন্তু ছোট ছোট শিল্পের এ খাতে ঋণ বিতরণে ব্যাংকগুলো রীতিমতো অনীহা দেখাচ্ছে।

এ ছাড়া সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত আরেকটি খাত হচ্ছে কৃষি। এ খাতেও ঋণ বিতরণ বৃদ্ধি করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তরফে নেওয়া হয়েছে একের পর এক পদক্ষেপ। কিন্তু এ খাতেও ঋণ বিতরণ লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় অনেক পিছিয়ে আছে। এ দুটি খাতে ঋণ বিতরণের সার্বিক চিত্রটি খুবই হতাশাজনক। এ নিয়ে উদ্বিগ্ন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার। সিএমএসএমই খাতে ঋণ বিতরণ ত্বরান্বিত করতে ব্যাংকের এমডিদের ব্যক্তিগতভাবে উদ্যোগ গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। আর কৃষি খাতে ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হলে ব্যাংকগুলোকে ছাড় দেওয়া হবে না বলে হুশিয়ারিও উচ্চারণ করেছেন তিনি।

প্রাপ্ত তথ্য বলছে, সিএমএসএমই খাতে ৪৬ হাজার কোটি টাকার ১৩টি পুনঃঅর্থায়ন স্কিমের বিপরীতে এ পর্যন্ত মাত্র ১১ হাজার ৯০০ কোটি টাকা বিতরণ করা হয়েছে। ফলে এখনো এ খাতের ৩৪ হাজার কোটি টাকার তহবিল কেন্দ্রীয় ব্যাংকে পড়ে আছে, অলস। কৃষি খাতে ব্যাংকগুলোর ঋণ বিতরণের অবস্থাও তথৈবচ। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ব্যাংকার্স সভায় এ দুটি খাতে ঋণ বিতরণের এমন হতাশার চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। সেই সভাতেই ক্ষোভ ও উদ্বেগ প্রকাশ করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর।
জানা যায়, গত মাসে দেশের সব বাণিজ্যিক ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওই সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় মূল আলোচ্য সূচিতে কৃষি এবং সিএমএসএমই খাতে ঋণ বিতরণ পরিস্থিতি নিয়ে পৃথক দুটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। এর মধ্যে সিএমএসএমই খাতে অর্থায়ন বৃদ্ধি শীর্ষক প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন ডেপুটি গভর্নর আবুৃ ফরাহ মো. নাছের। আর কৃষি ঋণ বিতরণ সংক্রান্ত কার্যক্রম জোরদারকরণ শীর্ষক প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন আরেক ডেপুটি গভর্নর একেএম সাজেদুর রহমান। সভায় জানানো হয়, সিএমএসএমই খাতে অপেক্ষাকৃত স্বল্প সুদে ও সহজ শর্তে ঋণ সুবিধা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ ব্যাংক নিজস্ব এবং উন্নয়ন সহযোগী প্রতিষ্ঠানের তহবিল থেকে প্রায় ৪৬ হাজার কোটি টাকার মোট ১৩টি পুনঃঅর্থায়ন স্কিম পরিচালনার মাধ্যমে সহায়তা প্রদান করে আসছে। সর্বশেষ এ খাতে ২৫ হাজার কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন তহবিল ঘোষণা করার পর ব্যাংকগুলোর এমডিদের সঙ্গে গভর্নরের সভায় তাদের চাহিদা মোতাবেক কেন্দ্রীয় ব্যাংক ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিম চালু করেছে। মেয়াদি ঋণের পাশাপাশি চলতি মূলধন ঋণ দেওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছে। এ ছাড়া ব্যাংকগুলো কর্তৃক বিতরণকৃত সম্পূর্ণ অর্থের বিপরীতে পুনঃঅর্থায়নের আবেদনের সঙ্গে সঙ্গেই বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন পাচ্ছে। এসব পদক্ষেপ নেওয়ার পরও সিএমএসএমই খাতে ঋণ বিতরণ সন্তোষজনক নয়। ৪৬ হাজার কোটি টাকার তহবিলের বিপরীতে ব্যাংকগুলো ব্যবহার করেছে মাত্র ১১ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। অর্থাৎ ৩৪ হাজার কোটি টাকার অধিক বাংলাদেশ ব্যাংকে অলস তহবিল পড়ে রয়েছে। সভায় আরও বলা হয়, ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসের সার্কুলার অনুযায়ী, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বিতরণ করা ঋণের মধ্যে সিএমএসএমইতে প্রতিবছর কমপক্ষে ১ শতাংশ বৃদ্ধিসহ আগামী ২০২৪ সালের মধ্যে ন্যূনতম ২৫ শতাংশে উন্নীত করতে হবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত অর্জিত হয়েছে মাত্র ১৯ শতাংশ।

সভায় গভর্নর বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক সিএমএসএমই খাতের জন্য ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিম প্রবর্তন করার পরও ঋণ বিতরণ না হওয়ার কোনো কারণ নেই। এ পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রার যতটুকু অর্জিত হয়েছে, তার চেয়ে অনেক বেশি হওয়া উচিত ছিল। ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিম চালু হওয়ায় ঝুঁকি ও ব্যয় ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে সমস্যা না থাকায় বিষয়টিতে ব্যবস্থাপনা পরিচালকরা ব্যক্তিগতভাবে উদ্যোগ গ্রহণ করলে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন ত্বরান্বিত হবে এবং ব্যাংকের জন্যও তা লাভজনক হবে। সভায় সিএমএসএমই ঋণ বিতরণ বাড়াতে তিনটি সিদ্ধান্ত হয়। এগুলো হলো ব্যাংকগুলোকে ২০২৪ সালের মধ্যে সিএমএসএমই খাতে ঋণ বিতরণের পরিমাণ মোট ঋণ ও অগ্রিমের ২৫ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্যে পুনঃঅর্থায়ন স্কিমের ঋণ বৃদ্ধি করতে হবে। ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকরা ব্যক্তিগতভাবে উদ্যোগ গ্রহণ করে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন ত্বরান্বিত করবেন। এবং ব্যাংকগুলো মেয়াদি ঋণ এবং চলতি মূলধন ঋণ পৃথকভাবে উল্লেখ করে বাংলাদেশ ব্যাংকে নিয়মিত প্রতিবেদন বাংলাদেশ ব্যাংকে দাখিল করবে।

সভায় জানানো হয়, চলতি ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের জন্য ৩০ হাজার ৯১১ কোটি টাকা কৃষি ও পল্লী ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। এর বিপরীতে চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে ৯ হাজার ৪৬৯ কোটি টাকা বিতরণ করা হয়েছে। এ চার মাসে লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ২টি বিদেশি ব্যাংক কোনো ঋণ বিতরণ করেনি এবং ৩৩টি ব্যাংকের ঋণ বিতরণ লক্ষ্যমাত্রার অনেক নিচে করেছে। অন্যদিকে করোনা মহামারী ও অন্যান্য কারণে গ্রামে ফিরে যাওয়া জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যে ৩১ জুন ২০২৪ পর্যন্ত মেয়াদে ৫০০ কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন স্কিম গঠন করা হয়, যার গ্রাহক পর্যায়ে সুদের হার ৬ শতাংশ। ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত এ স্কিমটির আওতায় ১৬টি ব্যাংক অংশগ্রহণ করেছে এবং ৮৩ কোটি কোটি টাকা বিতরণ করেছে। গম ও ভুট্টা উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে ৩০ জুন ২০২৫ পর্যন্ত মেয়াদে ৪ শতাংশ সুদে ১ হাজার কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন স্কিম গঠন করা হয়। এ স্কিমের আওতায় ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত ২০টি ব্যাংক অংশগ্রহণ করেছে এবং ৯ কোটি ৪২ লাখ টাকা বিতরণ করেছে। এ ছাড়া দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে কৃষি খাতের জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন স্কিম গঠন করা হয়েছে, যার মেয়াদ ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত। এ তহবিলে গ্রাহক পর্যায়ে সুদের হার ৪ শতাংশ। এ তহবিল থেকে এখনো ঋণ বিতরণ শুরু করতে পারেনি ব্যাংকগুলো।

ঋণ বিতরণে এমন হতাশাজনক পরিস্থিতি নিয়ে গভর্নর বলেন, কৃষি খাত হচ্ছে সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারমূলক খাত। মানি মার্কেট শেয়ারের ৭৯ শতাংশ বেসরকারি ও বিদেশি ব্যাংকগুলোর হলেও বেসরকারি ব্যাংকগুলোর কৃষি খাতে ঋণের পরিমাণ মাত্র ২ শতাংশ। আর বিদেশি ব্যাংকগুলোর পরিমাণ মাত্র ১ শতাংশ। তিনি বলেন, ২০২৩ সালে কৃষি ঋণের লক্ষ্যমাত্রা উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বৃদ্ধি করা হবে। কৃষি ঋণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে না পারলে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। বরং কিছু নীতিগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তা ছাড়া প্রধানমন্ত্রীও কোনো ব্যাংকের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থতার ক্ষেত্রে অনার্জিত লক্ষ্যমাত্রা অন্য ব্র্যাংককে দেওয়ার জন্য পরামর্শ প্রদান করেছেন।

তিনি আরও বলেন, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে এ ধরনের অগ্রাধিকারমূলক ঋণ বিতরণ করা বাধ্যতামূলক। রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া (আরবিআই) প্রতিটি ব্যাংকের জন্য নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে। যদি কোনো ব্যাংক লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে না পারে, তার লক্ষ্যমাত্রার অনার্জিত অংশ আরবিআইয়ের কাছে জমা দেয়। তবে এর বিপরীতে ব্যাংককে কোনো সুদ প্রদান করা হয় না। অন্যদিকে যে ব্যাংকগুলো এ ঋণগুলো বিতরণে ভালো করছে আরবিআই তাদের হ্রাসকৃত সুদহারে অর্থায়ন করে। বাংলাদেশ ব্যাংকও এ ধরনের একটি তহবিল গঠন করবে এবং যে ব্যাংকগুলো লক্ষ্যমাত্রার সমপরিমাণ ঋণ বিতরণ করতে পারবে না, তারা অবিতরণকৃত ঋণের অর্থ এ তহবিলে জমা দেবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ওই অবিতরণকৃত অর্থ যে ব্যাংকগুলো এ ক্ষেত্রে ভালো করবে তাদের বিতরণের দায়িত্ব প্রদান করবে।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

আজকের সূর্যোদয়

আজকের সূর্যোদয় প্রত্রিকায় আপনাদের স্বাগতম। ‍আমাদের নিউজ পড়ুন এবং বিজ্ঞাপন দিয়ে আমাদের পাশে থাকুন।

বরিশালে মুজিবিয়ানের ৮৭ নেতাকে খুঁজছে গোয়েন্দা সংস্থা

ছোটদের ঋণ দিতে অনীহা ব্যাংকের

আপডেট সময় ১০:২১:১৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২২ জানুয়ারী ২০২৩

দেশের অতি ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র, কুটির ও মাঝারি (সিএমএসএমই) শিল্পের বিকাশে প্রয়োজনীয় ঋণের জোগান দিতে ব্যাংকগুলোর যেন আর্থিক সংকট না হয়, সে জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বেশ কয়েকটি পুনঃঅর্থায়ন তহবিল গঠন করা হয়েছে। নিয়মিত ঋণের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বল্প সুদের পুনঃঅর্থায়ন তহবিলও রয়েছে এ খাতে ঋণ বিতরণের জন্য। কিন্তু ছোট ছোট শিল্পের এ খাতে ঋণ বিতরণে ব্যাংকগুলো রীতিমতো অনীহা দেখাচ্ছে।

এ ছাড়া সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত আরেকটি খাত হচ্ছে কৃষি। এ খাতেও ঋণ বিতরণ বৃদ্ধি করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তরফে নেওয়া হয়েছে একের পর এক পদক্ষেপ। কিন্তু এ খাতেও ঋণ বিতরণ লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় অনেক পিছিয়ে আছে। এ দুটি খাতে ঋণ বিতরণের সার্বিক চিত্রটি খুবই হতাশাজনক। এ নিয়ে উদ্বিগ্ন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার। সিএমএসএমই খাতে ঋণ বিতরণ ত্বরান্বিত করতে ব্যাংকের এমডিদের ব্যক্তিগতভাবে উদ্যোগ গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। আর কৃষি খাতে ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হলে ব্যাংকগুলোকে ছাড় দেওয়া হবে না বলে হুশিয়ারিও উচ্চারণ করেছেন তিনি।

প্রাপ্ত তথ্য বলছে, সিএমএসএমই খাতে ৪৬ হাজার কোটি টাকার ১৩টি পুনঃঅর্থায়ন স্কিমের বিপরীতে এ পর্যন্ত মাত্র ১১ হাজার ৯০০ কোটি টাকা বিতরণ করা হয়েছে। ফলে এখনো এ খাতের ৩৪ হাজার কোটি টাকার তহবিল কেন্দ্রীয় ব্যাংকে পড়ে আছে, অলস। কৃষি খাতে ব্যাংকগুলোর ঋণ বিতরণের অবস্থাও তথৈবচ। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ব্যাংকার্স সভায় এ দুটি খাতে ঋণ বিতরণের এমন হতাশার চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। সেই সভাতেই ক্ষোভ ও উদ্বেগ প্রকাশ করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর।
জানা যায়, গত মাসে দেশের সব বাণিজ্যিক ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওই সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় মূল আলোচ্য সূচিতে কৃষি এবং সিএমএসএমই খাতে ঋণ বিতরণ পরিস্থিতি নিয়ে পৃথক দুটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। এর মধ্যে সিএমএসএমই খাতে অর্থায়ন বৃদ্ধি শীর্ষক প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন ডেপুটি গভর্নর আবুৃ ফরাহ মো. নাছের। আর কৃষি ঋণ বিতরণ সংক্রান্ত কার্যক্রম জোরদারকরণ শীর্ষক প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন আরেক ডেপুটি গভর্নর একেএম সাজেদুর রহমান। সভায় জানানো হয়, সিএমএসএমই খাতে অপেক্ষাকৃত স্বল্প সুদে ও সহজ শর্তে ঋণ সুবিধা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ ব্যাংক নিজস্ব এবং উন্নয়ন সহযোগী প্রতিষ্ঠানের তহবিল থেকে প্রায় ৪৬ হাজার কোটি টাকার মোট ১৩টি পুনঃঅর্থায়ন স্কিম পরিচালনার মাধ্যমে সহায়তা প্রদান করে আসছে। সর্বশেষ এ খাতে ২৫ হাজার কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন তহবিল ঘোষণা করার পর ব্যাংকগুলোর এমডিদের সঙ্গে গভর্নরের সভায় তাদের চাহিদা মোতাবেক কেন্দ্রীয় ব্যাংক ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিম চালু করেছে। মেয়াদি ঋণের পাশাপাশি চলতি মূলধন ঋণ দেওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছে। এ ছাড়া ব্যাংকগুলো কর্তৃক বিতরণকৃত সম্পূর্ণ অর্থের বিপরীতে পুনঃঅর্থায়নের আবেদনের সঙ্গে সঙ্গেই বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন পাচ্ছে। এসব পদক্ষেপ নেওয়ার পরও সিএমএসএমই খাতে ঋণ বিতরণ সন্তোষজনক নয়। ৪৬ হাজার কোটি টাকার তহবিলের বিপরীতে ব্যাংকগুলো ব্যবহার করেছে মাত্র ১১ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। অর্থাৎ ৩৪ হাজার কোটি টাকার অধিক বাংলাদেশ ব্যাংকে অলস তহবিল পড়ে রয়েছে। সভায় আরও বলা হয়, ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসের সার্কুলার অনুযায়ী, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বিতরণ করা ঋণের মধ্যে সিএমএসএমইতে প্রতিবছর কমপক্ষে ১ শতাংশ বৃদ্ধিসহ আগামী ২০২৪ সালের মধ্যে ন্যূনতম ২৫ শতাংশে উন্নীত করতে হবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত অর্জিত হয়েছে মাত্র ১৯ শতাংশ।

সভায় গভর্নর বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক সিএমএসএমই খাতের জন্য ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিম প্রবর্তন করার পরও ঋণ বিতরণ না হওয়ার কোনো কারণ নেই। এ পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রার যতটুকু অর্জিত হয়েছে, তার চেয়ে অনেক বেশি হওয়া উচিত ছিল। ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিম চালু হওয়ায় ঝুঁকি ও ব্যয় ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে সমস্যা না থাকায় বিষয়টিতে ব্যবস্থাপনা পরিচালকরা ব্যক্তিগতভাবে উদ্যোগ গ্রহণ করলে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন ত্বরান্বিত হবে এবং ব্যাংকের জন্যও তা লাভজনক হবে। সভায় সিএমএসএমই ঋণ বিতরণ বাড়াতে তিনটি সিদ্ধান্ত হয়। এগুলো হলো ব্যাংকগুলোকে ২০২৪ সালের মধ্যে সিএমএসএমই খাতে ঋণ বিতরণের পরিমাণ মোট ঋণ ও অগ্রিমের ২৫ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্যে পুনঃঅর্থায়ন স্কিমের ঋণ বৃদ্ধি করতে হবে। ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকরা ব্যক্তিগতভাবে উদ্যোগ গ্রহণ করে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন ত্বরান্বিত করবেন। এবং ব্যাংকগুলো মেয়াদি ঋণ এবং চলতি মূলধন ঋণ পৃথকভাবে উল্লেখ করে বাংলাদেশ ব্যাংকে নিয়মিত প্রতিবেদন বাংলাদেশ ব্যাংকে দাখিল করবে।

সভায় জানানো হয়, চলতি ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের জন্য ৩০ হাজার ৯১১ কোটি টাকা কৃষি ও পল্লী ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। এর বিপরীতে চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে ৯ হাজার ৪৬৯ কোটি টাকা বিতরণ করা হয়েছে। এ চার মাসে লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ২টি বিদেশি ব্যাংক কোনো ঋণ বিতরণ করেনি এবং ৩৩টি ব্যাংকের ঋণ বিতরণ লক্ষ্যমাত্রার অনেক নিচে করেছে। অন্যদিকে করোনা মহামারী ও অন্যান্য কারণে গ্রামে ফিরে যাওয়া জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যে ৩১ জুন ২০২৪ পর্যন্ত মেয়াদে ৫০০ কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন স্কিম গঠন করা হয়, যার গ্রাহক পর্যায়ে সুদের হার ৬ শতাংশ। ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত এ স্কিমটির আওতায় ১৬টি ব্যাংক অংশগ্রহণ করেছে এবং ৮৩ কোটি কোটি টাকা বিতরণ করেছে। গম ও ভুট্টা উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে ৩০ জুন ২০২৫ পর্যন্ত মেয়াদে ৪ শতাংশ সুদে ১ হাজার কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন স্কিম গঠন করা হয়। এ স্কিমের আওতায় ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত ২০টি ব্যাংক অংশগ্রহণ করেছে এবং ৯ কোটি ৪২ লাখ টাকা বিতরণ করেছে। এ ছাড়া দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে কৃষি খাতের জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন স্কিম গঠন করা হয়েছে, যার মেয়াদ ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত। এ তহবিলে গ্রাহক পর্যায়ে সুদের হার ৪ শতাংশ। এ তহবিল থেকে এখনো ঋণ বিতরণ শুরু করতে পারেনি ব্যাংকগুলো।

ঋণ বিতরণে এমন হতাশাজনক পরিস্থিতি নিয়ে গভর্নর বলেন, কৃষি খাত হচ্ছে সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারমূলক খাত। মানি মার্কেট শেয়ারের ৭৯ শতাংশ বেসরকারি ও বিদেশি ব্যাংকগুলোর হলেও বেসরকারি ব্যাংকগুলোর কৃষি খাতে ঋণের পরিমাণ মাত্র ২ শতাংশ। আর বিদেশি ব্যাংকগুলোর পরিমাণ মাত্র ১ শতাংশ। তিনি বলেন, ২০২৩ সালে কৃষি ঋণের লক্ষ্যমাত্রা উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বৃদ্ধি করা হবে। কৃষি ঋণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে না পারলে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। বরং কিছু নীতিগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তা ছাড়া প্রধানমন্ত্রীও কোনো ব্যাংকের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থতার ক্ষেত্রে অনার্জিত লক্ষ্যমাত্রা অন্য ব্র্যাংককে দেওয়ার জন্য পরামর্শ প্রদান করেছেন।

তিনি আরও বলেন, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে এ ধরনের অগ্রাধিকারমূলক ঋণ বিতরণ করা বাধ্যতামূলক। রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া (আরবিআই) প্রতিটি ব্যাংকের জন্য নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে। যদি কোনো ব্যাংক লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে না পারে, তার লক্ষ্যমাত্রার অনার্জিত অংশ আরবিআইয়ের কাছে জমা দেয়। তবে এর বিপরীতে ব্যাংককে কোনো সুদ প্রদান করা হয় না। অন্যদিকে যে ব্যাংকগুলো এ ঋণগুলো বিতরণে ভালো করছে আরবিআই তাদের হ্রাসকৃত সুদহারে অর্থায়ন করে। বাংলাদেশ ব্যাংকও এ ধরনের একটি তহবিল গঠন করবে এবং যে ব্যাংকগুলো লক্ষ্যমাত্রার সমপরিমাণ ঋণ বিতরণ করতে পারবে না, তারা অবিতরণকৃত ঋণের অর্থ এ তহবিলে জমা দেবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ওই অবিতরণকৃত অর্থ যে ব্যাংকগুলো এ ক্ষেত্রে ভালো করবে তাদের বিতরণের দায়িত্ব প্রদান করবে।