রাজশাহী শহরের একমাত্র নারী পত্রিকা বিক্রেতা দিল আফরোজ খুকি। ৪০ বছর ধরে পত্রিকা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেছেন তিনি। জীবন সংগ্রামে লড়াকু এই নারী পেয়েছেন জয়িতা পুরস্কার। তবে নিয়তির অমোঘ নিয়মের কাছে অবশেষে হার মানলেন দিল আফরোজ খুকি।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজশাহী মহানগরীর মহিষবাথান এলাকার ‘মিশনারিস অব চ্যারিটি আশাদান মাদার তেরেসা আশ্রমে’ মারা গেছেন তিনি (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। দীর্ঘদিন ধরে তিনি অসুস্থ ছিলেন।
সংগ্রামী এই নারীর মৃত্যুতে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। খুকির মৃত্যুর খবরে মাদার তেরেসা আশ্রমে ছুটে যান রাজশাহীর জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদসহ জেলা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন খুকুর মরদেহের গোসল ও দাফনের দায়িত্ব নিয়েছে। আজ বাদ মাগরিব নগরীর টিকাপাড়া কবরস্থানে জানাযা শেষে তার মরদেহ দাফনের কথা রয়েছে।
২০২০ সালে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিও ভাইরাল হয়। সেখানে দেখা যায়, সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠে পত্রিকার এজেন্ট ও স্থানীয় পত্রিকার সার্কুলেশন থেকে পত্রিকা নিয়ে নগরীতে বেরিয়ে পড়েন খুকি। রাজশাহী নগরীর বিভিন্ন প্রান্তে ৪০ বছর ধরে পত্রিকা বিক্রি করেন দিল আফরোজ খুকি।
সংবাদপত্র বিক্রেতা খুকি কোনো সময় লোকের কাছে হাত পাতেননি। তিনি নিজেই কর্ম করে নিজের জীবন যাপন করতেন। রেস্টুরেন্টে গেলেও তাকে খাবার খেতে দেওয়া হতো না।
খুকির বাবা ছিলেন রাজশাহী জেলা আনসার অ্যাডজুটেন্ট এবং মা ছিলেন সরকারি হাই স্কুলের শিক্ষিকা। অল্প বয়সে বাবা-মা মারা যাওয়ার পর তার পাশে দাঁড়ায়নি কেউ। জানা গেছে, কিশোরী বয়সে ৭০ বছরের এক বৃদ্ধের সঙ্গে খুকির বিয়ে হয়েছিল। মাস যেতে না যেতেই স্বামী মারা যান। ১৯৮০ সালে স্বামীর মৃত্যুর পর পরিবার, আত্মীয়-স্বজন তাকে গৃহছাড়া করেন। ভাইদের আপত্তিতে বাবার বাড়িতেও তার জায়গা হয়নি। এরপর থেকেই কিছুটা মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন তিনি। পত্রিকা বিক্রি করেই জীবিকা নির্বাহ করতেন।