রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে ফেলে যাওয়া হয়েছিল জাতীয় পার্টির (জেপি) নেতা সালাম বাহাদুরের মরদেহ। এই ঘটনায় দুজনকে গ্রেপ্তারের পর হত্যার রহস্য উদ্ঘাটনের দাবি করেছে পুলিশ। তারা বলছে, এক নারীকে ব্ল্যাকমেইল করে তার সঙ্গে অবৈধ সম্পর্ক স্থাপন ও হয়রানির জেরে মারধরের শিকার হয়ে তিনি নিহত হয়েছেন।
গতকাল মঙ্গলবার দিবাগত রাতে রাজধানী ও মানিকগঞ্জ জেলার সিংগাইর উপজেলায় অভিযান চালিয়ে ঘটনায় সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে দুই নারীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এর মধ্যে একজনের নাম কামরুন্নাহার চাঁদনী, অপরজন তার মা মমতা বেগম।
আজ বুধবার দুপুরে রাজধানীর শ্যামলীতে নিজ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) এইচ এম আজিমুল হক। তিনি বলেন, সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের সামনে থেকে গত ১৫ জুলাই রাত ১১টার দিকে এক ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে জানা যায়, ওই ব্যক্তির নাম সালাম বাহাদুর ওরফে আব্দুস সালাম মিয়া (৬০)। তিনি পেশায় ব্যবসায়ী ও ঠিকাদার। এই ঘটনায় মৃতের ছোট ভাই একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
আজিমুল হক বলেন, মামলার তদন্তে নেমে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনের সব ক্যামেরা অকার্যকর দেখতে পায় পুলিশ। পরে পরিবার ও মোবাইল ট্র্যাকিং করে দুই নারীকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তার দুই নারীকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের তথ্যের বরাত দিয়ে ডিসি বলেন, পাঁচ-ছয় বছর আগে সালামের সঙ্গে মেয়েটির পরিচয় হয় রাজধানীর ধানমন্ডির একটি সুপার শপে। চাকরি দেওয়ার কথা বলে পরিচয় থেকে অনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করেন সালাম। তিনি তাদের বিভিন্ন মুহূর্ত গোপনে ক্যামেরায় ধারণ করে রাখেন। এরপর শুরু হয় ব্ল্যাকমেইল। সালামের এমন কাজে দিশেহারা হয়ে মেয়েটি ঢাকা ছেড়ে মানিকগঞ্জের সিংগাইরে নিজ বাড়িতে চলে যায়। কিন্তু সালামের ব্ল্যাকমেইল চলতেই থাকে।
আজিমুল হক বলেন, এরই ধারাবাহিকতায় গত শনিবার বিকেলে সালাম মেয়েটির বাড়িতে যান। তিনি যাওয়ার আগে স্থানীয় কয়েকজনকে বিষয়টি জানায় মেয়ের পরিবার। সালাম মেয়েটির বাড়িতে যাওয়ার পরেই শুরু হয় তাকে নির্যাতন। স্থানীয় কয়েকজনের সহায়তায় সালামের কাছ থেকে টাকা আদায়ের জন্য বারবার নির্যাতন করা হয়।
তিনি বলেন, পরে সালাম গুরুতর অসুস্থ হয়ে গেলে তাকে চিকিৎসার জন্য ঢাকায় আনার পথে তার মৃত্যু হয়। সালামের মৃত্যুর বিষয়টি টের পেয়ে অন্যরা গাড়ি থেকে নেমে যায়। এরপর গ্রেপ্তার মমতা বেগম সালামের মরদেহ গাড়িতে করে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে ফেলে পালিয়ে যান। সালামের মরদেহে বিভিন্ন ক্ষত ও আঘাতের চিহ্ন দেখতে পায় পুলিশ।
এদিকে, সালাম বাহাদুর হত্যা মামলায় কামরুন্নাহার চাঁদনী ও তার মাম মমতা বেগমের পাঁচ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। আজ তাদের আদালতে হাজির করে সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা শেরেবাংলা নগর থানার উপপরিদর্শক (নিরস্ত্র) আকতারুজ্জামান। পরে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আতাউল্লাহর আদালত তাদের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এদিন আসামিদের পক্ষে কোনো আইনজীবী ছিলেন না।
সালাম বাহাদুর জেপির কেন্দ্রীয় কমিটির অর্থ সম্পাদক ছিলেন। তার বাড়ি পিরোজপুরের ইন্দুরকানীতে। ঢাকার ধানমন্ডির ২৭ নম্বর রোডের ৩৫/এ বাড়িতে পরিবার নিয়ে বসবাস করতেন তিনি। রাজনীতির পাশাপাশি সড়ক ও জনপথ বিভাগে ঠিকাদারি করতেন সালাম।