ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::

ঝালকাঠি বিসিক শিল্পনগরীতে ৭৯টির মধ্যে ৭৭টি প্লটই ফাঁকা

  • সূর্যোদয় ডেস্ক:
  • আপডেট সময় ০৪:২১:২১ অপরাহ্ন, শনিবার, ২১ জানুয়ারী ২০২৩
  • ১১১৯ বার পড়া হয়েছে

পদ্মা সেতু দেশের দক্ষিণাঞ্চলের অর্থনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। সরকার মোংলা ও পায়রা বন্দরকেন্দ্রিক বিভিন্ন উন্নয়ন পরিকল্পনা নেওয়ায় একটি শক্তিশালী অর্থনৈতিক জোনে পরিণত হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে দক্ষিণাঞ্চলের। বড় কয়েকটি বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্পও বাস্তবায়ন হচ্ছে সেখানে। এরই মধ্যে উৎপাদনে এসেছে পায়রা ও রামপাল তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র। কিন্তু এত কিছুর পরও দক্ষিণের জেলা ঝালকাঠির বিসিক শিল্পনগরীতে এর কোনো প্রভাব নেই। ৭৯টির মধ্যে ৭৭টি প্লটই ফাঁকা। প্লটের অধিক মূল্য এবং ব্যাংক লোন না পাওয়ায় আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন অধিকাংশ শিল্প উদ্যোক্তা। কেউ কেউ প্লটের বরাদ্দ বাতিল চেয়েও আবেদন করেছেন।

বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) সূত্রে জানা যায়, পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হওয়ার পর খুলনা বিভাগে বেসরকারি উদ্যোগে একের পর এক নতুন নতুন শিল্প-কলকারখানা গড়ে উঠতে শুরু করেছে। কিন্তু সে অর্থে বরিশাল বিভাগে তেমন সাড়া নেই। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঝালকাঠি বিসিক শিল্পনগরীতে ৭৯টি প্লটের মধ্যে এখন পর্যন্ত ২৭ জন উদ্যোক্তাকে ৫০টি প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বাকি একজন উদ্যোক্তার বিপরীতে ২৫টি প্লট বরাদ্দের অনুমোদন প্রক্রিয়াধীন। এ ছাড়া তিনটি প্লট চেয়ে আবেদন জমা দিয়েছেন আরও তিন উদ্যোক্তা। বাকি একটি প্লটের জন্য এখনও কেউ আবেদন করেননি। তবে বিসিক শিল্পনগরীতে এখন পর্যন্ত মাত্র দুটি কারখানা গড়ে উঠেছে। উৎপাদনে আসা কারখানা দুটি হলো সারেং ফার্নিচার ও রাইসা পলিমার।

১৬ কোটি ৭৮ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০১৪ সালের জুলাই মাসে ঝালকাঠি বিসিক শিল্পনগরীর কাজ শুরু হয়ে ২০১৯-এর জুনে শেষ হয়। শহরের সুতালরী খাল সংলগ্ন বরিশাল-খুলনা আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে ১১.০৮ একর জমিতে বিসিক শিল্পনগরীটি গড়ে তোলা হয়। ২০১৯ সালের নভেম্বর মাস থেকেই প্লট বরাদ্দ শুরু হয়। প্লট বরাদ্দের শর্ত অনুযায়ী ৩১ মাসের মধ্যে উৎপাদনে যেতে হবে। অন্যথায় প্লট বরাদ্দ বাতিল হবে। জানা গেছে, অধিকাংশ শিল্প উদ্যোক্তা এসব প্লটের বিপরীতে ব্যাংক ঋণ না পাওয়ায় কারখানা গড়ে উৎপাদনে যেতে পারছেন না।

সৌদি প্রবাসী উদ্যোক্তা হাফিজুর রহমান বিসিক নগরীতে চারটি প্লট বরাদ্দ নিয়ে সরিষার তেল এবং গোখাদ্য ও মাছের ফিড তৈরির কারখানা গড়ে তোলেন। প্রায় ২ কোটি টাকা ব্যয়ে কারখানার অবকাঠামো ও যন্ত্রাংশ সংযোজন করেন। তিনি দাবি করেন, ২০২১ সালে প্লট বরাদ্দ পেয়ে দ্রুত গতিতে কাজ শুরু করলেও করোনাজনিত পরিস্থিতির কারণে তার এই উদ্যোগ থমকে যায়। পরিস্থিতির উন্নতি হলে কারখানা স্থাপনের কাজ এগিয়ে নেন। তবে নানা কারণে মেশিনারি জিনিসপত্রের মূল্যবৃদ্ধি ঘটায় কারখানা স্থাপনের খরচ প্রায় ৪০ শতাংশ খরচ বেড়ে যায়। তাঁর কারখানাটি উৎপাদন পর্যায়ে আসতে আরও ১ কোটি টাকা প্রয়োজন। বিসিকের জমি বন্ধকী রেখে ঋণের জন্য ব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও ঋণ পাননি।

হানিফ সিকদার বাদল নামের এক উদ্যোক্তা জানান, তিনি প্লটের কিস্তি নিয়মিত পরিশোধ করছেন। তবে এখনও সম্পূর্ণ কিস্তি পরিশোধ হয়নি। কারখানা স্থাপনে মেশিন ক্রয়ের জন্য তিনি একটি ব্যাংকে ঋণের আবেদন করেছিলেন। কিন্তু ব্যাংক কর্তৃপক্ষ তাতে সাড়া দেয়নি। আব্দুস সাত্তার নামের এক উদ্যোক্ত জানালেন, তিনি প্লাস্টিকের পাইপ তৈরির কারখানা করতে বিসিকে প্লট নিয়েছেন। ব্যাংক এলসি খুলছে না বলে চীন থেকে কারখানার মেশিনপত্র আনতে পারছেন না। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে তাঁকে কোনো সহযোগিতা করছে না। জানা গেছে, জামাল শরীফ নামের এক উদ্যোক্তা ব্যাংক ঋণ না পেয়ে তাঁর নামে বরাদ্দকৃত দুটি প্লট বাতিল চেয়ে বিসিক কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জমা দিয়েছেন।

এ প্রসঙ্গে ঝালকাঠি ইসলামী ব্যাংকের প্রিন্সিপাল অফিসার মো. সফিকুল হক জানান, ঝালকাঠি বিসিকে প্লট বরাদ্দ পাওয়া অনেকেই তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করছে। কিন্তু এখানে সমস্যা হলো, কিস্তির মাধ্যমে প্লটের সম্পূর্ণ মূল্য পরিশোধ না করা পর্যন্ত ব্যাংক ঋণ দেওয়া সম্ভব নয়। ঝালকাঠি বিসিক শিল্পনগরীর উপব্যবস্থাপক শাফাউল করিম জানান, আবেদনের সময় প্রত্যেক উদ্যোক্তা প্লটের মোট মূল্যের ২০ শতাংশ টাকা জমা দিয়েছেন। বাকি টাকা চার বছরে মোট ১০ কিস্তিতে দেবেন। পুরো টাকা পরিশোধ করার পর একজন উদ্যোক্তা ৯৯ বছরের জন্য প্লটের মালিক হবেন। বর্তমানে উদ্যোক্তারা প্লটের মালিক না হওয়ায় ব্যাংক ঋণ পাচ্ছেন না।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

আজকের সূর্যোদয়

আজকের সূর্যোদয় প্রত্রিকায় আপনাদের স্বাগতম। ‍আমাদের নিউজ পড়ুন এবং বিজ্ঞাপন দিয়ে আমাদের পাশে থাকুন।

বরিশালে মুজিবিয়ানের ৮৭ নেতাকে খুঁজছে গোয়েন্দা সংস্থা

ঝালকাঠি বিসিক শিল্পনগরীতে ৭৯টির মধ্যে ৭৭টি প্লটই ফাঁকা

আপডেট সময় ০৪:২১:২১ অপরাহ্ন, শনিবার, ২১ জানুয়ারী ২০২৩

পদ্মা সেতু দেশের দক্ষিণাঞ্চলের অর্থনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। সরকার মোংলা ও পায়রা বন্দরকেন্দ্রিক বিভিন্ন উন্নয়ন পরিকল্পনা নেওয়ায় একটি শক্তিশালী অর্থনৈতিক জোনে পরিণত হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে দক্ষিণাঞ্চলের। বড় কয়েকটি বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্পও বাস্তবায়ন হচ্ছে সেখানে। এরই মধ্যে উৎপাদনে এসেছে পায়রা ও রামপাল তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র। কিন্তু এত কিছুর পরও দক্ষিণের জেলা ঝালকাঠির বিসিক শিল্পনগরীতে এর কোনো প্রভাব নেই। ৭৯টির মধ্যে ৭৭টি প্লটই ফাঁকা। প্লটের অধিক মূল্য এবং ব্যাংক লোন না পাওয়ায় আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন অধিকাংশ শিল্প উদ্যোক্তা। কেউ কেউ প্লটের বরাদ্দ বাতিল চেয়েও আবেদন করেছেন।

বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) সূত্রে জানা যায়, পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হওয়ার পর খুলনা বিভাগে বেসরকারি উদ্যোগে একের পর এক নতুন নতুন শিল্প-কলকারখানা গড়ে উঠতে শুরু করেছে। কিন্তু সে অর্থে বরিশাল বিভাগে তেমন সাড়া নেই। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঝালকাঠি বিসিক শিল্পনগরীতে ৭৯টি প্লটের মধ্যে এখন পর্যন্ত ২৭ জন উদ্যোক্তাকে ৫০টি প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বাকি একজন উদ্যোক্তার বিপরীতে ২৫টি প্লট বরাদ্দের অনুমোদন প্রক্রিয়াধীন। এ ছাড়া তিনটি প্লট চেয়ে আবেদন জমা দিয়েছেন আরও তিন উদ্যোক্তা। বাকি একটি প্লটের জন্য এখনও কেউ আবেদন করেননি। তবে বিসিক শিল্পনগরীতে এখন পর্যন্ত মাত্র দুটি কারখানা গড়ে উঠেছে। উৎপাদনে আসা কারখানা দুটি হলো সারেং ফার্নিচার ও রাইসা পলিমার।

১৬ কোটি ৭৮ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০১৪ সালের জুলাই মাসে ঝালকাঠি বিসিক শিল্পনগরীর কাজ শুরু হয়ে ২০১৯-এর জুনে শেষ হয়। শহরের সুতালরী খাল সংলগ্ন বরিশাল-খুলনা আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে ১১.০৮ একর জমিতে বিসিক শিল্পনগরীটি গড়ে তোলা হয়। ২০১৯ সালের নভেম্বর মাস থেকেই প্লট বরাদ্দ শুরু হয়। প্লট বরাদ্দের শর্ত অনুযায়ী ৩১ মাসের মধ্যে উৎপাদনে যেতে হবে। অন্যথায় প্লট বরাদ্দ বাতিল হবে। জানা গেছে, অধিকাংশ শিল্প উদ্যোক্তা এসব প্লটের বিপরীতে ব্যাংক ঋণ না পাওয়ায় কারখানা গড়ে উৎপাদনে যেতে পারছেন না।

সৌদি প্রবাসী উদ্যোক্তা হাফিজুর রহমান বিসিক নগরীতে চারটি প্লট বরাদ্দ নিয়ে সরিষার তেল এবং গোখাদ্য ও মাছের ফিড তৈরির কারখানা গড়ে তোলেন। প্রায় ২ কোটি টাকা ব্যয়ে কারখানার অবকাঠামো ও যন্ত্রাংশ সংযোজন করেন। তিনি দাবি করেন, ২০২১ সালে প্লট বরাদ্দ পেয়ে দ্রুত গতিতে কাজ শুরু করলেও করোনাজনিত পরিস্থিতির কারণে তার এই উদ্যোগ থমকে যায়। পরিস্থিতির উন্নতি হলে কারখানা স্থাপনের কাজ এগিয়ে নেন। তবে নানা কারণে মেশিনারি জিনিসপত্রের মূল্যবৃদ্ধি ঘটায় কারখানা স্থাপনের খরচ প্রায় ৪০ শতাংশ খরচ বেড়ে যায়। তাঁর কারখানাটি উৎপাদন পর্যায়ে আসতে আরও ১ কোটি টাকা প্রয়োজন। বিসিকের জমি বন্ধকী রেখে ঋণের জন্য ব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও ঋণ পাননি।

হানিফ সিকদার বাদল নামের এক উদ্যোক্তা জানান, তিনি প্লটের কিস্তি নিয়মিত পরিশোধ করছেন। তবে এখনও সম্পূর্ণ কিস্তি পরিশোধ হয়নি। কারখানা স্থাপনে মেশিন ক্রয়ের জন্য তিনি একটি ব্যাংকে ঋণের আবেদন করেছিলেন। কিন্তু ব্যাংক কর্তৃপক্ষ তাতে সাড়া দেয়নি। আব্দুস সাত্তার নামের এক উদ্যোক্ত জানালেন, তিনি প্লাস্টিকের পাইপ তৈরির কারখানা করতে বিসিকে প্লট নিয়েছেন। ব্যাংক এলসি খুলছে না বলে চীন থেকে কারখানার মেশিনপত্র আনতে পারছেন না। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে তাঁকে কোনো সহযোগিতা করছে না। জানা গেছে, জামাল শরীফ নামের এক উদ্যোক্তা ব্যাংক ঋণ না পেয়ে তাঁর নামে বরাদ্দকৃত দুটি প্লট বাতিল চেয়ে বিসিক কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জমা দিয়েছেন।

এ প্রসঙ্গে ঝালকাঠি ইসলামী ব্যাংকের প্রিন্সিপাল অফিসার মো. সফিকুল হক জানান, ঝালকাঠি বিসিকে প্লট বরাদ্দ পাওয়া অনেকেই তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করছে। কিন্তু এখানে সমস্যা হলো, কিস্তির মাধ্যমে প্লটের সম্পূর্ণ মূল্য পরিশোধ না করা পর্যন্ত ব্যাংক ঋণ দেওয়া সম্ভব নয়। ঝালকাঠি বিসিক শিল্পনগরীর উপব্যবস্থাপক শাফাউল করিম জানান, আবেদনের সময় প্রত্যেক উদ্যোক্তা প্লটের মোট মূল্যের ২০ শতাংশ টাকা জমা দিয়েছেন। বাকি টাকা চার বছরে মোট ১০ কিস্তিতে দেবেন। পুরো টাকা পরিশোধ করার পর একজন উদ্যোক্তা ৯৯ বছরের জন্য প্লটের মালিক হবেন। বর্তমানে উদ্যোক্তারা প্লটের মালিক না হওয়ায় ব্যাংক ঋণ পাচ্ছেন না।