ঢাকা , মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::

তাপ প্রবাহে পুড়ছে দেশের এক-তৃতীয়াংশ

  • সূর্যোদয় ডেস্ক:
  • আপডেট সময় ১০:৪২:৫৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৮ এপ্রিল ২০২৩
  • ১১২৫ বার পড়া হয়েছে

তাপ প্রবাহে পুড়ছে দেশের এক-তৃতীয়াংশ অঞ্চল। খোলা আকাশে বা রাস্তায় দাঁড়ানো যায় না। হঠাৎ গরম হাওয়া এসে মুখে লাগলে পুড়ে যাওয়ার মতো অনুভূতি হয়। তিন দিন থেকে শুরু হয়েছে এই তাপ প্রবাহ। বৃষ্টিপাতও বন্ধ হয়ে গেছে। বৈশাখ না আসতেই দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। দেশের সর্বত্র তাপ প্রবাহ না থাকলেও তাপমাত্রা ওপরের দিকে থাকায় অসহনীয় হয়ে উঠেছে সারা দেশ। সিলেট অঞ্চল ছাড়া গত তিন দিন নেই স্বস্তির বৃষ্টি। গতকাল চৈত্রের শেষ দিকে এসে দিনভর খরতাপের দহনে জনজীবনে নেমে এসেছে প্রচণ্ড অস্বস্তি।

তাপদাহে পুড়ছে খুলনা বিভাগের সব ক’টি জেলা। একই সাথে ঢাকা, টাঙ্গাইল, ফরিদপুর, রাজশাহী, পাবনা, বগুড়া, সন্দ্বীপ, রাঙ্গামাটি, ফেনী, বান্দরবান, পটুয়াখালী, খেপুপাড়া ও ভোলা অঞ্চলে বয়ে চলেছে তাপ প্রবাহ। এ অঞ্চলের তাপমাত্রা ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়ামের বেশি। এসব অঞ্চল থেকে আমাদের সংবাদদাতারা জানিয়েছেন, বাতাস এত গরম যে মনে হচ্ছে আগুনের হলকা ছড়িয়ে পড়েছে। উল্লিখিত অঞ্চলগুলো ছাড়াও দেশের অন্যান্য অঞ্চলে খা খা রোদ। ঘরে-বাইরে কোথাও স্বস্তি নেই। ঘরের ভেতর থাকলেও ফ্যান ছাড়া এক মুহূর্তও টেকা যাচ্ছে না। তাপদাহের কারণে মানুষ ঘরের বাইরে কম বের হচ্ছেন। বৃষ্টিপাত না হলে গরমের তীব্রতা কমার সম্ভাবনা কম বলে আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে।

এ দিকে কানাডার সাসকাচুয়ান ইউনিভার্সিটির আবহাওয়া গবেষক মোস্তফা কামাল জানিয়েছেন, আগামী ১৯ এপ্রিল পর্যন্ত দেশের বেশির ভাগ অঞ্চল বৃষ্টিহীন থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। এ সময়ের মধ্যে দিনের তাপমাত্রা আরো বৃদ্ধি পেতে পারে। এরপর ২০ এপ্রিলের পর আবারো কালবৈশাখী ঝড় শুরু হতে পারে। এ সময়ের মধ্যে খুলনা, রাজশাহী, রংপুর বিভাগের জেলাগুলোতে সবচেয়ে বেশি তাপ ওঠার আশঙ্কা রয়েছে। অন্য দিকে ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের জেলাগুলোতে তাপমাত্রা অপেক্ষাকৃত কম থাকতে পারে।
গতকাল শুক্রবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠে চুয়াডাঙ্গা জেলা ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। চুয়াডাঙ্গার আশপাশে যশোর ও কুমারখালীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল যথাক্রমে ৩৭.৪ ও ৩৭.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকাল ঢাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছিল ৩৬.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ায় ধীরে ধীরে আবারো ডায়রিয়া আশঙ্কা বাড়ছে। অন্য দিকে বৃষ্টি কম হওয়ায় মাটির নিচের পানিস্তর ধীরে ধীরে আরে নিচে নেমে যাচ্ছে। ফলে কম গভীরতার নলকূপে পানি উঠছে না। বিল-ঝিলের পানিও শুকিয়ে যাচ্ছে। নদী, বিল-ঝিল ও মাটির নিচে থেকে পানি কম উঠছে বলে মানুষের মধ্যে পানি ব্যবহারের পরিমাণ কমে যাচ্ছে।

শুধু বাংলাদেশে নয়, প্রতি বছর এপ্রিল মাসে ভারত ও পাকিস্তানে নজিরবিহীন উচ্চ তাপমাত্রা বিরাজ করে। বাংলাদেশে গত বছর (২০২২) ১৫ এপ্রিল সর্বোচ্চ ৪১.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা উঠলেও ভারত ও পাকিস্তানে ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস অতিক্রম করেছিল। এপ্রিল মাসেই ভারত ও পাকিস্তানের কোনো কোনো অঞ্চলে ৫০ ডিগ্রি সেলসয়াস পর্যন্ত তাপমাত্রা উঠে থাকে। সে তাপমাত্রার প্রভাব পড়ে বাংলাদেশেও।

জলবায়ু বিজ্ঞানীরা বলছেন, তাপপ্রবাহের সৃষ্টি হয় বাতাস আটকে যাওয়ার (ট্র্যাপড এয়ার) কারণে। কোনো অঞ্চলে বাতাস আটকে গেলে সূর্য তাপে সে বাতাস আরো গরম হতে থাকে। আবার কোনো কোনো অঞ্চলের উচ্চ চাপের বাতাস সে অঞ্চলেই আটকে গিয়ে গরম হয়ে যায়। দেখা যায় গরম থেকে বাঁচার জন্য শহরাঞ্চলে এয়ারকন্ডিশনিং সিস্টেম ব্যবহার করে আরাম অনুভব করে। ঘরের ভেতরে এয়ার কন্ডিশনিং সিস্টেম তাপমাত্রাকে নিচে নামিয়ে রাখলেও কুলিং মেশিন বাইরের তাপমাত্রাকে বাড়িয়ে দেয়। এর প্রভাবও পড়ে পরিবেশে এবং সার্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়। কিন্তু জলবায়ু বিজ্ঞানীরা বলছেন, ঘর ঠাণ্ডার রাখার বৈজ্ঞানিক কৌশল প্রয়োগ করেও একই রকমের ফল পাওয়া যেতে পারে। বিজ্ঞানভিত্তিক ভেন্টিলেশনের ব্যবস্থা রাখা এবং ইনসুলেশন বা বৈদ্যুতিক নিরোধক ব্যবহার ভবনের অভ্যন্তরে তাপ কমিয়ে রাখা যায়। জলবায়ু বিজ্ঞানীরা বলছেন, কার্বন নির্গমন বন্ধ করতে না পারলে পাকিস্তান, ভারত ও বাংলাদেশের সিন্ধু ও গঙ্গা তীরবর্তী উর্বর ভূমিতে এর প্রভাব পড়বে এবং এই এলাকার শস্যভাণ্ডার হিসেবে পরিচিত সিন্ধু-গঙ্গাবিধৌত অঞ্চলে দেখা দিতে পারে খাদ্য ঘাটতি।

রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছাড়াল ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস
রাজশাহী ব্যুরো জানায়, রাজশাহীতে গতকাল শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৩টায় চলতি মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৭ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আগের দিন বৃহস্পতিবার রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৩৬ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার সূত্রে জানা গেছে, গত চার দিন থেকে রাজশাহী অঞ্চলের ওপর দিয়ে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। বৃষ্টি না হলে এই তাপপ্রবাহ আরো কয়েক দিন অব্যাহত থাকতে পারে। এ কয়েক দিন থেকে রাজশাহীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ঘরেই ছিল। শুক্রবার শূন্য দশমিক ৭ ডিগ্রি বেড়ে ৩৭ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে দাঁড়িয়েছে। এর আগে গত ৩ এপ্রিল রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৩৪ দশমিক শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াস। এরপর ৪ এপ্রিল সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৩৬ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ৫ এপ্রিল ছিল ৩৬ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস আর বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৩টায় রাজশাহীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৩৬ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অর্থাৎ শুক্রবারই মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৭ দশমিক ৫ ডিগ্রিতে দাঁড়াল।

আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার সূত্র আরো জানায়, রাজশাহীতে গত মার্চ মাসে চার দিন বৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া এপ্রিলের শুরুতেই একদিন বৃষ্টি হয়েছে। মোট ৩৪ দশমিক ৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। বৃষ্টি কমায় তাপপ্রবাহ বাড়ছে।
এ দিকে কয়েক দিনের টানা তাপপ্রবাহে রাজশাহীতে জনজীবন কাহিল হয়ে পড়েছে। এতে করে মানুষ ও যানবাহন চলাচল অনেকটা কমে গেছে। প্রচণ্ড গরমে রোজাদারদের অবস্থাও ওষ্ঠাগত।

চুয়াডাঙ্গায় টানা তাপপ্রবাহে জনজীবন দুর্বিষহ
চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি জানান, চুয়াডাঙ্গায় টানা তাপপ্রবাহে জনজীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। এতে করে মানুষ ও যানবাহন চলাচল অনেকটা কমে গেছে। বাজারে ঈদ কেনাকাটায় ছেদ পড়েছে। তীব্র গরমে রোজাদারদের অবস্থাও ওষ্ঠাগত। গত কয়েক দিন ধরে ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ঘরেই আটকে আছে তাপমাত্রার পারদ। এ ছাড়া টানা পাঁচ দিন মৃদু তাপপ্রবাহে কাহিল সব শ্রেণীর মানুষ।

বেসরকারি চাকরিজীবী শিউলি শারমীন বলেন, প্রচণ্ড গরমে রোজা রাখা আর অফিস করা খুব কষ্টসাধ্য হয়ে যাচ্ছে। বৃষ্টি হলে ভালো হতো। রিকশাচালক লিয়াকত মিয়া বলেন, রাস্তায় বের হলে মাথার উপর সূর্য থাকছে। একই সাথে গরমে রিকশা চালানো যাচ্ছে না। আর যাত্রীও তেমনটা নেই। ব্যাংকার আবির হোসেন রাজু বলেন, ভাবছিলাম মাঝ রোজার মধ্যে বাড়ির জন্য ঈদের কেনাকাটা করে রাখবো, কিন্তু এত রোদ আর তাপমাত্রা মার্কেটে ঘোরাঘুরি করার উপায় নেই।

চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিস জানায়, জেলার ওপর দিয়ে মৃদু তাপপ্রবাহ অব্যাহত আছে। গতকাল শুক্রবার জেলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগে বৃহস্পতিবার ৩৭ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, বুধবার ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস, মঙ্গলবার ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস, সোমবার ৩৫ দশমিক ৫ ডিগ্রি ও রোববার ৩৩ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। অর্থাৎ টানা ৩ দিন দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায় রেকর্ড করা হয়েছিল।

চুয়াডাঙ্গা প্রথম শ্রেণীর আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রকিবুল হাসান জানান, শুক্রবার চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড হয়েছে। এ ছাড়া গত তিন দিনও দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায় রেকর্ড করা হয়। আগামী দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা নেই। টানা বৃষ্টি না হওয়ায় দিনের তাপমাত্রা আরো বৃদ্ধি পাবে।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

আজকের সূর্যোদয়

আজকের সূর্যোদয় প্রত্রিকায় আপনাদের স্বাগতম। ‍আমাদের নিউজ পড়ুন এবং বিজ্ঞাপন দিয়ে আমাদের পাশে থাকুন।

বরিশালে মুজিবিয়ানের ৮৭ নেতাকে খুঁজছে গোয়েন্দা সংস্থা

তাপ প্রবাহে পুড়ছে দেশের এক-তৃতীয়াংশ

আপডেট সময় ১০:৪২:৫৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৮ এপ্রিল ২০২৩

তাপ প্রবাহে পুড়ছে দেশের এক-তৃতীয়াংশ অঞ্চল। খোলা আকাশে বা রাস্তায় দাঁড়ানো যায় না। হঠাৎ গরম হাওয়া এসে মুখে লাগলে পুড়ে যাওয়ার মতো অনুভূতি হয়। তিন দিন থেকে শুরু হয়েছে এই তাপ প্রবাহ। বৃষ্টিপাতও বন্ধ হয়ে গেছে। বৈশাখ না আসতেই দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। দেশের সর্বত্র তাপ প্রবাহ না থাকলেও তাপমাত্রা ওপরের দিকে থাকায় অসহনীয় হয়ে উঠেছে সারা দেশ। সিলেট অঞ্চল ছাড়া গত তিন দিন নেই স্বস্তির বৃষ্টি। গতকাল চৈত্রের শেষ দিকে এসে দিনভর খরতাপের দহনে জনজীবনে নেমে এসেছে প্রচণ্ড অস্বস্তি।

তাপদাহে পুড়ছে খুলনা বিভাগের সব ক’টি জেলা। একই সাথে ঢাকা, টাঙ্গাইল, ফরিদপুর, রাজশাহী, পাবনা, বগুড়া, সন্দ্বীপ, রাঙ্গামাটি, ফেনী, বান্দরবান, পটুয়াখালী, খেপুপাড়া ও ভোলা অঞ্চলে বয়ে চলেছে তাপ প্রবাহ। এ অঞ্চলের তাপমাত্রা ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়ামের বেশি। এসব অঞ্চল থেকে আমাদের সংবাদদাতারা জানিয়েছেন, বাতাস এত গরম যে মনে হচ্ছে আগুনের হলকা ছড়িয়ে পড়েছে। উল্লিখিত অঞ্চলগুলো ছাড়াও দেশের অন্যান্য অঞ্চলে খা খা রোদ। ঘরে-বাইরে কোথাও স্বস্তি নেই। ঘরের ভেতর থাকলেও ফ্যান ছাড়া এক মুহূর্তও টেকা যাচ্ছে না। তাপদাহের কারণে মানুষ ঘরের বাইরে কম বের হচ্ছেন। বৃষ্টিপাত না হলে গরমের তীব্রতা কমার সম্ভাবনা কম বলে আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে।

এ দিকে কানাডার সাসকাচুয়ান ইউনিভার্সিটির আবহাওয়া গবেষক মোস্তফা কামাল জানিয়েছেন, আগামী ১৯ এপ্রিল পর্যন্ত দেশের বেশির ভাগ অঞ্চল বৃষ্টিহীন থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। এ সময়ের মধ্যে দিনের তাপমাত্রা আরো বৃদ্ধি পেতে পারে। এরপর ২০ এপ্রিলের পর আবারো কালবৈশাখী ঝড় শুরু হতে পারে। এ সময়ের মধ্যে খুলনা, রাজশাহী, রংপুর বিভাগের জেলাগুলোতে সবচেয়ে বেশি তাপ ওঠার আশঙ্কা রয়েছে। অন্য দিকে ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের জেলাগুলোতে তাপমাত্রা অপেক্ষাকৃত কম থাকতে পারে।
গতকাল শুক্রবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠে চুয়াডাঙ্গা জেলা ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। চুয়াডাঙ্গার আশপাশে যশোর ও কুমারখালীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল যথাক্রমে ৩৭.৪ ও ৩৭.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকাল ঢাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছিল ৩৬.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ায় ধীরে ধীরে আবারো ডায়রিয়া আশঙ্কা বাড়ছে। অন্য দিকে বৃষ্টি কম হওয়ায় মাটির নিচের পানিস্তর ধীরে ধীরে আরে নিচে নেমে যাচ্ছে। ফলে কম গভীরতার নলকূপে পানি উঠছে না। বিল-ঝিলের পানিও শুকিয়ে যাচ্ছে। নদী, বিল-ঝিল ও মাটির নিচে থেকে পানি কম উঠছে বলে মানুষের মধ্যে পানি ব্যবহারের পরিমাণ কমে যাচ্ছে।

শুধু বাংলাদেশে নয়, প্রতি বছর এপ্রিল মাসে ভারত ও পাকিস্তানে নজিরবিহীন উচ্চ তাপমাত্রা বিরাজ করে। বাংলাদেশে গত বছর (২০২২) ১৫ এপ্রিল সর্বোচ্চ ৪১.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা উঠলেও ভারত ও পাকিস্তানে ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস অতিক্রম করেছিল। এপ্রিল মাসেই ভারত ও পাকিস্তানের কোনো কোনো অঞ্চলে ৫০ ডিগ্রি সেলসয়াস পর্যন্ত তাপমাত্রা উঠে থাকে। সে তাপমাত্রার প্রভাব পড়ে বাংলাদেশেও।

জলবায়ু বিজ্ঞানীরা বলছেন, তাপপ্রবাহের সৃষ্টি হয় বাতাস আটকে যাওয়ার (ট্র্যাপড এয়ার) কারণে। কোনো অঞ্চলে বাতাস আটকে গেলে সূর্য তাপে সে বাতাস আরো গরম হতে থাকে। আবার কোনো কোনো অঞ্চলের উচ্চ চাপের বাতাস সে অঞ্চলেই আটকে গিয়ে গরম হয়ে যায়। দেখা যায় গরম থেকে বাঁচার জন্য শহরাঞ্চলে এয়ারকন্ডিশনিং সিস্টেম ব্যবহার করে আরাম অনুভব করে। ঘরের ভেতরে এয়ার কন্ডিশনিং সিস্টেম তাপমাত্রাকে নিচে নামিয়ে রাখলেও কুলিং মেশিন বাইরের তাপমাত্রাকে বাড়িয়ে দেয়। এর প্রভাবও পড়ে পরিবেশে এবং সার্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়। কিন্তু জলবায়ু বিজ্ঞানীরা বলছেন, ঘর ঠাণ্ডার রাখার বৈজ্ঞানিক কৌশল প্রয়োগ করেও একই রকমের ফল পাওয়া যেতে পারে। বিজ্ঞানভিত্তিক ভেন্টিলেশনের ব্যবস্থা রাখা এবং ইনসুলেশন বা বৈদ্যুতিক নিরোধক ব্যবহার ভবনের অভ্যন্তরে তাপ কমিয়ে রাখা যায়। জলবায়ু বিজ্ঞানীরা বলছেন, কার্বন নির্গমন বন্ধ করতে না পারলে পাকিস্তান, ভারত ও বাংলাদেশের সিন্ধু ও গঙ্গা তীরবর্তী উর্বর ভূমিতে এর প্রভাব পড়বে এবং এই এলাকার শস্যভাণ্ডার হিসেবে পরিচিত সিন্ধু-গঙ্গাবিধৌত অঞ্চলে দেখা দিতে পারে খাদ্য ঘাটতি।

রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছাড়াল ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস
রাজশাহী ব্যুরো জানায়, রাজশাহীতে গতকাল শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৩টায় চলতি মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৭ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আগের দিন বৃহস্পতিবার রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৩৬ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার সূত্রে জানা গেছে, গত চার দিন থেকে রাজশাহী অঞ্চলের ওপর দিয়ে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। বৃষ্টি না হলে এই তাপপ্রবাহ আরো কয়েক দিন অব্যাহত থাকতে পারে। এ কয়েক দিন থেকে রাজশাহীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ঘরেই ছিল। শুক্রবার শূন্য দশমিক ৭ ডিগ্রি বেড়ে ৩৭ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে দাঁড়িয়েছে। এর আগে গত ৩ এপ্রিল রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৩৪ দশমিক শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াস। এরপর ৪ এপ্রিল সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৩৬ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ৫ এপ্রিল ছিল ৩৬ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস আর বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৩টায় রাজশাহীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৩৬ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অর্থাৎ শুক্রবারই মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৭ দশমিক ৫ ডিগ্রিতে দাঁড়াল।

আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার সূত্র আরো জানায়, রাজশাহীতে গত মার্চ মাসে চার দিন বৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া এপ্রিলের শুরুতেই একদিন বৃষ্টি হয়েছে। মোট ৩৪ দশমিক ৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। বৃষ্টি কমায় তাপপ্রবাহ বাড়ছে।
এ দিকে কয়েক দিনের টানা তাপপ্রবাহে রাজশাহীতে জনজীবন কাহিল হয়ে পড়েছে। এতে করে মানুষ ও যানবাহন চলাচল অনেকটা কমে গেছে। প্রচণ্ড গরমে রোজাদারদের অবস্থাও ওষ্ঠাগত।

চুয়াডাঙ্গায় টানা তাপপ্রবাহে জনজীবন দুর্বিষহ
চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি জানান, চুয়াডাঙ্গায় টানা তাপপ্রবাহে জনজীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। এতে করে মানুষ ও যানবাহন চলাচল অনেকটা কমে গেছে। বাজারে ঈদ কেনাকাটায় ছেদ পড়েছে। তীব্র গরমে রোজাদারদের অবস্থাও ওষ্ঠাগত। গত কয়েক দিন ধরে ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ঘরেই আটকে আছে তাপমাত্রার পারদ। এ ছাড়া টানা পাঁচ দিন মৃদু তাপপ্রবাহে কাহিল সব শ্রেণীর মানুষ।

বেসরকারি চাকরিজীবী শিউলি শারমীন বলেন, প্রচণ্ড গরমে রোজা রাখা আর অফিস করা খুব কষ্টসাধ্য হয়ে যাচ্ছে। বৃষ্টি হলে ভালো হতো। রিকশাচালক লিয়াকত মিয়া বলেন, রাস্তায় বের হলে মাথার উপর সূর্য থাকছে। একই সাথে গরমে রিকশা চালানো যাচ্ছে না। আর যাত্রীও তেমনটা নেই। ব্যাংকার আবির হোসেন রাজু বলেন, ভাবছিলাম মাঝ রোজার মধ্যে বাড়ির জন্য ঈদের কেনাকাটা করে রাখবো, কিন্তু এত রোদ আর তাপমাত্রা মার্কেটে ঘোরাঘুরি করার উপায় নেই।

চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিস জানায়, জেলার ওপর দিয়ে মৃদু তাপপ্রবাহ অব্যাহত আছে। গতকাল শুক্রবার জেলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগে বৃহস্পতিবার ৩৭ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, বুধবার ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস, মঙ্গলবার ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস, সোমবার ৩৫ দশমিক ৫ ডিগ্রি ও রোববার ৩৩ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। অর্থাৎ টানা ৩ দিন দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায় রেকর্ড করা হয়েছিল।

চুয়াডাঙ্গা প্রথম শ্রেণীর আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রকিবুল হাসান জানান, শুক্রবার চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড হয়েছে। এ ছাড়া গত তিন দিনও দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায় রেকর্ড করা হয়। আগামী দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা নেই। টানা বৃষ্টি না হওয়ায় দিনের তাপমাত্রা আরো বৃদ্ধি পাবে।