তিস্তা নদীতে নতুন করে খাল খনন করে পানি প্রত্যাহারের বিষয়ে ভারতের কাছে নোট ভারবাল (কূটনৈতিক পত্র) দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে জানতে চেয়েছে বাংলাদেশ।
রোববার (১৯ মার্চ) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন এ কথা জানান।
তিস্তায় নতুন খাল খননের বিষয়ে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে ভারতকে চিঠি পাঠানো হয়েছে কিনা জানতে চাইলে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় চিঠি পাঠিয়েছে কিনা আমি জানি না। তবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আমরা নোট ভারবালের মাধ্যমে তথ্য জানতে চেয়েছি।
নোট ভারবালে ঢাকার পক্ষ থেকে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে কিনা, প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, এটা হয়তো তাদের অনেক দিন আগের পরিকল্পনা। তবে এখনো তো বাস্তবে কিছু হয়নি।
গত ১৩ মার্চ ভারতের ইংরেজি দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তিস্তা ব্যারাজ প্রকল্পের আওতায় আরো দুটি খাল খননের জন্য ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সেচ বিভাগ প্রায় এক হাজার একর জমির মালিকানা পেয়েছে। জলপাইগুড়ির জেলা প্রশাসন পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের সেচমন্ত্রী পার্থ ভৌমিকের উপস্থিতিতে সেচ বিভাগকে জমির মালিকানা হস্তান্তর করেছে। এ জমির মাধ্যমে তিস্তার পূর্ব তীরে দুটি খাল তৈরি করতে পারবে প্রশাসন।
রোহিঙ্গাদের তথ্য যাচাই-বাছাইয়ে জন্য মিয়ানমারের প্রতিনিধি দলের বাংলাদেশ সফর নিয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে মিয়ানমারের দিক থেকে একটা ইতিবাচক আচরণ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এটা আগে করেনি। তবে এটা কি সাময়িক বা এটার মধ্যে অন্য কোনো উদ্দেশ্য আছে কিনা, সেটা আমাদের বোঝার চেষ্টা করতে হবে।
তিনি বলেন, ‘মিয়ানমারের প্রতিনিধি দল এসেছে বলে আগামীকাল রোহিঙ্গারা রাখাইনে রওনা হবে বা পরশু দিন ওদের ঠেলে পাঠিয়ে দেয়া হবে, ব্যাপারটা এ রকম না। ১১ লাখ রোহিঙ্গা তো একদিনে, একরাতে বা এক বছরে ফিরে যেতে পারবে না। প্রধিনিধিদল এসেছে, তারা কাজ করছে। এরপর আরো অনেক পদক্ষেপ রয়েছে।’
মাসুদ বিন মোমেন বলেন, আমাদের দেখতে হবে রোহিঙ্গারা যেখানে ফিরে যাবে সেখানে সহায়ক পরিবেশ আছে কিনা, তাদের চলাফেরার স্বাধীনতা, শিক্ষা বা স্বাস্থ্যসেবা থাকবে কিনা। সেখানে আন্তর্জাতিক, বিশেষ করে আসিয়ান (দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর জোট) বা জাতিসঙ্ঘের উপস্থিতি থাকবে কিনা। এসবের সমন্বয় যখন হবে, তখন মিয়ানমার আমাদের সাথে বা রোহিঙ্গাদের সাথে আলাপ-আলোচনা করবে। তারপরই রোহিঙ্গাদের যাওয়ার কথা আসবে।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে সরকার আশাবাদী কিনা, জানতে চাইলে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে আমরা আশ্রয় দিয়েছি। পাঁচ বছরের বেশি সময় তাদের দেখভাল করছি। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও আমাদের সাহায্য করছে। সুতরাং প্রত্যাবাসন টেকসই হবে, এ বিষয়ে নিশ্চিত না হলে বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাবে না।
তিনি বলেন, প্রত্যাবাসনের পুরো পরিকল্পনা অর্থাৎ প্রথম ব্যাচের পরে দ্বিতীয় ব্যাচের কী হবে, ফেরত যেতে মোট কত সময় প্রয়োজন হবে, আমাদের সাথে মিয়ানমারের চুক্তিতে তা বলা আছে। কিন্তু প্রতিটি ধাপের উল্লেখ নেই। আমরা যখন প্রথম ব্যাচ পাঠানোর জন্য মিয়ানমারের সাথে সম্মত হবো, তারপরের পদক্ষেপগুলো কী হবে সেগুলো সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা নিতে হবে। তা না হলে প্রত্যাবাসন টেকসই হবে না।
পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে বর্ষা মৌসুম শেষে বা শীতের শুরুতে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন শুরু হতে পারে বলে জানান তিনি।