ভারতের কুস্তি ফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট ও কোচদের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থা ও মানসিক নির্যাতনের অজস্র অভিযোগ এনে দেশের একঝাঁক তারকা কুস্তিগীর রাজধানী দিল্লিতে এক নজিরবিহীন বিক্ষোভ সমাবেশ শুরু করেছেন।
ভারতের অলিম্পিক পদকজয়ী কুস্তিগীর বজরং পুনিয়া, কমনওয়েলথ গেমসে তিনবারের স্বর্ণপদক-জয়ী ভিনেশ ফোগত, রিও অলিম্পিক্সে ব্রোঞ্জ পাওয়া সাক্ষী মালিকের মতো তারকা কুস্তিগীররা এই প্রতিবাদে নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
দিল্লির কেন্দ্রস্থলে যন্তর মন্তরে এই প্রতিবাদ সমাবেশ আজ বৃহস্পতিবার টানা দ্বিতীয় দিনের মতো চলে। ভারতের প্রায় শ’দুয়েক প্রথম সারির পুরুষ ও মহিলা কুস্তিগীর এই বিক্ষোভে যোগ দিয়েছেন।
এই কুস্তিগীরদের অভিযোগের তীর মূলত রেসলিং ফেডারেশন অব ইন্ডিয়ার (ডব্লিউএফআই) সভাপতি ব্রিজভূষণ শরণ সিংয়ের বিরুদ্ধে, যিনি উত্তরপ্রদেশ থেকে নির্বাচিত ক্ষমতাসীন বিজেপির একজন এমপিও বটে।
ভিনেশ ফোগত অভিযোগ করেছেন, দেশের নারী কুস্তিগীররা প্রতিনিয়ত ট্রেনারদের হাতে এবং খোদ ডব্লিউএফআই সভাপতির হাতে যৌন লাঞ্ছনার শিকার হচ্ছেন। গরিব ঘর থেকে আসা এসব মেয়ে ভয়ে মুখ খুলতে পারছেন না বলেও তিনি জানিয়েছেন।
যন্তর মন্তরের সমাবেশস্থলে কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলেন, ‘জাতীয় ক্যাম্পে থাকাকালীন যৌন নির্যাতনের মুখে পড়েছেন, এমন অন্তত দশ-বিশজন মেয়ে আমার কাছে এসে তাদের অভিজ্ঞতার কথা বলেছেন।’
তিনি আরো জানান, অত্যন্ত নিম্নবিত্ত পরিবার থেকে আসা এই নির্যাতিতা মেয়েদের রুটিরুজির একমাত্র ভরসা রেসলিং।
কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মুখ খুললে তাদের সাসপেন্ড করা হবে বা প্রতিযোগিতায় নামতে দেয়া হবে না, এই ভয়েই তারা এতদিন মুখ খুলতে সাহস পাননি।
আরেক তারকা রেসলার বজরং পুনিয়া অভিযোগ করেছেন, ব্রিজভূষণ শরণ সিং একজন স্বেচ্ছাচারীর মতো কুস্তি ফেডারেশন চালাচ্ছেন।
তিনি টুইট করেন, ‘ফেডারেশনের কাজ হল কুস্তিগীরদের খেলাধুলোর ব্যাপারে সাহায্য করা। কিন্তু সেখানে যদি সমস্যা থাকে, তাহলে সেটার সমাধান করতে হবে।’
খাবারের সাথে কিছু মিশিয়ে দিয়ে যেকোনো দিন ডোপিংয়ের দায়ে তাদের নিষিদ্ধ করে দেয়া হবে, এই ভয়ে নির্যাতিতা নারী রেসলাররা ক্যাম্পে রাতের পর রাত ঘুমোতে পারেন না বলেও সমাবেশস্থল থেকে জানানো হয়েছে।
কুস্তি ফেডারেশনের সভাপতি তথা বিজেপি নেতা ব্রিজভূষণ শরণ সিং অবশ্য তার বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
বার্তা সংস্থা এএনআইকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতন চালানোর অভিযোগ পুরোপুরি মিথ্যে। কেউ যদি এটা প্রমাণ করতে পারেন তাহলে আমি গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করব।’
তবে দেশের নামী কুস্তিগীরদের নজিরবিহীন প্রতিবাদে সারা দেশে যে তীব্র অভিঘাত সৃষ্টি হয়েছে, কেন্দ্রীয় সরকারও তার উপেক্ষা করতে পারছে না।
বুধবার রাতেই ভারত সরকারের ক্রীড়া মন্ত্রণালয় ডব্লিউএফআইকে নোটিশ পাঠিয়ে বলেছে, তাদের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ উঠেছে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে সংস্থাকে তার জবাব দিতে হবে।
আজ বৃহস্পতিবার সকালে প্রতিবাদরত কুস্তিগিরদের সাথে কথা বলার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে অলিম্পিয়ান রেসলার ববিতা ফোগতকেও সমাবেশস্থলে পাঠানো হয়েছিল, যিনি বিজেপির সদস্যও বটে।
ববিতা ফোগত সেখানে বলেন, ‘আমি সবার আগে একজন রেসলার। তাছাড়া আমি সরকারেরও অংশ, কাজেই মধ্যস্থতা করাটা আমার দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে।’
‘তবে এটুকু তো আমাকে বলতেই হবে, আগুন ছাড়া এমনি এমনি তো ধোঁয়া হয় না – কাজেই বিষয়টা আমাদের খতিয়ে দেখতেই হবে,’ জানান তিনি।
ভারতে সোশ্যাল মিডিয়াতেও হাজার হাজার মানুষ যন্তর মন্তরে অবস্থানরত কুস্তিগীরদের সমর্থনে মুখ খুলছেন, ভিনেশ ফোগত বা বজরং পুনিয়ারা যেসব অভিযোগ তুলেছেন তার প্রতিকার দাবি করা হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক ক্রীড়াক্ষেত্র থেকে যে রেসলাররা দেশের জন্য বছরের পর বছর ধরে অজস্র সম্মান নিয়ে এসেছেন, তাদের সাথে কুস্তি সংস্থার প্রধান বা কর্মকর্তারা কিভাবে এ ধরনের ঘৃণ্য আচরণ করতে পারেন, সে প্রশ্নও তুলছেন তারা।
সূত্র : বিবিসি