নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরডার্ন পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি আগামী বছর অনুষ্ঠেয় নির্বাচনেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন না বলে জানিয়েছেন। আগামী মাসের ৭ ফেব্রুয়ারি তিনি দায়িত্ব থেকে সরে যাবেন। আর কিছু দেয়ার নেই বলেই তিনি সরে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন।
অনেক কষ্টে কান্না চেপে জেসিন্ডা বৃহস্পতিবার নেপিয়ারে সাংবাদিকদের বলেন, ৭ ফেব্রুয়ারি হবে তার শেষ অফিস।
তিনি বলেন, আমি চলে যাচ্ছি, কারণ কাজটি কঠিন।’ তিনি বলেন, ভবিষ্যতে কী করবেন, সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে একটু সময় নেবেন।
কিউই প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ‘কাজটা কঠিন বলে আমি ছেড়ে দিচ্ছি না। সেটাই যদি হতো, তাহলে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দু’মাস পরেই সেই কাজটা করতাম। আমি ছেড়ে যাচ্ছি কারণ এরকম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের ক্ষেত্রে বাড়তি দায়িত্ব চাপে। নেতৃত্ব দেয়ার জন্য আপনিই সঠিক ব্যক্তি কিনা, তা জানার দায়িত্ব আসে। সেইসঙ্গে আপনি যখন নেতৃত্ব দেওয়ার সঠিক লোক হন না, সেটা বোঝার দায়িত্বও থাকে। আমি জানি যে এই দায়িত্ব পালনের জন্য কতটা শক্তি প্রয়োজন। আমি এটাও জানি যে সেই দায়িত্বের প্রতি সদ্ব্যবহার করার মতো জ্বালানি পড়ে নেই আমার মধ্যে।’
জেসিন্ডা ২০১৭ সালে জোট সরকারের প্রধানমন্ত্রী হন। চলতি বছর তাকে কঠিন নির্বাচনী পরীক্ষায় পড়তে হতো বলে ধারণা করা হচ্ছে।
দুই বছর আগে উদারপন্থী লেবার পার্টি সহজেই বিপুল বিজয় পেলেও সাম্প্রতিক জরিপে দেখা যাচ্ছে যে রক্ষণশীলেরা বেশ এগিয়ে গেছে।
করোনাভাইরাস মহামারী দমনে তার ভূমিকা বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হয়েছে। তবে কড়াকড়িভাবে করোনাবিধি পালন করায় দেশে তিনি সমালোচিত হয়েছেন।
জেসিন্ডা জানান, আগামী ১৪ অক্টোবর পরবর্তী সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
তিনি বলেন, আগামী রোববার পরবর্তী লেবার নেতা নির্বাচন করা হবে। তিনি আশা করেন, তার নেতৃত্বে লেবার পার্টি আবার জয়ী হবে।
তিনি ২০১৭ সালে ৩৭ বছর বয়সে বিশ্বের সর্বকনিষ্ঠ নারী সরকারপ্রধান নির্বাচিত হন। এর এক বছর পর তিনি দায়িত্ব পালনকালেই বিশ্বে দ্বিতীয় নির্বাচিত সরকারপ্রধান হিসেবে সন্তান জন্ম দেন।
বৃহস্পতিবার একেবারে চমকে দিয়েই দায়িত্ব ছেড়ে দেয়ার ঘোষণা করেন নিউজিল্যান্ডের ‘তারকা’ প্রধানমন্ত্রী। যিনি অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং প্রগতিশীল মুখ হয়েছেন। তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ‘কঠিন’ সাড়ে পাঁচ বছর কাটিয়েছেন। কিন্তু তিনিও তো মানুষ। তাই তাকে সরে দাঁড়াতে হবে।
তিনি বলেন, ‘আমি জানি, এই সিদ্ধান্তের পরে অনেক আলোচনা হবে। আসল কারণ কী, তা খোঁজার চেষ্টা করা হবে। শুধুমাত্র একটাই দিক আপনারা খুঁজে পাবেন, ছয় বছরের কয়েকটি বড় চ্যালেঞ্জ সামলালেও দিনের শেষে আমি একজন মানুষ।’ সেইসাথে ৪২ বছরের নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘রাজনীতিবিদরাও মানুষ। যতদিন সম্ভব, আমরা তত দিন নিজেদের সর্বস্ব উজাড় করে দিই। কিন্তু তারপর সেই সময়টা শেষ হয়ে যায়। আমার ক্ষেত্রে, সময় হয়ে এসেছে।’
সূত্র : আল জাজিরা, বিবিসি ও অন্যান্য