বেইলি রোডে আগুনের ঘটনায় নিহত সাংবাদিক বৃষ্টি খাতুন অথবা অভিশ্রুতি শাস্ত্রীর মা বিউটি খাতুন অপলক দৃষ্টে চেয়ে আছেন। তাকে চারদিকে থেকে ঘিরে রেখেছে তার দুই মেয়ে ও আত্মীয়-স্বজনসহ প্রতিবেশিরা।বিউটি খাতুন একটু পর পর চিৎকার করে বলছেন, ‘আমার সোনাকে আমার বুকে দেন না কেন? প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানালাম, আমার মেয়েকে ভিক্ষা চাই। ও আমার বড় সন্তান। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন করি, আমার সোনাকে আমার কাছে এনে দেন।’
শনিবার (২ মার্চ) বিকালে কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার বেতবাড়িয়া ইউনিয়নের বনগ্রামে গেলে কান্নাজড়িত কণ্ঠে এমন আকুতি জানান বেইলি রোডের অগ্নিকাণ্ডে নিহত অভিশ্রুতি শাস্ত্রী বা বৃষ্টি খাতুনের মা বিউটি বেগম। অভিশ্রুতি শাস্ত্রী নামে যে নারী সাংবাদিকের মৃত্যু হয়েছে তার পরিচয় নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে জটিলতা।
অভিশ্রুতি শাস্ত্রী বা বৃষ্টি খাতুনের মা বিউটি বেগম বলেন, ‘আমার বুক যে হাহাকার করছে। আমার সোনাকে আমাকে দেন। একটা মা আপনার কাছে আবদার করছে। আমার মেয়েরে আমার কাছে দেন। আমার বুকের মানিক আমারে কাছে দেন একটু। আমি আমার বুকটা ঠান্ডা করি। আমার সোনারে আমার কাছে দেন। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমি আবেদন করছি, আমার সোনাকে আমার কাছে দিক।’
অভিশ্রুতির বা বৃষ্টির নিকটাত্মীয় ও শিক্ষাগুরু কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার বনগ্রাম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জানান, ২০১৫ সালে বৃষ্টি খাতুন বিজ্ঞান বিভাগ থেকে মাধ্যমিক উত্তীর্ণ হয়ে কুষ্টিয়া সরকারী কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক মানবিকে ভর্তি হন। ২০১৭ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে ঢাকা ইডেন মহিলা কলেজে দর্শন সম্মান শ্রেণিতে ভর্তি হন।
তার শিক্ষক সফিকুল ইসলাম বলেন, ছাত্র জীবনের বৃষ্টি খাতুন পড়ালেখায় বেশ মেধাবী ছিল। ওর উচ্চ স্বপ্ন ছিল। বিসিএস দিয়ে সরকারী চাকরি করবে বলে একাডেমিক পড়ালেখার পাশাপশি প্রস্তুতিও নিচ্ছিল।’ রাজধানী ঢাকার বেইলী রোডে অগ্নিকান্ডে নিহত দ্য রিপোর্টের নির্বাচন কমিশন বিটের সাংবাদিক অভিশ্রম্নতি শাস্ত্রীর (বৃষ্টি খাতুন) গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার বনগ্রাম পশ্চিমপাড়ায় মৃত্যুর সংবাদ পাওয়ার পর থেকে শুরু হয় শোকের মাতম।
এলাকাবাসীসহ আত্মীয়-স্বজন সবাই বাড়িতে ভিড় করছে। নিহত বৃষ্টির মা’কে সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা হারিয়ে ফেলেছেন প্রতিবেশীরা। নিহতের মা বিউটি বেগম ও ছোট দুই বোন একাদশ শ্রেণিতে পড়ুয়া ঝণার্ ও দশম শ্রেণির ছাত্রী বর্ষা খাতুনকে নিয়ে গ্রামের বাড়িতেই থাকেন ।
এলাকাবাসী ও পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, নিহত সাংবাদিক বৃষ্টি খাতুনের (অভিশ্রুতি শাস্ত্রী) বাবা সাবলুল আলম সবুজ রাজধানী ঢাকায় একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করেন। তার তিনটিই কন্যা সন্তান। বড় মেয়ে নিহত বৃষ্টি খাতুন, মেজো মেয়ে ঝর্ণা খাতুন রাজবাড়ী সরকারী কলেজে প্রথম বর্ষের ছাত্রী আর ছোট মেয়ে বর্ষা খাতুন স্থানীয় বনগ্রাম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী।
নিহতের চাচা জোয়াদ আলী জানান, ‘ভাই সবুজ ঢাকায় ছোট চাকরি করে। অভাবের মধ্যেই দুই মেয়েকে বাইরে রেখে শিক্ষিত করার চেষ্টা করছিল। গত ঈদেও বৃষ্টি বাড়ি এসে সবার সাথে হৈহুল্লোড় করে গেল। সবার সাথে ঈদের আনন্দ করেছে মেয়েটি। আগুনে পুড়ে মরল।
এখন শুনছি ওর লাশ ফেরত পাইতে ডিএনএ টেস্টে পাস করতে হবে পরিবারকে।’ বেতবাড়িয়া ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়াডের্র মেম্বর আব্দুল মজিদও বৃষ্টি খাতুনের অকাল মৃত্যুতে সমবেদনা জানিয়ে বলেন, ‘বৃষ্টি মেয়েটি অত্যন্ত মেধাবী ছিল। অথচ নিজের পরিচয় জটিলতায় আজ পরিবার পরিজন মরদেহ নিয়ে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।’