ঢাকা , সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::

নির্বাচন ঘিরে বিশেষ পরিকল্পনা বিএনপির

  • সূর্যোদয় ডেস্ক:
  • আপডেট সময় ১২:০২:৫১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৫ ডিসেম্বর ২০২৩
  • ১১৩২ বার পড়া হয়েছে

৭ জানুয়ারির নির্বাচন ঘিরে আন্দোলনের বিশেষ পরিকল্পনা করছে বিএনপি। আগামী ১৮ ডিসেম্বরের পর থেকে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। এর আগে চলতি সপ্তাহ শেষে হরতাল-অবরোধ কর্মসূচিতে সাময়িক বিরতি দেয়া হতে পারে । নেতা-কর্মীদের কিছু দিন ‘রিলাক্স’ দিয়ে আন্দোলন চাঙ্গা করতে আপাতত হরতাল-অবরোধ কিছু দিন না দেয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। দলটির শীর্ষ নেতারা জানিয়েছেন, তাদের এখন মূল টার্গেট ‘একতরফা’ নির্বাচন ঠেকানো।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, আমাদের মূল টার্গেট এবার নির্বাচন ঠেকানো। নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে আমরাও যে অনড় অবস্থানে আছি সেটি জানান দিতে হবে। শান্তিপূর্ণ সমাধান না হওয়া পর্যন্ত আমরা রাজপথ ছাড়ব না। দাবি আদায়ে আমাদের হরতাল অবরোধ চলছে; ভোট ঠেকানোর আন্দোলন জোরদার করতে আগামীতে আরো ভিন্ন ধাঁচের কর্মসূচি আসবে।
দলটির সিনিয়র নেতাদের মতে, জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে বিএনপি ভাঙার যে তৎপরতা ছিল তাতে কোনো মহলই সফল হয়নি। নেতাদের মূল্যায়ন, নানা চাপ ও প্রলোভন থাকার পরও দল ভাঙার প্রকল্প বাস্তবায়ন করা যায়নি। ফলে সরকারের পরিকল্পনাও হোঁচট খেয়েছে। এটি বিএনপির একটি বড় সাফল্য।

সূত্র মতে, ভোটকেন্দ্রিক কর্মকৌশল ঠিক করতে গত কয়েক দিন ধরেই ম্যারাথন বৈঠক করছেন বিএনপির নীতি-নির্ধারকরা। নেতারা জানিয়েছেন, গত ২৮ অক্টোবরের পর থেকে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দেশজুড়ে অসংখ্য নেতাকর্মী গ্রেফতার হওয়ার প্রেক্ষিতে কৌশলে আন্দোলন চালিয়ে নেয়া হচ্ছে। এখন ভোট ঠেকাতে নতুন ছকে আন্দোলন সংগ্রাম জোরদার করতে ফের রাজপথে সরব হতে চায় বিএনপি। এ লক্ষ্যে নেতাকর্মীরাও বিভিন্ন উপায়ে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে।

আগামী ১৮ ডিসেম্বর থেকে ৭ জানুয়ারির মধ্যবর্তী সময়টাকে চূড়ান্ত আন্দোলনের ‘মোক্ষম ক্ষণ’ ধরে আন্দোলনে জোরদারের পরিকল্পনা রয়েছে। আপাতত হরতাল-অবরোধের ফাঁকে ফাঁকে বিক্ষোভ-সমাবেশ জাতীয় কর্মসূচি দেয়ার চিন্তা করা হচ্ছে। এ ছাড়া ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস ও ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস উপলক্ষে কর্মসূচি দেয়া হবে। এর আগে ১০ ডিসেম্বর মানবাধিকার দিবসে বিদেশীদের কাছে দেশের সর্বশেষ পরিস্থিতি তুলে ধরা হবে। ওই দিন রাজধানীতে মানববন্ধন করার পরিকল্পনা রয়েছে। এ ছাড়া যুগপতে থাকা দলগুলোর অঙ্গ সংগঠনকে নিয়ে ঢাকায় নারী সমাবেশ, যুব সমাবেশ, শ্রমিক সমাবেশ, ছাত্র সমাবেশের কথাও ভাবছে বিএনপি। একই সাথে বিএনপির কারাবন্দী, গুম-খুন ও নির্যাতনের শিকার নেতাকর্মীর স্বজনদের নিয়ে বিভাগীয় পর্যায়ে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হবে। ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত হরতাল-অবরোধের পাশাপাশি পরিস্থিতি বিবেচনায় জনসম্পৃক্ত এসব কর্মসূচির মধ্য দিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে চায় দলটি।

বিএনপির দায়িত্বশীল নেতাদের মতে, মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় শেষ হওয়ার ফলে এখন আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীসহ নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষ কমিশনের নিয়ন্ত্রণে থাকবে। নির্বাহী বিভাগের ওপর সাংবিধানিক ক্ষমতা প্রয়োগের সুযোগ থাকার পরও বিএনপির আন্দোলন দমানো এবং নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করা হলে তাতে ইসির ভূমিকা আরো প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়বে। অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনের আন্তরিকতা নিয়ে দেশে ও আন্তর্জাতিক মহল প্রশ্ন দেখা দেবে। তা ছাড়া তফসিলের পর এখন ইসির আচরণও যদি সরকারের মতো হয় তাহলে প্রমাণ হবে একতরফা নির্বাচনের আয়োজনের সব ব্যবস্থা তারা করছে। বিএনপি তখন তা সামনে নিয়ে আসবে।

এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেন, অতি দ্রুততম সময়ের মধ্যে সরকারবিরোধী অবস্থান নেয়া সব দলকে এক জায়গায় এনে কী ধরনের কর্মসূচি দেয়া যায়- তা নিয়ে বিশ্লেষণ চলছে দলের অভ্যন্তরে। অবরোধ অব্যাহত থাকবে নাকি অন্য কোনো কর্মসূচি দেয়া হবে, অথবা অবরোধ বহাল রেখেই আরো কর্মসূচি দেয়া হবে- নানা বিকল্প নিয়ে দলের ভেতরে আলোচনা চলছে।
জানা গেছে, আন্দোলনরত বিরোধী দলগুলোকে এক জায়গায় আনার চিন্তা করছে বিএনপি। নির্দলীয় সরকারের অধীন নির্বাচনের দাবিতে যুগপৎ আন্দোলনের এ পর্যায়ে এসে বিএনপির নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন, নির্বাচন বর্জনকারী সব রাজনৈতিক দল এক জায়গায় এসে ভূমিকা রাখলে ভোট ঠেকানোর আন্দোলনের গতি বাড়বে।
সূত্র জানায়, ৬০টি দল ও জোট অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন করছে। তারাও নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না। এ ক্ষেত্রে কর্মসূচি যুগপৎ নাকি এক জায়গা থেকে ঐক্যবদ্ধ কর্মসূচির কৌশল নেয়া হবে, সে বিষয়ে নেতাদের মত নেয়া হচ্ছে।

জানতে চাইালে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, সরকারের দিক থেকে নানা লোভ এবং চাপেও নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত ৬০টি রাজনৈতিক দল নির্বাচন বর্জন করেছে। তাদের মধ্যে যুগপৎ আন্দোলনরত ৩৯টি রাজনৈতিক দল নিয়ে আমরা গত ৩০ নভেম্বর বৈঠক করে যুক্ত বিবৃতি দিয়ে নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেছি। অন্যান্য রাজনৈতিক দলও নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করে বিবৃতি দিয়েছে। ঐক্য ধরে রাখার ক্ষেত্রে আন্দোলনরত দলগুলোর জন্য এটি বড় সফলতা। এখন মাঠের আন্দোলন কিভাবে আরো বেগবান করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা চলছে।
এদিকে বিএনপি নেতা-কর্মীদের বিশ্বাস, অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন প্রশ্নে সংলাপে বসতে মার্কিন আহ্বান উপেক্ষা, তড়িঘড়ি করে তফসিল ঘোষণা এবং প্রধান বিরোধী দলগুলোকে আন্দোলনের মাঠে রেখে সরকার যে একতরফা নির্বাচনের পথে হাঁটছে এর পরিণাম ভালো হবে না। সরকারের বিরুদ্ধে কঠোর প্রতিক্রিয়া আসবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দিক থেকে। তাদের এ ধারণার কারণ হলো, নির্বাচন নিয়ে গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে সক্রিয় যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্ব। বেশ কিছুদিন ধরেই যুক্তরাষ্ট্র নির্বাচন ইস্যুতে সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ করে আসছে। এ ছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও জাতিসঙ্ঘের দিক থেকেও নির্বাচন নিয়ে প্রতিনিয়ত বক্তব্য বিবৃতি আসছে। ইউরোপীয় পার্লামেন্ট ইতোমধ্যেই এ নিয়ে বেশ শক্ত ভাষায় একটি প্রস্তাবও গৃহীত হয়েছে।

সূত্র জানায়, রাজপথের আন্দোলনে না থাকলেও কূটনৈতিক তৎপরতার জোরদার করছে বিএনপি। ঢাকায় নিযুক্ত সব দূতাবাসে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন বিএনপির ফরেন অ্যাফেয়ার্সে নতুন করে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণে দুই মাসের জন্য ঢাকায় আসা ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের (ইইউ) চার সদস্যের নির্বাচন বিশেষজ্ঞ দলের সাথে ভার্চুয়াল বৈঠক করেছে বিএনপি। গত শনিবার বিকেলে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, ড. আবদুল মঈন খান ও মানবাধিকার সম্পাদক আসাদুজ্জামান উপস্থিত ছিলেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মঈন খান বলেন, ৭ জানুয়ারি একতরফা নির্বাচনের মাধ্যমে কেবল দেশের ভেতরে নয়, বরং সারা বিশ্বের গণতন্ত্রকামী মননশীল মানুষের সামনে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে যেভাবে একটি কলঙ্কময় ভাবচিত্র প্রতিস্থাপন করবে সে বিষয়ে বাস্তব চিত্র আমরা বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিদের জানাচ্ছি। বিএনপির এই নেতার দাবি- গত ২৮ অক্টোবর থেকে কীভাবে রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে সারা দেশে বিরোধী নেতাকর্মীদের নিপীড়ন’ করা হচ্ছে সেটি বিশ্বসম্প্রদায় দেখছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা গণতান্ত্রিক বিশ্বও এই নির্বাচন নিয়ে আস্থাহীনতার প্রশ্ন তুলেছে। তারা যে সংলাপের আহ্বান জানিয়েছিল, সরকার তা আমলেই নেয়নি। ফলে জাতিসঙ্ঘ ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন এ নির্বাচনে পর্যবেক্ষকও পাঠাচ্ছে না। কারণ, তারা বুঝে গেছে নির্বাচনের নামে এখানে কত বড় প্রহসন হতে যাচ্ছে।

 

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

আজকের সূর্যোদয়

আজকের সূর্যোদয় প্রত্রিকায় আপনাদের স্বাগতম। ‍আমাদের নিউজ পড়ুন এবং বিজ্ঞাপন দিয়ে আমাদের পাশে থাকুন।

বরিশালে মুজিবিয়ানের ৮৭ নেতাকে খুঁজছে গোয়েন্দা সংস্থা

নির্বাচন ঘিরে বিশেষ পরিকল্পনা বিএনপির

আপডেট সময় ১২:০২:৫১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৫ ডিসেম্বর ২০২৩

৭ জানুয়ারির নির্বাচন ঘিরে আন্দোলনের বিশেষ পরিকল্পনা করছে বিএনপি। আগামী ১৮ ডিসেম্বরের পর থেকে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। এর আগে চলতি সপ্তাহ শেষে হরতাল-অবরোধ কর্মসূচিতে সাময়িক বিরতি দেয়া হতে পারে । নেতা-কর্মীদের কিছু দিন ‘রিলাক্স’ দিয়ে আন্দোলন চাঙ্গা করতে আপাতত হরতাল-অবরোধ কিছু দিন না দেয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। দলটির শীর্ষ নেতারা জানিয়েছেন, তাদের এখন মূল টার্গেট ‘একতরফা’ নির্বাচন ঠেকানো।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, আমাদের মূল টার্গেট এবার নির্বাচন ঠেকানো। নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে আমরাও যে অনড় অবস্থানে আছি সেটি জানান দিতে হবে। শান্তিপূর্ণ সমাধান না হওয়া পর্যন্ত আমরা রাজপথ ছাড়ব না। দাবি আদায়ে আমাদের হরতাল অবরোধ চলছে; ভোট ঠেকানোর আন্দোলন জোরদার করতে আগামীতে আরো ভিন্ন ধাঁচের কর্মসূচি আসবে।
দলটির সিনিয়র নেতাদের মতে, জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে বিএনপি ভাঙার যে তৎপরতা ছিল তাতে কোনো মহলই সফল হয়নি। নেতাদের মূল্যায়ন, নানা চাপ ও প্রলোভন থাকার পরও দল ভাঙার প্রকল্প বাস্তবায়ন করা যায়নি। ফলে সরকারের পরিকল্পনাও হোঁচট খেয়েছে। এটি বিএনপির একটি বড় সাফল্য।

সূত্র মতে, ভোটকেন্দ্রিক কর্মকৌশল ঠিক করতে গত কয়েক দিন ধরেই ম্যারাথন বৈঠক করছেন বিএনপির নীতি-নির্ধারকরা। নেতারা জানিয়েছেন, গত ২৮ অক্টোবরের পর থেকে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দেশজুড়ে অসংখ্য নেতাকর্মী গ্রেফতার হওয়ার প্রেক্ষিতে কৌশলে আন্দোলন চালিয়ে নেয়া হচ্ছে। এখন ভোট ঠেকাতে নতুন ছকে আন্দোলন সংগ্রাম জোরদার করতে ফের রাজপথে সরব হতে চায় বিএনপি। এ লক্ষ্যে নেতাকর্মীরাও বিভিন্ন উপায়ে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে।

আগামী ১৮ ডিসেম্বর থেকে ৭ জানুয়ারির মধ্যবর্তী সময়টাকে চূড়ান্ত আন্দোলনের ‘মোক্ষম ক্ষণ’ ধরে আন্দোলনে জোরদারের পরিকল্পনা রয়েছে। আপাতত হরতাল-অবরোধের ফাঁকে ফাঁকে বিক্ষোভ-সমাবেশ জাতীয় কর্মসূচি দেয়ার চিন্তা করা হচ্ছে। এ ছাড়া ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস ও ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস উপলক্ষে কর্মসূচি দেয়া হবে। এর আগে ১০ ডিসেম্বর মানবাধিকার দিবসে বিদেশীদের কাছে দেশের সর্বশেষ পরিস্থিতি তুলে ধরা হবে। ওই দিন রাজধানীতে মানববন্ধন করার পরিকল্পনা রয়েছে। এ ছাড়া যুগপতে থাকা দলগুলোর অঙ্গ সংগঠনকে নিয়ে ঢাকায় নারী সমাবেশ, যুব সমাবেশ, শ্রমিক সমাবেশ, ছাত্র সমাবেশের কথাও ভাবছে বিএনপি। একই সাথে বিএনপির কারাবন্দী, গুম-খুন ও নির্যাতনের শিকার নেতাকর্মীর স্বজনদের নিয়ে বিভাগীয় পর্যায়ে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হবে। ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত হরতাল-অবরোধের পাশাপাশি পরিস্থিতি বিবেচনায় জনসম্পৃক্ত এসব কর্মসূচির মধ্য দিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে চায় দলটি।

বিএনপির দায়িত্বশীল নেতাদের মতে, মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় শেষ হওয়ার ফলে এখন আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীসহ নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষ কমিশনের নিয়ন্ত্রণে থাকবে। নির্বাহী বিভাগের ওপর সাংবিধানিক ক্ষমতা প্রয়োগের সুযোগ থাকার পরও বিএনপির আন্দোলন দমানো এবং নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করা হলে তাতে ইসির ভূমিকা আরো প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়বে। অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনের আন্তরিকতা নিয়ে দেশে ও আন্তর্জাতিক মহল প্রশ্ন দেখা দেবে। তা ছাড়া তফসিলের পর এখন ইসির আচরণও যদি সরকারের মতো হয় তাহলে প্রমাণ হবে একতরফা নির্বাচনের আয়োজনের সব ব্যবস্থা তারা করছে। বিএনপি তখন তা সামনে নিয়ে আসবে।

এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেন, অতি দ্রুততম সময়ের মধ্যে সরকারবিরোধী অবস্থান নেয়া সব দলকে এক জায়গায় এনে কী ধরনের কর্মসূচি দেয়া যায়- তা নিয়ে বিশ্লেষণ চলছে দলের অভ্যন্তরে। অবরোধ অব্যাহত থাকবে নাকি অন্য কোনো কর্মসূচি দেয়া হবে, অথবা অবরোধ বহাল রেখেই আরো কর্মসূচি দেয়া হবে- নানা বিকল্প নিয়ে দলের ভেতরে আলোচনা চলছে।
জানা গেছে, আন্দোলনরত বিরোধী দলগুলোকে এক জায়গায় আনার চিন্তা করছে বিএনপি। নির্দলীয় সরকারের অধীন নির্বাচনের দাবিতে যুগপৎ আন্দোলনের এ পর্যায়ে এসে বিএনপির নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন, নির্বাচন বর্জনকারী সব রাজনৈতিক দল এক জায়গায় এসে ভূমিকা রাখলে ভোট ঠেকানোর আন্দোলনের গতি বাড়বে।
সূত্র জানায়, ৬০টি দল ও জোট অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন করছে। তারাও নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না। এ ক্ষেত্রে কর্মসূচি যুগপৎ নাকি এক জায়গা থেকে ঐক্যবদ্ধ কর্মসূচির কৌশল নেয়া হবে, সে বিষয়ে নেতাদের মত নেয়া হচ্ছে।

জানতে চাইালে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, সরকারের দিক থেকে নানা লোভ এবং চাপেও নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত ৬০টি রাজনৈতিক দল নির্বাচন বর্জন করেছে। তাদের মধ্যে যুগপৎ আন্দোলনরত ৩৯টি রাজনৈতিক দল নিয়ে আমরা গত ৩০ নভেম্বর বৈঠক করে যুক্ত বিবৃতি দিয়ে নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেছি। অন্যান্য রাজনৈতিক দলও নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করে বিবৃতি দিয়েছে। ঐক্য ধরে রাখার ক্ষেত্রে আন্দোলনরত দলগুলোর জন্য এটি বড় সফলতা। এখন মাঠের আন্দোলন কিভাবে আরো বেগবান করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা চলছে।
এদিকে বিএনপি নেতা-কর্মীদের বিশ্বাস, অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন প্রশ্নে সংলাপে বসতে মার্কিন আহ্বান উপেক্ষা, তড়িঘড়ি করে তফসিল ঘোষণা এবং প্রধান বিরোধী দলগুলোকে আন্দোলনের মাঠে রেখে সরকার যে একতরফা নির্বাচনের পথে হাঁটছে এর পরিণাম ভালো হবে না। সরকারের বিরুদ্ধে কঠোর প্রতিক্রিয়া আসবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দিক থেকে। তাদের এ ধারণার কারণ হলো, নির্বাচন নিয়ে গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে সক্রিয় যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্ব। বেশ কিছুদিন ধরেই যুক্তরাষ্ট্র নির্বাচন ইস্যুতে সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ করে আসছে। এ ছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও জাতিসঙ্ঘের দিক থেকেও নির্বাচন নিয়ে প্রতিনিয়ত বক্তব্য বিবৃতি আসছে। ইউরোপীয় পার্লামেন্ট ইতোমধ্যেই এ নিয়ে বেশ শক্ত ভাষায় একটি প্রস্তাবও গৃহীত হয়েছে।

সূত্র জানায়, রাজপথের আন্দোলনে না থাকলেও কূটনৈতিক তৎপরতার জোরদার করছে বিএনপি। ঢাকায় নিযুক্ত সব দূতাবাসে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন বিএনপির ফরেন অ্যাফেয়ার্সে নতুন করে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণে দুই মাসের জন্য ঢাকায় আসা ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের (ইইউ) চার সদস্যের নির্বাচন বিশেষজ্ঞ দলের সাথে ভার্চুয়াল বৈঠক করেছে বিএনপি। গত শনিবার বিকেলে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, ড. আবদুল মঈন খান ও মানবাধিকার সম্পাদক আসাদুজ্জামান উপস্থিত ছিলেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মঈন খান বলেন, ৭ জানুয়ারি একতরফা নির্বাচনের মাধ্যমে কেবল দেশের ভেতরে নয়, বরং সারা বিশ্বের গণতন্ত্রকামী মননশীল মানুষের সামনে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে যেভাবে একটি কলঙ্কময় ভাবচিত্র প্রতিস্থাপন করবে সে বিষয়ে বাস্তব চিত্র আমরা বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিদের জানাচ্ছি। বিএনপির এই নেতার দাবি- গত ২৮ অক্টোবর থেকে কীভাবে রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে সারা দেশে বিরোধী নেতাকর্মীদের নিপীড়ন’ করা হচ্ছে সেটি বিশ্বসম্প্রদায় দেখছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা গণতান্ত্রিক বিশ্বও এই নির্বাচন নিয়ে আস্থাহীনতার প্রশ্ন তুলেছে। তারা যে সংলাপের আহ্বান জানিয়েছিল, সরকার তা আমলেই নেয়নি। ফলে জাতিসঙ্ঘ ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন এ নির্বাচনে পর্যবেক্ষকও পাঠাচ্ছে না। কারণ, তারা বুঝে গেছে নির্বাচনের নামে এখানে কত বড় প্রহসন হতে যাচ্ছে।