ঢাকা , সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::

পশ্চিমা সংস্কৃতির থাবায় পবিত্র নগরী

  • ইমদাদুল হক শেখ
  • আপডেট সময় ১১:১৮:১০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৮ জানুয়ারী ২০২৩
  • ১৩৮৮ বার পড়া হয়েছে

মানবজাতির ইতিহাস মক্কা নগরী থেকে শুরু হয়েছিল। ইতিহাস গ্রন্থে উল্লেখ রয়েছে, আদম ও হাওয়া আ:-এর দীর্ঘ বিচ্ছেদের পর মক্কা নগরীর আশপাশেই কোনো এক পাহাড়ের চূড়ায় মিলিত হয়েছিলেন। পবিত্র কাবা ঘর, যার ইবাদতের উপযোগী প্রথম নির্মাতা হজরত ইবরাহিম ও হজরত ইসমাঈল আ:। পবিত্র এই ঘরের কারণে মক্কা নগরী আজ সম্মানিত। যার সম্মানিত হওয়ার বিষয় আল্লাহ তায়ালা নিজেই স্বীকৃতি দিয়েছেন। তার সম্মান ও গুরুত্ব বোঝাতে কুরআনে আল্লাহ তায়ালা এই নগরীর কসম খেয়েছেন। নগরীর এই পবিত্রতা রক্ষার্থে অনেক নবী-রাসূল কঠোর পরিশ্রম করেছেন। সর্বশেষ আমাদের প্রিয়নবী সা: ৬২৫ খ্রিষ্টাব্দে ৩৬০টি মূর্তি অপসারণের মাধ্যমে আল্লাহর এ ঘরের সর্বোচ্চ সম্মান প্রদর্শন করেন।

বড় আক্ষেপ ও পরিতাপের বিষয় এই, বর্তমানে সেই সম্মানিত নগরীতে পশ্চিমাদের ইসলামবিরোধী সংস্কৃতির কালো ছায়া পড়েছে। সেখানে তলে তলে ইসলাম নামক বৃক্ষের মূল শিকড় উপড়ে ফেলে উপরে উপরে স্বচ্ছ পানির ফোয়ারা ছিটানো হচ্ছে। গোপনে গোপনে মদ্যপান, নারীবাজিসহ সব প্রকার জুলুমের দ্বার উন্মোচিত। মসজিদের মিম্বরগুলোও নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। যদিও ইমামদের মুখে ইসলামবিরোধী কোনো কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদের ঘটনা হলেও ইমামদের গুম করে দেয়ার ঘটনাও ঘটছে। কারণ সেখানকার ক্ষমতা বলয়ের যোগসাজশ এখন পশ্চিমাদের সাথে।
এখানেই শেষ নয়; বরং ইসলামের বহু বিধান লঙ্ঘন করে তা রাষ্ট্রীয় আইনে পরিণত করা হচ্ছে। যেখানে যুগের পর যুগ সিনেমা হল নিষিদ্ধ ছিল, এখন পুনরায় তার বৈধতা দিয়ে অসংখ্য অশ্লীলতা ও বেহায়াপনার পথ সুগম করে দেয়া হয়েছে। অথচ আল্লাহ তায়ালা পবিত্র গ্রন্থে ইরশাদ করেছেন- ‘তোমরা অশ্লীলতার নিকটবর্তী হয়ো না’ (সূরা আন’আম-১৫১)।

সৌদির বর্তমান হজমন্ত্রী ড. তৌফিক আল-রাবিহা মাহরাম ব্যতীত মহিলাদের হজে যাওয়ার বৈধতা দিয়েছেন। অথচ প্রিয়নবী সা:-এর অমিয় বাণীতে বোঝা যায়, তিনি এ বিষয়টিকে স্পষ্ট নিষেধ করেছেন। ইবনে আব্বাস রা: থেকে বর্ণিত- রাসূল সা: বলেছেন, ‘মাহরাম ছাড়া কোনো পুরুষ কোনো নারীর সাথে নির্জনে সাক্ষাৎ করবে না ও কোনো নারী মাহরাম ব্যতীত সফর করবে না।’ এক সাহাবি বললেন, হে আল্লাহর রাসূল সা:! আমার স্ত্রী হজ করতে যাচ্ছে আর আমি অমুক যুদ্ধে নাম লিখিয়েছি। রাসূল সা: বললেন, ‘তোমার স্ত্রীর সাথে হজে যাও’ (মুসলিম-১৩৪১)।

অপর হাদিসে আল্লাহর রাসূল সা: আরো স্পষ্ট করে বলেন, হজরত আবু সাঈদ খুদরি রা: থেকে বর্ণিত- রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাসী কোনো নারীর জন্য তার পিতা, ছেলে, স্বামী বা ভাই অথবা অন্য কোনো মাহরাম ছাড়া তিন দিন (৪৮ মাইল বা ৭৮ কিলোমিটার) বা তার চেয়ে বেশি দূরত্বে কোথাও সফর করা বৈধ নয়’ (সহিহ মুসলিম-১৩৪০)।

আরো আশ্চর্যের বিষয় হলো- রাসূলুল্লাহ সা:-এর নবুয়ত প্রাপ্তির পর থেকে এ পর্যন্ত দ্বীনের অনেক রাহবার শিরক ও কুফুরকে হঠানোর জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করেছেন। অথচ সেই শিরক ও কুফুরকে অতিসূক্ষ্মতার সাথে আবার ফিরিয়ে আনা হচ্ছে হ্যালোউইন ডে উদযাপনের সুব্যবস্থার মাধ্যমে। নিশ্চয়ই এখন জানতে মনে চাচ্ছে, হ্যালোউইন ডে আবার কী? তাহলে জানুন ও বুঝুন! আইরিশ, যুক্তরাজ্য, ওয়েলস সম্প্রদায়ের লোকেরা বিশ্বাস করত, প্রত্যেক নতুন বছরের আগের রাতে সাহেইন, মৃত্যুর দেবতা, আঁধারের রাজপুত্র, সব মৃত আত্মা ডাক দেয়। এই দিন মহাশূন্য ও সময়ের সব আইনকানুন স্থগিত করা হয় এবং জীবিতদের বিশ্বে যোগদান করতে মৃত আত্মাদের অনুমোদন করে। এই সব বিশ্বাস, সবই শিরকের অন্তর্ভুক্ত, যা জাহান্নামের পথকে অতি সুগম করে দেয়।

মক্কা নগরীর মহান শাসক ২০২২ সালের ৩১ অক্টোবর থেকে এই হ্যালোউইন ডে উদযাপনের পূর্ণ বৈধতা দিয়েছেন, যে দিনে সবাই ভুতুড়ে পোশাক পরিধান করে আনন্দে নিমজ্জিত ছিল। এই উৎসব নিঃসন্দেহে বিধর্মীদের। ইসলাম এমন উৎসব সমর্থন করে না। প্রিয়নবী সা: বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি যে জাতির সাদৃশ্য অবলম্বন করবে সে তাদেরই একজন’ (আবু দাউদ-৪০৩১)।
ইসলামের শুরু থেকেই শরিয়তে গান-বাজনা, বাদ্যযন্ত্র নিষিদ্ধ। অথচ পশ্চিমাদের প্রভাবে সেখানে এখন গান-বাজনা ও বস্ত্রহীন পোশাকীদের কনসার্টের আয়োজন করা হচ্ছে।

এই সম্মানিত নগরীর শাসকদের চলাফেরা, ওঠাবসা সবই এখন ব্রিটিশ ও আমেরিকার আদলে হয়ে যাচ্ছে। যার ফলে দিন দিন সম্মানিত নগরীতে শিরক কুফরসহ অনেক অশ্লীল, অনৈতিক কর্মকাণ্ড চালু হয়েছে। এগুলো সবই ওই পশ্চিমা সংস্কৃতির প্রভাব। আল্লাহ তায়ালা সবাইকে হিফাজত করুন।
লেখক : সিনিয়র শিক্ষক, ডক্টর আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর রহ: প্রতিষ্ঠিত, জামেয়াতুস সুন্নাহ, ঝিনাইদহ সদর

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

আজকের সূর্যোদয়

আজকের সূর্যোদয় প্রত্রিকায় আপনাদের স্বাগতম। ‍আমাদের নিউজ পড়ুন এবং বিজ্ঞাপন দিয়ে আমাদের পাশে থাকুন।

বরিশালে মুজিবিয়ানের ৮৭ নেতাকে খুঁজছে গোয়েন্দা সংস্থা

পশ্চিমা সংস্কৃতির থাবায় পবিত্র নগরী

আপডেট সময় ১১:১৮:১০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৮ জানুয়ারী ২০২৩

মানবজাতির ইতিহাস মক্কা নগরী থেকে শুরু হয়েছিল। ইতিহাস গ্রন্থে উল্লেখ রয়েছে, আদম ও হাওয়া আ:-এর দীর্ঘ বিচ্ছেদের পর মক্কা নগরীর আশপাশেই কোনো এক পাহাড়ের চূড়ায় মিলিত হয়েছিলেন। পবিত্র কাবা ঘর, যার ইবাদতের উপযোগী প্রথম নির্মাতা হজরত ইবরাহিম ও হজরত ইসমাঈল আ:। পবিত্র এই ঘরের কারণে মক্কা নগরী আজ সম্মানিত। যার সম্মানিত হওয়ার বিষয় আল্লাহ তায়ালা নিজেই স্বীকৃতি দিয়েছেন। তার সম্মান ও গুরুত্ব বোঝাতে কুরআনে আল্লাহ তায়ালা এই নগরীর কসম খেয়েছেন। নগরীর এই পবিত্রতা রক্ষার্থে অনেক নবী-রাসূল কঠোর পরিশ্রম করেছেন। সর্বশেষ আমাদের প্রিয়নবী সা: ৬২৫ খ্রিষ্টাব্দে ৩৬০টি মূর্তি অপসারণের মাধ্যমে আল্লাহর এ ঘরের সর্বোচ্চ সম্মান প্রদর্শন করেন।

বড় আক্ষেপ ও পরিতাপের বিষয় এই, বর্তমানে সেই সম্মানিত নগরীতে পশ্চিমাদের ইসলামবিরোধী সংস্কৃতির কালো ছায়া পড়েছে। সেখানে তলে তলে ইসলাম নামক বৃক্ষের মূল শিকড় উপড়ে ফেলে উপরে উপরে স্বচ্ছ পানির ফোয়ারা ছিটানো হচ্ছে। গোপনে গোপনে মদ্যপান, নারীবাজিসহ সব প্রকার জুলুমের দ্বার উন্মোচিত। মসজিদের মিম্বরগুলোও নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। যদিও ইমামদের মুখে ইসলামবিরোধী কোনো কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদের ঘটনা হলেও ইমামদের গুম করে দেয়ার ঘটনাও ঘটছে। কারণ সেখানকার ক্ষমতা বলয়ের যোগসাজশ এখন পশ্চিমাদের সাথে।
এখানেই শেষ নয়; বরং ইসলামের বহু বিধান লঙ্ঘন করে তা রাষ্ট্রীয় আইনে পরিণত করা হচ্ছে। যেখানে যুগের পর যুগ সিনেমা হল নিষিদ্ধ ছিল, এখন পুনরায় তার বৈধতা দিয়ে অসংখ্য অশ্লীলতা ও বেহায়াপনার পথ সুগম করে দেয়া হয়েছে। অথচ আল্লাহ তায়ালা পবিত্র গ্রন্থে ইরশাদ করেছেন- ‘তোমরা অশ্লীলতার নিকটবর্তী হয়ো না’ (সূরা আন’আম-১৫১)।

সৌদির বর্তমান হজমন্ত্রী ড. তৌফিক আল-রাবিহা মাহরাম ব্যতীত মহিলাদের হজে যাওয়ার বৈধতা দিয়েছেন। অথচ প্রিয়নবী সা:-এর অমিয় বাণীতে বোঝা যায়, তিনি এ বিষয়টিকে স্পষ্ট নিষেধ করেছেন। ইবনে আব্বাস রা: থেকে বর্ণিত- রাসূল সা: বলেছেন, ‘মাহরাম ছাড়া কোনো পুরুষ কোনো নারীর সাথে নির্জনে সাক্ষাৎ করবে না ও কোনো নারী মাহরাম ব্যতীত সফর করবে না।’ এক সাহাবি বললেন, হে আল্লাহর রাসূল সা:! আমার স্ত্রী হজ করতে যাচ্ছে আর আমি অমুক যুদ্ধে নাম লিখিয়েছি। রাসূল সা: বললেন, ‘তোমার স্ত্রীর সাথে হজে যাও’ (মুসলিম-১৩৪১)।

অপর হাদিসে আল্লাহর রাসূল সা: আরো স্পষ্ট করে বলেন, হজরত আবু সাঈদ খুদরি রা: থেকে বর্ণিত- রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাসী কোনো নারীর জন্য তার পিতা, ছেলে, স্বামী বা ভাই অথবা অন্য কোনো মাহরাম ছাড়া তিন দিন (৪৮ মাইল বা ৭৮ কিলোমিটার) বা তার চেয়ে বেশি দূরত্বে কোথাও সফর করা বৈধ নয়’ (সহিহ মুসলিম-১৩৪০)।

আরো আশ্চর্যের বিষয় হলো- রাসূলুল্লাহ সা:-এর নবুয়ত প্রাপ্তির পর থেকে এ পর্যন্ত দ্বীনের অনেক রাহবার শিরক ও কুফুরকে হঠানোর জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করেছেন। অথচ সেই শিরক ও কুফুরকে অতিসূক্ষ্মতার সাথে আবার ফিরিয়ে আনা হচ্ছে হ্যালোউইন ডে উদযাপনের সুব্যবস্থার মাধ্যমে। নিশ্চয়ই এখন জানতে মনে চাচ্ছে, হ্যালোউইন ডে আবার কী? তাহলে জানুন ও বুঝুন! আইরিশ, যুক্তরাজ্য, ওয়েলস সম্প্রদায়ের লোকেরা বিশ্বাস করত, প্রত্যেক নতুন বছরের আগের রাতে সাহেইন, মৃত্যুর দেবতা, আঁধারের রাজপুত্র, সব মৃত আত্মা ডাক দেয়। এই দিন মহাশূন্য ও সময়ের সব আইনকানুন স্থগিত করা হয় এবং জীবিতদের বিশ্বে যোগদান করতে মৃত আত্মাদের অনুমোদন করে। এই সব বিশ্বাস, সবই শিরকের অন্তর্ভুক্ত, যা জাহান্নামের পথকে অতি সুগম করে দেয়।

মক্কা নগরীর মহান শাসক ২০২২ সালের ৩১ অক্টোবর থেকে এই হ্যালোউইন ডে উদযাপনের পূর্ণ বৈধতা দিয়েছেন, যে দিনে সবাই ভুতুড়ে পোশাক পরিধান করে আনন্দে নিমজ্জিত ছিল। এই উৎসব নিঃসন্দেহে বিধর্মীদের। ইসলাম এমন উৎসব সমর্থন করে না। প্রিয়নবী সা: বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি যে জাতির সাদৃশ্য অবলম্বন করবে সে তাদেরই একজন’ (আবু দাউদ-৪০৩১)।
ইসলামের শুরু থেকেই শরিয়তে গান-বাজনা, বাদ্যযন্ত্র নিষিদ্ধ। অথচ পশ্চিমাদের প্রভাবে সেখানে এখন গান-বাজনা ও বস্ত্রহীন পোশাকীদের কনসার্টের আয়োজন করা হচ্ছে।

এই সম্মানিত নগরীর শাসকদের চলাফেরা, ওঠাবসা সবই এখন ব্রিটিশ ও আমেরিকার আদলে হয়ে যাচ্ছে। যার ফলে দিন দিন সম্মানিত নগরীতে শিরক কুফরসহ অনেক অশ্লীল, অনৈতিক কর্মকাণ্ড চালু হয়েছে। এগুলো সবই ওই পশ্চিমা সংস্কৃতির প্রভাব। আল্লাহ তায়ালা সবাইকে হিফাজত করুন।
লেখক : সিনিয়র শিক্ষক, ডক্টর আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর রহ: প্রতিষ্ঠিত, জামেয়াতুস সুন্নাহ, ঝিনাইদহ সদর