ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::

পাঁচ ওয়াক্ত নামাজে গুনাহ ঝরে যেভাবে

  • সূর্যোদয় ডেস্ক:
  • আপডেট সময় ০৩:২২:৪৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৫ অগাস্ট ২০২৩
  • ১১২১ বার পড়া হয়েছে

নামাজ আল্লাহ তায়ালার মহান বিধান। পরকালে এবং দুনিয়াতে মানুষের করা পাপ থেকে মুক্তির মাধ্যম। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে বলেছেন, ‘তুমি সালাত কায়েম কর দিবসের দুই প্রান্তভাগে এবং রজনীর প্রথমাংশে। অবশ্যই নেক আমল পাপসমূহ মিটিয়ে দেয়। যারা উপদেশ গ্রহণ করে, এ তাদের জন্য এক উপদেশ। -(সূরা হূদ (১১), আয়াত, ১১৪)

হজরত আবু উসমান রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি সালমান ফারসী রা. এর সঙ্গে একটি গাছের নিচে ছিলাম। তিনি গাছের একটি শুকনো ডাল নিয়ে ঝাড়া দিলেন, এর কারণে গাছের পাতাগুলো ঝরে পড়লো। তারপর বললেন, হে আবু উসমান! আমি কেন এমন করলাম, জানতে চাইবেন না? আমি বললাম, কেন এমন করলেন?

তিনি বললেন, আমি একবার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে একটি গাছের নিচে ছিলাম, তখন তিনি সে গাছ থেকে একটি শুকনো ডাল নিলেন। তারপর তা ঝাড়া দিলেন, এতে পাতাগুলো পড়ে গেল। তখন বললেন, হে সালমান! কেন এমন করলাম জানতে চাইবে না? আমি বললাম, কেন এমন করলেন? উত্তরে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, একজন মুসলমান যখন ভালোভাবে অজু করে এবং নামাজ আদায় করে তখন তার গুনাহগুলো এভাবেই ঝরে যায় যেমন এ পাতাগুলো ঝরে পড়লো। (মুসনাদে আহমাদ, নামাজ অধ্যায়, ০৯)

নামাজ আল্লাহর কাছে মাফ চাওয়ার সর্বোত্তম পদ্ধতিজ। নামাজের মাধ্যমে মাফ চাইলে আল্লাহ দ্রুত মাফ করেন। হযরত আবু বকর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছেন-

কারও কোনো পাপ হয়ে গেলে সে যদি ভালোভাবে অজু করে এবং দুই রাকাত নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে মাফ চায় আল্লাহ তাকে মাফ করে দেন। -(মুসনাদে আহমাদ, হাদীস, ২)

হজরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছেন-

(তোমাদের কী মনে হয়?) কারো বাড়ির পাশে যদি নদী থাকে আর সে তাতে প্রতিদিন পাঁচ বার গোসল করে, তার শরীরে কি কোনো ময়লা থাকবে? সাহাবায়ে কেরাম উত্তরে বললেন, না, তার শরীরে কোনো ময়লা অবশিষ্ট থাকবে না। নবীজী তখন বললেন- পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের দৃষ্টান্তও এমন। এর মাধ্যমে আল্লাহ (বান্দার) পাপসমূহ মুছে দেন। -(সহীহ মুসলিম, হাদীস ৬৬৭; সহীহ বুখারী, হাদীস ৫২৮)

আরেক হাদিসে হজরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেন-

পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, এক জুমা থেকে আরেক জুমা, এক রমজান থেকে আরেক রমজান এর মধ্যবর্তী সময়ের গুনাহকে মিটিয়ে দেয়; যদি ওই ব্যক্তি কবীরা গুনাহ থেকে বেঁচে থাকে (ওই ব্যক্তির যদি কবীরা গুনাহ না থাকে)। -(সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৩৩)

অর্থাৎ, কবীরা গুনাহ করলে সকল গুনাহের কাফফারা হবে না; বরং শুধু সগীরা গুনাহের কাফফারা হবে। কারণ, কবীরা গুনাহ তওবা ছাড়া মাফ হয় না (তেমনি বান্দার হকও; যা অন্য হাদীস থেকে বোঝা যায়)।

আরেক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, পাপ মোচনাকরী হল- নামাজেরর পর (আরেক নামাজেরর অপেক্ষায়) মসজিদে অবস্থান করা। পায়ে হেঁটে মসজিদে গমন এবং কষ্টের মুহূর্তে পরিপূর্ণভাবে অজু করা। -(জামে তিরমিজি, হাদিস ৩২৩৩)

আবু হুরায়রা রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- জামাতের নামাজ ঘরের বা বাজারের নামাজ অপেক্ষা পঁচিশ গুণ বেশি সওয়াব রাখে। কারণ, বান্দা যখন ভালোভাবে অজু করে এবং একমাত্র নামাজের উদ্দেশ্যেই ঘর থেকে বের হয় তো প্রতিটি কদমের বিনিময়ে আল্লাহ তার একটি করে মর্যাদা বৃদ্ধি করেন এবং একটি করে গুনাহ মাফ করে দেন। -(সহীহ বুখারী, হাদীস ৬৪৭)

আরেক হাদিসে হজরত উসমান ইবনে আফফান রা.এর আজাদকৃত গোলাম হারিস বর্ণনা করেছেন, একদিন হজরত উসমান ইবনে আফফান রা. আমাদের সামনে অজু করলেন এবং বললেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে এভাবে অজু করতে দেখেছি। তারপর তিনি ( রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছিলেন, যে আমার মতো এভাবে অজু করবে এরপর দাঁড়িয়ে জোহরের নামাজ আদায় করবে তার সকাল থেকে জোহর পর্যন্ত করা সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে। এরপর আসরের নামাজ পড়লে জোহর থেকে আসর পর্যন্ত করা সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে। এরপর মাগরিবের নামাজ আদায় করলে আসর থেকে মাগরিব পর্যন্ত করা সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে। এরপর এশার নামাজ আদায় করলে মাগরিব থেকে এশা পর্যন্ত করা সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে। এরপর হয়তো সে সারারাত এপাশ ওপাশ করে ঘুমাবে। তারপর ঘুম থেকে উঠে অজু করে সকালের নামাজ আদায় করলে এশা থেকে সকাল পর্যন্ত করা সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে। কারণ, এগুলো সৎ কাজ যা, পাপ মুছে দেয়। (মুসনাদে আহমাদ, ১১)

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

আজকের সূর্যোদয়

আজকের সূর্যোদয় প্রত্রিকায় আপনাদের স্বাগতম। ‍আমাদের নিউজ পড়ুন এবং বিজ্ঞাপন দিয়ে আমাদের পাশে থাকুন।

বরিশালে মুজিবিয়ানের ৮৭ নেতাকে খুঁজছে গোয়েন্দা সংস্থা

পাঁচ ওয়াক্ত নামাজে গুনাহ ঝরে যেভাবে

আপডেট সময় ০৩:২২:৪৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৫ অগাস্ট ২০২৩

নামাজ আল্লাহ তায়ালার মহান বিধান। পরকালে এবং দুনিয়াতে মানুষের করা পাপ থেকে মুক্তির মাধ্যম। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে বলেছেন, ‘তুমি সালাত কায়েম কর দিবসের দুই প্রান্তভাগে এবং রজনীর প্রথমাংশে। অবশ্যই নেক আমল পাপসমূহ মিটিয়ে দেয়। যারা উপদেশ গ্রহণ করে, এ তাদের জন্য এক উপদেশ। -(সূরা হূদ (১১), আয়াত, ১১৪)

হজরত আবু উসমান রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি সালমান ফারসী রা. এর সঙ্গে একটি গাছের নিচে ছিলাম। তিনি গাছের একটি শুকনো ডাল নিয়ে ঝাড়া দিলেন, এর কারণে গাছের পাতাগুলো ঝরে পড়লো। তারপর বললেন, হে আবু উসমান! আমি কেন এমন করলাম, জানতে চাইবেন না? আমি বললাম, কেন এমন করলেন?

তিনি বললেন, আমি একবার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে একটি গাছের নিচে ছিলাম, তখন তিনি সে গাছ থেকে একটি শুকনো ডাল নিলেন। তারপর তা ঝাড়া দিলেন, এতে পাতাগুলো পড়ে গেল। তখন বললেন, হে সালমান! কেন এমন করলাম জানতে চাইবে না? আমি বললাম, কেন এমন করলেন? উত্তরে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, একজন মুসলমান যখন ভালোভাবে অজু করে এবং নামাজ আদায় করে তখন তার গুনাহগুলো এভাবেই ঝরে যায় যেমন এ পাতাগুলো ঝরে পড়লো। (মুসনাদে আহমাদ, নামাজ অধ্যায়, ০৯)

নামাজ আল্লাহর কাছে মাফ চাওয়ার সর্বোত্তম পদ্ধতিজ। নামাজের মাধ্যমে মাফ চাইলে আল্লাহ দ্রুত মাফ করেন। হযরত আবু বকর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছেন-

কারও কোনো পাপ হয়ে গেলে সে যদি ভালোভাবে অজু করে এবং দুই রাকাত নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে মাফ চায় আল্লাহ তাকে মাফ করে দেন। -(মুসনাদে আহমাদ, হাদীস, ২)

হজরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছেন-

(তোমাদের কী মনে হয়?) কারো বাড়ির পাশে যদি নদী থাকে আর সে তাতে প্রতিদিন পাঁচ বার গোসল করে, তার শরীরে কি কোনো ময়লা থাকবে? সাহাবায়ে কেরাম উত্তরে বললেন, না, তার শরীরে কোনো ময়লা অবশিষ্ট থাকবে না। নবীজী তখন বললেন- পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের দৃষ্টান্তও এমন। এর মাধ্যমে আল্লাহ (বান্দার) পাপসমূহ মুছে দেন। -(সহীহ মুসলিম, হাদীস ৬৬৭; সহীহ বুখারী, হাদীস ৫২৮)

আরেক হাদিসে হজরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেন-

পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, এক জুমা থেকে আরেক জুমা, এক রমজান থেকে আরেক রমজান এর মধ্যবর্তী সময়ের গুনাহকে মিটিয়ে দেয়; যদি ওই ব্যক্তি কবীরা গুনাহ থেকে বেঁচে থাকে (ওই ব্যক্তির যদি কবীরা গুনাহ না থাকে)। -(সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৩৩)

অর্থাৎ, কবীরা গুনাহ করলে সকল গুনাহের কাফফারা হবে না; বরং শুধু সগীরা গুনাহের কাফফারা হবে। কারণ, কবীরা গুনাহ তওবা ছাড়া মাফ হয় না (তেমনি বান্দার হকও; যা অন্য হাদীস থেকে বোঝা যায়)।

আরেক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, পাপ মোচনাকরী হল- নামাজেরর পর (আরেক নামাজেরর অপেক্ষায়) মসজিদে অবস্থান করা। পায়ে হেঁটে মসজিদে গমন এবং কষ্টের মুহূর্তে পরিপূর্ণভাবে অজু করা। -(জামে তিরমিজি, হাদিস ৩২৩৩)

আবু হুরায়রা রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- জামাতের নামাজ ঘরের বা বাজারের নামাজ অপেক্ষা পঁচিশ গুণ বেশি সওয়াব রাখে। কারণ, বান্দা যখন ভালোভাবে অজু করে এবং একমাত্র নামাজের উদ্দেশ্যেই ঘর থেকে বের হয় তো প্রতিটি কদমের বিনিময়ে আল্লাহ তার একটি করে মর্যাদা বৃদ্ধি করেন এবং একটি করে গুনাহ মাফ করে দেন। -(সহীহ বুখারী, হাদীস ৬৪৭)

আরেক হাদিসে হজরত উসমান ইবনে আফফান রা.এর আজাদকৃত গোলাম হারিস বর্ণনা করেছেন, একদিন হজরত উসমান ইবনে আফফান রা. আমাদের সামনে অজু করলেন এবং বললেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে এভাবে অজু করতে দেখেছি। তারপর তিনি ( রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছিলেন, যে আমার মতো এভাবে অজু করবে এরপর দাঁড়িয়ে জোহরের নামাজ আদায় করবে তার সকাল থেকে জোহর পর্যন্ত করা সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে। এরপর আসরের নামাজ পড়লে জোহর থেকে আসর পর্যন্ত করা সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে। এরপর মাগরিবের নামাজ আদায় করলে আসর থেকে মাগরিব পর্যন্ত করা সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে। এরপর এশার নামাজ আদায় করলে মাগরিব থেকে এশা পর্যন্ত করা সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে। এরপর হয়তো সে সারারাত এপাশ ওপাশ করে ঘুমাবে। তারপর ঘুম থেকে উঠে অজু করে সকালের নামাজ আদায় করলে এশা থেকে সকাল পর্যন্ত করা সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে। কারণ, এগুলো সৎ কাজ যা, পাপ মুছে দেয়। (মুসনাদে আহমাদ, ১১)