পাবনায় চলতি মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে না থাকায় পেঁয়াজের ব্যাপক ফলন বিপর্যয় ঘটেছে। প্রতি বছর দ্বিগুণ লাভে পেঁয়াজ বিক্রি করায় এবার সকল প্রকার চাষ বন্ধ করে পেঁয়াজ চাষে ঝুঁকেছিলেন চাষিরা। কিন্তু বাজারে যে দামে বিক্রি হচ্ছে তা দিয়ে লাভ তো দূরের কথা উৎপাদন খরচও উঠছে না। ফলে পেঁয়াজের রাজধানী খ্যাত পাবনার চাষিদের চোখে অন্ধকার নেমে এসেছে।
কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, দেশের মোট পেঁয়াজের প্রায় ৩০ শতাংশই উৎপাদিত হয় পাবনাতে। কয়েক দশক ধরে পাবনায় পেঁয়াজের আবাদ বেড়েছে। পেঁয়াজের আবাদ এ অঞ্চলের কৃষি অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। তবে এ বছর পাবনায় ফলন বিপর্যয় ও পেঁয়াজের আশানুরূপ দাম না পাওয়ায় চরম হতাশার ঘোরে পড়েছেন পেঁয়াজ চাষিরা।
চাষিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, আবহাওয়া অনুকূলে না থাকায় এ বছর পেঁয়াজের ফলন বিপর্যয়ের পাশাপাশি দামও গত বছরের তুলনায় কম পাওয়া যাচ্ছে। ফলে নতুন পেঁয়াজ ঘরে উঠতে শুরু করলেও হতাশ হয়ে পড়েছেন দেশের বৃহত্তম পেঁয়াজ উৎপাদনকারী অঞ্চলের চাষিরা।
কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ বলছে, কিছু কিছু জায়গায় ফলন কম হওয়ার খবর পাওয়া গেলেও পেঁয়াজ কাটা শেষ না হওয়া পর্যন্ত কিছু বলা যাচ্ছে না।
পাবনার সুজানগর উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামের পেঁয়াজ চাষি কামরুজ্জামান বলেন, প্রতি বছরের মতো এ বছরও আমি ও আমার ভাই মিলে প্রায় ৮০ বিঘা জমিতে পেঁয়াজের আবাদ করেছি। আবাদ করা পেঁয়াজের বেশির ভাগই উচ্চফলনশীল জাতের। এক বিঘা পেঁয়াজ আবাদ করতে খরচ হয়েছে ৩০-৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত। গত বছর উচ্চ ফলনশীল জাতের পেঁয়াজ আবাদ করে এক বিঘা জমি থেকে ৮০-১০০ মণ পর্যন্ত ফলন পেয়েছিলাম। তবে এ বছর এখন পর্যন্ত ৮-১০ বিঘা জমির পেঁয়াজ কাটা শেষে ফলন হয়েছে ৫০-৫৫ মণ। আগাম জাতের পেঁয়াজের ফলন কম পাওয়ায় হতাশ তিনি। তিনি আরো জানান, গত সপ্তাহে নতুন পেঁয়াজ বাজারে নিয়ে ১১০০-১১৫০ টাকা মণ দরে এক শ’ মণ পেঁয়াজ বিক্রি করেছি। পরে লোকসানের আশঙ্কায় বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছি।
একই গ্রামের প্রান্তিক কৃষক আব্দুর রাজ্জাক প্রতি বিঘা ১৫ হাজার টাকা চুক্তিতে পাঁচ বিঘা জমি লিজ নিয়ে পেঁয়াজ চাষ করেছেন। কিন্তু তাকে এখন লোকসান গুনতে হচ্ছে। লিজ নেয়া জমিতে পেঁয়াজ চাষে বিঘাপ্রতি খরচ হয়েছে প্রায় ৪৫-৫০ হাজার টাকা। বিঘাপ্রতি মাত্র ৫৫-৬০ মণ ফলন হয়েছে। বর্তমান বাজার দরে পেঁয়াজ বিক্রি করে উৎপাদন খরচ তুলতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে। এ অবস্থায় ধার করে পেঁয়াজ চাষ করে ধারের টাকা পরিশোধ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন তারা।
পাবনার পুষ্পপাড়া পেঁয়াজের পাইকারি ব্যবসায়ী আব্দুল লতিফ জানান, কৃষকদের কাছ থেকে ১১০০ থেকে ১২০০ টাকা মণ দরে পেঁয়াজ কিনে ঢাকার পাইকারি বাজারে ১৩৫০ থেকে ১৪০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করছেন। তবে পরিবহন খরচ বেশি থাকায় পেঁয়াজের ব্যবসা করে লাভ পাওয়া যাচ্ছে না।
সুজানগর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা রাফিউল ইসলাম বলেন, এবার বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় পেঁয়াজের জমিতে অতিরিক্ত চাষ দিতে হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে না থাকায় কিছু কিছু স্থানে পেঁয়াজের ফলন কম পাওয়া যাচ্ছে বলে শোনা গেলেও পুরো পেঁয়াজ কাটা শেষ না হওয়া পর্যন্ত নিশ্চিত করে কিছু বলা যাবে না।
পাবনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উন্নয়ন কর্মকর্তা ইদ্রিস আলী বলেন, এ বছর পাবনায় প্রায় ৪৪ হাজার হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের আবাদ হয়েছে। উৎপাদনের টার্গেট ধরা হয়েছে প্রায় ৬ দশমিক ৯ লাখ মেট্রিক টন। ১৫ মার্চ থেকে পেঁয়াজ কাটা শুরু হয়েছে। এ পর্যন্ত ১০ শতাংশ জমিরও পেঁয়াজ কাটা শেষ হয়নি। পেঁয়াজ কাটা আরো প্রায় এক মাস পর্যন্ত চলবে। এখন পর্যন্ত যেসব জমির পেঁয়াজ কাটা হয়েছে সেসব স্থানে গত বছরের চেয়ে হেক্টরপ্রতি প্রায় অর্ধেক কম ফলন পাওয়া গেছে।
পাবনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বলেন, সরকার ইতোমধ্যে পেঁয়াজের আমদানি বন্ধ করেছে। ফলে পেঁয়াজের দাম নিয়ে এখনই হতাশ হওয়ার কিছু নেই। পেঁয়াজ কাটা কেবল শুরু হয়েছে। তাই কৃষকরা পরে ভালো দাম পাবেন।