ঢাকা , সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::

বরকত : মুমিনের প্রশান্তির উৎস

  • মুসলিহা তাফহীম
  • আপডেট সময় ০৯:৩১:২১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৩
  • ১৩৯০ বার পড়া হয়েছে

বরকত হলো কল্যাণের সমৃদ্ধি। কোনো বিষয়ের স্বাভাবিক প্রাপ্তি ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি হওয়াই হলো বরকত। বরকত আরবি শব্দ। বাংলা প্রতিশব্দ হিসেবে বলা যায়- প্রতুলতা, প্রাচুর্যতা ও প্রবৃদ্ধি। আল্লামা রাগিব ইস্পাহানি রহ: বলেন, বরকত বলা হয় ওই জিনিসকে যাতে মহান আল্লাহর কল্যাণ নিহিত থাকে।

মুমিন জীবন সব কাজে সর্বদা আল্লাহর কাছে বরকত কামনা করে থাকে। হাদিসে আমাদের প্রিয়নবী মুহাম্মদ সা: তাঁর উম্মতকে এ দোয়া শিখিয়ে দিয়েছেন, ‘এবং আমাকে তুমি যা দিয়েছ, তাতে বরকত দাও।’

আল্লাহ তায়ালা বলেছেন- ‘যদি জনপদগুলোর অধিবাসীরা ঈমান আনত ও তাকওয়া অবলম্বন করত, তাহলে আমি তাদের প্রতি আসমান ও জমিনের বরকতের দরজা খুলে দিতাম।’ (সূরা আ’রাফ) অর্থাৎ আসমান ও জমিনের সব সৃষ্টি ও বস্তুরাজির বরকত ঈমান ও তাকওয়ার ওপর নির্ভরশীল। ঈমান ও তাকওয়ার পথ অবলম্বন করলে আখিরাতের মুক্তির সাথে সাথে দুনিয়ার কল্যাণ ও বরকতও লাভ হয়।

বরকতের বিকাশ দুই রকম। কখনো মূল বস্তু প্রকৃতভাবেই বেড়ে যায়। যেমন- রাসূলুল্লাহ সা:-এর মুজেজাগুলোর মধ্যে রয়েছে- একটি সাধারণ পাত্রের পানি দিয়ে গোটা কাফেলার পরিতৃপ্ত হওয়া। কিংবা সামান্য খাদ্যদ্রব্যে বিরাট সমাবেশের পেটভরে আহারের জোগান হয়ে যাওয়া। আবার কোনো কোনো সময় মূল বস্তুতে বাহ্যত : কোনো বরকত বা প্রবৃদ্ধি যদিও হয় না, পরিমাণ যা ছিল তাই থেকে যায়, কিন্তু তার দ্বারা এত বেশি কাজ হয় যা এর চারগুণ বস্তুর দ্বারাও সাধারণত সম্ভব হয় না। তা ছাড়া সাধারণভাবেও দেখা যায় যে, কোনো একটি পাত্র, কাপড়-চোপড় কিংবা ঘরের অন্য কোনো আসবাবপত্র এমন বরকতময় হয় যে, মানুষ তাতে আজীবন উপকৃত হওয়ার পরও তা অক্ষত থেকে যায়। পক্ষান্তরে অনেক জিনিস তৈরি করার সময়ই ভেঙে বিনষ্ট হয়ে যায় কিংবা অটুট থাকলেও তার দ্বারা উপকার লাভের কোনো সুযোগ আসে না। অথবা উপকারে এলেও তাতে পরিপূর্ণ উপকৃত হওয়া সম্ভবপর হয়ে ওঠে না।

এই বরকত মানুষের ধন-সম্পদেও হতে পারে, মন মস্তিষ্কেও হতে পারে, আবার কাজ-কর্মেও হতে পারে। কোনো কোনো সময় মাত্র এক খাদ্যও মানুষের জন্য পূর্ণ শক্তি জোগানোর কারণ হয়। আবার কোনো কোনো সময় অতি উত্তম পুষ্টিকর খাদ্যদ্রব্য বা ওষুধও কোনো কাজে আসে না। তেমনিভাবে কোনো সময়ের মধ্যে বরকত হলে মাত্র এক ঘণ্টা সময়ে এত অধিক কাজ করা যায়, যা অন্য সময় চার ঘণ্টায়ও করা যায় না। বস্তুত এসব ক্ষেত্রে পরিমাণের দিক দিয়ে সম্পদ বা সময় বাড়ে না সত্য, কিন্তু এমনি বরকত তাতে প্রকাশ পায় যাতে কাজ হয় বহুগুণ বেশি। (মা’আরেফুল কুরআন)

তাই তো একজন মুমিন কখনো অস্থিরতা অনুভব করে না। প্রতিটি কাজে আল্লাহর দেয়া বরকতের অনুসন্ধান করতে থাকে। আর এ কাজে তাকে অনবরত শক্তি জোগাতে থাকে আল্লাহর প্রেরিত বরকতময় গ্রন্থ আল কুরআন।

ফাতহুল কাদির গ্রন্থে উল্লেখ আছে, বরকত মানে- ‘আল্লাহর দ্বীনের ওপর প্রতিষ্ঠিত রাখা।’ বরকত অর্থ- ‘সম্মান ও প্রতিপত্তি বৃদ্ধি’। বরকত অর্থ- ‘মানুষের জন্য কল্যাণকর হওয়া। বরকত মানে- কল্যাণের শিক্ষক। বরকত মানে- সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ।’

এক কথায় ঈমান ও তাকওয়া থাকলেই মুমিন জীবন পুরোটাই বরকতে ভরপুর, যা তাকে এমন এক প্রশান্তি দান করে যা অন্য কোনোভাবেই অর্জন করা সম্ভব নয়।
এ ছাড়াও একজন মুমিন তার প্রতিটি নামাজের প্রতি রাকাতে প্রিয়নবী মুহাম্মদ সা:-এর ওপর এবং তাঁর পরিবারের ওপর বরকত নাজিলের জন্য দোয়া করে থাকে।

আল্লাহ তায়ালা আমাদের সেসব মুমিন মুত্তাকি বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত করুন, যারা সদা সর্বদা আল্লাহর কাছে বরকতের কামনা করে থাকেন, যারা সব কাজে রবের দেয়া বরকত অনুভব করতে সক্ষম হন এবং সর্বোপরি যারা বরকতময় জীবনযাপন করেন।

লেখক : পিয়ারা বাগান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

আজকের সূর্যোদয়

আজকের সূর্যোদয় প্রত্রিকায় আপনাদের স্বাগতম। ‍আমাদের নিউজ পড়ুন এবং বিজ্ঞাপন দিয়ে আমাদের পাশে থাকুন।

বরিশালে মুজিবিয়ানের ৮৭ নেতাকে খুঁজছে গোয়েন্দা সংস্থা

বরকত : মুমিনের প্রশান্তির উৎস

আপডেট সময় ০৯:৩১:২১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৩

বরকত হলো কল্যাণের সমৃদ্ধি। কোনো বিষয়ের স্বাভাবিক প্রাপ্তি ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি হওয়াই হলো বরকত। বরকত আরবি শব্দ। বাংলা প্রতিশব্দ হিসেবে বলা যায়- প্রতুলতা, প্রাচুর্যতা ও প্রবৃদ্ধি। আল্লামা রাগিব ইস্পাহানি রহ: বলেন, বরকত বলা হয় ওই জিনিসকে যাতে মহান আল্লাহর কল্যাণ নিহিত থাকে।

মুমিন জীবন সব কাজে সর্বদা আল্লাহর কাছে বরকত কামনা করে থাকে। হাদিসে আমাদের প্রিয়নবী মুহাম্মদ সা: তাঁর উম্মতকে এ দোয়া শিখিয়ে দিয়েছেন, ‘এবং আমাকে তুমি যা দিয়েছ, তাতে বরকত দাও।’

আল্লাহ তায়ালা বলেছেন- ‘যদি জনপদগুলোর অধিবাসীরা ঈমান আনত ও তাকওয়া অবলম্বন করত, তাহলে আমি তাদের প্রতি আসমান ও জমিনের বরকতের দরজা খুলে দিতাম।’ (সূরা আ’রাফ) অর্থাৎ আসমান ও জমিনের সব সৃষ্টি ও বস্তুরাজির বরকত ঈমান ও তাকওয়ার ওপর নির্ভরশীল। ঈমান ও তাকওয়ার পথ অবলম্বন করলে আখিরাতের মুক্তির সাথে সাথে দুনিয়ার কল্যাণ ও বরকতও লাভ হয়।

বরকতের বিকাশ দুই রকম। কখনো মূল বস্তু প্রকৃতভাবেই বেড়ে যায়। যেমন- রাসূলুল্লাহ সা:-এর মুজেজাগুলোর মধ্যে রয়েছে- একটি সাধারণ পাত্রের পানি দিয়ে গোটা কাফেলার পরিতৃপ্ত হওয়া। কিংবা সামান্য খাদ্যদ্রব্যে বিরাট সমাবেশের পেটভরে আহারের জোগান হয়ে যাওয়া। আবার কোনো কোনো সময় মূল বস্তুতে বাহ্যত : কোনো বরকত বা প্রবৃদ্ধি যদিও হয় না, পরিমাণ যা ছিল তাই থেকে যায়, কিন্তু তার দ্বারা এত বেশি কাজ হয় যা এর চারগুণ বস্তুর দ্বারাও সাধারণত সম্ভব হয় না। তা ছাড়া সাধারণভাবেও দেখা যায় যে, কোনো একটি পাত্র, কাপড়-চোপড় কিংবা ঘরের অন্য কোনো আসবাবপত্র এমন বরকতময় হয় যে, মানুষ তাতে আজীবন উপকৃত হওয়ার পরও তা অক্ষত থেকে যায়। পক্ষান্তরে অনেক জিনিস তৈরি করার সময়ই ভেঙে বিনষ্ট হয়ে যায় কিংবা অটুট থাকলেও তার দ্বারা উপকার লাভের কোনো সুযোগ আসে না। অথবা উপকারে এলেও তাতে পরিপূর্ণ উপকৃত হওয়া সম্ভবপর হয়ে ওঠে না।

এই বরকত মানুষের ধন-সম্পদেও হতে পারে, মন মস্তিষ্কেও হতে পারে, আবার কাজ-কর্মেও হতে পারে। কোনো কোনো সময় মাত্র এক খাদ্যও মানুষের জন্য পূর্ণ শক্তি জোগানোর কারণ হয়। আবার কোনো কোনো সময় অতি উত্তম পুষ্টিকর খাদ্যদ্রব্য বা ওষুধও কোনো কাজে আসে না। তেমনিভাবে কোনো সময়ের মধ্যে বরকত হলে মাত্র এক ঘণ্টা সময়ে এত অধিক কাজ করা যায়, যা অন্য সময় চার ঘণ্টায়ও করা যায় না। বস্তুত এসব ক্ষেত্রে পরিমাণের দিক দিয়ে সম্পদ বা সময় বাড়ে না সত্য, কিন্তু এমনি বরকত তাতে প্রকাশ পায় যাতে কাজ হয় বহুগুণ বেশি। (মা’আরেফুল কুরআন)

তাই তো একজন মুমিন কখনো অস্থিরতা অনুভব করে না। প্রতিটি কাজে আল্লাহর দেয়া বরকতের অনুসন্ধান করতে থাকে। আর এ কাজে তাকে অনবরত শক্তি জোগাতে থাকে আল্লাহর প্রেরিত বরকতময় গ্রন্থ আল কুরআন।

ফাতহুল কাদির গ্রন্থে উল্লেখ আছে, বরকত মানে- ‘আল্লাহর দ্বীনের ওপর প্রতিষ্ঠিত রাখা।’ বরকত অর্থ- ‘সম্মান ও প্রতিপত্তি বৃদ্ধি’। বরকত অর্থ- ‘মানুষের জন্য কল্যাণকর হওয়া। বরকত মানে- কল্যাণের শিক্ষক। বরকত মানে- সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ।’

এক কথায় ঈমান ও তাকওয়া থাকলেই মুমিন জীবন পুরোটাই বরকতে ভরপুর, যা তাকে এমন এক প্রশান্তি দান করে যা অন্য কোনোভাবেই অর্জন করা সম্ভব নয়।
এ ছাড়াও একজন মুমিন তার প্রতিটি নামাজের প্রতি রাকাতে প্রিয়নবী মুহাম্মদ সা:-এর ওপর এবং তাঁর পরিবারের ওপর বরকত নাজিলের জন্য দোয়া করে থাকে।

আল্লাহ তায়ালা আমাদের সেসব মুমিন মুত্তাকি বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত করুন, যারা সদা সর্বদা আল্লাহর কাছে বরকতের কামনা করে থাকেন, যারা সব কাজে রবের দেয়া বরকত অনুভব করতে সক্ষম হন এবং সর্বোপরি যারা বরকতময় জীবনযাপন করেন।

লেখক : পিয়ারা বাগান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে