ঢাকা , মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::

বিচারপতিদের অপসারণের ষোড়শ সংশোধনী ঘিরে যা যা হয়েছিল

  • সূর্যোদয় ডেস্ক:
  • আপডেট সময় ১২:২৭:১৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১১ জুলাই ২০২৪
  • ১০৯৭ বার পড়া হয়েছে

বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা জাতীয় সংসদের কাছে ফিরিয়ে নিয়ে সংবিধানে ষোড়শ সংশোধনী আনা হয় ২০১৪ সালে। পরবর্তীতে আদালত পর্যন্ত গড়ালে প্রথমে হাইকোর্ট এবং পরে আপিল বিভাগ এ সংশোধনীকে অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেয়।

সেই রায়ে দেয়া কিছু পর্যবেক্ষণের জের ধরে পরবর্তীতে প্রধান বিচারপতির সাথে সরকারের টানাপোড়েনে সৃষ্টি হয়েছিল। পরবর্তীতে ছুটিতে থাকা অবস্থায় সিঙ্গাপুর থেকে অবসরের চিঠি পাঠিয়েছিলেন তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা।

পরবর্তীতে বিদেশে থেকে লেখা একটি বইয়ে তিনি দাবি করেন, রায়ের পর ‘সরকারের চাপের মুখে তিনি দেশ ছাড়তে বাধ্য’ হয়েছিলেন। যদিও তার সেসব দাবিকে ‘মনগড়া’ বলে আওয়ামী লীগের নেতারা দাবি করেছিলেন।

২০১৭ সালে আপিল বিভাগের দেয়া ওই রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে সরকারের করা আবেদনের শুনানি হবে ১১ জুলাই।

উচ্চ আদালতের বিচারকদের অপসারণ-সংক্রান্ত এই সংশোধনী এবং রায়কে ঘিরে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গন এবং আইনাঙ্গনে সেই সময় অনেক নাটকীয় ঘটনা তৈরি হয়েছিল।

সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর প্রেক্ষাপট
বাংলাদেশের প্রথম সংবিধানে বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতেই ছিল। ১৯৭৫ সালে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ব্যবস্থা চালু হলে বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের কাছ থেকে সরিয়ে চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির হাতে নেয়া হয়।

কিন্তু পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের শাসনকালে সংবিধানে পঞ্চম সংশোধনী এনে সে ক্ষমতা দেয়া হয়েছিল সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের হাতে। যার প্রধান হবেন প্রধান বিচারপতি।

উচ্চ আদালতের কোনো বিচারপতি যদি সংবিধান লঙ্ঘন করেন কিংবা অসদাচরণের দায়ে অভিযুক্ত হন, তাহলে তাকে কিভাবে অপসারণ করা হবে এ বিষয়ে ২০১৪ সালে আবার সংবিধানে সংশোধন করা হয়।

তখন এ ষোড়শ সংশোধনীতে বলা হয় বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা জাতীয় সংসদের হাতে থাকবে। সংসদে এ সংক্রান্ত বিল পাসের পর ওই বছর সেপ্টেম্বরেই গেজেট প্রকাশ করে সরকার।

সংবিধানের এই সংশোধনীর তীব্র বিরোধিতা করে ওই সময় বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বিরোধী দল বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং আইনজীবীদের বিভিন্ন সংগঠন।

সরকার এর মাধ্যমে বিচার বিভাগের ওপর রাজনৈতিক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে বলে ওই সময় তারা অভিযোগ করে।

যদিও আইনমন্ত্রী আনিসুল হক তখন বলেছিলেন, বিচারপতিদের অভিশংসনের ক্ষমতা সংসদের হাতে গেলেও তারা কোনো বিচারকের রায় পছন্দ না হলেই তাকে সরিয়ে দিতে পারবেন, ব্যাপারটা সেরকম নয়।

বিচারকের বিরুদ্ধে অসদাচরণ এবং অযোগ্যতার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকতে হবে। আর এই অভিযোগ যাচাই করবে একটি পৃথক স্বাধীন সংস্থা। সুতরাং এখানে এই ক্ষমতার অপপ্রয়োগের সুযোগ নেই বলে তখন দাবি করেছিলেন আইনমন্ত্রী।

যা হয়েছে হাইকোর্টে
পরে ২০১৪ সালের নভেম্বরেই এ সংশোধনীকে চ্যালেঞ্জ করে নয়জন আইনজীবী হাইকোর্টে রিট করে।

বিচারপতি অপসারণ করার ক্ষমতা জাতীয় সংসদের হাতে ফিরিয়ে দিয়ে যে ষোড়শ সংশোধনী আনা হয়, সেটি কেন বাতিল করা হবে না তা জানতে চেয়ে ৯ নভেম্বর সরকারের প্রতি রুল জারি করে হাইকোর্ট।

এই রুল শুনানির জন্য হাইকোর্টের তিন বিচারপতির বিশেষ ও বৃহত্তম বেঞ্চ গঠন করে দেয়া হয়।

এই রিটের শুনানিতে অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে আদালতে পাঁচজন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আদালতে নিজেদের মতামত তুলে ধরেন।

এরা হলেন ড. কামাল হোসেন, ব্যারিস্টার এম আমীর উল ইসলাম, ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ, আজমালুল হোসেন কেসি এবং প্রবীর নিয়োগী।

২০১৬ সালের ৫ মে এই বিশেষ বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে ষোড়শ সংশোধনীকে অবৈধ ও সংবিধান পরিপন্থী ঘোষণা করে রায় দেয়।

তিনজন বিচারপতির মধ্যে দু’জন এই সংশোধনীটিকে অবৈধ ঘোষণার পক্ষে মত দেন। অপর আরেকজন বিচারপতি ষোড়শ সংশোধনীর পক্ষে মত দেন।

ওই বছরের ১১ আগস্ট সুপ্রিমকোর্টের ওয়েবসাইটে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করা হয়।

আপিল বিভাগে সরকার
হাইকোর্টের এ রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করে। পরের মাসে আপিল বিভাগ এই মামলায় জ্যেষ্ঠ আইনজীবীদের মতামত শুনতে অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে ১০ জন আইনজীবীকেকে নিয়োগ দেয়।

বিভিন্ন জটিল আইনি বিষয় ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করে আদালতকে যারা সাহায্য করেন তাদের অ্যামিকাস কিউরি বলা হয়।

এই ১০ জন অ্যামিকাস কিউরির মধ্যে নয়জনই বক্তব্য দিয়েছেন বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে থাকা উচিত নয়। শুধুমাত্র আজমালুল হোসেন কেসি জাতীয় সংসদের হাতে এই ক্ষমতা থাকার পক্ষে মত দেন।

৮ মে আপিল শুনানি শুরু হয়। আপিল বিভাগে ১১ দিন এ মামলার শুনানি হয়।

পরে একই বছরের ৩ জুলাই তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাসহ সাত বিচারপতির আপিল বেঞ্চ ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেয়া রায় বহাল রাখে।

সর্বোচ্চ আদালতের দেয়া এ রায়ে তখনকার অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম হতাশা প্রকাশ করেছিলেন।

তিনি বলেছিলেন, ‘এ সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের বিষয়টা একমাত্র পাকিস্তান এবং আমাদের দেশে সামরিক সরকার এসে জিয়াউর রহমানের আমলে সংবিধান অন্যায়ভাবে সংশোধন করে যোগ ছিল। আমরা সংবিধান থেকে সামরিক শাসকরা যেগুলো করেছিল সেগুলো মুছে ফেলতে চাই।’

রায়ের পর রিটকারীদের আইনজীবী মনজিল মোরশেদ সন্তোষ প্রকাশ করেন।

পরে ১ আগস্ট পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করে সুপ্রিম কোর্ট।

রায় ও পর্যবেক্ষণ নিয়ে অসন্তোষ
ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে সাত বিচারপতি এ রায় দেন। ৭৯৯ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ এ রায় নিয়ে সরকারের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ দেখা দেয়।

কারণ তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা রায়ে নিজের পর্যবেক্ষণের যে অংশ লিখেছিলেন, তাতে মুক্তিযুদ্ধ, দেশের রাজনীতি, গণতন্ত্র, সামরিক শাসন, নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি, সুশাসন এবং বিচার বিভাগের স্বাধীনতাসহ বিভিন্ন বিষয়ে সমালোচনা করেন।

এই পর্যবেক্ষণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘খাটো করা হয়েছে’ এমন অভিযোগ তুলে সিনহার পদত্যাগ দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের মন্ত্রী, অনেক নেতা-কর্মী এবং আইনজীবীরা। জাতীয় সংসদেও সমালোচনা করা হয় সে সময়কার প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার।

রায়ের এসব পর্যবেক্ষণ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীও সিনহার সমালোচনা করেন। অন্যদিকে, বিএনপি এই রায়কে স্বাগত জানায়।

এ রায়কে ঘিরে ওই সময় প্রধান বিচারপতি এবং সরকারের মধ্যে বিভেদ সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে।

পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের ১০ দিনের মাথায় ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন করে সরকারের অবস্থান তুলে ধরেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।

তখন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলছিলেন, রায়ে অপ্রাসঙ্গিক এবং রাজনৈতিক অনেক বক্তব্য এসেছে। তারা আইনগতভাবে এর মোকাবেলা করবেন। দ্বিমত থাকলেও রায়ের প্রতি তারা শ্রদ্ধাশীল বলে জানান তখন।

রাজনৈতিক প্রশ্ন আদালতের বিচার্য বিষয় হতে পারে না বলে মন্তব্য করেছিলেন আইনমন্ত্রী।

তিনি বলেছিলেন, ‘মাননীয় প্রধান বিচারপতি রায়ে জাতীয় সংসদ সম্পর্কে কটূক্তি করেছেন এবং এই প্রতিষ্ঠানকে হেয় করেছেন। আমরা এই বক্তব্যে দুঃখিত। তিনি রায়ে আরেক জায়গায় উল্লেখ করেছেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা কোনো একক ব্যক্তির কারণে হয়নি। আমি তার এই বক্তব্যে মর্মাহত।’

আপিল বিভাগের এই রায়ে পর্যবেক্ষণগুলোই সরকারকে বেশি সংক্ষুব্ধ করেছে।

সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদে নিম্ন আদালতের বিচারকদের শৃঙ্খলা বা আচরণবিধির বিষয় রাষ্ট্রপতির হাতে রাখা হয়েছে।

সুপ্রিমকোর্টের কাছে এই দায়িত্ব পুরোপুরি হস্তান্তরের জন্য আচরণবিধি তৈরির প্রশ্নে সরকার আপিল বিভাগ থেকে দফায় দফায় সময় নেয়। এই অনুচ্ছেদ নিয়েই আপিল বিভাগের পর্যবেক্ষণকে আইনমন্ত্রী ‘বিদ্বেষতাড়িত’ বলে মন্তব্য করেছেন।

রায় পুনর্বিবেচনার সিদ্ধান্ত সরকারের
আপিল বিভাগের রায়ের পর ১৩ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদে প্রস্তাব পাস করা হয়, যাতে রায়ের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপের আহ্বান জানানো হয়।

পরে একই বছরের ডিসেম্বরে সর্বোচ্চ আদালতের রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ।

এস কে সিনহার দেশত্যাগ ও পদত্যাগ
সরকারের সাথে তীব্র বিভেদ তৈরির এমন প্রেক্ষাপটে ৩ অক্টোবর ছুটিতে যান সিনহা। পরে ১৩ অক্টোবর রাতে দেশ ছাড়েন তিনি।

১১ নভেম্বর সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশ হাইকমিশনে পদত্যাগপত্র জমা দেন প্রধান বিচারপতি।

পরের বছর ‘এ ব্রোকেন ড্রিম: রুল অব ল, হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড ডেমোক্রেসি’ নামে সিনহা একটি আত্মজীবনীমূলক বই প্রকাশ করেন।

এই বইতে সিনহা সবিস্তারে বর্ণনা করেছেন কোন পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের সাথে তার বিরোধ তৈরি হয়েছিল এবং কীভাবে তাকে দেশত্যাগে বাধ্য করা হয়, তারপর কেন তিনি প্রধান বিচারপতির পদ থেকে পদত্যাগে বাধ্য হন।

তিনি দাবি করেন, বাংলাদেশের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআইয়ের হুমকি ও ভীতি প্রদর্শনের মুখে তিনি দেশে ছেড়েছেন।

বিচারপতি সিনহা লিখেছেন, বাংলাদেশের সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়টি যেন সরকারের পক্ষে যায়, সেজন্যে তার ওপর সরকারের সর্বোচ্চ মহল থেকে চাপ তৈরি করা হয়েছিল।

এই বইয়ে সিনহা লেখেন, ‘আমি আশা করছিলাম যে আমার প্রত্যক্ষ অনুপস্থিতি এবং আদালতের নিয়মিত ছুটি- এ দু’টি মিলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে সহায়ক হবে এবং শুভবুদ্ধির উদয় হবে, সরকার ওই রায়ের যে মর্মবস্তু- অর্থাৎ বিচার বিভাগের স্বাধীনতা যে জাতি ও রাষ্ট্রের জন্য কল্যাণকর- তা বুঝতে পারবে।’

তিনি লেখেন, ‘শেষ পর্যন্ত দেশের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা- যার নাম ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্স- তাদের ভীতি প্রদর্শন এবং আমার পরিবারের প্রতি হুমকির সম্মুখীন হয়ে আমি বিদেশ থেকে আমার পদত্যাগপত্র জমা দেই।’

ওই সময় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে একটি অনুষ্ঠানে বইটি নিয়ে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জবাবে বলেন, ‘ক্ষমতা হারানোর জ্বালা থেকে বিচারপতি এস কে সিনহা বই লিখে মনগড়া কথা বলছেন। ক্ষমতায় যখন কেউ থাকে না, তখন অনেক অন্তর্জ্বালা বেদনা থাকে। এই অন্তর্জ্বালা থেকে অনেকে অনেক কথা বলেন। বিদেশে বসে যারা এরকম কথা বলে, সেটা নিয়ে কোনো কথা বলার প্রয়োজন আছে বলে আমরা মনে করি না।’

তিনি আরো বলেন, ‘উনি প্রধান বিচারপতি থাকা অবস্থায়, এখন যা বলছেন বইতে, সেটা বলার সাহস কেন একজন বিচারপতির থাকে না- এটা নৈতিকতার প্রশ্ন।’

যেসব যুক্তিতে রিভিউ আবেদন সরকারের
রায়ের পর্যবেক্ষণে সিনহা জাতির জনকের স্থানে ‘ফাউন্ডিং ফাদারস’ অর্থাৎ বহুবচন লিখেছেন। এই বিষয়টি পুনর্বিবেচনার আবেদন করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানই বাংলাদেশের একমাত্র জাতির জনক বলে আবেদনে উল্লেখ করেছে তারা।

এই রায়ে ‘আমিত্ব’ ও ‘আমরাত্ব’ ধারণা থেকে মুক্তি পেতে হবে বলে পর্যবেক্ষণ দেয়া হয়েছে। এ বিষয়টি রিভিউ চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ আবেদনে বলেছে, আদালতের এই পর্যবেক্ষণ ভিত্তিহীন। এই মামলার বিবেচ্য বিষয় নয় এটি।

বাংলাদেশের নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে দেয়া পর্যবেক্ষণের পুনর্বিবেচনা চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ আবেদনে বলেছে, এ বিষয়টি আদালতের বিচার্য বিষয় নয়। উচ্চ আদালত বিচারিক শিষ্টাচারের বাইরে গিয়ে এই পর্যবেক্ষণ দিয়েছে।

সংসদীয় গণতন্ত্রের পর্যবেক্ষণের বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষ পুনর্বিবেচনার আবেদনে যুক্তি তুলে ধরে বলেছে, বিচারিক এখতিয়ারের বাইরে গিয়ে আদালত এ মন্তব্য করেছে।

সর্বোচ্চ আদালত রায় পুনর্বিবেচনা করবে বলে আশাপ্রকাশ করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন।

এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, ‘যেসব গ্রাউন্ডে আমরা রিভিউ চেয়েছি সেগুলোর স্বপক্ষে আদালতে আমাদের বক্তব্য তুলে ধরবো। আমরা ইতিবাচক ফলাফল পাবো আশা করছি।’

তবে হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগের রায়ের মতো রিভিউ আবেদনেও আগের রায় বহাল থাকবে বলেই আশা করছেন রিটকারিদের আইনজীবী মনজিল মোরশেদ।

তিনি বলেন, ‘হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগেও এর আগে আমরা জিতেছি। ফলে সবশেষ ধাপ রিভিউতেও আমাদের পক্ষে রায় আসবে বলে আশা করি।’
সূত্র : বিবিসি

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

আজকের সূর্যোদয়

আজকের সূর্যোদয় প্রত্রিকায় আপনাদের স্বাগতম। ‍আমাদের নিউজ পড়ুন এবং বিজ্ঞাপন দিয়ে আমাদের পাশে থাকুন।

বরিশালে মুজিবিয়ানের ৮৭ নেতাকে খুঁজছে গোয়েন্দা সংস্থা

বিচারপতিদের অপসারণের ষোড়শ সংশোধনী ঘিরে যা যা হয়েছিল

আপডেট সময় ১২:২৭:১৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১১ জুলাই ২০২৪

বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা জাতীয় সংসদের কাছে ফিরিয়ে নিয়ে সংবিধানে ষোড়শ সংশোধনী আনা হয় ২০১৪ সালে। পরবর্তীতে আদালত পর্যন্ত গড়ালে প্রথমে হাইকোর্ট এবং পরে আপিল বিভাগ এ সংশোধনীকে অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেয়।

সেই রায়ে দেয়া কিছু পর্যবেক্ষণের জের ধরে পরবর্তীতে প্রধান বিচারপতির সাথে সরকারের টানাপোড়েনে সৃষ্টি হয়েছিল। পরবর্তীতে ছুটিতে থাকা অবস্থায় সিঙ্গাপুর থেকে অবসরের চিঠি পাঠিয়েছিলেন তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা।

পরবর্তীতে বিদেশে থেকে লেখা একটি বইয়ে তিনি দাবি করেন, রায়ের পর ‘সরকারের চাপের মুখে তিনি দেশ ছাড়তে বাধ্য’ হয়েছিলেন। যদিও তার সেসব দাবিকে ‘মনগড়া’ বলে আওয়ামী লীগের নেতারা দাবি করেছিলেন।

২০১৭ সালে আপিল বিভাগের দেয়া ওই রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে সরকারের করা আবেদনের শুনানি হবে ১১ জুলাই।

উচ্চ আদালতের বিচারকদের অপসারণ-সংক্রান্ত এই সংশোধনী এবং রায়কে ঘিরে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গন এবং আইনাঙ্গনে সেই সময় অনেক নাটকীয় ঘটনা তৈরি হয়েছিল।

সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর প্রেক্ষাপট
বাংলাদেশের প্রথম সংবিধানে বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতেই ছিল। ১৯৭৫ সালে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ব্যবস্থা চালু হলে বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের কাছ থেকে সরিয়ে চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির হাতে নেয়া হয়।

কিন্তু পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের শাসনকালে সংবিধানে পঞ্চম সংশোধনী এনে সে ক্ষমতা দেয়া হয়েছিল সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের হাতে। যার প্রধান হবেন প্রধান বিচারপতি।

উচ্চ আদালতের কোনো বিচারপতি যদি সংবিধান লঙ্ঘন করেন কিংবা অসদাচরণের দায়ে অভিযুক্ত হন, তাহলে তাকে কিভাবে অপসারণ করা হবে এ বিষয়ে ২০১৪ সালে আবার সংবিধানে সংশোধন করা হয়।

তখন এ ষোড়শ সংশোধনীতে বলা হয় বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা জাতীয় সংসদের হাতে থাকবে। সংসদে এ সংক্রান্ত বিল পাসের পর ওই বছর সেপ্টেম্বরেই গেজেট প্রকাশ করে সরকার।

সংবিধানের এই সংশোধনীর তীব্র বিরোধিতা করে ওই সময় বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বিরোধী দল বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং আইনজীবীদের বিভিন্ন সংগঠন।

সরকার এর মাধ্যমে বিচার বিভাগের ওপর রাজনৈতিক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে বলে ওই সময় তারা অভিযোগ করে।

যদিও আইনমন্ত্রী আনিসুল হক তখন বলেছিলেন, বিচারপতিদের অভিশংসনের ক্ষমতা সংসদের হাতে গেলেও তারা কোনো বিচারকের রায় পছন্দ না হলেই তাকে সরিয়ে দিতে পারবেন, ব্যাপারটা সেরকম নয়।

বিচারকের বিরুদ্ধে অসদাচরণ এবং অযোগ্যতার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকতে হবে। আর এই অভিযোগ যাচাই করবে একটি পৃথক স্বাধীন সংস্থা। সুতরাং এখানে এই ক্ষমতার অপপ্রয়োগের সুযোগ নেই বলে তখন দাবি করেছিলেন আইনমন্ত্রী।

যা হয়েছে হাইকোর্টে
পরে ২০১৪ সালের নভেম্বরেই এ সংশোধনীকে চ্যালেঞ্জ করে নয়জন আইনজীবী হাইকোর্টে রিট করে।

বিচারপতি অপসারণ করার ক্ষমতা জাতীয় সংসদের হাতে ফিরিয়ে দিয়ে যে ষোড়শ সংশোধনী আনা হয়, সেটি কেন বাতিল করা হবে না তা জানতে চেয়ে ৯ নভেম্বর সরকারের প্রতি রুল জারি করে হাইকোর্ট।

এই রুল শুনানির জন্য হাইকোর্টের তিন বিচারপতির বিশেষ ও বৃহত্তম বেঞ্চ গঠন করে দেয়া হয়।

এই রিটের শুনানিতে অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে আদালতে পাঁচজন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আদালতে নিজেদের মতামত তুলে ধরেন।

এরা হলেন ড. কামাল হোসেন, ব্যারিস্টার এম আমীর উল ইসলাম, ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ, আজমালুল হোসেন কেসি এবং প্রবীর নিয়োগী।

২০১৬ সালের ৫ মে এই বিশেষ বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে ষোড়শ সংশোধনীকে অবৈধ ও সংবিধান পরিপন্থী ঘোষণা করে রায় দেয়।

তিনজন বিচারপতির মধ্যে দু’জন এই সংশোধনীটিকে অবৈধ ঘোষণার পক্ষে মত দেন। অপর আরেকজন বিচারপতি ষোড়শ সংশোধনীর পক্ষে মত দেন।

ওই বছরের ১১ আগস্ট সুপ্রিমকোর্টের ওয়েবসাইটে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করা হয়।

আপিল বিভাগে সরকার
হাইকোর্টের এ রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করে। পরের মাসে আপিল বিভাগ এই মামলায় জ্যেষ্ঠ আইনজীবীদের মতামত শুনতে অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে ১০ জন আইনজীবীকেকে নিয়োগ দেয়।

বিভিন্ন জটিল আইনি বিষয় ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করে আদালতকে যারা সাহায্য করেন তাদের অ্যামিকাস কিউরি বলা হয়।

এই ১০ জন অ্যামিকাস কিউরির মধ্যে নয়জনই বক্তব্য দিয়েছেন বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে থাকা উচিত নয়। শুধুমাত্র আজমালুল হোসেন কেসি জাতীয় সংসদের হাতে এই ক্ষমতা থাকার পক্ষে মত দেন।

৮ মে আপিল শুনানি শুরু হয়। আপিল বিভাগে ১১ দিন এ মামলার শুনানি হয়।

পরে একই বছরের ৩ জুলাই তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাসহ সাত বিচারপতির আপিল বেঞ্চ ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেয়া রায় বহাল রাখে।

সর্বোচ্চ আদালতের দেয়া এ রায়ে তখনকার অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম হতাশা প্রকাশ করেছিলেন।

তিনি বলেছিলেন, ‘এ সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের বিষয়টা একমাত্র পাকিস্তান এবং আমাদের দেশে সামরিক সরকার এসে জিয়াউর রহমানের আমলে সংবিধান অন্যায়ভাবে সংশোধন করে যোগ ছিল। আমরা সংবিধান থেকে সামরিক শাসকরা যেগুলো করেছিল সেগুলো মুছে ফেলতে চাই।’

রায়ের পর রিটকারীদের আইনজীবী মনজিল মোরশেদ সন্তোষ প্রকাশ করেন।

পরে ১ আগস্ট পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করে সুপ্রিম কোর্ট।

রায় ও পর্যবেক্ষণ নিয়ে অসন্তোষ
ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে সাত বিচারপতি এ রায় দেন। ৭৯৯ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ এ রায় নিয়ে সরকারের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ দেখা দেয়।

কারণ তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা রায়ে নিজের পর্যবেক্ষণের যে অংশ লিখেছিলেন, তাতে মুক্তিযুদ্ধ, দেশের রাজনীতি, গণতন্ত্র, সামরিক শাসন, নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি, সুশাসন এবং বিচার বিভাগের স্বাধীনতাসহ বিভিন্ন বিষয়ে সমালোচনা করেন।

এই পর্যবেক্ষণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘খাটো করা হয়েছে’ এমন অভিযোগ তুলে সিনহার পদত্যাগ দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের মন্ত্রী, অনেক নেতা-কর্মী এবং আইনজীবীরা। জাতীয় সংসদেও সমালোচনা করা হয় সে সময়কার প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার।

রায়ের এসব পর্যবেক্ষণ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীও সিনহার সমালোচনা করেন। অন্যদিকে, বিএনপি এই রায়কে স্বাগত জানায়।

এ রায়কে ঘিরে ওই সময় প্রধান বিচারপতি এবং সরকারের মধ্যে বিভেদ সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে।

পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের ১০ দিনের মাথায় ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন করে সরকারের অবস্থান তুলে ধরেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।

তখন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলছিলেন, রায়ে অপ্রাসঙ্গিক এবং রাজনৈতিক অনেক বক্তব্য এসেছে। তারা আইনগতভাবে এর মোকাবেলা করবেন। দ্বিমত থাকলেও রায়ের প্রতি তারা শ্রদ্ধাশীল বলে জানান তখন।

রাজনৈতিক প্রশ্ন আদালতের বিচার্য বিষয় হতে পারে না বলে মন্তব্য করেছিলেন আইনমন্ত্রী।

তিনি বলেছিলেন, ‘মাননীয় প্রধান বিচারপতি রায়ে জাতীয় সংসদ সম্পর্কে কটূক্তি করেছেন এবং এই প্রতিষ্ঠানকে হেয় করেছেন। আমরা এই বক্তব্যে দুঃখিত। তিনি রায়ে আরেক জায়গায় উল্লেখ করেছেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা কোনো একক ব্যক্তির কারণে হয়নি। আমি তার এই বক্তব্যে মর্মাহত।’

আপিল বিভাগের এই রায়ে পর্যবেক্ষণগুলোই সরকারকে বেশি সংক্ষুব্ধ করেছে।

সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদে নিম্ন আদালতের বিচারকদের শৃঙ্খলা বা আচরণবিধির বিষয় রাষ্ট্রপতির হাতে রাখা হয়েছে।

সুপ্রিমকোর্টের কাছে এই দায়িত্ব পুরোপুরি হস্তান্তরের জন্য আচরণবিধি তৈরির প্রশ্নে সরকার আপিল বিভাগ থেকে দফায় দফায় সময় নেয়। এই অনুচ্ছেদ নিয়েই আপিল বিভাগের পর্যবেক্ষণকে আইনমন্ত্রী ‘বিদ্বেষতাড়িত’ বলে মন্তব্য করেছেন।

রায় পুনর্বিবেচনার সিদ্ধান্ত সরকারের
আপিল বিভাগের রায়ের পর ১৩ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদে প্রস্তাব পাস করা হয়, যাতে রায়ের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপের আহ্বান জানানো হয়।

পরে একই বছরের ডিসেম্বরে সর্বোচ্চ আদালতের রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ।

এস কে সিনহার দেশত্যাগ ও পদত্যাগ
সরকারের সাথে তীব্র বিভেদ তৈরির এমন প্রেক্ষাপটে ৩ অক্টোবর ছুটিতে যান সিনহা। পরে ১৩ অক্টোবর রাতে দেশ ছাড়েন তিনি।

১১ নভেম্বর সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশ হাইকমিশনে পদত্যাগপত্র জমা দেন প্রধান বিচারপতি।

পরের বছর ‘এ ব্রোকেন ড্রিম: রুল অব ল, হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড ডেমোক্রেসি’ নামে সিনহা একটি আত্মজীবনীমূলক বই প্রকাশ করেন।

এই বইতে সিনহা সবিস্তারে বর্ণনা করেছেন কোন পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের সাথে তার বিরোধ তৈরি হয়েছিল এবং কীভাবে তাকে দেশত্যাগে বাধ্য করা হয়, তারপর কেন তিনি প্রধান বিচারপতির পদ থেকে পদত্যাগে বাধ্য হন।

তিনি দাবি করেন, বাংলাদেশের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআইয়ের হুমকি ও ভীতি প্রদর্শনের মুখে তিনি দেশে ছেড়েছেন।

বিচারপতি সিনহা লিখেছেন, বাংলাদেশের সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়টি যেন সরকারের পক্ষে যায়, সেজন্যে তার ওপর সরকারের সর্বোচ্চ মহল থেকে চাপ তৈরি করা হয়েছিল।

এই বইয়ে সিনহা লেখেন, ‘আমি আশা করছিলাম যে আমার প্রত্যক্ষ অনুপস্থিতি এবং আদালতের নিয়মিত ছুটি- এ দু’টি মিলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে সহায়ক হবে এবং শুভবুদ্ধির উদয় হবে, সরকার ওই রায়ের যে মর্মবস্তু- অর্থাৎ বিচার বিভাগের স্বাধীনতা যে জাতি ও রাষ্ট্রের জন্য কল্যাণকর- তা বুঝতে পারবে।’

তিনি লেখেন, ‘শেষ পর্যন্ত দেশের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা- যার নাম ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্স- তাদের ভীতি প্রদর্শন এবং আমার পরিবারের প্রতি হুমকির সম্মুখীন হয়ে আমি বিদেশ থেকে আমার পদত্যাগপত্র জমা দেই।’

ওই সময় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে একটি অনুষ্ঠানে বইটি নিয়ে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জবাবে বলেন, ‘ক্ষমতা হারানোর জ্বালা থেকে বিচারপতি এস কে সিনহা বই লিখে মনগড়া কথা বলছেন। ক্ষমতায় যখন কেউ থাকে না, তখন অনেক অন্তর্জ্বালা বেদনা থাকে। এই অন্তর্জ্বালা থেকে অনেকে অনেক কথা বলেন। বিদেশে বসে যারা এরকম কথা বলে, সেটা নিয়ে কোনো কথা বলার প্রয়োজন আছে বলে আমরা মনে করি না।’

তিনি আরো বলেন, ‘উনি প্রধান বিচারপতি থাকা অবস্থায়, এখন যা বলছেন বইতে, সেটা বলার সাহস কেন একজন বিচারপতির থাকে না- এটা নৈতিকতার প্রশ্ন।’

যেসব যুক্তিতে রিভিউ আবেদন সরকারের
রায়ের পর্যবেক্ষণে সিনহা জাতির জনকের স্থানে ‘ফাউন্ডিং ফাদারস’ অর্থাৎ বহুবচন লিখেছেন। এই বিষয়টি পুনর্বিবেচনার আবেদন করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানই বাংলাদেশের একমাত্র জাতির জনক বলে আবেদনে উল্লেখ করেছে তারা।

এই রায়ে ‘আমিত্ব’ ও ‘আমরাত্ব’ ধারণা থেকে মুক্তি পেতে হবে বলে পর্যবেক্ষণ দেয়া হয়েছে। এ বিষয়টি রিভিউ চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ আবেদনে বলেছে, আদালতের এই পর্যবেক্ষণ ভিত্তিহীন। এই মামলার বিবেচ্য বিষয় নয় এটি।

বাংলাদেশের নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে দেয়া পর্যবেক্ষণের পুনর্বিবেচনা চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ আবেদনে বলেছে, এ বিষয়টি আদালতের বিচার্য বিষয় নয়। উচ্চ আদালত বিচারিক শিষ্টাচারের বাইরে গিয়ে এই পর্যবেক্ষণ দিয়েছে।

সংসদীয় গণতন্ত্রের পর্যবেক্ষণের বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষ পুনর্বিবেচনার আবেদনে যুক্তি তুলে ধরে বলেছে, বিচারিক এখতিয়ারের বাইরে গিয়ে আদালত এ মন্তব্য করেছে।

সর্বোচ্চ আদালত রায় পুনর্বিবেচনা করবে বলে আশাপ্রকাশ করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন।

এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, ‘যেসব গ্রাউন্ডে আমরা রিভিউ চেয়েছি সেগুলোর স্বপক্ষে আদালতে আমাদের বক্তব্য তুলে ধরবো। আমরা ইতিবাচক ফলাফল পাবো আশা করছি।’

তবে হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগের রায়ের মতো রিভিউ আবেদনেও আগের রায় বহাল থাকবে বলেই আশা করছেন রিটকারিদের আইনজীবী মনজিল মোরশেদ।

তিনি বলেন, ‘হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগেও এর আগে আমরা জিতেছি। ফলে সবশেষ ধাপ রিভিউতেও আমাদের পক্ষে রায় আসবে বলে আশা করি।’
সূত্র : বিবিসি