ঢাকা , সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::

বিলুপ্তির পথে বাকেরগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী শীতল পাটি

  • সূর্যোদয় ডেস্ক:
  • আপডেট সময় ০৫:২৭:৪৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৩
  • ১১২৭ বার পড়া হয়েছে

বরিশালের বাকেরগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী শীতল পাটি প্রায় বিলুপ্তির পথে। আধুনিক রকমারি নকশার প্লাস্টিকের সঙ্গে পাল্লা দিয়েও এগোতে পারছে না হাতে তৈরি এই কুটির শিল্প।

সরেজমিনে এই সংবাদদাতা দেখেছেন, বাকেরগঞ্জ উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রাম শীতল পাটি তৈরির জন্য বিখ্যাত। এর মধ্যে রয়েছে দড়িয়াল ইউপির কাজলাকাঠী, রঙ্গশ্রী ইউপির কাঠালিয়া, রাজাপুর, গারুড়িয়া ইউপির সুখী নীলগঞ্জ ও হেলেঞ্চা গ্রাম।

এসব গ্রামের হিন্দু স¤প্রদায়ের লোক যুগ যুগ ধরে তৈরি করে আসছে হাতে তৈরি বিভিন্ন ডিজাইনের শীতল পাটি এক সময় গ্রামের এই শীতল পাটির বেশ সুনাম ও খ্যাতি ছিল যার ধারাবাহিকতায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের পাইকার এসে ভালো দাম নিয়ে বিভিন্ন শহর ও উপশহরে বিক্রি করে সরগরম করে রেখেছিল এই শিল্প।

গরমের সময় এই শীতলপাটি খুব আরামদায়ক ছিল। শীতল পাটির কারিগরের নিপুণ হাতের ছোঁয়ায় এছাড়া গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন শিল্পকর্ম ফুটে উঠতো এই শিল্পকর্মে আর এর বর্ণিল নকশা ও সবাইকে মুগ্ধ করত।

এই শিল্প তৈরির প্রধান উপকরণ হলো পাটিয়া গাছের বাকল। তবে স্থানীয় নাম একেক অঞ্চলে একেক ধরনের। কোথাও এই গাছকে ‘মোতরাও’ বলে। তবে বরিশাল অঞ্চলে গাছটি ‘পাইত্রাবাপাইতরা’ নামে বেশ পরিচিত তবে শীতল পাটি তৈরির পেছনে রয়েছে এক শ্রেণির নারী ও পুরুষের দিনরাতের অক্লান্ত পরিশ্রম।

বাগান থেকে পাইত্রা গাছ কেটে আঁটি বেঁধে মাঠে এনে লম্বা চার ভাগ করে অতি সূক্ষ্মভাবে পাতলা বেতি তৈরি করা। আবার সেই বাকল নানা রংয়ে সিদ্ধ করে রোদে শুকিয়ে বুননের উপযোগী করে তৈরি হয় শীতল পাটি।

তবে নানা প্রতিকূলতায় এই হস্তশিল্প থেকে এখন অনেকে হাত গুঁটিয়ে পেশা বদলে অন্য পেশায় চলে যেতে বাধ্য হচ্ছে সর্বোপরি একটি শীতল পাটি তৈরি করতে যে পরিমাণ সময় ও পরিশ্রম করতে হয় সেই পরিমাণ চাহিদা ও মূল্য না পাওয়াও এর একটি বড় কারণ।

উপজেলার উল্লেখিত গ্রামগুলোতে রয়েছে পাটিকরপাড়া তারা হিন্দু সম্প্রদায়ের। বিভিন্ন কারণে এসব পাড়ার লোকজন আর্থিকভাবে সচ্ছ্বলতা লাভের আশায় পেশা বদলে অন্য পেশায় জড়িত হয়েছে।

এছাড়া, নানা কারণে কাজলাকাঠীসহ আশপাশের গ্রামের শীতলপাটির এই শিল্পকর্ম এখন বিলুপ্তির পথে। কিছু টিকে থাকলেও অভাবের এই শিল্প টিকিয়ে রাখা সম্ভব নয় বলে তারা জানিয়েছেন।

কাজলাকাঠী গ্রামের পাটিকরপাড়ার ননী গোপাল পাটিকর বলেন, ‘অনাহারে-অর্ধাহারে কোনোভাবে দিন চলছে। স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে বেঁচে থাকতে হলে পেশা বদল ছাড়া উপায় নেই।’

রঙ্গশ্রী ইউপির কাঠালিয়া গ্রামের যোগেশ্বর পাটিকর বলেন, ‘স্থানীয়ভাবে পটিকরদের তালিকা করে সরকারিভাবে প্রণোদনা দেওয়াসহ সার্বিক সহযোগিতার হাত বাড়ানো হয়, তবে হয়তো ঘুরে দাঁড়াতে পারবে এই শিল্প।’

রঙ্গশ্রী ইউপির হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক সিদ্ধেশ্বর পাটিকর বলেন, ‘শীতল পাটি এখন বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে এরই মধ্যে জাতিসংঘের শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কো আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দিয়েছে।

এছাড়া, সরকারের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আবেদনে ইউনেস্কো ২০১৭ সালে শীতল পাটিকে বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় স্থান দিয়েছে। তবে তালিকায় স্থানের পর আমাদের জন্য এর পরবর্তী সফলতা কীভাবে আসতে পারে, সেটি এখনও বোধগম্য নয়।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সজল চন্দ্র শীল জানান, এই শিল্প টিকিয়ে রাখতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সংশ্লিষ্ট মহলকে অভিহিত করা হবে।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

আজকের সূর্যোদয়

আজকের সূর্যোদয় প্রত্রিকায় আপনাদের স্বাগতম। ‍আমাদের নিউজ পড়ুন এবং বিজ্ঞাপন দিয়ে আমাদের পাশে থাকুন।

বরিশালে মুজিবিয়ানের ৮৭ নেতাকে খুঁজছে গোয়েন্দা সংস্থা

বিলুপ্তির পথে বাকেরগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী শীতল পাটি

আপডেট সময় ০৫:২৭:৪৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৩

বরিশালের বাকেরগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী শীতল পাটি প্রায় বিলুপ্তির পথে। আধুনিক রকমারি নকশার প্লাস্টিকের সঙ্গে পাল্লা দিয়েও এগোতে পারছে না হাতে তৈরি এই কুটির শিল্প।

সরেজমিনে এই সংবাদদাতা দেখেছেন, বাকেরগঞ্জ উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রাম শীতল পাটি তৈরির জন্য বিখ্যাত। এর মধ্যে রয়েছে দড়িয়াল ইউপির কাজলাকাঠী, রঙ্গশ্রী ইউপির কাঠালিয়া, রাজাপুর, গারুড়িয়া ইউপির সুখী নীলগঞ্জ ও হেলেঞ্চা গ্রাম।

এসব গ্রামের হিন্দু স¤প্রদায়ের লোক যুগ যুগ ধরে তৈরি করে আসছে হাতে তৈরি বিভিন্ন ডিজাইনের শীতল পাটি এক সময় গ্রামের এই শীতল পাটির বেশ সুনাম ও খ্যাতি ছিল যার ধারাবাহিকতায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের পাইকার এসে ভালো দাম নিয়ে বিভিন্ন শহর ও উপশহরে বিক্রি করে সরগরম করে রেখেছিল এই শিল্প।

গরমের সময় এই শীতলপাটি খুব আরামদায়ক ছিল। শীতল পাটির কারিগরের নিপুণ হাতের ছোঁয়ায় এছাড়া গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন শিল্পকর্ম ফুটে উঠতো এই শিল্পকর্মে আর এর বর্ণিল নকশা ও সবাইকে মুগ্ধ করত।

এই শিল্প তৈরির প্রধান উপকরণ হলো পাটিয়া গাছের বাকল। তবে স্থানীয় নাম একেক অঞ্চলে একেক ধরনের। কোথাও এই গাছকে ‘মোতরাও’ বলে। তবে বরিশাল অঞ্চলে গাছটি ‘পাইত্রাবাপাইতরা’ নামে বেশ পরিচিত তবে শীতল পাটি তৈরির পেছনে রয়েছে এক শ্রেণির নারী ও পুরুষের দিনরাতের অক্লান্ত পরিশ্রম।

বাগান থেকে পাইত্রা গাছ কেটে আঁটি বেঁধে মাঠে এনে লম্বা চার ভাগ করে অতি সূক্ষ্মভাবে পাতলা বেতি তৈরি করা। আবার সেই বাকল নানা রংয়ে সিদ্ধ করে রোদে শুকিয়ে বুননের উপযোগী করে তৈরি হয় শীতল পাটি।

তবে নানা প্রতিকূলতায় এই হস্তশিল্প থেকে এখন অনেকে হাত গুঁটিয়ে পেশা বদলে অন্য পেশায় চলে যেতে বাধ্য হচ্ছে সর্বোপরি একটি শীতল পাটি তৈরি করতে যে পরিমাণ সময় ও পরিশ্রম করতে হয় সেই পরিমাণ চাহিদা ও মূল্য না পাওয়াও এর একটি বড় কারণ।

উপজেলার উল্লেখিত গ্রামগুলোতে রয়েছে পাটিকরপাড়া তারা হিন্দু সম্প্রদায়ের। বিভিন্ন কারণে এসব পাড়ার লোকজন আর্থিকভাবে সচ্ছ্বলতা লাভের আশায় পেশা বদলে অন্য পেশায় জড়িত হয়েছে।

এছাড়া, নানা কারণে কাজলাকাঠীসহ আশপাশের গ্রামের শীতলপাটির এই শিল্পকর্ম এখন বিলুপ্তির পথে। কিছু টিকে থাকলেও অভাবের এই শিল্প টিকিয়ে রাখা সম্ভব নয় বলে তারা জানিয়েছেন।

কাজলাকাঠী গ্রামের পাটিকরপাড়ার ননী গোপাল পাটিকর বলেন, ‘অনাহারে-অর্ধাহারে কোনোভাবে দিন চলছে। স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে বেঁচে থাকতে হলে পেশা বদল ছাড়া উপায় নেই।’

রঙ্গশ্রী ইউপির কাঠালিয়া গ্রামের যোগেশ্বর পাটিকর বলেন, ‘স্থানীয়ভাবে পটিকরদের তালিকা করে সরকারিভাবে প্রণোদনা দেওয়াসহ সার্বিক সহযোগিতার হাত বাড়ানো হয়, তবে হয়তো ঘুরে দাঁড়াতে পারবে এই শিল্প।’

রঙ্গশ্রী ইউপির হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক সিদ্ধেশ্বর পাটিকর বলেন, ‘শীতল পাটি এখন বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে এরই মধ্যে জাতিসংঘের শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কো আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দিয়েছে।

এছাড়া, সরকারের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আবেদনে ইউনেস্কো ২০১৭ সালে শীতল পাটিকে বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় স্থান দিয়েছে। তবে তালিকায় স্থানের পর আমাদের জন্য এর পরবর্তী সফলতা কীভাবে আসতে পারে, সেটি এখনও বোধগম্য নয়।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সজল চন্দ্র শীল জানান, এই শিল্প টিকিয়ে রাখতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সংশ্লিষ্ট মহলকে অভিহিত করা হবে।