ঢাকা , সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::

মার্কিনিদের কঠোর বার্তা, কি হতে যাচ্ছে

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন দরজায় কড়া নাড়ছে। পাড়া-মহল্লার চায়ের দোকান থেকে শুরু করে সব জায়গাতেই নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন আলোচনা হচ্ছে। আগামী নির্বাচন কেমন হবে এমন প্রেডিকশন করে গল্প চলছে চারিদিকে। এরই মধ্যে উত্তপ্ত বার্তা দিয়েছে মার্কিন সরকার। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিতে বাংলাদেশের জন্য আলাদাভাবে ভিসানীতি ঘোষণা করেছে তারা। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি জে ব্লিংকেন বুধবার (২৪ মে) রাতে এক টুইটবার্তায় জানিয়েছেন, আমরা অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিতে আজ একটি নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করেছি। এই নীতির অধীনে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে দুর্বল বা বাধা প্রদানের জন্য দায়ী ব্যক্তি এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের ভিসার ওপর বিধিনিষেধ আরোপিত হবে।

গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে এমন কাজের মধ্যে রয়েছে : ভোট কারচুপি, ভোটারদের ভয় দেখানো, সহিংসতার মাধ্যমে জনগণকে সংগঠিত হওয়ার স্বাধীনতা, শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকার প্রয়োগ করতে বাধা দেয়া এবং বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে রাজনৈতিক দল, ভোটার, সুশীলসমাজ বা গণমাধ্যমকে তাদের মতামত প্রচার করা থেকে বিরত রাখা। বেশ কিছুদিন ধরে স্যাংশন নিয়ে মিডিয়াগুলোতে লেখালেখি দেখা যাচ্ছে। আপাতত স্যাংশনের খবর না পাওয়া গেলেও নির্বাচন নিয়ে বেশ শক্ত বার্তা দিয়েছে মার্কিন সরকার। তারা যে নীতি গ্রহণ করেছে সেটি অবশ্য এ মাসের শুরুতেই বাংলাদেশ সরকারকে জানিয়েছে।

আসন্ন নির্বাচন নিয়ে এখন পর্যন্ত পাল্টাপাল্টি অবস্থানে আছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি। দেশের বৃহৎ দুই দলই বেশ উচ্চৈঃস্বরেই নিজেদের অবস্থান জানান দিচ্ছেন। প্রতিটি সভা-সমাবেশে প্রচুর জনসমাগম ঘটিয়ে তারা নিজেদের শক্তি, সামর্থ্যরে প্রমাণ দিচ্ছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বলছে, বর্তমান সরকারের অধীনেই আগামী সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সংবিধানের বাইরে যেয়ে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের সুযোগ নেই। মোটকথা নির্বাচন পরিচালনার জন্য স্বল্প সময়ের কোনো সরকারকে ক্ষমতা আওয়ামী লীগ দেবে না।

অন্য দিকে বিএনপি নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছে। বর্তমান সময়ে বিএনপির আন্দোলন বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে বেশ জোড়ালো হয়েছে। বিএনপি জানাচ্ছে সরকারি দলের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে তারা কোনোভাবেই অংশ নিবে না। বিএনপি তাদের দাবি আদায়ে একের পর এক রাজপথের কর্মসূচি দিচ্ছে এবং কর্মসূচিগুলোতে উল্লেখযোগ্য লোকের গণসমাগম ঘটিয়ে নিজেদের অবস্থানের জানান দিচ্ছেন। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের শরিকদের নিয়ে গঠিত ১২ দলীয় জোট, গণতন্ত্র মঞ্চ এবং সমমনা জাতীয়তাবাদী জোটের প্রায় ৩০-৩২টি দলও নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে নিজ নিজ উদ্যোগে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে। তবে মার্কিন সরকারের এমন নীতির ফলে বর্তমান সরকারের অধীনেই বিএনপি আগামী নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে নাকি এ নিয়ে জোড়ালো আলোচনা হচ্ছে। আরেক অংশ মনে করছে, ১৮’র নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিএনপি যেমন অনেক ধোঁকা খেয়েছে, সেটির পুনরাবৃত্তি হয়তো তারা করতে চাইবে না। বিএনপি হয়তো বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ নিবে না। তবে মার্কিন সরকারের এমন নীতির ফলে বিএনপি তাদের সিদ্ধান্ত বদলে ফেলতে পারে বলে মনে হয়।

নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কূটনীতিকদের মধ্যে জোড়ালো তৎপরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। রাজনৈতিক বিষয়ে নানা ধরনের মন্তব্য করছেন তারা। বিগত এক বছর ধরে বিএনপি নেতারা কূটনীতিকদের সাথে সিরিজ বৈঠক করছেন। অবশ্য আওয়ামী লীগও কূটনৈতিকদের সাথে বিভিন্ন সময়ে দফায় দফায় বৈঠক করেছেন। বিএনপি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে কূটনৈতিকদের নিকট বিভিন্ন কথা বলছে, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে কথা বলছে। তবে আওয়ামী লীগের নেতারা কূটনৈতিকদের সাথে বৈঠকের পর জানিয়েছে দুই দেশের সম্পর্ক আরো জোরদার করা, ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসারসহ বিভিন্ন বিষয়ে তাদের আলাপ হয়।

বেশ কয়েকদিন ধরেই আশঙ্কা ছিল সত্যি সত্যি হয়তো স্যাংশন চলে আসবে। কিন্তু তার বদলে এলো ভিসা পলিসি। এই ভিসা পলিসিকে এক ধরনের হুমকি বলা যেতে পারে। তবে ভিসা পলিসির এমন খবরে আওয়ামী লীগ বিরোধী শিবিরে বেশ উৎসাহ দেখা গেলেও আগামী রূপরেখা কেমন হচ্ছে তা স্পষ্টভাবে বুঝা না গেলেও, কিছুটা ধারণা করাই যায়। সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন হলেও, বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে থাকা লাখ লাখ মামলা স্বাভাবিকভাবেই বিএনপিকে ভোটের মাঠে পিছিয়ে দেবে। ভোটের আগে যদি নেতাকর্মীরা গ্রেফতার হয় বা পুরনো মামলাগুলোর রায় হয়; তাহলে নির্বাচনে বিএনপিকে বেশ কাঠখড় পোড়াতে হবে। যা মোটেও সহজ হবে বলে মনে হয় না। তবে স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনায় আওয়ামী লীগ বেশ নির্ভার থাকবে, যা তাদের নির্বাচন প্রক্রিয়াকে কিছুটা হলেও এগিয়ে রাখবে তা অনুমান করা যায়। তবে যেহেতু রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই, সেহেতু আগামী নির্বাচন কিভাবে অনুষ্ঠিত হবে সেটি শতভাগ নিশ্চিত হয়ে জানার জন্য এখনো কয়েক মাস অপেক্ষা করতে হবে।

লেখক : কলামিস্ট

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

আজকের সূর্যোদয়

আজকের সূর্যোদয় প্রত্রিকায় আপনাদের স্বাগতম। ‍আমাদের নিউজ পড়ুন এবং বিজ্ঞাপন দিয়ে আমাদের পাশে থাকুন।

বরিশালে মুজিবিয়ানের ৮৭ নেতাকে খুঁজছে গোয়েন্দা সংস্থা

মার্কিনিদের কঠোর বার্তা, কি হতে যাচ্ছে

আপডেট সময় ১২:১৫:৩৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২ জুন ২০২৩

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন দরজায় কড়া নাড়ছে। পাড়া-মহল্লার চায়ের দোকান থেকে শুরু করে সব জায়গাতেই নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন আলোচনা হচ্ছে। আগামী নির্বাচন কেমন হবে এমন প্রেডিকশন করে গল্প চলছে চারিদিকে। এরই মধ্যে উত্তপ্ত বার্তা দিয়েছে মার্কিন সরকার। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিতে বাংলাদেশের জন্য আলাদাভাবে ভিসানীতি ঘোষণা করেছে তারা। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি জে ব্লিংকেন বুধবার (২৪ মে) রাতে এক টুইটবার্তায় জানিয়েছেন, আমরা অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিতে আজ একটি নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করেছি। এই নীতির অধীনে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে দুর্বল বা বাধা প্রদানের জন্য দায়ী ব্যক্তি এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের ভিসার ওপর বিধিনিষেধ আরোপিত হবে।

গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে এমন কাজের মধ্যে রয়েছে : ভোট কারচুপি, ভোটারদের ভয় দেখানো, সহিংসতার মাধ্যমে জনগণকে সংগঠিত হওয়ার স্বাধীনতা, শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকার প্রয়োগ করতে বাধা দেয়া এবং বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে রাজনৈতিক দল, ভোটার, সুশীলসমাজ বা গণমাধ্যমকে তাদের মতামত প্রচার করা থেকে বিরত রাখা। বেশ কিছুদিন ধরে স্যাংশন নিয়ে মিডিয়াগুলোতে লেখালেখি দেখা যাচ্ছে। আপাতত স্যাংশনের খবর না পাওয়া গেলেও নির্বাচন নিয়ে বেশ শক্ত বার্তা দিয়েছে মার্কিন সরকার। তারা যে নীতি গ্রহণ করেছে সেটি অবশ্য এ মাসের শুরুতেই বাংলাদেশ সরকারকে জানিয়েছে।

আসন্ন নির্বাচন নিয়ে এখন পর্যন্ত পাল্টাপাল্টি অবস্থানে আছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি। দেশের বৃহৎ দুই দলই বেশ উচ্চৈঃস্বরেই নিজেদের অবস্থান জানান দিচ্ছেন। প্রতিটি সভা-সমাবেশে প্রচুর জনসমাগম ঘটিয়ে তারা নিজেদের শক্তি, সামর্থ্যরে প্রমাণ দিচ্ছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বলছে, বর্তমান সরকারের অধীনেই আগামী সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সংবিধানের বাইরে যেয়ে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের সুযোগ নেই। মোটকথা নির্বাচন পরিচালনার জন্য স্বল্প সময়ের কোনো সরকারকে ক্ষমতা আওয়ামী লীগ দেবে না।

অন্য দিকে বিএনপি নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছে। বর্তমান সময়ে বিএনপির আন্দোলন বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে বেশ জোড়ালো হয়েছে। বিএনপি জানাচ্ছে সরকারি দলের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে তারা কোনোভাবেই অংশ নিবে না। বিএনপি তাদের দাবি আদায়ে একের পর এক রাজপথের কর্মসূচি দিচ্ছে এবং কর্মসূচিগুলোতে উল্লেখযোগ্য লোকের গণসমাগম ঘটিয়ে নিজেদের অবস্থানের জানান দিচ্ছেন। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের শরিকদের নিয়ে গঠিত ১২ দলীয় জোট, গণতন্ত্র মঞ্চ এবং সমমনা জাতীয়তাবাদী জোটের প্রায় ৩০-৩২টি দলও নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে নিজ নিজ উদ্যোগে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে। তবে মার্কিন সরকারের এমন নীতির ফলে বর্তমান সরকারের অধীনেই বিএনপি আগামী নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে নাকি এ নিয়ে জোড়ালো আলোচনা হচ্ছে। আরেক অংশ মনে করছে, ১৮’র নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিএনপি যেমন অনেক ধোঁকা খেয়েছে, সেটির পুনরাবৃত্তি হয়তো তারা করতে চাইবে না। বিএনপি হয়তো বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ নিবে না। তবে মার্কিন সরকারের এমন নীতির ফলে বিএনপি তাদের সিদ্ধান্ত বদলে ফেলতে পারে বলে মনে হয়।

নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কূটনীতিকদের মধ্যে জোড়ালো তৎপরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। রাজনৈতিক বিষয়ে নানা ধরনের মন্তব্য করছেন তারা। বিগত এক বছর ধরে বিএনপি নেতারা কূটনীতিকদের সাথে সিরিজ বৈঠক করছেন। অবশ্য আওয়ামী লীগও কূটনৈতিকদের সাথে বিভিন্ন সময়ে দফায় দফায় বৈঠক করেছেন। বিএনপি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে কূটনৈতিকদের নিকট বিভিন্ন কথা বলছে, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে কথা বলছে। তবে আওয়ামী লীগের নেতারা কূটনৈতিকদের সাথে বৈঠকের পর জানিয়েছে দুই দেশের সম্পর্ক আরো জোরদার করা, ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসারসহ বিভিন্ন বিষয়ে তাদের আলাপ হয়।

বেশ কয়েকদিন ধরেই আশঙ্কা ছিল সত্যি সত্যি হয়তো স্যাংশন চলে আসবে। কিন্তু তার বদলে এলো ভিসা পলিসি। এই ভিসা পলিসিকে এক ধরনের হুমকি বলা যেতে পারে। তবে ভিসা পলিসির এমন খবরে আওয়ামী লীগ বিরোধী শিবিরে বেশ উৎসাহ দেখা গেলেও আগামী রূপরেখা কেমন হচ্ছে তা স্পষ্টভাবে বুঝা না গেলেও, কিছুটা ধারণা করাই যায়। সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন হলেও, বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে থাকা লাখ লাখ মামলা স্বাভাবিকভাবেই বিএনপিকে ভোটের মাঠে পিছিয়ে দেবে। ভোটের আগে যদি নেতাকর্মীরা গ্রেফতার হয় বা পুরনো মামলাগুলোর রায় হয়; তাহলে নির্বাচনে বিএনপিকে বেশ কাঠখড় পোড়াতে হবে। যা মোটেও সহজ হবে বলে মনে হয় না। তবে স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনায় আওয়ামী লীগ বেশ নির্ভার থাকবে, যা তাদের নির্বাচন প্রক্রিয়াকে কিছুটা হলেও এগিয়ে রাখবে তা অনুমান করা যায়। তবে যেহেতু রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই, সেহেতু আগামী নির্বাচন কিভাবে অনুষ্ঠিত হবে সেটি শতভাগ নিশ্চিত হয়ে জানার জন্য এখনো কয়েক মাস অপেক্ষা করতে হবে।

লেখক : কলামিস্ট