ঢাকা , সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::

মালদ্বীপ থেকে বৈধপথে রেমিট্যান্স পাঠানোয় নানা প্রতিবন্ধকতা

  • শাইখ সিরাজ
  • আপডেট সময় ১১:২০:০০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ জানুয়ারী ২০২৩
  • ১৩৮০ বার পড়া হয়েছে

গেল নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে মালদ্বীপ যাওয়ার সুযোগ হয় আমার। বাংলাদেশে নভেম্বরের শেষদিকে মোটামুটি শীত চলে আসে, কিন্তু মালদ্বীপে শীতের কোনো দেখা নেই। মূলত মালদ্বীপে শীতকাল বলে কোনো ঋতুই নেই।

আমরা যখন পৌঁছালাম তখন তাপমাত্রা ৩৮-৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। প্রচণ্ড রোদ। রোদে নীল জলরাশি যেন আরও উজ্জ্বল ও মনোমুগ্ধকর হয়ে ওঠে। দ্বীপরাষ্ট্র মালদ্বীপের রাজধানী মালে শহরটি ছোট একটি দ্বীপ। কাজ করতে গিয়ে পথে, বাজারে প্রচুর বাংলাদেশির সাক্ষাৎ পাই।

আসলে মালে শহরটি তো বেশি বড় নয়। তাই ঘুরেফিরে সবকিছুই কাছাকাছি পাওয়া যায়। মালের সবচেয়ে জমজমাট জায়গা হচ্ছে ফিশারি ঘাট। সেখানকার ফিশ মার্কেট বেশ রমরমা। চারদিকে মাছের সমারোহ, অবশ্যই সামুদ্রিক মাছের সমাহার। তবে টুনা ফিশের আধিক্য বেশি। মালদ্বীপ মূলত ৭৫% ফ্রোজেন টুনা রপ্তানি করে। ১০% ইয়েলো ফিন টুনা রপ্তানি করে। ৬% প্রিজারভড বা ক্যানড টুনা রপ্তানি করে। বাকিটা প্রাণিখাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। শাকসবজি আসে এই দেশটিতে ভারত, টার্কি, ভিয়েতনাম, মিসর এবং শ্রীলংকা থেকে। দুধ আসে অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড এবং দুবাই থেকে। চাল আসে ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলংকা থেকে। সবজির বাজারটিও মাছ বাজারের একদম কাছেই। এত সবের মাঝে জানা গেল বাংলাদেশ থেকে শুধু বাদাম আসে। তবে মালদ্বীপ সরকার এসব খাদ্যপণ্যে আরও বেশি ট্যাক্স বাড়াতে চাইছে যাতে স্থানীয় খাদ্যপণ্যের প্রতি মানুষের আগ্রহ বাড়ে। এবং মানুষও কৃষি খাতে আরও বেশি মনোযোগী হয়।

কয়েকজন বাংলাদেশি ছুটে এলেন আমার কাছে। একজন বাংলাদেশি কর্মী তাদের বোটে উঠতে অনুরোধ করলেন। কাঠের পাটাতন দিয়ে বোটে উঠলাম। এদের ফিশিং বোটগুলোর ভেতর ডিপফ্রিজের মতো। বরফ দিয়ে মাছ রাখা হয়েছে। বেশ বড় একটি টুনা ফিশ উঠিয়ে দেখালেন। এই ফিশ জেটিতে প্রচুর বাংলাদেশি। অনেকের সঙ্গেই কথা বললাম। কথা হলো ভোলার নুরুল ইসলামের সঙ্গে। ছয় বছর ধরে তিনি মালদ্বীপে আছেন। মাছ ধরে যে খুব একটা খারাপ আছেন তা নয়। তবে সমস্যা হচ্ছে দেশে টাকা পাঠানো নিয়ে। এখানে প্রায় সব বাংলাদেশি শ্রমিকেরই একটি কথা। মালদ্বীপের লোকাল কারেন্সি হলো রুফিয়া। তারা বেতন পান রুফিয়ায়। যা ডলার করে বাংলাদেশে পাঠাতে গেলে খরচ পড়ে যায় অনেক। তাই হুন্ডি ছাড়া আর কোনো পথ তাদের হাতে খোলা নেই।

পানের দোকানে কাজ করেন রফিকুল, মালেতে আছেন চার বছর। তিনি বললেন, এখানে কাগজে-কলমে বেতন যেমন আছে, কাগজ-কলমের বাইরে আছে ওভারটাইম কিংবা অতিরিক্ত শ্রম বিক্রির আয়। সেগুলো ব্যাংকের মাধ্যমে পাঠানো সম্ভব হয় না।

চাঁদপুরের হাজীগঞ্জের সেলিম বললেন, সাত বছর ধরে তিনি মালেতে। এখানে বাংলাদেশের ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেডের একটি মানি ট্রান্সফার শাখা হয়েছে, তারা ভেবেছিলেন এবার বোধহয় সরাসরি রুফিয়া পাঠাতে পারবেন। কিন্তু তাও হচ্ছে না। প্রথমে রুফিয়া থেকে ডলার, তার পর ডলার থেকে টাকা করতে প্রচুর লোকসান গুনতে হয়। আর সরকারের নির্ধারিত দামে ডলার পাওয়া যায় না। ডলার কিনতে হয় সরকারের দেওয়া রেট থেকে উচ্চ দামে। আবার ডলার থেকে টাকা করতে সরকারি রেটের থেকে কম দামে বেচতে হয়।

বৈধপথে রেমিট্যান্স পাঠানোর বিষয়ে কথা বলতে গিয়েছিলাম মালেতে অবস্থিত ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেডের (এনবিএল) মানি ট্রান্সফার শাখায়। সেখানে গিয়ে কোনো গ্রাহককে দেখলাম না। কর্মীরা যার যার জায়গায় কাজ করছেন। আমি কথা বললাম সিইও মো. মাসুদুর রহমানের সঙ্গে। তিনিও বললেন সমস্যাটা সম্পর্কে। জানতে চাইলাম, ভারতীয় শ্রমিক যদি তাদের ব্যাংকের মাধ্যমে সরাসরি মালদ্বীপের রুফিয়া থেকে ভারতীয় রুপি পেতে পারে, তবে বাংলাদেশের প্রবাসীরা কেন টাকা পাচ্ছে না? তিনি বললেন, ভারতীয়রা নানাভাবে অন্যান্য বড় বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত থাকায় ভারতীয় ব্যাংকগুলো পারছে।

প্রবাসীদের দেশে বৈধপথে রেমিট্যান্স পাঠাতে উৎসাহ দিতে সরকার ইতোপূর্বে রেমিট্যান্সের ওপর ২ শতাংশ প্রণোদনা দিয়েছে, যা বর্তমানে ২ দশমিক ৫ শতাংশ করা হয়েছে। প্রবাসী যে কেউ এখন থেকে এক লাখ টাকা দেশে পাঠালে সঙ্গে আরও দুই হাজার পাঁচশ টাকা প্রণোদনা হিসেবে পাবেন। এর আগে ৫ লাখের অধিক টাকা প্রেরণ করলে প্রণোদনার টাকা পেতে হলে কিছু প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ব্যাংকে জমা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা ছিল, কিন্তু বর্তমানে যে কোনো অঙ্কের টাকা পাঠানো হোক না কেন, কোনো কাগজপত্র জমা দেওয়া ছাড়াই প্রণোদনার টাকা ব্যাংকে জমা হয়ে যাবে। তার পরও রুফিয়া-ডলার সংকটে মালদ্বীপের প্রবাসীরা বৈধপথে টাকা পাঠাতে পারছে না। এ বিষয়ে বাংলাদেশ দূতাবাসের হাইকমিশনার রিয়ার অ্যাডমিরাল এসএম আবুল কালাম আজাদের সঙ্গে কথা বলি। তিনি বলেন, মালদ্বীপের শ্রমবাজারে কেন আরও বাংলাদেশি আনতে পারছি না? আমাদের দেশ থেকে অবৈধ পথে বের হয়ে অন্য দেশে সাধারণত ঢোকে তারা। তার পর সেখান থেকে দালাল ধরে মালদ্বীপে প্রবেশ করে। কোভিড যখন এলো তখন যারা আনডকুমেন্টেড বা অবৈধ ছিল তাদের চলে যেতে বলে মালদ্বীপ সরকার। তখন বিশ থেকে পঁচিশ হাজার বাংলাদেশিকে চলে যেতে হয়। বর্তমানে অদক্ষ শ্রমবাজার বন্ধ আছে। এখানে দক্ষ শ্রমিক প্রয়োজন। হাইকমিশনার আরও বলেন, একটি দেশ থেকে এক লাখের বেশি নাগরিক আনার কোনো নিয়ম নেই। তবে আমাদের দেশ থেকে যদি দক্ষ শ্রমিক আসে তা হলে তারা নেবে। ভারত, শ্রীলংকা এবং নেপালের এখনো এক লাখ শ্রমিক পূরণ হয়নি। লোকাল কারেন্সি থেকে ডলার করে পাঠানোর জটিলতা নিয়ে কথা হলো। তিনি বললেন, এ নিয়ে সরকার কাজ করছে। শিগগিরই এ সমস্যার সমাধানের চেষ্টা চলছে। হাইকমিশনের সেবা নিতে আসা কয়েকজন প্রবাসীর সঙ্গে কথা হলো। তারা বললেন, রুফিয়া সরাসরি পাঠাতে পারলে একটি পয়সাও অবৈধ পথে বাংলাদেশে ঢুকত না। ব্যাংকও আসলে রুফিয়া গ্রহণ করে না। সেজন্য ৮০% টাকা অবৈধ পথে যায়। মানে হুন্ডি হয়ে যায়। কেউ কেউ অভিযোগ করলেন, ঢাকার বিমানবন্দরে বাংলাদেশি শ্রমিকদের সঙ্গে খুবই বাজে ব্যবহার করা হয়।

কখনো কখনো ২-৩ ঘণ্টা দাঁড় করিয়ে রাখে। ঢাকা বিমানবন্দরে বৈধ ট্রাভেল ডকুমেন্ট দেখানোর পরও বিড়ম্বনার অন্ত নেই।

প্রবাসীদের দাবি, তাদের সমস্যাগুলো সরকার আমলে নিয়ে তাদের জীবনকে সহজ করে তুলতে সহায়তা করবে।

শাইখ সিরাজ : মিডিয়া ব্যক্তিত্ব

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

আজকের সূর্যোদয়

আজকের সূর্যোদয় প্রত্রিকায় আপনাদের স্বাগতম। ‍আমাদের নিউজ পড়ুন এবং বিজ্ঞাপন দিয়ে আমাদের পাশে থাকুন।

বরিশালে মুজিবিয়ানের ৮৭ নেতাকে খুঁজছে গোয়েন্দা সংস্থা

মালদ্বীপ থেকে বৈধপথে রেমিট্যান্স পাঠানোয় নানা প্রতিবন্ধকতা

আপডেট সময় ১১:২০:০০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ জানুয়ারী ২০২৩

গেল নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে মালদ্বীপ যাওয়ার সুযোগ হয় আমার। বাংলাদেশে নভেম্বরের শেষদিকে মোটামুটি শীত চলে আসে, কিন্তু মালদ্বীপে শীতের কোনো দেখা নেই। মূলত মালদ্বীপে শীতকাল বলে কোনো ঋতুই নেই।

আমরা যখন পৌঁছালাম তখন তাপমাত্রা ৩৮-৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। প্রচণ্ড রোদ। রোদে নীল জলরাশি যেন আরও উজ্জ্বল ও মনোমুগ্ধকর হয়ে ওঠে। দ্বীপরাষ্ট্র মালদ্বীপের রাজধানী মালে শহরটি ছোট একটি দ্বীপ। কাজ করতে গিয়ে পথে, বাজারে প্রচুর বাংলাদেশির সাক্ষাৎ পাই।

আসলে মালে শহরটি তো বেশি বড় নয়। তাই ঘুরেফিরে সবকিছুই কাছাকাছি পাওয়া যায়। মালের সবচেয়ে জমজমাট জায়গা হচ্ছে ফিশারি ঘাট। সেখানকার ফিশ মার্কেট বেশ রমরমা। চারদিকে মাছের সমারোহ, অবশ্যই সামুদ্রিক মাছের সমাহার। তবে টুনা ফিশের আধিক্য বেশি। মালদ্বীপ মূলত ৭৫% ফ্রোজেন টুনা রপ্তানি করে। ১০% ইয়েলো ফিন টুনা রপ্তানি করে। ৬% প্রিজারভড বা ক্যানড টুনা রপ্তানি করে। বাকিটা প্রাণিখাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। শাকসবজি আসে এই দেশটিতে ভারত, টার্কি, ভিয়েতনাম, মিসর এবং শ্রীলংকা থেকে। দুধ আসে অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড এবং দুবাই থেকে। চাল আসে ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলংকা থেকে। সবজির বাজারটিও মাছ বাজারের একদম কাছেই। এত সবের মাঝে জানা গেল বাংলাদেশ থেকে শুধু বাদাম আসে। তবে মালদ্বীপ সরকার এসব খাদ্যপণ্যে আরও বেশি ট্যাক্স বাড়াতে চাইছে যাতে স্থানীয় খাদ্যপণ্যের প্রতি মানুষের আগ্রহ বাড়ে। এবং মানুষও কৃষি খাতে আরও বেশি মনোযোগী হয়।

কয়েকজন বাংলাদেশি ছুটে এলেন আমার কাছে। একজন বাংলাদেশি কর্মী তাদের বোটে উঠতে অনুরোধ করলেন। কাঠের পাটাতন দিয়ে বোটে উঠলাম। এদের ফিশিং বোটগুলোর ভেতর ডিপফ্রিজের মতো। বরফ দিয়ে মাছ রাখা হয়েছে। বেশ বড় একটি টুনা ফিশ উঠিয়ে দেখালেন। এই ফিশ জেটিতে প্রচুর বাংলাদেশি। অনেকের সঙ্গেই কথা বললাম। কথা হলো ভোলার নুরুল ইসলামের সঙ্গে। ছয় বছর ধরে তিনি মালদ্বীপে আছেন। মাছ ধরে যে খুব একটা খারাপ আছেন তা নয়। তবে সমস্যা হচ্ছে দেশে টাকা পাঠানো নিয়ে। এখানে প্রায় সব বাংলাদেশি শ্রমিকেরই একটি কথা। মালদ্বীপের লোকাল কারেন্সি হলো রুফিয়া। তারা বেতন পান রুফিয়ায়। যা ডলার করে বাংলাদেশে পাঠাতে গেলে খরচ পড়ে যায় অনেক। তাই হুন্ডি ছাড়া আর কোনো পথ তাদের হাতে খোলা নেই।

পানের দোকানে কাজ করেন রফিকুল, মালেতে আছেন চার বছর। তিনি বললেন, এখানে কাগজে-কলমে বেতন যেমন আছে, কাগজ-কলমের বাইরে আছে ওভারটাইম কিংবা অতিরিক্ত শ্রম বিক্রির আয়। সেগুলো ব্যাংকের মাধ্যমে পাঠানো সম্ভব হয় না।

চাঁদপুরের হাজীগঞ্জের সেলিম বললেন, সাত বছর ধরে তিনি মালেতে। এখানে বাংলাদেশের ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেডের একটি মানি ট্রান্সফার শাখা হয়েছে, তারা ভেবেছিলেন এবার বোধহয় সরাসরি রুফিয়া পাঠাতে পারবেন। কিন্তু তাও হচ্ছে না। প্রথমে রুফিয়া থেকে ডলার, তার পর ডলার থেকে টাকা করতে প্রচুর লোকসান গুনতে হয়। আর সরকারের নির্ধারিত দামে ডলার পাওয়া যায় না। ডলার কিনতে হয় সরকারের দেওয়া রেট থেকে উচ্চ দামে। আবার ডলার থেকে টাকা করতে সরকারি রেটের থেকে কম দামে বেচতে হয়।

বৈধপথে রেমিট্যান্স পাঠানোর বিষয়ে কথা বলতে গিয়েছিলাম মালেতে অবস্থিত ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেডের (এনবিএল) মানি ট্রান্সফার শাখায়। সেখানে গিয়ে কোনো গ্রাহককে দেখলাম না। কর্মীরা যার যার জায়গায় কাজ করছেন। আমি কথা বললাম সিইও মো. মাসুদুর রহমানের সঙ্গে। তিনিও বললেন সমস্যাটা সম্পর্কে। জানতে চাইলাম, ভারতীয় শ্রমিক যদি তাদের ব্যাংকের মাধ্যমে সরাসরি মালদ্বীপের রুফিয়া থেকে ভারতীয় রুপি পেতে পারে, তবে বাংলাদেশের প্রবাসীরা কেন টাকা পাচ্ছে না? তিনি বললেন, ভারতীয়রা নানাভাবে অন্যান্য বড় বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত থাকায় ভারতীয় ব্যাংকগুলো পারছে।

প্রবাসীদের দেশে বৈধপথে রেমিট্যান্স পাঠাতে উৎসাহ দিতে সরকার ইতোপূর্বে রেমিট্যান্সের ওপর ২ শতাংশ প্রণোদনা দিয়েছে, যা বর্তমানে ২ দশমিক ৫ শতাংশ করা হয়েছে। প্রবাসী যে কেউ এখন থেকে এক লাখ টাকা দেশে পাঠালে সঙ্গে আরও দুই হাজার পাঁচশ টাকা প্রণোদনা হিসেবে পাবেন। এর আগে ৫ লাখের অধিক টাকা প্রেরণ করলে প্রণোদনার টাকা পেতে হলে কিছু প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ব্যাংকে জমা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা ছিল, কিন্তু বর্তমানে যে কোনো অঙ্কের টাকা পাঠানো হোক না কেন, কোনো কাগজপত্র জমা দেওয়া ছাড়াই প্রণোদনার টাকা ব্যাংকে জমা হয়ে যাবে। তার পরও রুফিয়া-ডলার সংকটে মালদ্বীপের প্রবাসীরা বৈধপথে টাকা পাঠাতে পারছে না। এ বিষয়ে বাংলাদেশ দূতাবাসের হাইকমিশনার রিয়ার অ্যাডমিরাল এসএম আবুল কালাম আজাদের সঙ্গে কথা বলি। তিনি বলেন, মালদ্বীপের শ্রমবাজারে কেন আরও বাংলাদেশি আনতে পারছি না? আমাদের দেশ থেকে অবৈধ পথে বের হয়ে অন্য দেশে সাধারণত ঢোকে তারা। তার পর সেখান থেকে দালাল ধরে মালদ্বীপে প্রবেশ করে। কোভিড যখন এলো তখন যারা আনডকুমেন্টেড বা অবৈধ ছিল তাদের চলে যেতে বলে মালদ্বীপ সরকার। তখন বিশ থেকে পঁচিশ হাজার বাংলাদেশিকে চলে যেতে হয়। বর্তমানে অদক্ষ শ্রমবাজার বন্ধ আছে। এখানে দক্ষ শ্রমিক প্রয়োজন। হাইকমিশনার আরও বলেন, একটি দেশ থেকে এক লাখের বেশি নাগরিক আনার কোনো নিয়ম নেই। তবে আমাদের দেশ থেকে যদি দক্ষ শ্রমিক আসে তা হলে তারা নেবে। ভারত, শ্রীলংকা এবং নেপালের এখনো এক লাখ শ্রমিক পূরণ হয়নি। লোকাল কারেন্সি থেকে ডলার করে পাঠানোর জটিলতা নিয়ে কথা হলো। তিনি বললেন, এ নিয়ে সরকার কাজ করছে। শিগগিরই এ সমস্যার সমাধানের চেষ্টা চলছে। হাইকমিশনের সেবা নিতে আসা কয়েকজন প্রবাসীর সঙ্গে কথা হলো। তারা বললেন, রুফিয়া সরাসরি পাঠাতে পারলে একটি পয়সাও অবৈধ পথে বাংলাদেশে ঢুকত না। ব্যাংকও আসলে রুফিয়া গ্রহণ করে না। সেজন্য ৮০% টাকা অবৈধ পথে যায়। মানে হুন্ডি হয়ে যায়। কেউ কেউ অভিযোগ করলেন, ঢাকার বিমানবন্দরে বাংলাদেশি শ্রমিকদের সঙ্গে খুবই বাজে ব্যবহার করা হয়।

কখনো কখনো ২-৩ ঘণ্টা দাঁড় করিয়ে রাখে। ঢাকা বিমানবন্দরে বৈধ ট্রাভেল ডকুমেন্ট দেখানোর পরও বিড়ম্বনার অন্ত নেই।

প্রবাসীদের দাবি, তাদের সমস্যাগুলো সরকার আমলে নিয়ে তাদের জীবনকে সহজ করে তুলতে সহায়তা করবে।

শাইখ সিরাজ : মিডিয়া ব্যক্তিত্ব