পৃথিবীর বুকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দু’জন মানুষ হলেন মা-বাবা। একদম জন্মের আগ থেকেই এ দু’টি মানুষের কষ্টের শেষ নেই সন্তানকে নিয়ে। অনেকসময় খাবারদাবার পর্যন্ত সন্তানের জন্য ছেড়ে দেন। একটু অসুখে পেলে স্বয়ং কষ্টানুভব করেন নিজে। যখন সন্তান বড় হয়, তখন অদ্ভুতভাবে মা-বাবা ক্রমেই দুর্বল হতে থাকেন। একসময় সন্তানের সাহায্য ছাড়া চলতে পারেন না। ঠিক সেই সময়টাই সন্তানের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। সে সৌভাগ্যবান হবে নাকি দুর্ভাগা, সেটি তার ব্যাপার। মা-বাবা যখন দুর্বল তখন তাদের সেবা শুশ্রƒষা করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে ইসলামে। বর্তমানে মা-বাবার অবাধ্যতা বেড়ে চলেছে। আঘাত করাও স্বাভাবিক হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর গালি দেয়ার বিষয়টি তো বলতেই হয় না। এটা সমাজের জন্য অশনিসংকেত। ইসলামে এগুলো গুরুতর অপরাধ হিসেবে পরিগণিত হয়। মা-বাবার সাথে ভালো আচরণের নির্দেশ বারবার এসেছে। তাদের সাথে কথা বলার পদ্ধতিও আল্লাহ শিখিয়ে দিয়েছেন। কোনো সময় বিরক্ত হয়ে ‘উহ’ শব্দটি পর্যন্ত বলতে নিষেধ করা হয়েছে। কেননা, এতে মা-বাবার প্রতি বিরক্তি প্রকাশ পায়। তারা এগুলো শুনলে খুব কষ্টানুভব করেন। আল্লাহ বলেন, ‘তাদের মধ্যে একজন অথবা উভয়েই যদি তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হয়, তবে তাদেরকে ‘উহ’ শব্দটিও বলো না, তাদের ধমকও দিও না এবং তাদের সাথে নরমভাবে কথা বলো।’ (সূরা বনি ইসরাঈল-২৩)
অপর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তাদের সামনে ভালোবাসার সাথে, নম্রভাবে মাথা নত করে দাও এবং বলো, ‘হে আমার পালনকর্তা, তাদের উভয়ের প্রতি রহম করো, যেমন তারা আমাকে শৈশবকালে লালন-পালন করেছেন।’ (সূরা বনি ইসরাঈল-২৪)
এই আয়াত দু’টির দ্বারা বাবা-মাকে গালি দেয়া কিংবা কঠিন কথা বলা স্পষ্টত হারাম হওয়া বোঝায়। তা ছাড়াও এগুলো হারাম হওয়ার ব্যাপারে কুরআনে অনেক আয়াত ও হাদিস আছে।
এমনিতেই যেকোনো মুসলিমকে গালি দেয়া স্পষ্টত হারাম। বিভিন্ন আয়াত ও হাদিস দ্বারা প্রতীয়মান হয়। কিন্তু মা-বাবাকে গালি দেয়া শুধুই যে হারাম এতটুকু নয়, কোথাও কোথাও আরো কঠিন কথা বলা হয়েছে। মহানবী সা: বলেন, ‘যে পিতাকে গালি দেয় সে অভিশপ্ত, যে মাকে গালি দেয় সে অভিশপ্ত। গায়রুল্লাহর নামে জবাইকারী অভিশপ্ত। জমির সীমানা-চিহ্ন পরিবর্তনকারী অভিশপ্ত। অন্ধকে ভুল পথ নির্দেশকারী অভিশপ্ত। চতুষ্পদ প্রাণীর সাথে সঙ্গমকারী অভিশপ্ত। আর যে লূত সম্প্রদায়ের মতো কাজ করে সে অভিশপ্ত।’ (মুসনাদে আহমাদ-১৮৭৫, সহিহ ইবনে হিব্বান-৪৪১৭)
লেখক :
- মুস্তাফিজ গাজী
শিক্ষার্থী, জামেয়া কাসিমুল উলূম দরগাহ, হজরত শাহজালাল রহ: সিলেট