দাঁত থেকে হলুদ বর্ণ বা এ জাতীয় ময়লা দূর করার জন্য কাঠ বা গাছের ডাল ব্যবহার করাকে মিসওয়াক বলা হয়। মিসওয়াক করা মহানবী সা:-এর একটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাত। এতে রয়েছে ইহলৌকিক ও পারলৌকিক অনেক ফায়দা। আল্লামা ইবনে আবেদিন বলেছেন, মিসওয়াকে রয়েছে ৭০টির ঊর্ধ্বে উপকারিতা।
মিসওয়াক করার সময় : মিসওয়াক করার সময় ৯টি- ১. নামাজের সময়; ২. কুরআন তিলাওয়াতের সময়; ৩. অজুুর সময়; ৪. ঘুম থেকে জাগলে ; ৫. ঘুমানোর আগে; ৬. মুখ দুর্গন্ধযুক্ত হলে; ৭. দীর্ঘ সময় কথা বলার পর; ৮. পানাহারের পর ও ৯. দুর্গন্ধযুুক্ত খাদ্য খাওয়ার পর। অজু ও নামাজের সময় মিসওয়াক করা সুন্নাত। অন্যান্য সময় মিসওয়াক করা মুস্তাহাব।
মিসওয়াকের গুরুত্ব : মহানবী সা: থেকে মিসওয়াক প্রসঙ্গে ৪০টি হাদিস বর্ণিত আছে। তিনি বলেছেন, ‘যখনই হজরত জিবরাইল আ: আমার কাছে আসতেন, তখনই আমাকে মিসওয়াকের নির্দেশ দিতেন। এতে আমি আশঙ্কা বোধ করলাম যে, (মিসওয়াক করে) আমি আমার মুখের সামনের দিক ক্ষয় করে দেবো’ (আহমদ-২২২৬৯, মিসকাত-৩৫৫)। আয়েশা রা: বলেন, মহানবী সা: মিসওয়াক করতেন। অতঃপর মিসওয়াকটি ধৌত করার জন্য আমাকে দিতেন। আমি (ধৌত করার আগে) প্রথমে তা দিয়ে নিজে মিসওয়াক করতাম। তারপর তা ধৌত করতাম (আবু দাউদ, মিশকাত-৩৫৩)। হজরত আয়েশা রা: আরো বলেন, মহানবী সা: রাতে বা দিনে যখনই ঘুম থেকে উঠতেন তখনই অজু করার আগে মিসওয়াক করতেন। (আহমদ, আবু দাউদ, মিসকাত-৩৫২) মহানবী সা: বলেছেন, ‘নবী-রাসূলদের সুন্নাত হলো চারটি, যথা- ১. লজ্জা করা, অন্য বর্ণনায় খতনা করা; ২. সুগন্ধি ব্যবহার করা; ৩. মিসওয়াক করা; ৪. বিয়ে করা’ (তিরমিজি, মিসকাত-৩৫১)।
যা দিয়ে মিসওয়াক: তিক্ত, কাঁচা ও নরম গাছের ডাল দিয়ে মিসওয়াক করা উত্তম। মহানবী সা: জাইতুন ও খেজুর গাছের ডাল দিয়ে মিসওয়াক করতেন। পিলু গাছের মিসওয়াক ব্যবহারে মস্তিষ্ক সতেজ হয়। দাঁতের ক্যালসিয়াম ও ফসফরাসের অভাব পূরণ করে। ব্রাশ ব্যবহারে মুখ পরিষ্কার হয়, দুর্গন্ধ দূর হয় ও সুন্নাত আদায় হয় কিন্তু ডাল ব্যবহারে যে ফায়দা তা পাওয়া যায় না। মিসওয়াক নিজ হাতের আঙুুলের মতো মোটা এবং এক বিঘত পরিমাণ লম্বা হওয়া উচিত।
মিসওয়াকের নিয়ম : মিসওয়াক করার সুন্নাত পদ্ধতি হলো মুখের ডান দিক থেকে শুরু করা এবং উপর থেকে নিচে মিসওয়াক করা। দাঁতের ভেতর ও বাইরেসহ জিহ্বার গোড়া পর্যন্ত মিসওয়াক করা।
লেখক :
- মুফতি মুহম্মদ রফিকুল ইসলাম
প্রধান ফকিহ, আল জামেয়াতুল ফালাহিয়া কামিল মাদরাসা, ফেনী