ঢাকা , সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::

মুক্তিপণ দিয়েও তাওহীদকে জীবিত পেল না পরিবার

  • সূর্যোদয় ডেস্ক:
  • আপডেট সময় ০৫:৪৭:০০ অপরাহ্ন, সোমবার, ১২ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
  • ১১১৮ বার পড়া হয়েছে

ঢাকার কেরানীগঞ্জের ১০ বছরের শিশু মাদ্রাসাছাত্র তাওহীদ ইসলামকে অপহরণ করে হত্যার পর সেপটিক ট্যাংকে লাশ গুম করা হয়। এরপর শিশুটির পরিবারের কাছে মুক্তিপণের জন্য দাবি করা হয়৩ লাখ টাকা। টাকা পেলে শিশুটিকে ছেড়ে দেবে এমন আশ্বাসে ঘাতকের দাবি করা টাকা মেটানো হয়। এরপরও জীবিত অবস্থায় শিশুকে ফেরত পায়নি তার পরিবার।

আজ সোমবার দুপুরে নৃশংস এ হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দেন র‌্যাব-১০ এর আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন।

সংবাদ সম্মেলনে খন্দকার আল মঈন জানান, ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের আব্দুল্লাহপুর এলাকার রসুলপুর জামি’আ ইসলামিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানায় নাজেরা বিভাগে পড়াশুনা করত শিশু তাওহীদ ইসলাম। গত শনিবার রাতে মাদ্রাসা থেকে বাড়িতে ফেরার পথে নিখোঁজ হয় সে। এরপর আনুমানিক রাড়ে ৯টার দিকে অজ্ঞাতপরিচয় এক ব্যক্তি শিশুটির পরিবারের কাছে ফোন করে জানায়, ‘তাওহীদকে অপহরণ করা হয়েছে এবং তাকে জীবিত পেতে চাইলে তিন লাখ টাকা লাগবে।’

ওইদিন রাতেই ভিকটিমের মা বাদী হয়ে দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানায় একটি অপহরণ মামলা দায়ের করেন। পরদিন গতকাল রবিবার তাওহীদের মা র‌্যাবের কাছেও অভিযোগ দায়ের করেন।

এরপর র‌্যাব-১০ অভিযান শুরু করে। ওইদিন রাতে র‌্যাব-১০ এর একটি দল তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তা ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে রাজধানী শ্যামপুরের পোস্তগোলা এলাকায় অভিযান চালায়। অভিযানে ঘাতক মো. মকবুল হোসেনকে (৩৭) গ্রেপ্তার করা হয়। এসময় তার কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় মুক্তিপণের ২ লাখ ৯০ হাজার টাকা।

তিনি আরও জানান, ঘাতক মকবুল পেশায় রাজমিস্ত্রি। গ্রেপ্তারের পর মকবুল র‌্যাবের কাছে শিশু তাওহীদকে হত্যার বর্ণনা দিয়েছেন। মকবুল র‌্যাবের কাছে জানিয়েছেন, তাওহীদের পরিবার ও মকবুল একই এলাকায় থাকতেন। কয়েকদিন আগে মকবুল তাওহীদের বাসায় রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। তখন থেকে তাওহীদের পরিবারের সঙ্গে তার সুসম্পর্ক ছিল। তাওহীদ সকালে মাদ্রাসার উদ্দেশে বাসা থেকে বের হত এবং বাসায় ফিরতে প্রায়ই সন্ধ্যা হয়ে যেত। মকবুলের ধারণা ছিল, তাওহীদের বাবা প্রবাসী, তাই শিশুটিকে অপহরণ করলে মোটা অংকের মুক্তিপণ আদায় করা যাবে। 

পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী, গত ১০ ফেব্রুয়ারি রাতে মাদ্রাসা থেকে ফেরার পথে শিশু তাওহীদকে মুখ চেপে ধরে ওই এলাকার একটি নির্জন জায়গায় নিয়ে গিয়ে তার হাত-পা ও মুখ বেঁধে রাখেন মকবুল। এরপর তাওহীদের পরিবারের কাছে ফোন দিয়ে অপহরণের বিষয়টি জানায় এবং ৩ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন। মুক্তিপণের টাকা না দিলে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তা নিলে শিশু তাওহীদকে হত্যা করবে বলে হুমকি দেন মকবুল।

পরবর্তীকালে তাওহীদের মুখের বাঁধন খুলে গেলে সে চিৎকার শুরু করে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে মকবুল তাওহীদের মুখ ও গলা মাফলার দিয়ে পেচিয়ে ধরে শ্বাসরোধ করে নৃশংসভাবে হত্যা করেন।

লাশ গুম করার উদ্দেশে ওই এলাকার নিকটস্থ একটি সেপটিক ট্যাংকের ভিতরে ফেলে রেখে দ্রুত সেখান থেকে পালিয়ে যান তিনি।

এদিকে, পরিদন সকালে মুক্তিপণের টাকা নিয়ে প্রথমে আব্দুল্লাহপুর বাজারে, সেখান থেকে রাজেন্দ্রপুর, তারপর রসুলপুর আসতে বলে এভাবে ভিকটিমের মামাকে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরিয়ে সর্বশেষ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মকবুলের কথা মত ঢাকার দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জের রাজেন্দ্রপুরে ঢাকা-মাওয়া হাইওয়ের ফুটওভার ব্রিজের উপরে ৪ নম্বর পিলারের গোড়ায় নগদ তিন লাখ টাকা রেখে আসে।

পরবর্তীকালে মকবুল মুক্তিপণের টাকা নিয়ে পোস্তগোলা এলাকায় একটি আবাসিক হোটেলে অবস্থান করে। সেখান থেকে র‌্যাবে-১০ এর একটি দল তাকে গ্রেপ্তার করে।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

আজকের সূর্যোদয়

আজকের সূর্যোদয় প্রত্রিকায় আপনাদের স্বাগতম। ‍আমাদের নিউজ পড়ুন এবং বিজ্ঞাপন দিয়ে আমাদের পাশে থাকুন।

বরিশালে মুজিবিয়ানের ৮৭ নেতাকে খুঁজছে গোয়েন্দা সংস্থা

মুক্তিপণ দিয়েও তাওহীদকে জীবিত পেল না পরিবার

আপডেট সময় ০৫:৪৭:০০ অপরাহ্ন, সোমবার, ১২ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

ঢাকার কেরানীগঞ্জের ১০ বছরের শিশু মাদ্রাসাছাত্র তাওহীদ ইসলামকে অপহরণ করে হত্যার পর সেপটিক ট্যাংকে লাশ গুম করা হয়। এরপর শিশুটির পরিবারের কাছে মুক্তিপণের জন্য দাবি করা হয়৩ লাখ টাকা। টাকা পেলে শিশুটিকে ছেড়ে দেবে এমন আশ্বাসে ঘাতকের দাবি করা টাকা মেটানো হয়। এরপরও জীবিত অবস্থায় শিশুকে ফেরত পায়নি তার পরিবার।

আজ সোমবার দুপুরে নৃশংস এ হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দেন র‌্যাব-১০ এর আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন।

সংবাদ সম্মেলনে খন্দকার আল মঈন জানান, ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের আব্দুল্লাহপুর এলাকার রসুলপুর জামি’আ ইসলামিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানায় নাজেরা বিভাগে পড়াশুনা করত শিশু তাওহীদ ইসলাম। গত শনিবার রাতে মাদ্রাসা থেকে বাড়িতে ফেরার পথে নিখোঁজ হয় সে। এরপর আনুমানিক রাড়ে ৯টার দিকে অজ্ঞাতপরিচয় এক ব্যক্তি শিশুটির পরিবারের কাছে ফোন করে জানায়, ‘তাওহীদকে অপহরণ করা হয়েছে এবং তাকে জীবিত পেতে চাইলে তিন লাখ টাকা লাগবে।’

ওইদিন রাতেই ভিকটিমের মা বাদী হয়ে দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানায় একটি অপহরণ মামলা দায়ের করেন। পরদিন গতকাল রবিবার তাওহীদের মা র‌্যাবের কাছেও অভিযোগ দায়ের করেন।

এরপর র‌্যাব-১০ অভিযান শুরু করে। ওইদিন রাতে র‌্যাব-১০ এর একটি দল তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তা ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে রাজধানী শ্যামপুরের পোস্তগোলা এলাকায় অভিযান চালায়। অভিযানে ঘাতক মো. মকবুল হোসেনকে (৩৭) গ্রেপ্তার করা হয়। এসময় তার কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় মুক্তিপণের ২ লাখ ৯০ হাজার টাকা।

তিনি আরও জানান, ঘাতক মকবুল পেশায় রাজমিস্ত্রি। গ্রেপ্তারের পর মকবুল র‌্যাবের কাছে শিশু তাওহীদকে হত্যার বর্ণনা দিয়েছেন। মকবুল র‌্যাবের কাছে জানিয়েছেন, তাওহীদের পরিবার ও মকবুল একই এলাকায় থাকতেন। কয়েকদিন আগে মকবুল তাওহীদের বাসায় রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। তখন থেকে তাওহীদের পরিবারের সঙ্গে তার সুসম্পর্ক ছিল। তাওহীদ সকালে মাদ্রাসার উদ্দেশে বাসা থেকে বের হত এবং বাসায় ফিরতে প্রায়ই সন্ধ্যা হয়ে যেত। মকবুলের ধারণা ছিল, তাওহীদের বাবা প্রবাসী, তাই শিশুটিকে অপহরণ করলে মোটা অংকের মুক্তিপণ আদায় করা যাবে। 

পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী, গত ১০ ফেব্রুয়ারি রাতে মাদ্রাসা থেকে ফেরার পথে শিশু তাওহীদকে মুখ চেপে ধরে ওই এলাকার একটি নির্জন জায়গায় নিয়ে গিয়ে তার হাত-পা ও মুখ বেঁধে রাখেন মকবুল। এরপর তাওহীদের পরিবারের কাছে ফোন দিয়ে অপহরণের বিষয়টি জানায় এবং ৩ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন। মুক্তিপণের টাকা না দিলে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তা নিলে শিশু তাওহীদকে হত্যা করবে বলে হুমকি দেন মকবুল।

পরবর্তীকালে তাওহীদের মুখের বাঁধন খুলে গেলে সে চিৎকার শুরু করে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে মকবুল তাওহীদের মুখ ও গলা মাফলার দিয়ে পেচিয়ে ধরে শ্বাসরোধ করে নৃশংসভাবে হত্যা করেন।

লাশ গুম করার উদ্দেশে ওই এলাকার নিকটস্থ একটি সেপটিক ট্যাংকের ভিতরে ফেলে রেখে দ্রুত সেখান থেকে পালিয়ে যান তিনি।

এদিকে, পরিদন সকালে মুক্তিপণের টাকা নিয়ে প্রথমে আব্দুল্লাহপুর বাজারে, সেখান থেকে রাজেন্দ্রপুর, তারপর রসুলপুর আসতে বলে এভাবে ভিকটিমের মামাকে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরিয়ে সর্বশেষ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মকবুলের কথা মত ঢাকার দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জের রাজেন্দ্রপুরে ঢাকা-মাওয়া হাইওয়ের ফুটওভার ব্রিজের উপরে ৪ নম্বর পিলারের গোড়ায় নগদ তিন লাখ টাকা রেখে আসে।

পরবর্তীকালে মকবুল মুক্তিপণের টাকা নিয়ে পোস্তগোলা এলাকায় একটি আবাসিক হোটেলে অবস্থান করে। সেখান থেকে র‌্যাবে-১০ এর একটি দল তাকে গ্রেপ্তার করে।