আমাদের মধ্যে দুই শ্রেণীর মানুষ বসবাস করে। এক শ্রেণী; যারা সদা আল্লাহ তায়ালার ইবাদত-বন্দেগিতে ব্যতিব্যস্ত আছে। দ্বিতীয় শ্রেণী; যারা সদা গোনাহের জালে ফেঁসে আছে। প্রথম শ্রেণীর জন্য এই সফর বড় আকর্ষণীয় ও আনন্দদায়ক। দ্বিতীয় শ্রেণীর জন্য এই সফর বড় ভয় ও আতঙ্কের। আর এই দুই অবস্থা দুনিয়ার সফরের বেলায়ও হয়ে থাকে। তাই তো দেখা যায়, প্রধানমন্ত্রী কাউকে যদি অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ জানান, তাহলে তার জন্য এই সফর হয় বড় আকর্ষণীয় ও আনন্দের। সে এর জন্য আগে থেকে প্রস্তুতি গ্রহণ করবে। পক্ষান্তরে সমাজের মধ্যে কেউ যদি চুরি কিংবা দুর্নীতি করে থাকে আর সরকারের পক্ষ থেকে তার বিরুদ্ধে আদেশ জারি হয়ে থাকে, তাহলে সে নিজের নির্দোষিতার সাক্ষী জমা করবে, আইনজীবীদের সাথে পরামর্শ করবে, সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করবে। মোটকথা, উভয় ধরনের সফরেই বিভিন্ন রকমের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়ে থাকে। ঠিক এই দুই ধরনের অবস্থা পরকালের সফরে হওয়া সত্ত্বেও কেন আমরা কোনো প্রস্তুতি গ্রহণ করছি না। কেন চরম গাফিলতি, উদাসীনতা ও নির্লিপ্ততা প্রদর্শন করছি। এটি তো স্বতঃসিদ্ধ যে, পরকালযাত্রা সবার জন্যই অবশ্যম্ভাবী।
এ জন্য আমরা যদি আল্লাহ তায়ালার পরম অনুগত ও তাঁবেদার হই তাহলে এ সফর বড় আনন্দ ও উৎফুল্লের হবে। অন্যথায় তা হবে বড় ভয় ও আতঙ্কের সফর। আমি আপনি কী কী প্রস্তুতি গ্রহণ করেছি আর মুক্তিরই বা কোন কোন দিক ভেবে কিংবা শলাপরামর্শ করে ঠিক করে নিয়েছি? কী পরিমাণ ইবাদত করেছি, অন্যদের হক ও পাওনা কী পরিমাণ আদায় করে দিয়েছি?
আখিরাতের সফরে প্রতিটি মুসলমানের জন্যই আশা ও আশঙ্কা এবং আনন্দ ও আতঙ্ক রয়েছে। কারণ, ঈমান আশা ও আশঙ্কার মাঝখানে অবস্থিত। মুসলমানদের আসল অবস্থা এমন হওয়া উচিত যে, ভয় ও আশার সম্মিলন ঘটবে। যেমন আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন- ‘তারা আমাকে আশা ও আশঙ্কা নিয়ে ডাকে’ (সূরা আম্বিয়া-৯০)। অন্যত্র আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন- ‘হে ঈমানদারগণ, আল্লাহকে ভয় করো, আর এই চিন্তা করো, আগামীর জন্য কী করে রেখেছ’ (সূরা হাশর-১৮)।
হজরত উমর রা: বলেন, কিয়ামতের ময়দানে যদি এই ঘোষণা দেয়া হয়, শুধু একজন ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে তাহলে আমি আশা পোষণ করব, সে একজন হবো আমি। পক্ষান্তরে যদি ঘোষণা হয়, একজন মাত্র জাহান্নামে যাবে তাহলে এই ভেবে আমি ভীত-কম্পিত হবো যে, খুব সম্ভব ওই একজন আমি। পরিস্থিতি যখন এই, তখন সদা তওবা-ইস্তিগফারেও মগ্ন থাকতে হবে। সবসময় দ্বীনি কর্মকাণ্ডেও সর্বতোভাবে আত্মনিয়োগ করতে হবে।
লেখক :
- মাওলানা হুসাইন আহমদ
আলেম ও প্রাবন্ধিক