ঢাকা , মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::

মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশ রাখতে চায় সরকার

  • আবু আলী
  • আপডেট সময় ১১:৪১:৩৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৩
  • ১১৪৬ বার পড়া হয়েছে

২০২২-২৩ অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৬ শতাংশে রাখার পরিকল্পনা ছিল অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের। কিন্তু সেটি বর্তমানে ৯ দশমিক ৩৩ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। যদিও অর্থমন্ত্রী তার বাজেট বক্তৃতায় বলেছিলেন, বিদ্যমান চাহিদার প্রবৃদ্ধি কমিয়ে সরবরাহ বাড়ানোই হবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের মূল কৌশল। কিন্তু বর্তমানে প্রায় সব ধরনের পণ্যের দাম বেড়েছে। মূল্যস্ফীতিটা খুব বিস্তৃত। আমদানি করা পণ্যে এবং দেশে উৎপাদিত সব ধরনের পণ্যের ক্ষেত্রেই মূল্যস্ফীতির চাপ রয়েছে। আন্তর্জাতিক মূল্যবৃদ্ধির পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ চাহিদার একটি বড় ধরনের বৃদ্ধি হয়েছে। এমন পরিস্থিতির মধ্যে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট তৈরির কাজ চলমান। আগামী অর্থবছরের বাজেটে মূল্যস্ফীতিকে ৬ শতাংশের মধ্যে আটকে রাখতে চান অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। কিন্তু আসলে তার হাতে কী ধরনের জাদু আছে যে দ্রব্যমূল্যের এই ঊর্ধ্বগতিতে তিনি মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশের মধ্যে আটকে রাখবেন।

এ বিষয়ে পলিসি রিচার্স ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর আমাদের সময়কে বলেন, আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট হবে চ্যালেঞ্জিং। সরকার একদিকে মূল্যস্ফীতি কমাতে পারছে না। কারণ, টাকা ছাপাতে হচ্ছে। টাকা ছাপিয়ে বাজেটে ভর্তুকি দেওয়া বন্ধ করতে হবে। অন্যদিকে ঋণের সুদের হারে ক্যাপ দিয়ে রাখা হয়েছে। আবার ডলারের সংকট থেকে বেরও হয়ে আসতে পারছে না। ডলার সংকট যতদিন থাকবে, পণ্যের সরবরাহ পর্যাপ্ত হবে না, বিনিয়োগ ও প্রবৃদ্ধি এবং মূল্যস্ফীতি কোনোটাই নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। আগামী অর্থবছরে কমপক্ষে আড়াই লাখ কোটি টাকার ঘাটতি থাকবে। এ ঘাটতি পূরণ করতে হবে। এত বড় ঘাটতির অর্থায়ন সরকার কীভাবে জোগাড় করবে, সেটিও ভাবতে হবে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক টাকা ছাপিয়ে এ কাজটি করতে গেলে মূল্যস্ফীতির ওপর বড় ধরনের চাপ পড়বে এবং ডলারের আরও অবমূল্যায়ন হতে পারে। তিনি আরও বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। ভারত ৩-৪ শতাংশে নামিয়ে আনবে। এক্ষেত্রে সরকারের পলিসি কী নেবে তার ওপর নির্ভর করছে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখা। তিনি বলেন, মুদ্রার বিনিময় হার বাজারের ওপর ছেড়ে দিতে হবে। সুদের হার বাড়াতে হবে।

অর্থ বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণকে আগামী বাজেটে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এ লক্ষ্যে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কয়েকটি কর্মসূচি গ্রহণ করবে সরকার। এছাড়া বৈদেশিক মুদ্রা ডলারের রিজার্ভ বাড়ানো এবং আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য বাড়াতে ঋণপত্র (এলসি) খোলার বিষয়টি আরও সহজীকরণ করা হবে। অর্থবিভাগ আশা করছে, যে গতিতে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ছে তাতে আগামী তিন মাসের মধ্যে এলসি পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে। এছাড়া আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ভর্তুকি ও নগদ সহায়তা বাড়ানোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে ভর্তুকি মূল্যে খাদ্য সহায়তা দিতে টিসিবি, ওএমএস ও ভিজিএফ এবং হতদরিদ্রদের জন্য ১৫ টাকা মূল্যের খাদ্য সহায়তা পরিমাণ আরও বাড়ানো হবে। বাড়ানো হবে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতা। বয়স্ক ও বিধবা ভাতা বাড়ানো এবং আশ্রয়ণ প্রকল্পের মতো কর্মসূচির আওতা আরও বাড়ানো হয়েছে।

জানা গেছে, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে বাজেটে বেশকিছু পদক্ষেপ থাকবে। এর মধ্যে টিসিবির মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে খাদ্য সহায়তা বাড়ানো, খোলা বাজার বিক্রি কার্যক্রম বা ওএমএস কার্যক্রম বাড়ানো, কৃষি উৎপাদনে বিপুল পরিমাণ ভর্তুকি ও নগদ সহায়তা, ভিজিএফ কার্ড এবং ১৫ টাকা মূল্যের চাল বিক্রি কার্যক্রম জোরদার করার মতো কর্মসূচি আরও জোরদার করা হবে।

সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় সহনীয় করতে আগামী বাজেটে রেকর্ড পরিমাণ ভর্তুকি বরাদ্দ দিতে যাচ্ছে সরকার। এতে ভোগ্য ও নিত্যপণ্যের দাম কমানোর পদক্ষেপ থাকবে। বাড়ানো হবে কৃষি উৎপাদন। এছাড়া দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ করে কর্মসংস্থান বাড়ানোর মতো কর্মসূচি নেওয়া হবে নতুন বাজেটে। এলক্ষ্যে ভর্তুকি ও নগদ প্রণোদনা খাতে প্রায় ৩৫ শতাংশ ব্যয় বাড়িয়ে ১ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের প্রাক্কলন করা হয়েছে। সংশ্লিষ্টদের মতে, এটি হবে জনবান্ধব বাজেট। এর মাধ্যমে দেশের মানুষকে স্বস্তি দেওয়া হবে।

জানা গেছে, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণ প্রদানের শর্তগুলোর চ্যালেঞ্জ সামনে রেখেই আগামী বাজেটে ভর্তুকি ও নগদ প্রণোদনা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এটি করা হবে দেশের মানুষকে স্বস্তি দিতে। বৈশ্বিক সংকটের কারণে এক বছরের বেশি সময় ধরে অর্থনীতি চাপের মুখে রয়েছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো দেশেও ভোগ্যপণ্যের দাম বেড়ে গেছে। অর্থ বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং অন্যান্য কারণে মূল্যস্ফীতির প্রভাবে চলতি অর্থবছরে বিভিন্ন খাতে সরকারের দেওয়া ভর্তুকি বেড়েছে। আগামী অর্থবছরেও তা অব্যাহত রাখা হতে পারে।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

আজকের সূর্যোদয়

আজকের সূর্যোদয় প্রত্রিকায় আপনাদের স্বাগতম। ‍আমাদের নিউজ পড়ুন এবং বিজ্ঞাপন দিয়ে আমাদের পাশে থাকুন।

বরিশালে মুজিবিয়ানের ৮৭ নেতাকে খুঁজছে গোয়েন্দা সংস্থা

মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশ রাখতে চায় সরকার

আপডেট সময় ১১:৪১:৩৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৩

২০২২-২৩ অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৬ শতাংশে রাখার পরিকল্পনা ছিল অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের। কিন্তু সেটি বর্তমানে ৯ দশমিক ৩৩ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। যদিও অর্থমন্ত্রী তার বাজেট বক্তৃতায় বলেছিলেন, বিদ্যমান চাহিদার প্রবৃদ্ধি কমিয়ে সরবরাহ বাড়ানোই হবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের মূল কৌশল। কিন্তু বর্তমানে প্রায় সব ধরনের পণ্যের দাম বেড়েছে। মূল্যস্ফীতিটা খুব বিস্তৃত। আমদানি করা পণ্যে এবং দেশে উৎপাদিত সব ধরনের পণ্যের ক্ষেত্রেই মূল্যস্ফীতির চাপ রয়েছে। আন্তর্জাতিক মূল্যবৃদ্ধির পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ চাহিদার একটি বড় ধরনের বৃদ্ধি হয়েছে। এমন পরিস্থিতির মধ্যে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট তৈরির কাজ চলমান। আগামী অর্থবছরের বাজেটে মূল্যস্ফীতিকে ৬ শতাংশের মধ্যে আটকে রাখতে চান অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। কিন্তু আসলে তার হাতে কী ধরনের জাদু আছে যে দ্রব্যমূল্যের এই ঊর্ধ্বগতিতে তিনি মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশের মধ্যে আটকে রাখবেন।

এ বিষয়ে পলিসি রিচার্স ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর আমাদের সময়কে বলেন, আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট হবে চ্যালেঞ্জিং। সরকার একদিকে মূল্যস্ফীতি কমাতে পারছে না। কারণ, টাকা ছাপাতে হচ্ছে। টাকা ছাপিয়ে বাজেটে ভর্তুকি দেওয়া বন্ধ করতে হবে। অন্যদিকে ঋণের সুদের হারে ক্যাপ দিয়ে রাখা হয়েছে। আবার ডলারের সংকট থেকে বেরও হয়ে আসতে পারছে না। ডলার সংকট যতদিন থাকবে, পণ্যের সরবরাহ পর্যাপ্ত হবে না, বিনিয়োগ ও প্রবৃদ্ধি এবং মূল্যস্ফীতি কোনোটাই নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। আগামী অর্থবছরে কমপক্ষে আড়াই লাখ কোটি টাকার ঘাটতি থাকবে। এ ঘাটতি পূরণ করতে হবে। এত বড় ঘাটতির অর্থায়ন সরকার কীভাবে জোগাড় করবে, সেটিও ভাবতে হবে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক টাকা ছাপিয়ে এ কাজটি করতে গেলে মূল্যস্ফীতির ওপর বড় ধরনের চাপ পড়বে এবং ডলারের আরও অবমূল্যায়ন হতে পারে। তিনি আরও বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। ভারত ৩-৪ শতাংশে নামিয়ে আনবে। এক্ষেত্রে সরকারের পলিসি কী নেবে তার ওপর নির্ভর করছে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখা। তিনি বলেন, মুদ্রার বিনিময় হার বাজারের ওপর ছেড়ে দিতে হবে। সুদের হার বাড়াতে হবে।

অর্থ বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণকে আগামী বাজেটে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এ লক্ষ্যে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কয়েকটি কর্মসূচি গ্রহণ করবে সরকার। এছাড়া বৈদেশিক মুদ্রা ডলারের রিজার্ভ বাড়ানো এবং আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য বাড়াতে ঋণপত্র (এলসি) খোলার বিষয়টি আরও সহজীকরণ করা হবে। অর্থবিভাগ আশা করছে, যে গতিতে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ছে তাতে আগামী তিন মাসের মধ্যে এলসি পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে। এছাড়া আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ভর্তুকি ও নগদ সহায়তা বাড়ানোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে ভর্তুকি মূল্যে খাদ্য সহায়তা দিতে টিসিবি, ওএমএস ও ভিজিএফ এবং হতদরিদ্রদের জন্য ১৫ টাকা মূল্যের খাদ্য সহায়তা পরিমাণ আরও বাড়ানো হবে। বাড়ানো হবে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতা। বয়স্ক ও বিধবা ভাতা বাড়ানো এবং আশ্রয়ণ প্রকল্পের মতো কর্মসূচির আওতা আরও বাড়ানো হয়েছে।

জানা গেছে, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে বাজেটে বেশকিছু পদক্ষেপ থাকবে। এর মধ্যে টিসিবির মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে খাদ্য সহায়তা বাড়ানো, খোলা বাজার বিক্রি কার্যক্রম বা ওএমএস কার্যক্রম বাড়ানো, কৃষি উৎপাদনে বিপুল পরিমাণ ভর্তুকি ও নগদ সহায়তা, ভিজিএফ কার্ড এবং ১৫ টাকা মূল্যের চাল বিক্রি কার্যক্রম জোরদার করার মতো কর্মসূচি আরও জোরদার করা হবে।

সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় সহনীয় করতে আগামী বাজেটে রেকর্ড পরিমাণ ভর্তুকি বরাদ্দ দিতে যাচ্ছে সরকার। এতে ভোগ্য ও নিত্যপণ্যের দাম কমানোর পদক্ষেপ থাকবে। বাড়ানো হবে কৃষি উৎপাদন। এছাড়া দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ করে কর্মসংস্থান বাড়ানোর মতো কর্মসূচি নেওয়া হবে নতুন বাজেটে। এলক্ষ্যে ভর্তুকি ও নগদ প্রণোদনা খাতে প্রায় ৩৫ শতাংশ ব্যয় বাড়িয়ে ১ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের প্রাক্কলন করা হয়েছে। সংশ্লিষ্টদের মতে, এটি হবে জনবান্ধব বাজেট। এর মাধ্যমে দেশের মানুষকে স্বস্তি দেওয়া হবে।

জানা গেছে, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণ প্রদানের শর্তগুলোর চ্যালেঞ্জ সামনে রেখেই আগামী বাজেটে ভর্তুকি ও নগদ প্রণোদনা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এটি করা হবে দেশের মানুষকে স্বস্তি দিতে। বৈশ্বিক সংকটের কারণে এক বছরের বেশি সময় ধরে অর্থনীতি চাপের মুখে রয়েছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো দেশেও ভোগ্যপণ্যের দাম বেড়ে গেছে। অর্থ বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং অন্যান্য কারণে মূল্যস্ফীতির প্রভাবে চলতি অর্থবছরে বিভিন্ন খাতে সরকারের দেওয়া ভর্তুকি বেড়েছে। আগামী অর্থবছরেও তা অব্যাহত রাখা হতে পারে।