বরিশাল নগরীতে দখল-দুষণে হারিয়ে যাওয়া সাগরদী খালের প্রবাহ ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগ নিয়েছে সিটি করপোরেশন। নাব্যতা বাড়ানোর পাশপাশি খালের দুই তীরে ওয়াকওয়ে, বাই সাইকেল লেন, ফুটওভার ব্রিজ, স্ট্রিট লাইট, বেঞ্চ, সবুজায়ন ও ডাস্টবিন স্থাপনের মধ্য দিয়ে দৃস্টিনন্দন করা হবে। এতে নগরীর একাংশের মানুষ জলাবদ্ধতা থেকে রক্ষা পাবে এবং মরা খাল পরিনত হবে পর্যটন কেন্দ্রে। মন্ত্রনালয়ে জমা দেয়া ২২টি খাল খনন প্রকল্প অনুমোদন হলে অন্য খালগুলোও একইভাবে নাব্যতা বাড়িয়ে দৃস্টিনন্দন করা হবে বলে জানিয়েছেন সিটি মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ।
নদী-খালের দেশ হিসেবে পরিচিত বরিশাল নগরীর ৪২টি খালের অনেকগুলো ভরাট করে ড্রেন এবং রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে। চরের বাড়ির শোভারানীর খাল পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন করে সেখানে বহুতল ভবন নির্মান করা হয়েছে। অবৈধ দখল দুষনের কারনে কয়েকটি খাল নালায় পরিনত হয়েছে। খালগুলোর প্রবাহ না থাকায় একটু বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতার কবলে পড়েন নগরবাসী।
এ অবস্থায় ২০১৮ সালের ২৩ অক্টোবর দায়িত্ব গ্রহনের পর বর্তমান সিটি মেয়র নগরীর পুরনো অংশের ২২টি খাল খনন, তীর সংরক্ষন, সৌন্দর্য বর্ধন এবং বনায়নের জন্য ২ হাজার ৬শ’ কোটি টাকার একটি প্রকল্প জমা দেন। মেয়র হিসেবে সাদিক আবদুল্লাহর ৫ বছর মেয়াদ শেষ হতে চললেও খাল খনন প্রকল্পের অগ্রগতি নেই।
এ অবস্থায় ভাবমূর্তি রক্ষায় জার্মানির কেএফডবি্লউ ব্যাংকের জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজিত নগর উন্নয়ন কর্মসূচীর প্রথম পর্বের বরাদ্দের ১৩ কোটি টাকা ব্যয়ে আজ বিকেলে নগরীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সাগরদী খাল খনন এবং সৌন্দর্য বর্ধন কাজের শুভ সূচনা করেন।
এই কাজের আওতায় সাগরদী খালের কীর্তনখোলা নদীর সংযোগস্থল থেকে সাগরদী হয়ে রুইয়ার পোল পর্যন্ত ৭ কিলোমিটার খনন, খালের সন্মুখস্থল থেকে বধ্যভ‚মি পর্যন্ত ১.৩৫ কিলোমিটার ওয়াকওয়ে ও বাইসাইকেল লেন, একটি ফুট ওভার ব্রিজ, দুই তীরে ৮৬টি বেঞ্চ স্থাপন, খালের তীরে ৮৬টি স্ট্রিট লাইট স্থাপন, খালে দুই তীরে বিভিন্ন ধরনের ৮৩০টি বৃক্ষ রোপন এবং ১৫০টি ডাস্টবিন স্থাপন করা হবে বলে জানিয়েছেন সিটি করপোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল বাশার।
খনন ও সৌন্দর্য বর্ধন কাজের উদ্বোধনকালে সিটি মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. ছাদেকুল আরেফিন, বিএমপি কমিশনার মো. সাইফুল ইসলাম, অতিরিক্ত রেঞ্জ ডিআইজি মো. শহীদুল্লাহ, আর্মড পুলিশ ব্যাটেলিয়নের অতিরিক্ত ডিআইজি মোয়াজ্জেম হোসেন ভ‚ঞা, বিসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ ফারুক আহমেদ, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মন্দীপ ঘরাই, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান রিন্টু, বিভিন্ন সরকারী কলেজের অধ্যক্ষ, বিসিসি’র ওয়ার্ড কাউন্সিলর, বিভিন্ন ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সম্পাদক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বসহ বিশিস্ট ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
বিকেলে ওই খালের সংযোগস্থলে নাব্যতা সংকটের কারনে আটকে থাকা মাটি বোঝাই এক ট্রলার চালক মো. ইদ্রিস বলেন, খালে পানি না থাকায় তলানী আটকে গেছে। এখন জোয়ারের পানির অপেক্ষা করছেন। খালটি খনন করার কথা শুনে ইদ্রিস বলেন, অনেক মেয়র আইছে আর গেছে। হ্যারা খাল কাটার কথা কইয়াও খাল খনন করে নাই। এবার মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ খাল খনন শুরু করেছে। এই কাজ শুরু হলে নগরীর অভ্যন্তরে পানি পথে পন্য পরিবহনে সুবিধা হবে বলে বলে তিনি জানান।
উদ্বোধনস্থলে উপস্থিত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফের ড. মো. ছাদেকুল আরেফিন বলেন, মেয়র খাল খননের কাজ শুরু করেছেন। খননের পর এর নাব্যতা এবং সৌন্দর্য রক্ষার দায়িত্ব নগরবাসীর। এর সুফল অচিরেই জনগন ভোগ করবে বলে তিনি আশা করেন।
অনুষ্ঠানে মেট্রো পুলিশ কমিশনার মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, খালের দুই তীরে তীরে অনেক অবৈধ দখলদার রয়েছে। খাল খনন এবং সৌন্দর্য বর্ধনকাজে কোন বাঁধা কিংবা প্রতিবন্ধকতা সৃস্টি করা হলে পুলিশ কঠোর পদক্ষেপ নেবে। নগরীর উন্নয়নে পুলিশ সর্বাত্মক সহায়তা করবে বলে তিনি জানান।