মেহেরপুর সদর হাসপাতালে রোগীদের ভোগান্তি দেখার মতো যেন কেউ নেই। ঘন ঘন লোডশেডিংয়ে সবার নাকাল অবস্থা। ওদিকে নেই জেনারেটরের সুবিধা। বর্তমানে হাতপাখা আর চার্জার ফ্যানেই রোগীদের ভরসা।
বৃহস্পতিবার বেলা ২টার দিকে সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালে দমবন্ধ পরিবেশ বিরাজ করছে। বৈরি আবহাওয়ায় বাড়ছে রোগ-বালাই। হাসপাতালে সংকুলান হচ্ছে না রোগীদের। বেডে জায়গা না পেয়ে অনেকে মেঝেতে শুয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এ অবস্থায় ঘণ্টায় ঘণ্টায় লোডশেডিংয়ে রোগীরা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন। ওদিকে জ্বালানির বরাদ্দের অভাবে হাসপাতালের পক্ষ থেকেও দেয়া হচ্ছে না জেনারেটরের সুবিধা।
হাসপাতালের এক ওয়ার্ড বয়ের সাথে এ প্রতিনিধির কথা হয়। বিদ্যুতের পরিস্থিতি জানতে চাইলে তিনি বলেন, সকাল ৮টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত পাঁচবার বিদ্যুৎ গেছে। প্রতি দিনই ঘণ্টায় ঘণ্টায় বিদ্যুৎ আসা-যাওয়া করছে। এতে ভ্যাপসা গরমে রোগীদের নাভিশ্বাস অবস্থা।
পুরুষ ওয়ার্ডের ২০ নম্বর বেডে চার দিন ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন মুজিবনগর উপজেলার গৌরীনগর গ্রামের মনিরুজ্জামান (৬৫)। তিনি জানান, আজ (বুহস্পতিবার) ডাক্তার তাকে রিলিজ দিয়েছেন। দমবন্ধ পরিবেশ থেকে তিনি মুক্তি পেলেন। ঘণ্টায় ঘণ্টায় বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার ফলে রোগীদের চরম দুর্ভোগ হচ্ছে। একদিকে বিদ্যুতের লোডশেডিং, অপরদিকে ভ্যাপসা গরম, রোগীদের তাই নাভিশ্বাস অবস্থা।
একই কথা জানালেন মেঝেতে শুয়ে চিকিৎসা নেয়া রোগী সদর উপজেলার হরিরামপুর গ্রামের বসির কাজি (৭০)।
হাসপাতালে জ্বালানি তেল বরাদ্দের বিষয়ে মেহেরপুর গর্ণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শম্ভুরাম পাল বলেন, তিনি তার ঊর্ধ্বতন দফতর থেকে কোনো তেলের বরাদ্দ পাচ্ছেন না। বিভিন্ন প্রকল্পের কাজের বরাদ্দ থেকে কিছু কাটছাট করে তা দিয়ে হাসপাতালের তেল সরবরাহ করে থাকেন।
এ সময় জ্বালানি তেল কেনার বিষয়ে ইতোমধ্যে পদক্ষেপ নিয়েছেন বলেও তিনি জানান।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. জমির মোহাম্মদ হাসিবুস সাত্তার জানান, গড়ে প্রতি দিন তিন শতাধিক রোগী ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। বর্তমানে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি বেশ খারাপ। প্রতি দিন গড়ে চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকছে না। এতে রোগীদের যেমন কষ্ট হচ্ছে, হাসপাতালে কর্তব্যরতদেরও কষ্ট হচ্ছে। বিদ্যুতের অভাবে দাফতরিক কাজও ব্যাহত হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, জ্বালানি তেল বরাদ্দের অভাবে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন জেনারেটরটিও চালানো সম্ভব হচ্ছে না। তাই তিনি মেহেরপুর ওজোপাডিকোর নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন, অন্ততপক্ষে সকাল ৯টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত যেন লোডশেডিং না দেয়া হয়। কারণ, এ সময় চিকিৎসকরা ওয়ার্ডে গিয়ে রোগীদের পর্যবেক্ষণ করেন। তখন রোগীদের বিভিন্ন ধরণের পরীক্ষা-নিরীক্ষারও প্রয়োজন পড়ে।
মেহেরপুর ওজোপাডিকোর নির্বাহী প্রকৌশলী তোফাজ্জেল হোসেন জানান, বর্তমানে মেহেরপুরে বিদ্যুতের চাহিদা ৭ দশমিক ৫ মেগাওয়াট। পাওয়া যাচ্ছে ৪ দশমিক ৬ থেকে ৪ দশমিক ৭ মেগাওয়াট। প্রতি দিন ঘাটতি ২ দশমিক ৬ থেকে ২ দশমিক ৮ মেগাওয়াট। এ কারণে অনন্যপায় হয়ে আবাসিক ও বাণিজ্যিক এলাকার সাথে হাসপাতালেও সকাল, বিকেল ও রাতে লোডশেডিং দিতে বাধ্য হচ্ছে।