ঢাকা , মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::

রমজানের শেষ দশকে মহানবীর আমল

  • সূর্যোদয় ডেস্ক:
  • আপডেট সময় ১০:০২:২৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৩
  • ১১৩০ বার পড়া হয়েছে

পবিত্র রমজানকে দশক হিসেবে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। প্রথম দশক রহমত, দ্বিতীয় দশক মাগফিরাত ও তৃতীয় দশক নাজাত। রমজানের প্রতিটি মুহূর্তই অতি মূল্যবান ও গুরুত্বপূর্ণ। তবে শেষ দশকের গুরুত্ব অত্যধিক। কেননা, এই দশকে রয়েছে কিছু গুরুত্বপূর্ণ আমল। তা হলো রাত্রি জাগরণ, লাইলাতুল কদর অনুসন্ধান, ইতিকাফ ও সাদাকায়ে ফিতর ইত্যাদি।

শেষ দশকের আমল
রমজানের শেষ দশকে রাসূলুল্লাহ সা: ইবাদত-বন্দেগিতে অধিক মনোযোগী হতেন। অন্যান্য সময়ে করা আমলগুলো এই সময় বৃদ্ধি পেত। শেষ দশকে রাসূল সা:-এর কয়েকটি আমল হলো-

১. রাত্রি জাগরণ : উম্মুল মু’মিনিন হজরত আয়েশা রা: থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, রমজানের শেষ দশকে রাসূলুল্লাহ সা: ইবাদতের জন্য লুঙ্গি শক্ত করে বেঁধে ফেলতেন তথা ইবাদতের জন্য সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণ করতেন। সারা রাত জেগে ইবাদত করতেন এবং স্বীয় পরিবার-পরিজনকে জাগিয়ে দিতেন। (সহিহ বুখারি, মুসলিম, মিশকাত-১৯৮৯) হজরত আয়েশা রা: থেকে অপর বর্ণনায় রয়েছে- তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা: রমজানের শেষ দশকে ইবাদতে অধিক সচেষ্ট থাকতেন, যা তিনি অন্য সময়ে করতেন না। (মুসলিম, মিশকাত-১৯৮৮)

২. লাইলাতুল কদর অনুসন্ধান : লাইলাতুন অর্থ রাত। কদরের এক অর্থ সম্মান, মর্যাদা, সুমহান। আরেক অর্থ তাকদির বা ভাগ্যনির্ধারণ। লাইলাতুল কদর অর্থ সম্মানিত রজনী বা ভাগ্য নির্ধারণের রজনী। এই রাত হাজার মাসের চেয়ে মর্যাদাবান এবং এই রাতে পরবর্তী এক বছরের ভাগ্য নির্ধারিত করা হয় বলে এই রাতকে লাইলাতুল কদর বলা হয়। মহানবী সা: এ রাত অনুসন্ধান করতেন এবং উম্মতকেও অনুসন্ধান করতে বলেছেন। ইরশাদ হয়েছে, তোমরা রমজানের শেষ ১০ দিনের বিজোড় রাতে শবেকদর তালাশ করো। (সহিহ বুখারি, মিশকাত-১৯৮৩) কদরের রজনীর নির্দিষ্ট বর্ণনা কুরআন ও হাদিসে নেই। ফলে রাতটি নির্ণয়ে ইমামদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। কারো মতে কদর রমজানের ২১তম রাত, কারো মতে ২৩তম রাত, কেউ বলেন ২৫তম রাত, কেউ বলেন ২৯তম রাত। ইমাম আবু হানিফা রহ:-এর মতে ২৭তম রাত।

৩. ইতিকাফ করা : ইতিকাফ অর্থ অবস্থান করা, আটকে রাখা, নিজেকে বন্দী করা, মসজিদে অবস্থান করা ইত্যাদি। ইসলামী শরিয়তের পরিভাষায় আল্লাহর সন্তুষ্টি ও ইবাদতের উদ্দেশ্যে রমজানের শেষ ১০ দিন মসজিদে অবস্থান করাকে ইতিকাফ বলে। ইতিকাফ রমজানের শেষ দশকের বিশেষ আমল। ভোগবাদী দুনিয়ার মিথ্যে মায়া ত্যাগ করে, পরিবার-পরিজন, চাকরিবাকরি, ব্যবসাবাণিজ্য ইত্যাদি বর্জন করে কেবল মনিবের সন্তুষ্টির জন্য একান্তে বসে ইবাদত-বন্দেগি করা উচ্চ মানসম্পন্ন মু’মিনের পরিচয়। হজরত আয়েশা রা: বলেন, মহানবী সা: রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ করতেন, যে পর্যন্ত না আল্লাহ তাঁকে ওফাত দান করেন। তাঁর পর তাঁর স্ত্রীরা এভাবে ইতিকাফ করতেন। (সহিহ বুখারি, মুসলিম, মিশকাত-১৯৯৬) আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা: প্রতি বছর রমজানের শেষ ১০ দিন ইতিকাফ করতেন। যে বছর তাঁকে তুলে নেয়া হয়, সে বছর তিনি ২০ দিন ইতিকাফ করেছিলেন। (সহিহ বুখারি, মিশকাত-১৯৯৮)

৪. সাদাকাতুল ফিতর : সাদাকা অর্থ দান, জাকাত ইত্যাদি। আর ফিতর অর্থ ভঙ্গ করা, বিদীর্ণ করা, সৃষ্টি করা ইত্যাদি। উভয় শব্দের যৌথ অর্থ দানের মাধ্যমে ভঙ্গ করা। দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার পর শাওয়াল মাসের প্রথম দিন দান ও ঈদ উদযাপনের মাধ্যমে রোজা ভঙ্গ করা হয়, তাই এই দান সাদাকাতুল ফিতর এবং এই দিনকে ঈদুল ফিতর বলা হয়। ধনী স্বাধীন মুসলমান ব্যক্তির ওপর সাদাকায়ে ফিতর ওয়াজিব। মহানবী সা: রমজানে অধিক পরিমাণে দান করতেন। আয়েশা রা: বলেন, রমজানে রাসূল সা:-এর দান সাদাকা করার ব্যাপারে উৎসাহ-উদ্দীপনা অধিক বেড়ে যেত। তিনি রমজান মাসকে শারুল মুয়াসাত তথা সহানুভূতির মাস বলে ঘোষণা করেন। সাদাকায়ে ফিতর দ্বিতীয় হিজরির শাবান মাসে ওয়াজিব হয়। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা: বলেন, রাসূলুল্লাহ সা: সাদাকায়ে ফিতর নির্ধারণ করেছেন রোজাকে অনর্থক ও অশালীন বাক্যালাপ থেকে পবিত্র করার জন্য এবং নিঃস্বদের খাদ্য দানের জন্য। (সুনানে আবু দাউদ) রমজানের শেষ দশককে অধিক গুরুত্ব দেয়ার আরেকটি কারণ হলো- পবিত্র রমজানের এ সময়ে কুরআন মাজিদ নাজিল হয়। যে কুরআন মাজিদ মুসলমানদের সংবিধান ও চলার গাইডবুক।

লেখক :

  • মুফতি মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম

প্রধান ফকিহ, আল জামেয়াতুল ফালাহিয়া কামিল মাদরাসা, ফেনী

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

আজকের সূর্যোদয়

আজকের সূর্যোদয় প্রত্রিকায় আপনাদের স্বাগতম। ‍আমাদের নিউজ পড়ুন এবং বিজ্ঞাপন দিয়ে আমাদের পাশে থাকুন।

বরিশালে মুজিবিয়ানের ৮৭ নেতাকে খুঁজছে গোয়েন্দা সংস্থা

রমজানের শেষ দশকে মহানবীর আমল

আপডেট সময় ১০:০২:২৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৩

পবিত্র রমজানকে দশক হিসেবে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। প্রথম দশক রহমত, দ্বিতীয় দশক মাগফিরাত ও তৃতীয় দশক নাজাত। রমজানের প্রতিটি মুহূর্তই অতি মূল্যবান ও গুরুত্বপূর্ণ। তবে শেষ দশকের গুরুত্ব অত্যধিক। কেননা, এই দশকে রয়েছে কিছু গুরুত্বপূর্ণ আমল। তা হলো রাত্রি জাগরণ, লাইলাতুল কদর অনুসন্ধান, ইতিকাফ ও সাদাকায়ে ফিতর ইত্যাদি।

শেষ দশকের আমল
রমজানের শেষ দশকে রাসূলুল্লাহ সা: ইবাদত-বন্দেগিতে অধিক মনোযোগী হতেন। অন্যান্য সময়ে করা আমলগুলো এই সময় বৃদ্ধি পেত। শেষ দশকে রাসূল সা:-এর কয়েকটি আমল হলো-

১. রাত্রি জাগরণ : উম্মুল মু’মিনিন হজরত আয়েশা রা: থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, রমজানের শেষ দশকে রাসূলুল্লাহ সা: ইবাদতের জন্য লুঙ্গি শক্ত করে বেঁধে ফেলতেন তথা ইবাদতের জন্য সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণ করতেন। সারা রাত জেগে ইবাদত করতেন এবং স্বীয় পরিবার-পরিজনকে জাগিয়ে দিতেন। (সহিহ বুখারি, মুসলিম, মিশকাত-১৯৮৯) হজরত আয়েশা রা: থেকে অপর বর্ণনায় রয়েছে- তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা: রমজানের শেষ দশকে ইবাদতে অধিক সচেষ্ট থাকতেন, যা তিনি অন্য সময়ে করতেন না। (মুসলিম, মিশকাত-১৯৮৮)

২. লাইলাতুল কদর অনুসন্ধান : লাইলাতুন অর্থ রাত। কদরের এক অর্থ সম্মান, মর্যাদা, সুমহান। আরেক অর্থ তাকদির বা ভাগ্যনির্ধারণ। লাইলাতুল কদর অর্থ সম্মানিত রজনী বা ভাগ্য নির্ধারণের রজনী। এই রাত হাজার মাসের চেয়ে মর্যাদাবান এবং এই রাতে পরবর্তী এক বছরের ভাগ্য নির্ধারিত করা হয় বলে এই রাতকে লাইলাতুল কদর বলা হয়। মহানবী সা: এ রাত অনুসন্ধান করতেন এবং উম্মতকেও অনুসন্ধান করতে বলেছেন। ইরশাদ হয়েছে, তোমরা রমজানের শেষ ১০ দিনের বিজোড় রাতে শবেকদর তালাশ করো। (সহিহ বুখারি, মিশকাত-১৯৮৩) কদরের রজনীর নির্দিষ্ট বর্ণনা কুরআন ও হাদিসে নেই। ফলে রাতটি নির্ণয়ে ইমামদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। কারো মতে কদর রমজানের ২১তম রাত, কারো মতে ২৩তম রাত, কেউ বলেন ২৫তম রাত, কেউ বলেন ২৯তম রাত। ইমাম আবু হানিফা রহ:-এর মতে ২৭তম রাত।

৩. ইতিকাফ করা : ইতিকাফ অর্থ অবস্থান করা, আটকে রাখা, নিজেকে বন্দী করা, মসজিদে অবস্থান করা ইত্যাদি। ইসলামী শরিয়তের পরিভাষায় আল্লাহর সন্তুষ্টি ও ইবাদতের উদ্দেশ্যে রমজানের শেষ ১০ দিন মসজিদে অবস্থান করাকে ইতিকাফ বলে। ইতিকাফ রমজানের শেষ দশকের বিশেষ আমল। ভোগবাদী দুনিয়ার মিথ্যে মায়া ত্যাগ করে, পরিবার-পরিজন, চাকরিবাকরি, ব্যবসাবাণিজ্য ইত্যাদি বর্জন করে কেবল মনিবের সন্তুষ্টির জন্য একান্তে বসে ইবাদত-বন্দেগি করা উচ্চ মানসম্পন্ন মু’মিনের পরিচয়। হজরত আয়েশা রা: বলেন, মহানবী সা: রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ করতেন, যে পর্যন্ত না আল্লাহ তাঁকে ওফাত দান করেন। তাঁর পর তাঁর স্ত্রীরা এভাবে ইতিকাফ করতেন। (সহিহ বুখারি, মুসলিম, মিশকাত-১৯৯৬) আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা: প্রতি বছর রমজানের শেষ ১০ দিন ইতিকাফ করতেন। যে বছর তাঁকে তুলে নেয়া হয়, সে বছর তিনি ২০ দিন ইতিকাফ করেছিলেন। (সহিহ বুখারি, মিশকাত-১৯৯৮)

৪. সাদাকাতুল ফিতর : সাদাকা অর্থ দান, জাকাত ইত্যাদি। আর ফিতর অর্থ ভঙ্গ করা, বিদীর্ণ করা, সৃষ্টি করা ইত্যাদি। উভয় শব্দের যৌথ অর্থ দানের মাধ্যমে ভঙ্গ করা। দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার পর শাওয়াল মাসের প্রথম দিন দান ও ঈদ উদযাপনের মাধ্যমে রোজা ভঙ্গ করা হয়, তাই এই দান সাদাকাতুল ফিতর এবং এই দিনকে ঈদুল ফিতর বলা হয়। ধনী স্বাধীন মুসলমান ব্যক্তির ওপর সাদাকায়ে ফিতর ওয়াজিব। মহানবী সা: রমজানে অধিক পরিমাণে দান করতেন। আয়েশা রা: বলেন, রমজানে রাসূল সা:-এর দান সাদাকা করার ব্যাপারে উৎসাহ-উদ্দীপনা অধিক বেড়ে যেত। তিনি রমজান মাসকে শারুল মুয়াসাত তথা সহানুভূতির মাস বলে ঘোষণা করেন। সাদাকায়ে ফিতর দ্বিতীয় হিজরির শাবান মাসে ওয়াজিব হয়। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা: বলেন, রাসূলুল্লাহ সা: সাদাকায়ে ফিতর নির্ধারণ করেছেন রোজাকে অনর্থক ও অশালীন বাক্যালাপ থেকে পবিত্র করার জন্য এবং নিঃস্বদের খাদ্য দানের জন্য। (সুনানে আবু দাউদ) রমজানের শেষ দশককে অধিক গুরুত্ব দেয়ার আরেকটি কারণ হলো- পবিত্র রমজানের এ সময়ে কুরআন মাজিদ নাজিল হয়। যে কুরআন মাজিদ মুসলমানদের সংবিধান ও চলার গাইডবুক।

লেখক :

  • মুফতি মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম

প্রধান ফকিহ, আল জামেয়াতুল ফালাহিয়া কামিল মাদরাসা, ফেনী