ঘুষের ১০ লাখ টাকাসহ রাজশাহী কর কমিশনার কার্যালয়ের কর্মকর্তা মহিবুল ইসলাম ভুঁইয়াকে হাতেনাতে আটক করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
মঙ্গলবার (৪ এপ্রিল) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে দুদক কর্মকর্তারা রাজশাহী কর কমিশনারের কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করেন। এ সময় দুদক ও কর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।
আটক মহিবুল ইসলাম ভুঁইয়া রাজশাহী কর কমিশনার কার্যালয়ের সার্কেল-১৩-এর উপ কর কমিশনার পদে কর্মরত রয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বেলা ১১টার দিকে দুদক কর্মকর্তারা উপ কর কমিশনার মহিবুল ইসলামের কক্ষে অভিযান চালান। এ সময় কর অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ওই কর্মকর্তার কক্ষের দরজা ভেঙে ভেতরে ঢোকেন। সেখানে দুদক কর্মকর্তা ও কর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে হাতাহাতি ও ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে।
খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে। এরপর বেলা আড়াইটার দিকে পুলিশের সহায়তায় দুদক কর্মকর্তারা মহিবুল ইসলামকে আটক করে নিয়ে যান। ওই কর্মকর্তাকে যখন বের করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল তখন তার গলায় আঘাতের চিহ্ন দেখা গেছে। দুদকের রাজশাহী বিভাগীয় এবং সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের নয়জন কর্মকর্তা এ অভিযান পরিচালনা করেন বলে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর অফিসের একটি সূত্র জানায়, অভিযানকালে দরজা বন্ধ করে অভিযুক্ত কর্মকর্তাকে মারধর করা হচ্ছিল। চিৎকার শুনে কর অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা গিয়ে জানালা দিয়ে এ দৃশ্য দেখতে পান। এ সময় অফিসের সবাই মনে করেন, বাইরে থেকে সেবা নিতে আসা কোনো লোকজন তাকে মারধর করছেন। কারণ দুদক কর্মকর্তারা সবাই সাধারণ পোশাকে ছিলেন। তাই দরজা ভেঙে ভেতরে ঢোকেন। তারপর কর্মকর্তারা ‘দুদক’ লেখা জ্যাকেট পরলে তাদের পরিচয় নিশ্চিত হন সবাই। এরই মধ্যে রাজপাড়া থানা পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছায়।
দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো: মনিরুজ্জামান সাংবাদিকদের জানান, রাজশাহী নগরীর মাদারল্যান্ড ইনফার্টিলিটি সেন্টার ও হাসপাতালের মালিক ডা. ফাতেমা সিদ্দিকা দুদকের প্রধান কার্যালয়ে অভিযোগ করেন যে, কর কর্মকর্তা মহিবুল ইসলাম তার কাছে ঘুষ দাবি করছেন। চাহিদা মতো ঘুষ না দিলে তিনি মোটা অঙ্কের করারোপ করার ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন।
তিনি আরো বলেন, ডা. ফাতেমা দুদককে জানিয়েছেন, তার কাছে ৬০ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করা হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত ৫০ লাখ টাকা দেয়ার কথা হয়েছে। প্রথম কিস্তিতে মঙ্গলবার ১০ লাখ টাকা দেয়া হবে। সেঅনুযায়ী এদিন সকালে ফাতেমা সিদ্দিকা তার স্বামীকে সাথে নিয়ে মহিবুল ইসলামের দফতরে যান এবং ঘুষের ১০ লাখ টাকা দেন। টাকা নিয়ে মহিবুল ইসলাম তা ড্রয়ারে রাখেন। তখন দুদক কর্মকর্তারা সেখানে গিয়ে টাকা উদ্ধার করেন। এ ব্যাপারে মহিবুল ইসলামের বিরুদ্ধে দুদক আইনে মামলা করা হবে বলেও জানান তিনি।
কর কর্মকর্তা মহিবুল ইসলামকে মারধরের অভিযোগ প্রসঙ্গে দুদক কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান বলেন, আমরা মারধর করিনি। আয়কর অফিসের কর্মীরাই রুমে ঢুকে আমাদের ওপর হামলা করেন। তখন আমরা দরজা বন্ধ করে দেই। তারপর তারা দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকে হামলা করেন। মারামারি নয়, ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটেছে। এতে মহিবুল ইসলামের গলায় একটা আঁচড় লেগেছে। ধস্তাধস্তির কারণে আমাদেরও তিনজন কর্মকর্তা আহত হয়েছেন।
আটক কর কর্মকর্তা মহিবুল ইসলামকে পুলিশের সহায়তায় দুদকের গাড়িতে তোলার সময় তিনি সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেন, ডা. ফাতেমা সিদ্দিকার ব্যাংকে যে পরিমাণ টাকা আছে তিনি তার চেয়েও বেশি টাকার জমি কিনছেন। তার ২৬ কোটি টাকার আয়করের গড় মিল রয়েছে। এ জন্য তার কাছ থেকে আয়কর আদায়ের চেষ্টা করা হচ্ছিল। এ জন্য তাকে ফাঁসানো হয়েছে।
তিনি দাবি করেন, অভিযানকালে ডা. ফাতেমা সিদ্দিকাও ছিলেন। তিনি টাকা এনে রেখেছেন। আর ডা. ফাতেমা যখন আসেন তখন তিনি অফিসের ভেতরে ছিলেন না। পরে তাকে অফিসের বাইরে থেকে জোরপূর্বক কক্ষের ভেতরে ঢোকানো হয়।
এ ব্যাপারে কর অফিসে সাংবাদিকেরা ডা. ফাতেমা সিদ্দিকার সাথে কথা বলার চেষ্টা করেন। তবে তিনি কোনো কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
রাজশাহী কর কমিশনার মো. শাহ আলী সাংবাদিকদের জানান, অভিযানের বিষয়টি দুদকের রাজশাহী বিভাগের পরিচালক তাকে আগেই জানিয়েছিলেন এবং সহযোগিতা চেয়েছিলেন। তিনি সব ধরনের সহযোগিতার কথা জানিয়ে দুদক কর্মকর্তাদের তাদের দায়িত্ব পালন করতে বলেন। এরপর অফিসে আর কী হয়েছে তা তিনি জানেন না বলে দাবি করেন।
কর কমিশনার আরো বলেন, দুদক একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান। তারা তাদের দায়িত্ব পালন করেছেন। এটা নিয়ে কোনো আপত্তি নেই। এ বিষয়টি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে জানানো হয়েছে। বোর্ড থেকে এখন যে ধরনের নির্দেশনা আসবে সে অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে জানান তিনি।