ঢাকা , মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::

রোহিঙ্গাদের জাল কাগজপত্র তৈরি চক্রের ২৩ সদস্য গ্রেফতার

  • সূর্যোদয় ডেস্ক:
  • আপডেট সময় ০৯:৪৭:২৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
  • ১১২১ বার পড়া হয়েছে

রোহিঙ্গা ও কুখ্যাত অপরাধীদের অবৈধভাবে জন্ম সনদ, ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র ও পাসপোর্ট তৈরি চক্রের ২৩ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)।

গ্রেফতার ২৩ জনের মধ্যে তিনজন রোহিঙ্গা, দু’জন আনসার ফোর্সের সদস্য ও দালাল রয়েছেন।

এ সময় তাদের কাছ থেকে ১৭টি পাসপোর্ট, ১৩টি ভুয়া এনআইডি, পাঁচটি কম্পিউটার, তিনটি প্রিন্টার, ২৪টি মোবাইলফোন ও পাসপোর্ট তৈরির শতাধিক নথি উদ্ধার করা হয়।

তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে গ্রেপ্তাররা রাজশাহী, রংপুর, নারায়ণগঞ্জ, ময়মনসিংহ, শরীয়তপুর ও গোপালগঞ্জের বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের কম্পিউটার অপারেটরের মাধ্যমে অপরাধী ও রোহিঙ্গাদের ভুয়া জন্মসনদ সংগ্রহ করত। পরে তারা এসব তথ্য দিয়ে রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট তৈরি করতে।

গত ২৩ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর আগারগাঁও, মোহাম্মদপুর, যাত্রাবাড়ী ও বাড্ডা এলাকায় অভিযান চালিয়ে পাসপোর্ট ও কম্পিউটারসহ তিন রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ ও ১০ বাংলাদেশিকে গ্রেফতার করে ডিবি পুলিশ।

পরে তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি কক্সবাজার, টাঙ্গাইল ও ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালায় ডিবি। অভিযানে রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশী দালাল সিন্ডিকেট চক্রের দুই আনসার সদস্য এবং আট মধ্যস্থতাকারীকে গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতার রোহিঙ্গারা হলেন উম্মে ছলিমা ছামিরা, মরিজান ও মো: রাশিদুল; রোহিঙ্গাদের মধ্যস্থতাকারী হিসেবে পরিচিত আইয়ুব আলী ও মো: মোস্তাকিম; আনসার সদস্য মো: জামসেদুল ইসলাম ও মো: রায়হান এবং বাঙালি দালাল রাজু শেখ, শাওন হোসেন ওরফে নিলয়, ফিরোজ হোসেন, তুষার মিয়া।

এছাড়া আগারগাঁও, মোহাম্মদপুর ও উত্তরা এলাকার দালাল শাহজাহান শেখ, শরিফুল আলম, জোবায়ের মোল্লা, শিমুল শেখ, আহমদ হোসেন, মাসুদ আলম, আব্দুল আলীম, মাসুদ রানা, ফজলে রাব্বি শাওন, রজব কুমার দাস দীপ্ত, আল-আমিন ও মো: সোহাগ।

সোমবার দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ এসব তথ্য জানান। এ সময় ডিবির লালবাগ বিভাগের ডিসি (অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) মশিউর রহমান উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে ডিবি প্রধান বলেন, সিন্ডিকেট সদস্যরা হাজার হাজার টাকার বিনিময়ে রোহিঙ্গা শিশু, নারী ও পুরুষদের জন্মসনদ, এনআইডি কার্ড ও পাসপোর্ট তৈরি করে দিত। চক্রটি তিনটি ভাগে এটি করছে। তাদের একটি দল কক্সবাজার, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি থেকে রোহিঙ্গাদের ঢাকায় নিয়ে আসে। আরেক গ্রুপ তাদের জন্য জন্মসনদ, এনআইডি কার্ড তৈরি করে। সবশেষে অন্য গ্রুপটি ঢাকাসহ বিভিন্ন আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে আনসার সদস্যদের মাধ্যমে টাকা জমা, বায়োমেট্রিক ও ছবি তোলার ব্যবস্থা করে।

তিনি বলেন, সাধারণত ছয় ঘণ্টার মধ্যে জন্মসনদের জন্য ৫ থেকে ১২ হাজার টাকা নেয়া হয়। প্রাথমিকভাবে তারা স্বীকার করেন, তিন দিনে এনআইডি পেতে ২৫ হাজার টাকা এবং পাসপোর্ট করতে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা নেয়া হতো।

গ্রেফতার দালালদের মোবাইলফোনে সংশ্লিষ্ট সফট ডকুমেন্ট, শতাধিক পাসপোর্টের ডেলিভারি স্লিপ পাওয়া গেছে। যার মধ্যে গত তিন মাসে রোহিঙ্গাদের জন্য ১৪৩টি পাসপোর্ট করা হয়েছে। চক্রের সদস্যরা ২০১৯ সাল থেকে বিভিন্ন নাম-ঠিকানায় রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশী অপরাধীদের পাসপোর্ট দেয়ার কথাও স্বীকার করেছে।

ডিএমপি ডিবির এই শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, গ্রেফতাররা ঢাকা, রাজশাহী, নারায়ণগঞ্জ, ময়মনসিংহ, রংপুর, শরীয়তপুর, গোপালগঞ্জ ও বরিশাল জেলার ঠিকানা ব্যবহার করে জন্মসনদ ও এনআইডি তৈরি করে পাসপোর্ট তৈরি করে।

বাংলাদেশে রোহিঙ্গা ডাটাবেজ, ডিজিটাল জন্ম সনদের ডাটা এবং স্মার্ট এনআইডি ডাটা ব্যাংক রয়েছে, যেখানে বায়োমেট্রিক্স, ছবিসহ বিভিন্ন তথ্য সংরক্ষিত থাকে। তবে এই তথ্যের কোনো যাচাই-বাছাই ছাড়াই যে কেউ বায়োমেট্রিক জমা দিয়ে দালালের মাধ্যমে টাকা জমা দিয়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের ভিত্তিতে পাসপোর্ট অফিসে পাসপোর্টের জন্য ছবি তুলতে পারবেন। তবে পাসপোর্ট তৈরির আগে রোহিঙ্গা তথ্য, ডিজিটাল জন্মসনদের তথ্য ও স্মার্ট এনআইডির তথ্য যাচাই-বাছাই করে তাৎক্ষণিকভাবে বাংলাদেশি নাগরিক ও রোহিঙ্গাদের শনাক্ত করা সম্ভব।

সূত্র : ইউএনবি

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

আজকের সূর্যোদয়

আজকের সূর্যোদয় প্রত্রিকায় আপনাদের স্বাগতম। ‍আমাদের নিউজ পড়ুন এবং বিজ্ঞাপন দিয়ে আমাদের পাশে থাকুন।

বরিশালে মুজিবিয়ানের ৮৭ নেতাকে খুঁজছে গোয়েন্দা সংস্থা

রোহিঙ্গাদের জাল কাগজপত্র তৈরি চক্রের ২৩ সদস্য গ্রেফতার

আপডেট সময় ০৯:৪৭:২৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

রোহিঙ্গা ও কুখ্যাত অপরাধীদের অবৈধভাবে জন্ম সনদ, ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র ও পাসপোর্ট তৈরি চক্রের ২৩ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)।

গ্রেফতার ২৩ জনের মধ্যে তিনজন রোহিঙ্গা, দু’জন আনসার ফোর্সের সদস্য ও দালাল রয়েছেন।

এ সময় তাদের কাছ থেকে ১৭টি পাসপোর্ট, ১৩টি ভুয়া এনআইডি, পাঁচটি কম্পিউটার, তিনটি প্রিন্টার, ২৪টি মোবাইলফোন ও পাসপোর্ট তৈরির শতাধিক নথি উদ্ধার করা হয়।

তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে গ্রেপ্তাররা রাজশাহী, রংপুর, নারায়ণগঞ্জ, ময়মনসিংহ, শরীয়তপুর ও গোপালগঞ্জের বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের কম্পিউটার অপারেটরের মাধ্যমে অপরাধী ও রোহিঙ্গাদের ভুয়া জন্মসনদ সংগ্রহ করত। পরে তারা এসব তথ্য দিয়ে রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট তৈরি করতে।

গত ২৩ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর আগারগাঁও, মোহাম্মদপুর, যাত্রাবাড়ী ও বাড্ডা এলাকায় অভিযান চালিয়ে পাসপোর্ট ও কম্পিউটারসহ তিন রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ ও ১০ বাংলাদেশিকে গ্রেফতার করে ডিবি পুলিশ।

পরে তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি কক্সবাজার, টাঙ্গাইল ও ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালায় ডিবি। অভিযানে রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশী দালাল সিন্ডিকেট চক্রের দুই আনসার সদস্য এবং আট মধ্যস্থতাকারীকে গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতার রোহিঙ্গারা হলেন উম্মে ছলিমা ছামিরা, মরিজান ও মো: রাশিদুল; রোহিঙ্গাদের মধ্যস্থতাকারী হিসেবে পরিচিত আইয়ুব আলী ও মো: মোস্তাকিম; আনসার সদস্য মো: জামসেদুল ইসলাম ও মো: রায়হান এবং বাঙালি দালাল রাজু শেখ, শাওন হোসেন ওরফে নিলয়, ফিরোজ হোসেন, তুষার মিয়া।

এছাড়া আগারগাঁও, মোহাম্মদপুর ও উত্তরা এলাকার দালাল শাহজাহান শেখ, শরিফুল আলম, জোবায়ের মোল্লা, শিমুল শেখ, আহমদ হোসেন, মাসুদ আলম, আব্দুল আলীম, মাসুদ রানা, ফজলে রাব্বি শাওন, রজব কুমার দাস দীপ্ত, আল-আমিন ও মো: সোহাগ।

সোমবার দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ এসব তথ্য জানান। এ সময় ডিবির লালবাগ বিভাগের ডিসি (অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) মশিউর রহমান উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে ডিবি প্রধান বলেন, সিন্ডিকেট সদস্যরা হাজার হাজার টাকার বিনিময়ে রোহিঙ্গা শিশু, নারী ও পুরুষদের জন্মসনদ, এনআইডি কার্ড ও পাসপোর্ট তৈরি করে দিত। চক্রটি তিনটি ভাগে এটি করছে। তাদের একটি দল কক্সবাজার, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি থেকে রোহিঙ্গাদের ঢাকায় নিয়ে আসে। আরেক গ্রুপ তাদের জন্য জন্মসনদ, এনআইডি কার্ড তৈরি করে। সবশেষে অন্য গ্রুপটি ঢাকাসহ বিভিন্ন আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে আনসার সদস্যদের মাধ্যমে টাকা জমা, বায়োমেট্রিক ও ছবি তোলার ব্যবস্থা করে।

তিনি বলেন, সাধারণত ছয় ঘণ্টার মধ্যে জন্মসনদের জন্য ৫ থেকে ১২ হাজার টাকা নেয়া হয়। প্রাথমিকভাবে তারা স্বীকার করেন, তিন দিনে এনআইডি পেতে ২৫ হাজার টাকা এবং পাসপোর্ট করতে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা নেয়া হতো।

গ্রেফতার দালালদের মোবাইলফোনে সংশ্লিষ্ট সফট ডকুমেন্ট, শতাধিক পাসপোর্টের ডেলিভারি স্লিপ পাওয়া গেছে। যার মধ্যে গত তিন মাসে রোহিঙ্গাদের জন্য ১৪৩টি পাসপোর্ট করা হয়েছে। চক্রের সদস্যরা ২০১৯ সাল থেকে বিভিন্ন নাম-ঠিকানায় রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশী অপরাধীদের পাসপোর্ট দেয়ার কথাও স্বীকার করেছে।

ডিএমপি ডিবির এই শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, গ্রেফতাররা ঢাকা, রাজশাহী, নারায়ণগঞ্জ, ময়মনসিংহ, রংপুর, শরীয়তপুর, গোপালগঞ্জ ও বরিশাল জেলার ঠিকানা ব্যবহার করে জন্মসনদ ও এনআইডি তৈরি করে পাসপোর্ট তৈরি করে।

বাংলাদেশে রোহিঙ্গা ডাটাবেজ, ডিজিটাল জন্ম সনদের ডাটা এবং স্মার্ট এনআইডি ডাটা ব্যাংক রয়েছে, যেখানে বায়োমেট্রিক্স, ছবিসহ বিভিন্ন তথ্য সংরক্ষিত থাকে। তবে এই তথ্যের কোনো যাচাই-বাছাই ছাড়াই যে কেউ বায়োমেট্রিক জমা দিয়ে দালালের মাধ্যমে টাকা জমা দিয়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের ভিত্তিতে পাসপোর্ট অফিসে পাসপোর্টের জন্য ছবি তুলতে পারবেন। তবে পাসপোর্ট তৈরির আগে রোহিঙ্গা তথ্য, ডিজিটাল জন্মসনদের তথ্য ও স্মার্ট এনআইডির তথ্য যাচাই-বাছাই করে তাৎক্ষণিকভাবে বাংলাদেশি নাগরিক ও রোহিঙ্গাদের শনাক্ত করা সম্ভব।

সূত্র : ইউএনবি