শাবানকে বলা হয় রমজানের প্রস্তুতিমূলক মাস। এ মাসেই পবিত্র কাবাকে মুসলমানদের কেবলা হিসেবে নির্ধারণ করেন মহান আল্লাহ। মাহে রমজানের প্রস্তুতিমূলক মাস হিসেবে মুসলমানের কাছে শাবান অত্যন্ত বরকতময় মাস বলে বিবেচিত। হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, ‘আমি রসুল (সা.)-কে রমজান ছাড়া এত বেশি রোজা রাখতে দেখিনি, যত বেশি রোজা তিনি শাবানে রাখতেন।
হঠাৎ করে রমজানে রোজা রাখতে শুরু করলে উম্মতের জন্য কষ্ট হতে পারে, সেজন্য উম্মতের কষ্ট লাঘবে নিজে রোজা রেখেই রসুল (সা.) উম্মতকে শিক্ষা দিয়েছেন, ‘আমি শাবান মাসে বেশি রোজা রাখছি। তোমরা আমাকে অনুসরণ করে এ মাসে বেশি বেশি রোজা রাখো, তাহলে রমজানের ফরজ রোজা রাখতে তোমাদের কষ্ট হবে না।’
মহানবী (সা.) মাহে রমজানের প্রস্তুতিস্বরূপ শাবানের চাঁদের হিসাব রাখার প্রতি গুরুত্বারোপ করে বলেন, ‘তোমরা রমজানের সম্মানার্থে শাবানের চাঁদের হিসাব গণনা করে রাখো।’ (তিরমিজি) রজব ও শাবান আগমন করলেই রসুলুল্লাহ (সা.) এ দোয়াটি বেশি পাঠ করতেন, ‘আল্লাহুম্মা বারিকলানা ফি রজাবা ওয়া শাবান ওয়া বাল্লিগনা রামাদান।’ অর্থ হে আল্লাহ! আমাদের জন্য রজব ও শাবানকে বরকতময় করে দিন এবং আমাদের হায়াত রমজান মাস পর্যন্ত পৌঁছে দিন।
(নাসায়ি) হজরত আবুবকর বলখি (রহ.) বলেন, রজব মাস ঠান্ডা বাতাসের মতো, শাবান মাস মেঘমালার মতো, আর রমজান মাস হলো বৃষ্টির মতো। (লাতায়েফুল মা’আরিফ) রমজানে দিনে রোজা ও রাতে জাগরণ করে যেন ইবাদত করা যায় তার জন্য রমজানের আগে লাইলাতুল বরাতে জাগরণ ও দিনে রোজা রাখাকে পছন্দ করেছেন।
যাতে রমজানের রাতদিনের ইবাদতে কোনো ব্যাঘাত না ঘটে। রমজান শুরু হওয়ার আগে শাবানে বেশি বেশি রোজা ও অন্য ইবাদতের মাধ্যমে রমজানের ইবাদতের জন্য মানসিক ও শারীরিক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়। শাবান মাস ধারণ করছে লাইলাতুল বরাতকে। হজরত আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেন, রসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘এ রাতে আল্লাহতায়ালা বান্দার প্রতি নজর দেন (যারা ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে তওবা করেন) সবাইকে মাফ করে দেন একমাত্র মুশরিক ও হিংসুক ছাড়া।’ লাইলাতুল বরাতে ক্ষমা প্রাপ্তির মাধ্যমে রমজানের রহমত, মাগফিরাত, নাজাত পাওয়ার জন্য পরিপূর্ণভাবে শিরক ও হিংসা থেকে মুক্ত হতে হবে।
রসুল (সা.) লাইলাতুল বরাতে বেশি বেশি ইবাদত ও পরদিন রোজা রাখার পরামর্শ দিয়েছেন। (মিশকাত) বর্তমানে লাইলাতুল বরাত পালন করা হলেও এর ফজিলত পাওয়ার জন্য শিরক ও হিংসা থেকে মুক্ত হওয়ার যে সক্ষমতা অর্জন করা দরকার তা আমাদের অনেকের ক্ষেত্রে লক্ষ করা যায় না। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে আমরা কত ধরনের শিরকে লিপ্ত আছি, তা একটু চিন্তা করলে আতঙ্কিত হতে হবে।
এ শিরক থেকে মুক্ত না হয়ে লাইলাতুল বরাত পালনে কতটুকু ফজিলত অর্জন করা যাবে তা ভেবে দেখার বিষয়। মধ্য শাবানে লাইলাতুল বরাতের আগমন ঘটে। এই পবিত্র রাতের ফজিলত পাওয়ার জন্য শিরক ও হিংসা থেকে মুক্ত হওয়ার যে দুটি শর্ত রয়েছে তা মেনে যদি আমরা শিরক ও হিংসামুক্ত হতে পারি তাতে লাইলাতুল বরাতের ফজিলত পাওয়া যাবে এবং রমজানে ইবাদত করার জন্য পূর্বপ্রস্তুতিও গ্রহণ করা হবে।
এতে রমজানের রহমত, মাগফিরাত, নাজাত পাওয়ার পথও অধিকতর উন্মুক্ত হবে। আল্লাহ আমাদের সবাইকে শাবানে বেশি বেশি ইবাদত করা ও রমজানের প্রস্তুতি নেওয়ার তৌফিক দান করুন।
লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক