বিশ্বনবীর জীবনেও এসেছে কখনো শীত কখনো গরম। ঋতুচক্রের এই পরিবর্তন মু’মিনের জন্য রহমত। রাসূল সা: কিভাবে শীত কাটাতেন? শীতকালে কী কী আমল করতেন? চলুন জেনে নিই।
চাদরকে আরবিতে বলা হয় ‘রিদা’। রঙ, আকৃতি ও সুতার প্রকারভেদে এর আরবি নামেও আছে ভিন্নতা। তবে অধিকাংশ সময় চাদরকে আরবের লোকজন ‘রিদা’ই বলে। শীত বা অন্য কোনো বিশেষ ক্ষেত্রে যেমন- মেহমানের সামনে, অনুষ্ঠানে রাসূল সা: চাদর গায়ে জড়িয়ে আসতেন। হজরত উরওয়া ইবনে মাসউদ রা:-এর বর্ণনা মতে, বিশ্বনবী চার হাত লম্বা ও আড়াই হাত চওড়া চাদর ব্যবহার করতেন। এতে যেমন শীত নিবারণ হতো তেমনি আরবীয় ঐতিহ্যও ঠিক থাকত। শীতের নানা পোশাকের মধ্যে চাদরকে নির্বাচন করা সুন্নাত। চাদর গায়ে জড়িয়ে পিয়ারা নবীর কথা স্মরণ করলে সুন্নাহ জিন্দা হবে। নারী-পুরুষ সবাই চাদর পরিধান করতে পারেন। নারীদের জন্য বরং ভালো। এক দিকে শীত নিবারণ অন্য দিকে পর্দা পালনও হয়ে যায়।
বিখ্যাত হাদিসগ্রন্থ মুসনাদে আহমাদের ১১৬৫৬ নং হাদিসে হজরত আবু সাইদ খুদরি রা:-এর বর্ণনায় পাওয়া যায়, রাসূলুল্লাহ সা: ইরশাদ করেন, ‘শীতকাল মু’মিনের বসন্তকাল’। মাকাসিদুল হাসানাহ গ্রন্থের ২৫০ নং হাদিসের বর্ণনায় এসেছে- বিশিষ্ট সাহাবি হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা: বলতেন, শীতকালকে স্বাগতম! শীতকাল বরকত বয়ে আনে। কারণ শীতের রাত লম্বা হওয়ায় নফল সালাত আদায়ে সহায়ক হয়। আর দিন ছোট হওয়ায় নফল রোজা পালনও সহজ হয়। শীতকালে মজার একটি সুবিধার ইবাদত হলো মোজার উপর মাসেহ করা। (যদিও এই বিধানের জন্য কোনো ঋতুর সাথে সম্পর্ক নেই) শীতের কারণে আমরা যে মোজা পরিধান করি তা যদি চামড়া বা সমজাতীয় হয় তাহলে তা না খুলে অজু করার সময় শুধু তার উপর মাসেহ করলেই হয়ে যায়। পা ভিজানোর প্রয়োজন হয় না। অবশ্য তার জন্য সময়সীমা আছে। নিজ বাড়িতে (মুকিম) থাকলে এক দিন-এক রাত পর্যন্ত আর মুসাফির হলে (নিজ বাড়ি থেকে ৭৮ কিলোমিটার দূরত্ব সফরে যাওয়ার নিয়তে পথে আর সেখানে ১৫ দিনের কম অবস্থানের নিয়ত থাকলে) সেখানেও তিন দিন-তিন রাত মোজা না খুলে শুধু মাসেহ করে নিলেই হবে।
কাজা বা নফল রোজা রাখা শীতকালে সুবিধা হয়। নারীদের রমজানে যে রোজা ভাঙা পড়ে সেগুলো শীতকালে রাখতে পারেন। নফল রোজা, মান্নতের রোজাও শীতকালে রাখা সহজ হয়। এ সময় দিন ছোট থাকে। সুনানে বাইহাকির ৩৯৪০ নং হাদিসের বর্ণনায় এসেছে, শীতের রাত দীর্ঘ হওয়ায় মু’মিন বান্দা রাতের নফল সালাত সহজে আদায় করতে পারে আর দিন ছোট হওয়ায় রোজা রাখতে পারে। লাতাইফুল মাআরিফ গ্রন্থের ৩২৬ নং পৃষ্ঠার বর্ণনায় হজরত ইবনু রজব হাম্বলি রহ: বলেন, শীতে মু’মিনে আনুগত্যের বাগিচাগুলোতে খুশির উল্লাস হয়। তারা ইবাদত-বন্দেগির চত্বরে অবগাহন করে। ছোট ছোট সহজ আমলের ময়দানে পরিভ্রমণ করে। শীতকালীন সবজি খেয়ে আল্লাহর শোকর আদায় করাও ইবাদত। শীতের বড় ইবাদত হলো শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানো। বস্ত্রহীনকে বস্ত্র দান করা। এই সম্পর্কে বিশ্বনবী সা: কী বলেছেন? জামে তিরমিজির ২৪৪৯ নং হাদিসের বর্ণনায় হজরত আবু সাঈদ খুদরি রা: বলেন, রাসূলুল্লাহ সা: ইরশাদ করেন, ‘যে ঈমানদার কোনো ক্ষুধার্ত ব্যক্তিকে খাদ্য দান করে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তায়ালা তাকে জান্নাতের ফল খাওয়াবেন।
মু’মিন কোনো পিপাসিত ব্যক্তিকে পানি পান করায়, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাকে ইনটেক খাঁটি পানি (রাহিকুল মাখতুম) পান করাবেন। আর যে মু’মিন কোনো বস্ত্রহীনকে বস্ত্র দান করেন, আল্লাহ তাকে জান্নাতে সবুজ পোশাক পরিধান করাবেন। আমাদের নবী সা:-এর শিক্ষা হলো- দরিদ্রদের জন্য শীতকালে গরম কাপড়ের ব্যবস্থা করা। শীতার্ত, বিপন্ন সব মানুষের পাশে দাঁড়ানো। আসুন মানবতার সেবায় অগ্রগামী হই।
লেখক :
- হাফেজ মাওলানা মুফতি সিফাতুল্লাহ
আলোচক, বাংলাদেশ বেতার, খুলনা