ঢাকা , সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::

সয়াবিনের বিকল্প হতে পারে স্বাস্থ্যসম্মত সূর্যমুখী তেল

  • সূর্যোদয় ডেস্ক:
  • আপডেট সময় ১০:১৮:৫৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৮ মার্চ ২০২৩
  • ১১৬৭ বার পড়া হয়েছে

দেশে ভোজ্যতেলের বিপুল পরিমাণ উৎপাদন ঘাটতি মোকাবেলায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উদ্যোগে দেশব্যাপী সরিষা তিল তিসিসহ নানা জাতের তেলজাতীয় ফসলের পাশাপাশি সূর্যমুখী ফুলের আবাদ এখন দেশে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। সে কারণে প্রতি মৌসুমেই বাড়ছে সূর্যমুখীর উৎপাদন। চলতি মৌসুমে দেশে ১১ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে ২০ হাজার ৭২ টন সূর্যমুখী তেলবীজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। অপর দিকে চলতি মৌসুমে সরিষায় ১০ লাখ, সূর্যমুখীতে ৭০ হাজার, চীনাবাদামে ২৬ হাজার ও সয়াবিনের ১৮ হাজার চাষিকে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উদ্যোগে সার বীজসহ বিভিন্ন উপকরণসহ কৃষি প্রণোদনা দেয়া হয়েছে। সে কারণে দেশব্যাপী তেলজাতীয় ফসল চাষে আগ্রহ বৃদ্ধি পেয়েছে।

এ ছাড়া প্রত্যাশা করা হচ্ছে যদি কৃষি বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের সমন্বিত উদ্যোগের মধ্যমে চাষিদের আরো উন্নত প্রশিক্ষণসহ ও উন্নতমানের তেলজাতীয় ফসলের বীজ সরবরাহ ও মাঠ পর্যায়ে তদারকি করা হয় তাহলে দেশে লাখ লাখ হেক্টর অনাবাদি জমি চাষাবাদের মধ্য দিয়ে সয়াবিন তেলের বিকল্প হয়ে উঠতে পারে পুষ্টিগুণে ভরা স্বাস্থ্যসম্মত সূর্যমুখী তেল। সরিষা তিলের পাশাপাশি সূর্যমুখী ফুলের আবাদ গড়ে তোলার মধ্য দিয়ে সয়াবিন তেলের বিকল্প হয়ে উঠতে পারে সূর্যমুখীর স্বাস্থ্যসম্মত তেল।

বর্তমানে দেশে ভোজ্যতেলের চাহিদা রয়েছে প্রায় ২৪ লাখ টন। আর চাহিদার বিপরীতে দেশে সয়াবিনসহ বিভিন্ন জাতের তেলজাতীয় ফসল থেকে জোগান হচ্ছে চাহিদার মাত্র ১০ ভাগ আর বেশির ভাগ তেলই আমদানি করতে হয় বিদেশ থেকে। এ জন্য প্রতি বছর সরকারকে ভোজ্যতেল আমদানিতে ব্যয় করতে হচ্ছে প্রায় ২০ থেকে ২৫ হাজার কোটি টাকা। সে কারণে সয়াবিনের বিকল্প হিসেবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর দেশে উৎপাদিত সরিষা ও তিলের পাশাপাশি সূর্যমুখী ফুলের আবাদ গড়ে তোলার লক্ষ্যে যে উদ্যোগ গ্রহণ করেন তার অনেকটাই সফলতার মুখ দেখছে প্রতি বছরই দেশব্যাপী বাড়ছে সূর্যমুখী ফুলের আবাদ। গত মৌসুমে দেশে দুই হাজার ৭২৬ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখীর উৎপাদন হয়েছে ৫ হাজার ৭২৫ টন হলেও এক বছরের ব্যবধানে ২০২০-২১ মৌসুমে ৫ হাজার ৫০১ হেক্টর জমিতে ১১ হাজার ৬২৮ টন। ২০২১-২২ মৌসুমে ৯ হাজার ১৩৬ হেক্টর জমিতে উৎপাদন হয়েছে ১৫ লাখ ৯৬১ টন।

এর মধ্যে দক্ষিণ চট্টগ্রামসহ চট্টগ্রাম অঞ্চলে উৎপাদন হয়েছে দ্বিগুণের বেশি চট্টগ্রাম অঞ্চলে ২০১৯-২০ মৌসুমে ১৮৬ হেক্টর জমিতে ৩৮৮ টন, সেখানে ২০২০-২১ মৌসুমে উৎপাদন হয়েছে ২৩৬ হেক্টর জমিতে ৫০৬ টন। ২০২১-২০২২ মৌসুমে ৭১৫ হেক্টর জমিতে ১ হাজার ১৮৩.৭৫ টন। অপর দিকে চট্টগ্রাম অঞ্চলে চলতি মৌসুমে ২০২২-২৩ ১ হাজার ৬০ হেক্টর জমিতে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার ৬৬৮ টন।

জানা গেছে, সরকার দেশে ভোজ্যতেলের ঘাটতি মেটাতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অধীনে বেশ কয়েকটি প্রকল্পের মাধ্যমে দেশব্যাপী সরিষা, তিল তিসি বাদামের পাশাপাশি বাণিজ্যিকভাবে সূর্যমুখী ফুল আবাদের ওপর জোর দিয়েছেন। দেশে প্রতি বছর ভোজ্যতেলের চাহিদা রয়েছে প্রায় ২৪ থেকে ২৫ লাখ টন তার বিপরীতে দেশে উৎপাদন হয় চাহিদার মাত্র ১০ ভাগ ভোজ্যতেল। ভোজ্যতেলের বিপুল পরিমাণ ঘাটতি মেটাতেই মূলত নানামুখী তেলজাতীয় ফসল উৎপাদনের প্রকল্প প্রণয়ন করেছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর।

জানা গেছে, বিভিন্ন জাতের তেলজাতীয় ফসল আবাদের পাশাপাশি স্বল্প পরিসরে গত ৩০ বছর পূর্বে সূর্যমুখী ফুল আবাদ শুরু হলেও চার বছর ধরে দক্ষিণ চট্টগ্রামসহ সমগ্র দেশে শীতকালীন ও খরিপ-১ মৌসুমে সূর্যমুখীর আবাদ কৃষকের কাছে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

সূর্যমুখী এক ধরনের একবর্ষী ফুল গাছ, যা লম্বায় প্রায় ১০ ফুট হয়, গাছে ফুল হয় প্রায় ৩০ সেন্টিমিটারের উপরে (১৩ ইঞ্চির মতো) এই ফুল দেখতে সূর্যের মতো এবং ফুল ফোটা থেকে বীজ পরিপক্ব হওয়া পর্যন্ত ওই ফুল সূর্যের দিকেই মুখ করে থাকে সে কারণেই মূলত এই ফুলের নামকরণ করা হয়েছে সূর্যমুখী। এই ফুলের বীজ হাঁস-মুরগির ও না না জাতের পাখির আদর্শ খাবার। অপর দিকে বীজ থেকে উৎপাদন হয় পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ ভোজ্যতেল। ১৯৭৫ সাল থেকে অল্প বিস্তর এ ফুলের আবাদ হলেও এখন দেশের রাজশাহী, কুষ্টিয়া যশোর, নাটোর, পাবনা, দিনাজপুর, গাজীপুর, টাঙ্গাইল ছাড়াও এখন বৃহত্তর নোয়াখালী কুমিল্লা চাঁদপুর ফেনী ও চট্টগ্রাম কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়েছে সূর্যমুখীর আবাদ। সূর্যমুখীর তেলে মানব শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা সহনীয় রাখায় ভোজ্যতেল ও হৃদরোগীরদের জন্য বেশ কার্যকর ওই তেল। এ ছাড়া ওই তেলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ ও ভিটামিন ডি। এসব বিবেচনায় দেশেও বর্তমানে সূর্যমুখী তেলের কদর বাড়ছে।

জানা গেছে, কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট সূর্যমুখীর তিনটি জাত উদ্ভাবন করেন তারমধ্যে কিরোনি, যা প্রতি হেক্টরে উৎপাদন হয় দুই টন করে। এ ছাড়া সূর্যমুখী বারি-২ ও বারি-৩ জাত রয়েছে। বারি-৩ জাতের সূর্যমুখী প্রায় সব মৌসুমে আবাদ করা যাবে। তা ছাড়া এই জাতের সূর্যমুখী একটু খাটো জাতের যা লবণ ও ঝড় বাদল সহিষ্ণু সে কারণে প্রতি টন উৎপাদিত সূর্যমুখী বীজ থেকে ভালো তেল উৎপাদন হয়। আমাদের দেশি সরিষার ঘানিতেও এ বীজ দিয়ে তেল উৎপাদন করা খুব সহজ। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর চট্টগ্রাম অঞ্চলের অতিরিক্ত মহাপরিচালক ড. অরবিন্দ কুমার রায় বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় দেশে ভোজ্যতেলের ঘাটতি মোকাবেলায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।

তিনি বলেন, আগামী ২০২৫ সালের মধ্যে ভোজ্যতেলের চাহিদার বিপরীতে অন্তত ৪০ ভাগ ভোজ্যতেল উৎপাদনের লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর, ইতোমধ্যে সরিষা তিসি তেল বাদাম ও সূর্যমুখী চাষের প্রতি জোর দেয়া হয়েছে। তিনি জানান, দেশে প্রতি বছর ভোজ্যতেলের চাহিদা রয়েছে প্রায় ২৪ লাখ টন। তার বিপরীতে দেশে উৎপাদন হয় ১০ ভাগ তেল। ইতোমধ্যে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর কৃষকদের উন্নতমানের তেলজাতীয় ফসলের বীজ সরবরাহ ও কৃষি প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে। সে কারণেই মূল দেশে সব ধরনের তেলজাতীয় ফসলের উৎপাদন ক্রমান্বয়ে বাড়ছে বলে তিনি জানান।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের পরিচালক ড. তাজুল ইসলাম গতকাল বিকেলে নয়া দিগন্তকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি নির্দেশনায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর কাজ করছে। আগামী ২০২৫ সালের মধ্যে ভোজ্যতেলের চাহিদার অন্তত ৪০ ভাগ তেল দেশে উৎপাদনের প্রচেষ্টা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে কৃষকদের কৃষি প্রণোদনার পাশাপাশি তাদেরকে উন্নতবীজ প্রদান ও মাঠ পর্যায়ে তেলজাতীয় ফসল চাষে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে সে কারণে প্রতি বছর দেশে তেলজাতীয় ফসল উৎপাদন বাড়ছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে ২০২৫ সালের মধ্যে দেশে চাহিদার অন্তত ৪০ ভাগ তেল উৎপাদন সম্ভব বলে তিনি প্রত্যাশা করেন।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

আজকের সূর্যোদয়

আজকের সূর্যোদয় প্রত্রিকায় আপনাদের স্বাগতম। ‍আমাদের নিউজ পড়ুন এবং বিজ্ঞাপন দিয়ে আমাদের পাশে থাকুন।

বরিশালে মুজিবিয়ানের ৮৭ নেতাকে খুঁজছে গোয়েন্দা সংস্থা

সয়াবিনের বিকল্প হতে পারে স্বাস্থ্যসম্মত সূর্যমুখী তেল

আপডেট সময় ১০:১৮:৫৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৮ মার্চ ২০২৩

দেশে ভোজ্যতেলের বিপুল পরিমাণ উৎপাদন ঘাটতি মোকাবেলায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উদ্যোগে দেশব্যাপী সরিষা তিল তিসিসহ নানা জাতের তেলজাতীয় ফসলের পাশাপাশি সূর্যমুখী ফুলের আবাদ এখন দেশে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। সে কারণে প্রতি মৌসুমেই বাড়ছে সূর্যমুখীর উৎপাদন। চলতি মৌসুমে দেশে ১১ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে ২০ হাজার ৭২ টন সূর্যমুখী তেলবীজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। অপর দিকে চলতি মৌসুমে সরিষায় ১০ লাখ, সূর্যমুখীতে ৭০ হাজার, চীনাবাদামে ২৬ হাজার ও সয়াবিনের ১৮ হাজার চাষিকে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উদ্যোগে সার বীজসহ বিভিন্ন উপকরণসহ কৃষি প্রণোদনা দেয়া হয়েছে। সে কারণে দেশব্যাপী তেলজাতীয় ফসল চাষে আগ্রহ বৃদ্ধি পেয়েছে।

এ ছাড়া প্রত্যাশা করা হচ্ছে যদি কৃষি বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের সমন্বিত উদ্যোগের মধ্যমে চাষিদের আরো উন্নত প্রশিক্ষণসহ ও উন্নতমানের তেলজাতীয় ফসলের বীজ সরবরাহ ও মাঠ পর্যায়ে তদারকি করা হয় তাহলে দেশে লাখ লাখ হেক্টর অনাবাদি জমি চাষাবাদের মধ্য দিয়ে সয়াবিন তেলের বিকল্প হয়ে উঠতে পারে পুষ্টিগুণে ভরা স্বাস্থ্যসম্মত সূর্যমুখী তেল। সরিষা তিলের পাশাপাশি সূর্যমুখী ফুলের আবাদ গড়ে তোলার মধ্য দিয়ে সয়াবিন তেলের বিকল্প হয়ে উঠতে পারে সূর্যমুখীর স্বাস্থ্যসম্মত তেল।

বর্তমানে দেশে ভোজ্যতেলের চাহিদা রয়েছে প্রায় ২৪ লাখ টন। আর চাহিদার বিপরীতে দেশে সয়াবিনসহ বিভিন্ন জাতের তেলজাতীয় ফসল থেকে জোগান হচ্ছে চাহিদার মাত্র ১০ ভাগ আর বেশির ভাগ তেলই আমদানি করতে হয় বিদেশ থেকে। এ জন্য প্রতি বছর সরকারকে ভোজ্যতেল আমদানিতে ব্যয় করতে হচ্ছে প্রায় ২০ থেকে ২৫ হাজার কোটি টাকা। সে কারণে সয়াবিনের বিকল্প হিসেবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর দেশে উৎপাদিত সরিষা ও তিলের পাশাপাশি সূর্যমুখী ফুলের আবাদ গড়ে তোলার লক্ষ্যে যে উদ্যোগ গ্রহণ করেন তার অনেকটাই সফলতার মুখ দেখছে প্রতি বছরই দেশব্যাপী বাড়ছে সূর্যমুখী ফুলের আবাদ। গত মৌসুমে দেশে দুই হাজার ৭২৬ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখীর উৎপাদন হয়েছে ৫ হাজার ৭২৫ টন হলেও এক বছরের ব্যবধানে ২০২০-২১ মৌসুমে ৫ হাজার ৫০১ হেক্টর জমিতে ১১ হাজার ৬২৮ টন। ২০২১-২২ মৌসুমে ৯ হাজার ১৩৬ হেক্টর জমিতে উৎপাদন হয়েছে ১৫ লাখ ৯৬১ টন।

এর মধ্যে দক্ষিণ চট্টগ্রামসহ চট্টগ্রাম অঞ্চলে উৎপাদন হয়েছে দ্বিগুণের বেশি চট্টগ্রাম অঞ্চলে ২০১৯-২০ মৌসুমে ১৮৬ হেক্টর জমিতে ৩৮৮ টন, সেখানে ২০২০-২১ মৌসুমে উৎপাদন হয়েছে ২৩৬ হেক্টর জমিতে ৫০৬ টন। ২০২১-২০২২ মৌসুমে ৭১৫ হেক্টর জমিতে ১ হাজার ১৮৩.৭৫ টন। অপর দিকে চট্টগ্রাম অঞ্চলে চলতি মৌসুমে ২০২২-২৩ ১ হাজার ৬০ হেক্টর জমিতে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার ৬৬৮ টন।

জানা গেছে, সরকার দেশে ভোজ্যতেলের ঘাটতি মেটাতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অধীনে বেশ কয়েকটি প্রকল্পের মাধ্যমে দেশব্যাপী সরিষা, তিল তিসি বাদামের পাশাপাশি বাণিজ্যিকভাবে সূর্যমুখী ফুল আবাদের ওপর জোর দিয়েছেন। দেশে প্রতি বছর ভোজ্যতেলের চাহিদা রয়েছে প্রায় ২৪ থেকে ২৫ লাখ টন তার বিপরীতে দেশে উৎপাদন হয় চাহিদার মাত্র ১০ ভাগ ভোজ্যতেল। ভোজ্যতেলের বিপুল পরিমাণ ঘাটতি মেটাতেই মূলত নানামুখী তেলজাতীয় ফসল উৎপাদনের প্রকল্প প্রণয়ন করেছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর।

জানা গেছে, বিভিন্ন জাতের তেলজাতীয় ফসল আবাদের পাশাপাশি স্বল্প পরিসরে গত ৩০ বছর পূর্বে সূর্যমুখী ফুল আবাদ শুরু হলেও চার বছর ধরে দক্ষিণ চট্টগ্রামসহ সমগ্র দেশে শীতকালীন ও খরিপ-১ মৌসুমে সূর্যমুখীর আবাদ কৃষকের কাছে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

সূর্যমুখী এক ধরনের একবর্ষী ফুল গাছ, যা লম্বায় প্রায় ১০ ফুট হয়, গাছে ফুল হয় প্রায় ৩০ সেন্টিমিটারের উপরে (১৩ ইঞ্চির মতো) এই ফুল দেখতে সূর্যের মতো এবং ফুল ফোটা থেকে বীজ পরিপক্ব হওয়া পর্যন্ত ওই ফুল সূর্যের দিকেই মুখ করে থাকে সে কারণেই মূলত এই ফুলের নামকরণ করা হয়েছে সূর্যমুখী। এই ফুলের বীজ হাঁস-মুরগির ও না না জাতের পাখির আদর্শ খাবার। অপর দিকে বীজ থেকে উৎপাদন হয় পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ ভোজ্যতেল। ১৯৭৫ সাল থেকে অল্প বিস্তর এ ফুলের আবাদ হলেও এখন দেশের রাজশাহী, কুষ্টিয়া যশোর, নাটোর, পাবনা, দিনাজপুর, গাজীপুর, টাঙ্গাইল ছাড়াও এখন বৃহত্তর নোয়াখালী কুমিল্লা চাঁদপুর ফেনী ও চট্টগ্রাম কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়েছে সূর্যমুখীর আবাদ। সূর্যমুখীর তেলে মানব শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা সহনীয় রাখায় ভোজ্যতেল ও হৃদরোগীরদের জন্য বেশ কার্যকর ওই তেল। এ ছাড়া ওই তেলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ ও ভিটামিন ডি। এসব বিবেচনায় দেশেও বর্তমানে সূর্যমুখী তেলের কদর বাড়ছে।

জানা গেছে, কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট সূর্যমুখীর তিনটি জাত উদ্ভাবন করেন তারমধ্যে কিরোনি, যা প্রতি হেক্টরে উৎপাদন হয় দুই টন করে। এ ছাড়া সূর্যমুখী বারি-২ ও বারি-৩ জাত রয়েছে। বারি-৩ জাতের সূর্যমুখী প্রায় সব মৌসুমে আবাদ করা যাবে। তা ছাড়া এই জাতের সূর্যমুখী একটু খাটো জাতের যা লবণ ও ঝড় বাদল সহিষ্ণু সে কারণে প্রতি টন উৎপাদিত সূর্যমুখী বীজ থেকে ভালো তেল উৎপাদন হয়। আমাদের দেশি সরিষার ঘানিতেও এ বীজ দিয়ে তেল উৎপাদন করা খুব সহজ। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর চট্টগ্রাম অঞ্চলের অতিরিক্ত মহাপরিচালক ড. অরবিন্দ কুমার রায় বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় দেশে ভোজ্যতেলের ঘাটতি মোকাবেলায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।

তিনি বলেন, আগামী ২০২৫ সালের মধ্যে ভোজ্যতেলের চাহিদার বিপরীতে অন্তত ৪০ ভাগ ভোজ্যতেল উৎপাদনের লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর, ইতোমধ্যে সরিষা তিসি তেল বাদাম ও সূর্যমুখী চাষের প্রতি জোর দেয়া হয়েছে। তিনি জানান, দেশে প্রতি বছর ভোজ্যতেলের চাহিদা রয়েছে প্রায় ২৪ লাখ টন। তার বিপরীতে দেশে উৎপাদন হয় ১০ ভাগ তেল। ইতোমধ্যে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর কৃষকদের উন্নতমানের তেলজাতীয় ফসলের বীজ সরবরাহ ও কৃষি প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে। সে কারণেই মূল দেশে সব ধরনের তেলজাতীয় ফসলের উৎপাদন ক্রমান্বয়ে বাড়ছে বলে তিনি জানান।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের পরিচালক ড. তাজুল ইসলাম গতকাল বিকেলে নয়া দিগন্তকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি নির্দেশনায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর কাজ করছে। আগামী ২০২৫ সালের মধ্যে ভোজ্যতেলের চাহিদার অন্তত ৪০ ভাগ তেল দেশে উৎপাদনের প্রচেষ্টা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে কৃষকদের কৃষি প্রণোদনার পাশাপাশি তাদেরকে উন্নতবীজ প্রদান ও মাঠ পর্যায়ে তেলজাতীয় ফসল চাষে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে সে কারণে প্রতি বছর দেশে তেলজাতীয় ফসল উৎপাদন বাড়ছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে ২০২৫ সালের মধ্যে দেশে চাহিদার অন্তত ৪০ ভাগ তেল উৎপাদন সম্ভব বলে তিনি প্রত্যাশা করেন।