ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের সিএন্ডবি এলাকায় ছিনতাইয়ের শিকার হয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী। এ ঘটনার পর মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
আজ মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে মহাসড়কের ডেইরি গেইট এলাকা অবরোধ করেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। তারা প্রায় এক ঘন্টা সড়ক অবরোধ করে রাখেন।
ভুক্তভোগী ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সূত্রে জানা যায়, সাভার থেকে ব্যাটারি চালিত রিকশায় করে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ফিরছিলেন দর্শন বিভাগের চতুর্থ বর্ষের (৪৮ ব্যাচ) শিক্ষার্থী শান্ত জাবালী ও তার বান্ধবী। সিএন্ডবি এলাকার ওভারব্রীজ পার হলে ঝোঁপের আড়াল থেকে তিনজন ছিনতাইকারী চাপাতি নিয়ে তাদের উপর আক্রমণ চালায়। এসময় ঠেকাতে গেলে শান্তর হাত কেটে যায়। ছিনতাইকারীরা তাদের কাছে থাকা মোবাইল ফোন ও মানিব্যাগ ছিনিয়ে নেয়। ঠিক তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বাস ঘটনাস্থলে পৌঁছালে ছিনতাইকারীরা পালিয়ে যায়।
এ ঘটনার পর বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা রাত পৌনে নয়টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক (ডেইরী গেইট) এলাকায় সড়ক অবরোধ করলে দুই কিলোমিটার দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। শিক্ষার্থীরা এসময় তিন দফা দাবি উপস্থাপন করেন। দাবিগুলো হলো- ৪৮ ঘন্টার মধ্যে ছিনতাইকারীদের আটক করতে হবে, সিএন্ডবি এলাকায় ওয়াচ টাওয়ার বসাতে হবে এবং ছিনতাইপ্রবণ এলাকায় পুলিশ টহল বাড়াতে হবে।
এ ঘটনায় সন্দেহভাজন হিসেবে রিকশা চালককে ধরে পুলিশের হাতে তুলে দেয় শিক্ষার্থীরা। আশুলিয়া ও সাভার হাইওয়ে থানার ওসি ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে শিক্ষার্থীদের আশ্বস্ত করার চেষ্টা করেন। এসময় দাবি মেনে নিয়ে রিকশা চালককে রিকশাসহ সাভার থানায় প্রেরণ করলে রাত ১০টায় শিক্ষার্থীরা অবরোধ তুলে নেন।
ভুক্তভোগী শান্ত জাবালী বলেন, ‘সন্ধ্যার একটু আগে আমি সাভার থেকে একটি ব্যাটারি চালিত রিকশা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরছিলাম। আমার সাথে একটা বড় পার্সেল ছিল। তাই বাসে না উঠে রিকশা নিয়েছিলাম। সিএন্ডবি থেকে মীর মশাররফ হলের রাস্তার কাছাকাছি পৌঁছালে হঠাৎ তিনজন ছিনতাইকারী আমাদের আক্রমণ করে। এসময় তারা চাপাতি ধরে আমাদের তল্লাশি করতে থাকে। আমার পকেট থেকে মানিব্যাগ ও মোবাইল ছিনিয়ে নেয়। আমি দ্রুত রিকশা থেকে নেমে সাহায্যের জন্য বাস দাঁড় করানোর চেষ্টা করি। এসময় ক্যাম্পাসের একটি বাস চলে আসে। সাহায্যের জন্য সবাই দৌঁড়ে আসলে ছিনতাইকারীরা রাস্তার অপর পাশ দিয়ে পালিয়ে যায়।’
রিকশা চালক সম্রাট বলেন, ‘আমার রিকশায় করে জাহাঙ্গীরনগরের দিকে আসছিলাম। সিএন্ডবি গেইট পার হওয়ামাত্রই জঙ্গলের পেছনে লুকানো ছিনতাইকারীরা বের হয়ে আসেন। তারা তিন জন ছিলেন, হাতে চাপাতি ছিল। তারা সামনে গিয়ে আপুর হাত থেকে আংটি, ভাইয়ের মোবাইল, টাকা নিয়ে চলে যায়। আমি ওদের চিনতে পারি নাই।’
আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুজ্জামান বলেন, ‘আজ থেকে বিকাল ৫টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত পুলিশ চেকপোস্ট থাকবে। একটা হবে সিএন্ডবি থেকে মীর মশাররফ হলের মাঝখানে, আরেকটা মীর মশাররফ থেকে প্রান্তিক গেইটের মাঝে। ৪৮ ঘন্টার মধ্যে জড়িতদের আটক করার ব্যবস্থা করা হবে। আমি এখন ভুক্তভোগীকে নিয়ে সাভার থানায় লিখিত অভিযোগ জমা নিব।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের দেয়াল ও সড়কের মাঝে মাটি ভরাট ও জঙ্গল কাটার জন্য প্রশাসনের কাছে অনুরোধ জানান তিনি।
সাভার হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজিজুল হক বলেন, ‘সাভার হাইওয়ে থানা থেকে নিয়মিতভাবে টহল চলে। এরপরও এমন ছিনতাইয়ের ঘটনা অনাকাঙ্ক্ষিত। আমরা পুলিশ টহল আরও জোরদার করবো।’
এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা সুদীপ্ত শাহিন বলেন, ‘দুই থানা থেকে ওসিরা এসে দোষীদের আটক করার আশ্বাস দেয়ায় শিক্ষার্থীরা অবরোধ তুলে নিয়েছে। প্রশাসনের সাথে বসে তারা লিখিত প্রতিশ্রুতি দিবে। আগামীকাল তারা আমাদের ওয়াচ টাওয়ার ও টহল পুলিশের ব্যাপারে আপডেট জানাবে।’