নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে নাসরীন আক্তার (৪০) ক্লুলেস হত্যা মামলার রহস্য ৩৬ ঘণ্টায় উদঘাটন করেছে পুলিশ। এ ঘটনার মূল আসামি মো: কমল ওরফে কুদ্দুসকে (৩৩) গ্রেফতার করা হয়েছে।
রোববার (২১ মে) তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারি থানাধীন রোমনা ঘাট থেকে তাকে গ্রেফতার করে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশ। এ সময় তিনি ভারত সীমান্তের দিকে পালাচ্ছিলেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।
সোমবার (২২ মে) দুপুরে নারায়ণগঞ্জ পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেল।
গ্রেফতার কমল কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুর থানার পূর্ববারা (চিলমারীরচর) গ্রামের আ: জলিলের ছেলে। এ ঘটনার আরেক আসামি রংপুর জেলার কাউনিয়া থানার হয়ভোদখা গ্রামের চান্দু আকন্দের ছেলে অভির উদ্দিন (৩৫) পলাতক রয়েছে।
ব্রিফিংয়ে পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেল জানান, গ্রেফতারকৃত আসামি প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেন যে গত ১৯ মে গভীর রাতে তিনি ও তার সহযোগী আরেক পলাতক আসামি অভির উদ্দিনসহ জালকুড়ি পাংখা শাহ মাজারে সাপ্তাহিক ওরশের আয়োজনে গান শুনতে যান। সেখানে গান শোনা শেষে রাত আনুমানিক সোয়া ৩টার দিকে হত্যার শিকার হওয়া ভুক্তভোগী নাসরিন আক্তারের (৪০) সাথে পরিচয় হয় তাদের।
পরে তারা উভয়ে একসাথে মিলেমিশে চা পান করেন। কথার মাঝামাঝিতে অভির উদ্দিনের সাথে ভুক্তভোগীর টাকার বিনিময়ে একান্ত সময় কাটানোর কথা হলে তিনি রাজি হন। পরে তাদের মধ্যে কথার মিল হওয়ায় মূল আসামি কমল ও অভির উদ্দিন নাসরীনকে নিয়ে জরাজীর্ণ একটি পরিত্যক্ত ঘরে নিয়ে যান।
ওই স্থানে প্রবেশের কিছুক্ষণের মধ্যে ভুক্তভোগীর মোবাইল ফোনে একটি কল এলে তিনি কথা বলতে বলতে ঘরের বাইরে চলে যান। তাৎক্ষণিক সেই ঘরে অন্য দু’জন পুরুষ এসে কমল ও অভির উদ্দিনকে হুমকি-ধামকি দিয়ে তাদের পকেটে থাকা নগদ ৯ হাজার ৪০০ টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যায়।
এ ঘটনায় ক্ষিপ্ত হন কমল ও অভির উদ্দিন। পরে মূল ঘাতক কমল ভুক্তভোগীকে আরো বেশি টাকা দেয়ার লোভ দেখিয়ে তাদের সাথে সময় কাটানের জন্য প্রস্তাব দেন। তাদের কথা অনুযায়ী তিনি রাজি হলে তাকে সিদ্ধিরগঞ্জের জালকুড়ি তালতলা খালপাড় সংলগ্নে বালুর মাঠে নিয়ে যান।
এক পর্যায়ে ওই মাঠে পৌঁছালে কমলের গলায় থাকা লাল কাপড় দিয়ে ভুক্তভোগীর হাত বেঁধে এবং ভুক্তভোগীর গায়ের ওড়না দিয়ে দুই পা বেঁধে লাল কাপড়টি গলায় পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন। পরে কমল ও অভির উদ্দিন দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে তাদের গ্রামের বাড়িতে চলে যান।
গ্রেফতারের পরে আসামির স্বীকারোক্তিমতে ভুক্তভোগীর ব্যবহৃত মোবাইল ফোন ও ঘটনার সময় আসামির পরনে থাকা সাদা লুঙ্গি ও গেঞ্জি উদ্ধার করে পুলিশ।
উল্লেখ্য, এর আগে গত ১৯ মে সকাল ৮টা ৩০ মিনিটে সিদ্ধিরগঞ্জের জালকুড়ি পশ্চিমপাড়া শিমা ডাইংয়ের পাশে ফাঁকা বালুর মাঠ থেকে নাসরীন আক্তারের লাশ হাত ও পা বাঁধা অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ। এই ঘটনায় নিহতের বাবা আশরাফ দেওয়ান সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় এজাহার দায়ের করেন।