সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ২০২৪-২৫ সালের নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে।
আজ বুধবার সকাল ১০টা ২০ মিনিট থেকে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনে এ ভোটগ্রহণ শুরু হয়।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির বাইরে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে আইনজীবীদের ভোট দিতে দেখা গেছে।
সকাল সাড়ে ১০টায় হাইকোর্ট বিভাগের সাবেক বিচারপতি ফয়সাল মাহমুদ ফয়েজী ভোট দেয়ার জন্য আইনজীবীদের সাথে লাইনে দাঁড়ান।
তিনি বলেন, আমি প্রতি বছর শুরুতে ভোট দেই। এবারো শুরুতে ভোট দিতে এসেছি। আশা করি, এবার সুষ্ঠু পরিবেশে ভোটগ্রহণ সম্পান্ন হবে এবং ফলাফল ঘোষণা করা হবে।
এদিকে আইনজীবী সমিতির নির্বাচনের ভোটগ্রহণ থাকায় সুপ্রিম কোর্টে প্রবেশে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়। সকাল থেকে আইনজীবীদের আইডি কার্ড দেখে প্রবেশ করতে দেয়া হয়।
নির্বাচন উপ-কমিটির সদস্য ও সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক ট্রেজারার মোহাম্মদ কামাল হোসেন জানান, ১০টা থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হয়ে দুপুরে এক ঘণ্টা বিরতি দিয়ে বিকেল ৫টায় শেষ হবে। দু’দিনব্যাপী এই নির্বাচনে বৃহস্পতিবারও ভোটগ্রহণ করা হবে। এরপর ভোট গণনা শেষে ফলাফল ঘোষণা করা হবে।
ভোটগ্রহণের জন্য নির্বাচন উপ-কমিটি ইতোমধ্যেই সার্বিক প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। সুপ্রিম কোর্ট ভবনের অডিটোরিয়ামে ৫০টি বুথ স্থাপন করা হয়েছে। এ নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা সাত হাজার ৮৮৮ জন।
এ নির্বাচনে মূল প্রতিদ্বন্দ্বীতা হবে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ সমর্থিত সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ (সাদা প্যানেল) এবং বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য প্যানেলের (নীল প্যানেল) মধ্যে।
নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ সমর্থিত (সাদা) প্যানেলের প্রার্থীরা হলেন সভাপতি পদে আবু সাঈদ সাগর, সম্পাদক শাহ মঞ্জুরুল হক, দু’জন সহ-সভাপতি পদে রমজান আলী শিকদার ও দেওয়ান মোহাম্মদ আবু ওবায়েদ হোসেন সেতু, কোষাধ্যক্ষ পদে মোহাম্মদ নুরুল হুদা আনসারী, দুটি সহ-সম্পাদক পদে হুমায়ুন কবির ও হুমায়ুন কবির পল্লব। সাতটি সদস্য পদে সৌমিত্র সরদার রনী, মো. খালেকুজ্জামান ভূঁইয়া, রাশেদুল হক খোকন, মাহমুদা আফরোজ, বেলাল হোসেন শাহীন, খালেদ মোশাররফ রিপন, রায়হান রনী।
জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য (নীল) প্যানেল থেকে মনোনীত প্রার্থীরা হলেন সভাপতি পদে এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন, সম্পাদক পদে মো: রুহুল কুদ্দুস (কাজল), দু’জন সহ-সভাপতি পদে মো: হুমায়ুন কবির মঞ্জু ও সরকার তাহমিনা বেগম সন্ধ্যা, কোষাধ্যক্ষ পদে মো: রেজাউল করিম, দু’টি সহ-সম্পাদক পদে মাহফুজুর রহমান মিলন ও মো: আব্দুল করিম। সাতটি সদস্য পদে ফাতিমা আক্তার, সৈয়দ ফজলে এলাহি অভি, মো: শফিকুল ইসলাম শফিক, মো: রাসেল আহমেদ, মো: আশিকুজ্জামান নজরুল, মহিউদ্দিন হানিফ ও মো: ইব্রাহিম খলিল।
সুষ্ঠু নির্বাচন হবে আশা প্রকাশ করে নীল প্যানেলের সভাপতি প্রার্থী এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, গতবার যে কলঙ্কজনক ঘটনা ঘটেছে, আমরা আশা করি এবার তা ঘটবে না। আইনজীবীরা নিজেরাই এবার পাহারা দেবেন। আর নির্বাচন কমিশন বলেছেন, তারা সুষ্ঠু নির্বাচন করবেন। বর্তমান কার্যকরী কমিটির সভাপতি ও সম্পাদকও বলছেন সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। আমি সতর্কতার সাথে আস্থা রাখতে চাই। এখন পর্যন্ত আমি মনে করি সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। সবাইকে অনুরোধ করছি যে আপনারা ভোট দিতে আসুন।
অন্যদিকে সাদা প্যানেলের সভাপতি প্রার্থী আবু সাঈদ সাগর বলেন, আমি অত্যান্ত আশাবাদি যে এবারের ভোট সুষ্ঠু হবে।
তিনি বলেন, আমি সুপ্রিম কোর্ট বার, বার কাউন্সিল ও ঢাকা বারে ছয়টি নির্বাচন করেছি। সব নির্বাচন অত্যন্ত সুন্দর, সাবলিল ও বৈধভাবে হয়েছে। অন্যায় বা জোরপূর্বক কোনো নির্বাচন হয়নি।
তিনি আরো বলেন, আমি যেহেতু প্রার্থী আছি। কেউ বিএনপি বা আওয়ামী লীগ বা কোনো দল কোনোভাবে এই নির্বাচনকে ব্যহত করার চেষ্টা করবে না। আওয়ামী লীগ তো করবেই না। বিএনপিও করতে সক্ষম হবে না। চেষ্টা করলেও তারা ব্যর্থ হবে, এটা আমি বিশ্বাস করি।
আবু সাঈদ সাগর বলেন, ভোটগ্রহণ ও ফলাফল ঘোষণা পর্যন্ত পরিবেশ সুষ্ঠু থাকবে বলে আমি মনে করি। আমি জয়ের ব্যাপারে আশাবাদি। যতটুকু আইনজীবীদের স্বার্থে কাজ করেছি, সে হিসেবে আমি মনে করি আমাকে তাদের ভোট দেয়া উচিৎ।
এই দুই প্যানেলের বাইরে সভাপতি পদে ইউনুছ আলী আকন্দ এবং এম কে রহমানের প্রার্থী হয়েছেন।
এছাড়া সম্পাদক পদে সাদা ও নীল প্যানেলের বাইরে নাহিদ সুলতানা যুথি ও ফরহাদ উদ্দিন আহমেদ ভূইয়ার প্রার্থী হয়েছেন। কোষাধ্যক্ষ পদে সাদা ও নীল প্যানেলের বাইরে সাইফুল ইসলাম প্রার্থী হয়েছেন।
অপরদিকে নির্বাচনে সুষ্ঠু পরিবেশ নিয়ে শঙ্কার বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি
নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট আবুল খায়ের বলেন, আমরা একটি স্বচ্ছ নির্বাচন করতে চাই।
তিনি বলেন, আমরা প্রত্যাশা করছি সুন্দর নির্বাচন হবে। এজন্য আইনজীবীসহ সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। আগামী ৬ ও ৭ মার্চ একটি ভালো নির্বাচন প্রত্যাশা করছি। এজন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীরও সহযোগিতা চাই।
তিনি বলেন, এ নির্বাচনের জন্য আমরা প্রধান বিচারপতির কাছে সহযোগিতা চেয়েছি।
তিনি আরো বলেন, নির্বাচনের পুরো পরিবেশ নিয়ন্ত্রণে রাখা আমাদের উদ্দেশ্য। এজন্য আমরা প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের সাথে আলোচনা করেছি।
২০২৪-২৫ মেয়াদে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির (বার) নির্বাচনের জন্য গত ১১ ফেব্রুয়ারি সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির (বার) নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন সমিতির সম্পাদক আব্দুন নূর দুলাল।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির (বার) সভাপতি, সম্পাদকসহ মোট ১৪টি পদ রয়েছে। ৬ ও ৭ মার্চ এ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ করা হবে।